গল্প-সুহাসিনী||

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। গল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। সময় পেলে গল্প লিখি। তবে আজকে সারাদিন ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যে কেটেছে। কিছু সমস্যার কারণে আজকে আপনাদের সাথে খুব একটা যুক্ত থাকতে পারিনি। তবুও সারাদিনের ক্লান্তি শেষে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি আর এই গল্পটি লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার লেখা গল্প সবার ভালো লাগবে।


সুহাসিনী:

girl-3811078_1280.jpg

Source


বাবা মায়ের অতি আদরের সুহাসিনী। বাবা-মায়ের নয়নের মনি ছিল সুহাসিনী। বাবা-মা তাকে ভালোবাসায় আগলে রাখত। তাদের ছোট্ট কুঁড়েঘরে সুহাসিনী যেন এক টুকরো চাঁদের আলো। সুহাসিনীকে পেয়ে কেটে গিয়েছিল তাদের জীবনের সব দুঃখগুলো। হয়তো তারা মধ্যবিত্ত। কিন্তু ভালোবাসায় পূর্ণ ছিল সুহাসিনীর জীবন। দেখতে দেখতে সুহাসিনী বেড়ে উঠলো। বাবা মায়ের চোখের সামনে বেড়ে ওঠে। সুহাসিনী কখন যে ধীরে ধীরে বদলে যেতে লাগলো বাবা-মা বুঝতেই পারল না। অনেক আদরে লালন করা সুহাসিনী যেন আজ বাবা মায়ের হতাশার কারণ। সুহাসিনী ভালোবাসতো রাস্তার এক বখাটে ছেলেকে। মিথ্যে ভালোবাসার ছলনায় সুহাসিনী যেন নিজেকে হারাতে বসেছিল।


কখন যে ধীরে ধীরে ছেলেটির সাথে তার একটি সম্পর্ক তৈরি হয়েছে সুহাসিনীর বাবা-মা বুঝতেও পারেনি। কত স্বপ্ন কত আশা নিয়ে তার বাবা-মা তাকে বড় করেছে। নিজের সবটুকু দিয়ে সুহাসিনীকে ভালো রাখার চেষ্টা করেছে। সুহাসিনী পড়াশুনাতেও বেশ ভালো ছিল। বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে সুহাসিনী ডাক্তার হবে। গ্রামের মানুষের সেবা করবে। আর বাবা মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবে। এটুকুই যেন তাদের চাওয়া। কিন্তু তাদের চোখের সামনে কখন যে সুহাসিনী এতটা পর হয়ে গেল তারা বুঝতেও পারেনি। বুক ভাঙা কষ্ট নিয়ে বাবা-মা প্রতীক্ষায় থাকতো হয়তো তাদের আগের সেই সুহাসিনী আবার ফিরে আসবে। হয়তো সেই মিথ্যে ভালোবাসার আবেগের চাদর থেকে সে বেরিয়ে আসবে।


বাবা-মা তাকে চোখে চোখে রাখত। অনেক ভাবে বোঝাত জীবনটা ক্ষনিকের নয়। এই দীর্ঘ জীবনে একজন ভালো জীবন সঙ্গী পাওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি নিজের জীবনের লক্ষ্য অর্জন করাও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সুহাসিনী যেন অন্য রকমের মোহে আটকে গিয়েছিল। সেই মোহ থেকে কিছুতেই বেরোতে পারছিল না। কিশোরী বালিকার জীবন যেন আজ হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছিলো। দেখতে দেখতে কেটে গেল বেশ কয়েক মাস। সবকিছুই যেন স্বাভাবিকভাবেই চলছিল। সুহাসিনীর বাবা-মা ভেবেছিল হয়তো সে নিজেকে পাল্টে নিয়েছে। হয়তো নিজের ভালোটা বুঝতে পেরেছে। কিন্তু হায় জীবনে যখন দুঃখ থাকে তখন ভাগ্য বড় নিষ্ঠুর হয়ে যায়। বাবা মায়ের চোখে ফাঁকি দিয়ে সেই ছেলেটির হাত ধরে পালিয়ে গেল সুহাসিনী। যেটা ছিল তার জীবনের চরম ভুল। দুই দিন সুভাষিনীকে খুঁজে পাওয়া গেল না।


অনেক খোঁজাখুঁজির পর যখন সুহাসিনীকে কোথাও পাওয়া গেল না তখন আইনের আশ্রয় নিল তার বাবা-মা। অবশেষে তাকে খুঁজে পাওয়া গেল। সেই বখাটে ছেলেটি তাকে বিক্রি করে দিয়েছিল। সেই সাথে শেষ হয়ে গিয়েছিল সুহাসিনীর সব স্বপ্নগুলো। আর বাবা-মার স্বপ্নগুলো হারিয়ে গিয়েছিল অন্ধকারের মাঝে। অনেক কষ্টে সুহাসিনীকে উদ্ধার করে তারা। কিন্তু সুহাসিনীর অন্ধকার জীবন থেকে তাকে উদ্ধার করতে পারলেও সামাজ তাকে বাঁচতে দিল না। সমাজের মানুষগুলো তাকে বাঁচতে দিল না। তাকে শুধরানোর সময় দিল না। কিশোরী বয়সের করা ভুলগুলো শুধরানোর মত সময় দিলো না তাকে। অবশেষে সেই কিশোরী মন আবারো ভুল সিদ্ধান্তে পদার্পণ করল। বেছে নিল মৃত্যুর পথ। সবকিছু ভুলে যেই মেয়েটি বাবা-মায়ের কাছে ফিরে এসেছিল সেই মেয়েটি বাঁচতে পারল না। এই সমাজের মানুষ গুলো তাকে বাঁচতে দিল না। আর সুভাষিনী চিরতরে সবার মাঝ থেকে হারিয়ে গেল।


জানিনা আমার লেখা গল্প আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে। তবে তাড়াহুড়ো করে এই লেখাটি লিখতে গিয়ে একটু সমস্যা হয়েছিল। ভুল ত্রুটি সবাই ক্ষমাশীল দৃষ্টিতে দেখবেন।


❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

Sort:  
 last year 

আসলে আপু আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এমনই ।যেখানে কেউ একটিবার ভুল করলে সে আবার শোধরানোর চেষ্টা করলেও সমাজ তাকে শুধরাতে দেয় না। যার কারনে মানুষ অসহায় হয়ে মৃত্যুর পথ বেছে নেয় ।সুহাসিনির বেলায়ও তেমনটি ঘটেছিল। সত্যি হৃদয়বিদারক এ ধরনের ঘটনাগুলো ।বেশ ভালো লাগলো পড়ে।ধন্যবাদ।

 last year 

সমাজের বাস্তবতা দেখে মাঝে মাঝে অনেক খারাপ লাগে। হয়তো এভাবেই জীবন দিয়ে দিতে হয় অনেককে। ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।

 last year 

অনেক সময় মা বাবারা শত বুঝানোর পরও কিছু কিছু সন্তান অবাধ্য থেকে যায়। পরবর্তীতে সেই ভুলের কারণেই বেঁচে থাকা দায় হয়ে যায়। সুহাসিনী চরম ভুল করেছে মা বাবার কথা না শুনে। এমন ভুল করলো পরবর্তীতে শুধরানোর সুযোগও পেল না। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এমনই। কারো জন্য কোনো মঙ্গল করতে পারবে না ঠিকই, কিন্তু অমঙ্গল করতে পারে খুব ভালোভাবে। গল্পটি দারুণ লেগেছে আপু। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া কিছু কিছু সন্তান অবাধ্য হয়ে যায়। আর পরবর্তীতে তাদের জীবন দিয়ে দিতে হয়। এভাবেই হয়তো ভুল করে সবাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আমার জন্য।

 last year 

সুহাসিনী গল্পটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো আপু। বর্তমান সমাজের একটি দিক আপনি তুলে ধরেছেন এই গল্পের মধ্যে। বর্তমানে ভালোবাসা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যাকে ভালোবাসা বলাই যায় না। তবে আমাদের পিতা মাতার কথা শোনা উচিত কেননা তারা কখনোই সন্তানের খারাপ চায়না। আর সমান তো কোন খারাপ কে আরো বেশি খারাপের দিকে নিয়ে যায়। ধন্যবাদ আপু।

 last year 

সুহাসিনী গল্পটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। বর্তমান সমাজের দিকগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।

 last year 

আসলে মেয়েটা কিন্তু ওই ছেলেটাকে ভালোবেসেছিল অনেক বেশি, কিন্তু ছেলেটা যে তার সাথে এরকম করবে সে বুঝতে পারেনি। আমাদের সমাজের মানুষগুলো এরকমটাই করে। কাউকে নিজের ভুল শোধরানোর সময় দেয় না, তার আগে ই সবার কাছ থেকে সেই মানুষটা হারিয়ে যায়। সবার উচিত ছিল মেয়েটার পাশে থাকা এই সব কিছু ভুলে গেলে হয়তো মেয়েটি ভালোভাবে জীবনটা আবারো শুরু করতে পারতো। কিন্তু এরকম নিষ্ঠুর একটা সমাজ তাকে বাঁচতে দেয়নি। অনেক সুন্দর করে গল্পটা শেয়ার করেছেন দেখে ভালো লাগলো।

 last year 

মাঝে মাঝে ভুল মানুষকে ভালোবেসে জীবন দিয়ে দিতে হয়। আর হাজারো বাবা-মা তাদের সন্তানকে হারিয়ে ফেলে। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।

 last year 

আপু আপনি আজকে আমাদের মাঝে দারুন একটি গল্প লিখে শেয়ার করেছেন। আসলে এখনকার সমাজে বাবা-মা ছেলে মেয়েদের বোঝানোর পরেও কিছু ছেলে মেয়ে বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে যায়। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা সামনে রেখে আপনি দারুন একটি গল্প লিখে শেয়ার করেছেন আপু। তবে সুহাসিনী ও সুখেশেনি নামে আমাদের বইতে একটা গল্প আছে আপনার গল্পটি পড়তে গিয়ে ওই গল্পটা মনে পড়ে গেল। ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 58482.75
ETH 2615.94
USDT 1.00
SBD 2.42