জেনারেল রাইটিং-মানবিকতা ও অদৃশ্য দেয়াল||আমার বাংলা ব্লগ [10% shy-fox]

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজ আমি "আমার বাংলা ব্লগ" সম্প্রদায়ে একটি ব্লগ তৈরি করতে যাচ্ছি। মানবতা বা মানবিকতা শব্দটি কয়েকটি শব্দের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও এর বিশালতা অনেক বেশি। হয়তো হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করলে মানবিকতার গভীরতা উপলব্ধি করা যায়। আসলে আমরা সবাই মানুষ। তবে মানবতা কিংবা মানবিকতাবোধ আমাদের কতটুকু আছে সেটা কখনো ভেবে দেখি না। হয়তো মানবতা আজ হারিয়ে গেছে। তাই আমরা কোন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাইনা। হয়তো না খেয়ে থাকা মানুষগুলোর কাছে জানতে চাইনা তারা খেয়েছ কিনা। আজকে আমি মানবিকতা ও দেয়াল নিয়ে কিছু কথা আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। হয়তো আমাদের সমাজের বাস্তবতার চিত্র থেকেই এই কথাগুলো মনের মাঝে চলে এসেছে। আশা করছি আমার লেখাগুলো পড়ে আপনাদের ভালো লাগবে।


মানবিকতা ও অদৃশ্য দেয়াল:

people-g6b55593dd_1920.jpg

Source


মানবিকতা মানুষের মহৎ গুণ। তবে আমরা সেই মানবিকতার মাঝেও দেয়াল তুলে দেই। কিংবা মানবতার মাঝে আমরা অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করি। যখন রাস্তা দিয়ে কোন পথ শিশু হেঁটে যায় তখন একবারও কাছে গিয়ে জানতে চাই না সারাদিন সেই ছোট্ট শিশুটি খেয়েছে কিনা। এমনকি মা বাবার স্নেহ বঞ্চিত সেই ছোট্ট শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়ে বলি না আজ থেকে তোমার দায়িত্ব নিলাম। তারা পথ শিশু। আমরা হয়তো তাদের দেখলেই বাঁকা চোখে তাকাই। হয়তো তাদেরকে আপন করে নিতে পারি না। আমাদের মানবিকতার মাঝে দেয়াল তৈরি হয়েছে। যেটা আমরা নিজেরাই তৈরি করেছি। কখনো তাদের পাশে গিয়ে বসে বলিনি আজকে সারাদিন তোমার সাথে কাটাবো। কিংবা তার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তাকে কখনো বলিনি তোমার ছিঁড়ে যাওয়া জামাটা আমাকে দিও আর আমি তোমার জন্য একটি লাল জামা কিনে দিবো। কারণ আমাদের মানবতায় যে দেয়াল তৈরি হয়েছে। তাই তো আমরা তাদের পাশে দাঁড়াই না।


ওই বৃদ্ধ লোকটি পাড়ার মোড়ে ভিক্ষা করে। গায়ে তার জীর্ণশীর্ণ পাঞ্জাবিটা ছিড়ে গেছে। পাঞ্জাবির ফুটো দিয়ে দেহটা দেখে মনে হয় যেন অনেক দিন থেকে না খেয়ে আছে। ভিক্ষে করে যার জীবন চলে তার কি আর সাধ্য আছে নিজের দেহ ঢাকার। পাঞ্জাবির ফুটো দিয়ে দেহটা দেখা যায়। কিন্তু তার ভেতরের যন্ত্রণা আমরা কখনোই উপলব্ধি করতে চাই না। কারণ আমাদের ভেতরে থাকা মানবতার মাঝে দেয়াল তৈরি হয়েছে। আমরা কখনো সেই বৃদ্ধ লোকটির পাশে গিয়ে দাঁড়াতে চাই না। হয়তো যে যার মত দেখে চলে যাই। কখনো দুই টাকা দিয়ে সাহায্য করি কখনোবা ১০ টাকা। সে দুবেলা খেতে পারে কিনা এটা কখনো ভেবে দেখি না। কখনো তাকে বলি না চলুন চাচা আজ না হয় আমি আপনাকে পেট ভরে খাওয়াবো। আর আপনার তৃপ্তির হাসিটা দেখব। কিন্তু আমাদের সব ভাবনাগুলো মিথ্যে। কারণ আমরা নিজেরাই তো হাসতে ভুলে গেছি। কি করে অন্যের মুখে হাসি ফোটাবো। আমরা যদি সেই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই তাহলে হয়তো এক বেলা তাদের খাবার জুটবে। হয়তো ভিক্ষে করে তাদের জীবন কাটবে। তবুও তো একবেলা তৃপ্তি করে খেতে পারবে।


বাজারের চৌরাস্তার মোড়ে বৃদ্ধ চাচা বসে বসে সবজি বিক্রি করেন। ছেলেপেলেরা নাকি তাকে খেতে দেয় না। তাই তো তিনি রাস্তায় বাসা বেঁধে নিয়েছেন। এর বাড়ি ওর বাড়ি কাজ করে করে কয়েকটা পয়সা জমিয়েছিলেন। সেই পয়সা দিয়ে শুরু করেছে ছোট্ট সবজির দোকান। সেখানে গিয়েও আমরা দামাদামি করি। সেই অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে একবারও বলি না দশটি টাকা বেশি দেই আজ। সে তো আর ভিক্ষে করে খাচ্ছে না। এই শেষ বয়সে এসেও পেটের দায়ে ছোট্ট দোকান খুলে বসেছে। হয়তো আজ তার জায়গা হওয়ার কথা ছিল নাতি-নাতনিদের মাঝখানে। আনন্দ উল্লাসে কাটার কথা ছিল তার দিনগুলো। কিন্তু আজ সে বাধ্য হয়ে সবজি বিক্রেতা। কেউ সেই বৃদ্ধ সবজি বিক্রেতার পাশে দাঁড়ায়নি। এই সমাজের মানুষগুলো মানবতা হারিয়েছে। তাইতো সেই মানবতার দেয়ালের চাপে পিষ্ট হয়েছে অসহায় সেই বৃদ্ধ মানুষটি।


ঠেলাগাড়ির বোঝা বইতে রহিম চাচার এখন বড্ড কষ্ট হয়। কারণ সে দুর্ঘটনায় হারিয়েছে একটি হাত। এক হাত দিয়ে ঠেলাগাড়ি টেনে নিয়ে যাওয়া তার জন্য ভীষণ কষ্টের। তবুও যে আমাদের সমাজের মানুষগুলো তাকে কাজ দেয় এতেই সে ধন্য। কাজ ছাড়া রহিম চাচা যে না খেয়ে মরতো। তাকে কেউ দুবেলা ভাত তুলে দিবেনা। কেউ বলবে না আজ না হয় আমার বাড়িতেই দু মুঠো ভাত খেয়ে নিও। সবাই আমরা বিনিময় খুঁজি। রহিম চাচা আজও কষ্ট করে যাচ্ছেন। তার বিনিময়ে হয়তো তাকে আমরা পয়সা দেই। কিন্তু কখনো বাড়তি পয়সা দিতে আমরা নারাজ। কখনো মানবতার দিক থেকে তাদেরকে সাহায্য করতে চাই না আমরা। তার প্রাপ্য টুকু দিতেও আমাদের কার্পণ্য হয়। অনেক দামাদামি করে তাকে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আসলে মানবতা আজ হারিয়ে গেছে। তাইতো তাদের অসহায়ত্ব আমাদের চোখে পড়ে না। হয়তো দশটি টাকা বেশি দিয়ে তাকে সাহায্য করতে চাই না। মানবতার মাঝের অদৃশ্য দেয়ালের ভারি পাথরগুলো আমাদের হৃদয়টা পাষান করে দিয়েছে।


জীবন চলছে জীবনের মত। আর এই অল্প বয়সেই করিম পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছে নিজের কাধে। তার বাবা বিয়ে করে অন্য জায়গায় ঘর বেঁধেছে। অসুস্থ মা পড়ে আছে বিছানায়। ছোট্ট বোনটা এখনও ঠিকভাবে হাঁটতে শিখেনি। আর করিমের সব মাত্র ১০ বছর পেরিয়েছে। এর মাঝেই সংসারের দায়িত্ব এসে পড়েছে তার ওপর। হয়তো আমরা কেউ মানবিকভাবে তার পরিবারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াইনি। তাইতো সেই ছোট্ট ছেলেটা দ্বারে দ্বারে ঘুরছে মা বোনের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিবে বলে। হয়তো পেটের দায়ে মানুষের দোয়ারে দোয়ারে ঘুরেছে ছেলেটি। কেউ তাকে সাহায্য করেনি। এমনকি কাজের বিনিময়েও টাকা পায়নি। ছোট ছেলে বলে তাকে কেউ কাজ দিতে চায়নি। তবুও সে নিজের দায়িত্বে অটল। কারণ পেট তো আর অভাব বোঝেনা।শেষে বাধ্য হয়ে চুরির রাস্তা খুঁজে নিয়েছে সে। আজ সে সবার কাছেই পকেটমার হিসেবে পরিচিত। কিন্তু যখন সেই ছেলেটি না খেয়ে দিনের পর দিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছে তখন কেউ তার পাশে দাঁড়িয়ে বলেনি আমি তোমার পরিবারের দায়িত্ব নিলাম। কারণ মানবিকতা আজ হারাতে বসেছে। হয়তো আমরা নিজেকে মানুষ দাবী করি। কিন্তু মানবিক গুনে মানুষ হতে পারিনি।


এভাবেই হয়ত মানবিকতা আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। হয়তো জীবনে অনেক কিছুই দেখেছি। কিন্তু কখনো হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করার চেষ্টা করিনি আমরা। যদি আমাদের চারপাশের মানুষগুলোর দুঃখ-কষ্ট হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতাম তাহলে হয়তো মানবিকতার মাঝে দেয়াল তৈরি হত না। তাহলে হয়তো মানবতার চাদরে তাদেরকে আগলে রাখতাম। হয়তো নিজের সাধ্যমত আগলে রাখার চেষ্টা করতাম


❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

Sort:  
 last year 

মানবিকতা একটি মহৎ গুণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। আসলেই প্রত্যেকটা মানুষ হিসেবে সব ধরনের চিন্তা ভাবনা মুলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে অংশীদার করা উচিত। আমাদের সমাজে এমন কিছু লোক আছে যারা নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী চলতে পারে অন্যের বিপদ অন্যের পাশে দাঁড়ানো এই ধরনের মন মানসিকতা তাদের থাকে না সেজন্য সবার উচিত মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।

 last year 

মানবতা সত্যি অনেক মহৎ গুন। কিন্তু মাঝে মাঝে মানবতা কিংবা মানবিকতা আমরা হারিয়ে ফেলি। তাইতো আমাদের চারপাশের মানুষগুলো আরো বেশি অসহায় হয়ে পড়ে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া।

 last year 

দিনশেষে আমরা নিজেদের মানুষ বলে পরিচয় দিলেও যন্ত্রের মতো আমাদের মন আর চোখ শুধু মাত্র স্বার্থের দিকে। সেখানে কে বাঁচলো আর কে না খেয়ে মরলো সেটা দেখার সময় আমাদের নেই। শুধুমাত্র নিজেদের অঢেল চাহিদার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি। কিন্তু ভুলে যাই একদিন মাটি ধন সম্পদ আর শরীর খেয়ে ফেলবে। তাহলে কি লাভ এই অমানবিক আচরণগুলো করে আর নিজেদের টাকার কুমির বানিয়ে?
দিনশেষে মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন।
বড্ড কঠিন।

 last year 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া মাঝে মাঝে নিজেকে মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতেও বিবেকে বাধে। আমরা শুধু নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। আমাদের চারপাশের মানুষগুলোর কথা কখনো ভেবে দেখিনা। ঠিক বলেছেন ভাইয়া দিনশেষে মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন।

 last year 

আসলে আপু সবগুলো কথা ঠিক লিখছেন আপনি আমরা নিজেও এ কথা ভাবি না রাস্তাঘাটে বের হলে। তবে চেষ্টা করি সামনে ভিক্ষুক আসলে যতটুকু পারি হাতে দেওয়ার। আজকাল জিনিসের যা দাম বেড়েছে এসব মানুষের পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে যায় সেটা একমাত্র সৃষ্টিকর্তা জানেন। এছাড়াও আমাদের আশেপাশের এমন বিত্তবান অনেক মানুষ আছেন যারা এসব অসহায় মানুষের দিকে একদম তাকায় না। পড়াগুলো পড়ে অনেক ভালো লেগেছে চেষ্টা করব আপনার কথাগুলো মেনে চলার।

 last year 

আপনি নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন জেনে ভালো লাগলো। আমাদের সকলের উচিত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।

 last year 

আপনার পোস্টটি পড়ে নিজেকে খুবই অপরাধী মনে হচ্ছে আপু। আমাদের সমাজে এমন হাজারো রহিম চাচা, বৃদ্ধ সবজিওয়ালা চাচা, বৃদ্ধ ভিখারি চাচা, রয়েছে। যারা তাদের পেট চালানোর জন্য খুবই কষ্ট করে যাচ্ছে। আসলে কি আমরা পারিনা সে বৃদ্ধি বুখারী চাচা গুলোকে একবেলা পেট পুরে খাওয়াতে। আমরা কি পারি না সেই রহিম চাচার মত চাচাদেরকে মুলামুলি না করে ১০ টাকা বেশি দিয়ে সবজি কিনতে। আমরা পারি আপু ,কিন্তু আমাদের সেই স্বার্থপর মন এখন আর কারো জন্য কাঁদে না স্বার্থপর হয়ে গিয়েছে। তাদের পিছনে লুকিয়ে থাকা কষ্ট পরিশ্রম আমরা এখন আর দেখি না। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 last year 

আমাদের সকলের মাঝে যদি মানবিকতা জাগ্রত হয় তাহলে আমাদের চারপাশের মানুষগুলো ভালো থাকবে। তবে দিন শেষে আমরা স্বার্থপরই রয়ে গেলাম। আপু আপনার মন্তব্য পড়ে অনেক ভালো লাগলো।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.031
BTC 59013.49
ETH 2516.64
USDT 1.00
SBD 2.48