অতিথি||আমার বাংলা ব্লগ [10% shy-fox]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজ আমি "আমার বাংলা ব্লগ" সম্প্রদায়ে একটি ব্লগ তৈরি করতে যাচ্ছি। গল্প লিখতে আমার ভালো লাগে। তাই মাঝে মাঝে গল্প লিখি। আসলে নিজের মনের কথাগুলো গল্পের ভাষায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি। হয়তো আমার লেখা গল্প আপনাদের কাছে ভালো লাগে কিংবা বিরক্তি লাগে। তবুও লেখার চেষ্টা করি।


অতিথি:

flower-g6154befb2_1920.jpg

Source


আজ প্রিয়ার বোনের বিয়ে। বিয়ে উপলক্ষে আজ বাড়ি ভর্তি মেহমান। প্রিয়ার কেন জানি আজ ভীষণ খুশি খুশি লাগছে। আর একদিকে ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেছে। তার বোন তাকে ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি চলে যাবে সেই কথা ভাবতেই প্রিয়ার দুচোখ জলে ভরে যাচ্ছে। তবুও প্রিয়া হাসি মুখে তার বোনের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অন্তরে তার আজ ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। কেন জানি না তার বোনকে হারিয়ে ফেলার অজানা ভয় তার মনে বাসা বেধেছে। তবুও সে অতিথিদের সামনে কাঁদতে পারছে না। বিয়েবাড়ির বিয়ের প্রতিটি মুহূর্তই যেন সবার কাছে আনন্দের। তবুও প্রিয়ার মন খারাপ। প্রিয়ার মন ভালো করার জন্য প্রিয়াকে তার বোন অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরেছিল। আর বলছিল আমি তো মাঝে মাঝেই আসবো। তবুও যেন প্রিয়ার অভিমান ভাঙছিল না।


দেখতে দেখতে বিয়ের শুভক্ষণ চলে এলো। বিয়ে বাড়ি ভর্তি অতিথির মাঝে হঠাৎ করে প্রিয় লক্ষ্য করল কেউ একজন অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয়া ছেলেটিকে দেখে বেশ লজ্জা পাচ্ছিল। কিন্তু ছেলেটি কেন জানি বারবার প্রিয়াকে চোখে হারাচ্ছিল। প্রিয়া যেখানেই যাচ্ছিলো ছেলেটিকে দেখতে পাচ্ছিল। প্রিয়ার মনেও কেন জানি ছেলেটির প্রতি ভালোলাগা তৈরি হয়েছিল। যতক্ষণ সময় ছেলেটি বিয়ে বাড়িতে ছিল প্রিয়াও ছেলেটিকে চোখে হারাচ্ছিলো। কেন জানি ছেলেটির চোখের চাহনি আর মায়াবী চেহারা প্রিয়ার হৃদয় হরণ করেছিল। এবার যখন বিদায়ের পালা এলো প্রিয়া বেশ মন খারাপ করলো। কারণ তার প্রিয় বোন তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আর সেই সাথে তার হৃদয় হরণ করা সেই মানুষটিও চলে যাচ্ছে। হয়তো প্রিয়ার তার প্রতি কিছুটা ভালো লাগা তৈরি হয়েছিল।


পরেরদিন প্রিয়া যখন তার বোনের বাড়িতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল তখন মনের মাঝে আলাদা রকমের উৎসাহ তৈরি হয়েছিল। বারবার ভাবছিল কখন তার বোনকে দেখতে পাবে। আর অজানা আশায় বুক বেঁধে ছিল হয়তো সেই ছেলেটিকে আবারো দেখতে পাবে। অনেক আনন্দ নিয়ে প্রিয়া তোর বোনের বাড়িতে গেল। প্রিয়ার সেই দুচোখ যেন ওই ছেলেটিকে খুঁজছিল। অজানা অচেনা সেই ছেলেটিকে সে কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিল না। অনেক লোকের ভিড়ে সেই মুখটা যেন খুঁজে ফিরে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিল প্রিয়া। এরপর সব ক্লান্তির অবসান হল। হঠাৎ করে প্রিয়া দেখলো তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটি। সেদিনও প্রিয়া দূর থেকে ছেলেটিকে দেখল আর ছেলেটিও প্রিয়ার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। এভাবে কেটে গেল বেশ কিছুদিন। তবে প্রিয়া কাউকে কিছু বলতে পারছিল না। মনে মনে শুধু সেই ছেলেটির কথা ভাবছিল।


প্রিয়া বিভিন্নভাবে তার বোনের সাথে গল্প করার চেষ্টা করছিল আর ছেলেটির সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছিল। কিন্তু কোনভাবেই তেমন কিছু জানতে পারছিল না। অবশেষে হঠাৎ একদিন অচেনা ফোন নাম্বার থেকে প্রিয়ার ফোনে ফোন আসে। অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে আসে একটি কণ্ঠস্বর। প্রিয়া তখনও তাকে চিনতে পারছিল না। এরপর কথা বলার একপর্যায়ে প্রিয়া বুঝতে পারে তার পছন্দের মানুষটি তাকে ফোন করেছে। তখন অনেকটা লজ্জা পেয়ে যায় প্রিয়া। ছেলেটির নাম আকাশ। এভাবেই চলতে থাকে তাদের কথোপকথন। আকাশের সাথে মাঝে মাঝেই প্রিয়ার কথা হতো। প্রিয়া প্রতীক্ষায় থাকতো আকাশের ফোনের। এভাবে যখন আরো কিছু দিন কেটে গেল তখন প্রিয়া আকাশকে ধীরে ধীরে ভালোবেসে ফেলল। তাদের মাঝে বেশ ভালই কথা হচ্ছিল। হঠাৎ করে ছেলেটি প্রিয়ার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিল। প্রিয়া মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়ল। এরপর সে তার বোনের বাসায় গেল।


প্রিয়া তার বোনের কাছে আকাশের সম্পর্কে জানতে চাইলো। যখন প্রিয়া তার বোনের কাছে আকাশের কথা জানতে চাইলো তখনই তার বোন মাথা নিচু করলো আর দু চোখের কোনে জমা জল মুছতে লাগলো। প্রিয়া তার বোনের চোখে জল দেখে অনেকটা ঘাবড়ে গেল। তারপর প্রিয়ার বোন বলল আসলে আকাশ আকাশের মতই বিশাল। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা হয়তো তাকে এই পৃথিবীতে অল্পদিনের অতিথি করে পাঠিয়েছেন।প্রিয়া তার বোনের কথা কিছুই বুঝতে পারছিল না। এরপর আকাশের সম্পর্কে সব কিছু জানতে চাইলো। তখন প্রিয়ার বোন বলল আসলে আকাশ পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার। চার মাস আগে আকাশের ক্যান্সার ধরা পড়েছে। এরপর থেকে আকাশ খুব একটা কারো সাথে কথা বলে না। নিজের মতো করেই সময় কাটায়। একাই আনমনে বসে থাকে। হয়তো তার সময় খুবই কম। আর দুদিন থেকে আকাশ ভীষণ অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হয়তো পরপারে চলে যাওয়ার সময় চলে এসেছে।


প্রিয়া আকাশের এই অবস্থার কথা শুনে অনেকটা কেঁদে ফেলল। এরপর আকাশের ঠিকানা নিয়ে তার সাথে দেখা করতে গেল। যখন প্রিয়া আকাশের সাথে দেখা করতে গেল তখন আকাশ করুন দৃষ্টিত প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। কারণ কোন কথা বলার শক্তি তার ছিল না তার। শুধু ইশারায় কি যেন বলছিল। এবার আকাশের মা আকাশের লেখা ডাইরি এনে প্রিয়ার হাতে দিলো। ডায়েরির পাতায় পাতায় শুধু প্রিয়ার নাম লেখা ছিল। আর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ছিল। ডায়েরির শেষ পাতায় লিখেছিল আমি তোমার জীবনে অতিথি হয়ে এসেছিলাম। হয়তো অতিথিরা জীবনে ক্ষণিকের জন্য আসে। সারা জীবন থাকতে পারে না। তেমনি আমিও তোমার জীবনে শুধুই অতিথি। প্রিয়া আকাশের লেখা ডায়েরী পড়ছিল আর দু চোখের পানি মুছছিল। আকাশের দুটি হাত প্রিয়া শব্দ করে ধরে আছে। কারন সে আকাশকে হারাতে চায় না। প্রিয়া আকাশের দুটি হাত ধরে কাঁদতে লাগলো। প্রিয়ার কান্না যেন আকাশের কান পর্যন্ত আর পৌঁছালো না। কারণ আকাশ সেই সময়ের মধ্যেই পর করে চলে গিয়েছিল। আকাশ প্রিয়ার জীবনে শুধুই অতিথি হয়ে এসেছিল। আর আকাশ সারা জীবন পিয়ার জীবনে ক্ষণিকের অতিথি হয়েই থাকবে।


এভাবেই হয়তো হাজারো আকাশ তার ভালোবাসার মানুষদের জীবনে অতিথি হয়ে থেকে যায়। হয়তো ক্ষণিকের অতিথি হয়ে এসেও সারা জীবন হৃদয়ে ভালোবাসার জায়গা দখল করে নেয়।


❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

Sort:  
 2 years ago 

অতিথি হয়েই আসে আমাদের জীবনে কেউ! আমরা অনেক সময় তাদেরকে হারিয়ে ফেলি আবার অনেক সময় তারা হয় আপমাদের কাছের কেউ! কয়েকদিনে ভালোলাগা, তারপর পরিণয় ফাইনালি আকাশের ক্যান্সার! অতিথি হয়েই যেন প্রিয়ার জীবনে এসেছিল আকাশ, আবার চলেও গেল। চমৎকার লিখেছেন আপু

 last year 

সত্যি ভাইয়া কিছু কিছু মানুষ আমাদের জীবনে অতিথি হয়ে আসে। হয়তো হঠাৎ করে আসে আবার হঠাৎ করেই হারিয়ে যায়। ভাইয়া আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 2 years ago 

সকল ভালবাসা পরিনতি পায় না। কোন কোন ভালবাসা আপনার গল্পের মত বিয়োগান্তক হয়ে থাকে। যে স্মৃতি নিয়ে কোন একজন প্রিয়া তার মনের গভীরে রেখে দেয় সারা জীবন। অনেক সুন্দর হয়েছে গল্পটি। অনেক অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য।

 last year 

ঠিক বলেছেন আপু সকল ভালোবাসা পরিণতি পায় না। আসলে ভালোবাসার গল্পগুলোতে অপূর্ণতার ছোঁয়া লেগেই থাকে। আমার লেখা গল্পটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু।

 last year 

ঠিক বলেছেন আপু সকল ভালোবাসা পরিনতি পায় না। হয়তো দুঃখ ভেসে থাকে সেই মনের গহীনে। তবুও মানুষ সুখী হওয়ার প্রত্যাশা করে। মতামতের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপু।

 2 years ago 

আপনার গল্পটি প্রথম পড়ে খুব ভালো লাগলো কিন্তু পরের দিকে গল্পটি পড়ে অনেক খারাপ লাগলো। কারণ প্রথমে বিয়ের কথা এবং অনুষ্ঠানের কথা শুনে একটু ভালই লাগলো। শেষ দিকে আকাশের কথাটা শুনে অনেক মন খারাপ হয়ে গেল। প্রতিটি মানুষ একদিন না একদিন চলে যাবে তা ঠিক। আকাশ ক্যান্সারে আক্রান্ত শুনে এবং সে বেশি দিন বাঁচবে না এই কারণে একটু বেশি খারাপ লাগলো। আকাশের মা যখন ডাইরিটি তার পছন্দের লোকের হাতে দিল তখন ডাইরির পাতায় পাতায় তার নাম লেখা সত্যিই তার ভালোবাসার কত গভীর ছিল।

 last year 

গল্পের শুরুটা ভালো লাগলেও শেষটা অনেক সময় মনের মত হয় না। আসলে গল্প গুলো এমনই হয়। হয়তো চাওয়া গুলো পূর্ণ হয়না। কিংবা অপূর্ণতা প্রিয় মানুষটিকে দূরে সরিয়ে দেয়। ধন্যবাদ ভাইয়া মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

আকাশের কথা শুনে খুবই খারাপ লাগলো সেই সাথে প্রিয়ার কথা শুনে ও ভীষণ খারাপ লেগেছে। প্রিয়া তার মনের মানুষকে হারিয়েছে। হয়তো আকাশ তার জীবনে অতিথি হয়ে এসেছিল কিন্তু প্রিয়া তাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালবেসে ছিল। তাকে সে কখনো হারাতে চায়নি। কিন্তু হঠাৎ করে যে অতিথি চলে যায় তা প্রিয়া একেবারেই বুঝতে পারেনি। অল্প দিনের জন্য অতিথি হয়ে আসা আকাশ একেবারে চলে গিয়েছে। আমার কাছে গল্প পড়তে ভীষণ ভালো লাগে। খুবই সুন্দর একটি গল্প লিখেছেন আপনি। ভালোই ছিল গল্পটি।

 last year 

আকাশ এবং প্রিয়ার ভালবাসা পূর্ণতা পায়নি। আসলে আকাশের এই পরিণতিতে সত্যিই খারাপ লেগেছে। হয়তো এভাবেই প্রিয় মানুষগুলো হারিয়ে যায় আর অতিথি হয়ে হয়তো এভাবেই জীবনে আসে।

 2 years ago 

আকাশের এরকম পরিণতি শুনে খুবই খারাপ লেগেছে। আকাশ কয়েক দিনের জন্য প্রিয়ার মনে অতিথি হয়ে এসেছিল সত্যি খুবই দুঃখজনক বিষয় আকাশের বিষয়টি। প্রিয়া মনে হয় মানসিক ভাবে প্রচুর ভেঙে গিয়েছে। প্রথমদিকে তো এই গল্পটি পড়তে আমার কাছে বেশ ভালোই লাগছিল। কিন্তু শেষের দিকে পড়ে খুবই খারাপ লেগেছে সত্যিই ভাবতেই অনেক কষ্ট হচ্ছে। যাইহোক এরকম একটি গল্প সবার মাঝে শেয়ার করেছেন দেখে ভালো লাগলো।

 last year 

মাঝে মাঝে ভালোবাসার শেষ পরিণতি মেনে নিতে কষ্ট হয়। কিন্তু জীবনের বাস্তবতার কাছে আমরা সবাই অসহায়। হয়তো এভাবেই প্রিয় মানুষগুলো অতিথি হয়ে জীবনে আসে। আবার হারিয়েও যায়। ধন্যবাদ আপু।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 68148.22
ETH 3249.65
USDT 1.00
SBD 2.67