চিলেকোঠার ঘর||আমার বাংলা ব্লগ [10% shy-fox]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে।আজ আমি "আমার বাংলা ব্লগ" সম্প্রদায়ে একটি ব্লগ তৈরি করতে যাচ্ছি। আজকে আমি দারুন একটি গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আশা করছি আমার লেখা গল্পটি সবার কাছে ভালো লাগবে।


চিলেকোঠার ঘর:

kempen-g505a98545_1920.jpg

Source


নিলয় সবেমাত্র ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। ঢাকা শহরে থাকার মত তার তেমন কোন জায়গা নেই। একদিকে ঢাকা শহরের পরিবেশ তার কাছে বিরক্ত লাগছে অন্যদিকে থাকার মত ভালো জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না। সবকিছু মিলিয়ে নিলয় বেশ বিরক্ত হয়ে পড়েছে। ভার্সিটির হলে সিট পেতে তার বেশ সময় লাগবে। তাইতো সে থাকার জন্য একটি চিলেকোঠার ঘর খুঁজতে লাগলো। অবশেষে নিলয় এক বাসার চিলেকোঠার একটি ঘর বাঁকা পেল। অনেক কষ্টে সে এই বাসাটি জোগাড় করেছে। এরপর তার জিনিসপত্র গুলো নিয়ে সেই বাসায় উঠে পড়ল। চিলেকোঠার ঘর তার পছন্দ হয়েছে। একেবারে নিরিবিলি একটি পরিবেশ। নিজের মতো করে সাজিয়ে নিল তার ঘর। নিলয় খুবই সৌখিন মানুষ। তাইতো নিজের মনের মতো করে ঘরটি সাজিয়ে রাখতে পছন্দ করে। অবশেষে সব কিছু গুছিয়ে নিল।বাড়িওয়ালার সাথে তার খুবই কম কথা হত। তিনি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছিলেন বাসায় ফেরার জন্য। নিলয় ভদ্র ছেলের মত বাড়িওয়ালার কথাগুলো শুনেছিল এবং মেনে চলার চেষ্টা করছিল।


হঠাৎ একদিন বন্ধুর জন্মদিনে কিছুটা সময় কাটাতে গিয়ে বাসায় ফিরতে দেরি হয়ে গেল। নিলয় গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রইল। ভেতর থেকে গেটে তালা লাগানো ছিল। এরপর ঘড়িতে লক্ষ্য করল তার ফিরতে এক ঘন্টা লেট হয়ে গেছে। দেরিতে বাসায় ফেরার শাস্তি স্বরূপ তাকে সেই রাত রাস্তায় কাটাতে হলো। রাতের আঁধার যেনো কাটছিল না নিলয়ের। তাইতো বারবার তাকিয়ে দেখছিল ঘড়ির কাঁটার দিকে। অবশেষে যখন ভোরের আলো ফুটে উঠলো তখন নিলয় দেখতে পেল বারান্দায় দাঁড়ানো একটি ফুটফুটে সাদা পরী। যাকে সে এর আগে কখনো দেখেনি। হয়তো ফজরের নামাজ পড়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। দূর থেকে তাকে দেখে নিলয় তার প্রেমে পড়ে গেল।মেয়েটি হয়তো নিলয়কে লক্ষ্য করেনি। তবে নিলয় অপলক দৃষ্টিতে সেই সাদা পরীর দিকে তাকিয়ে ছিল। মনে হচ্ছিল যেন বেহেস্তের কোন হুর এসে তার সামনে ধরা দিয়েছে। সেই মেয়েটির মায়াবী চোখের চাহনি, আনমনে প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে থাকা সবকিছুই যেন নিলয়ের অন্তরে গেঁথে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি নিজের রুমে চলে গেল। নিলয় মনে মনে ভাবলো সারারাত অনেক কষ্টে কাটিয়েছি তাই বোধহয় সকালটা এত সুন্দর হল।


অবশেষে বাসার গেট খোলা হল। নিলয় নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লো। নিলয় কিছুতেই সেই মেয়েটিকে ভুলতে পারছে না। বারবার মনে পড়ছে সেই মেয়েটির মুখ। সাদা ওড়না ওড়না পড়া মেয়েটিকে দেখে নিলয়ের হৃদয়ে ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল আরো কিছুটা সময়। কিন্তু নিলয়ের চোখে আজ ঘুম নেই। নির্ঘুম একটি রাত কাটানোর পরেও যেন দুচোখের পাতা এক করতে পারছে না নিলয়। যখনই দুচোখ বন্ধ করছে তখনই সেই সাদা পরী এসে তার সামনে ধরা দিচ্ছে। তাই তো সে ঘুমাতে গিয়েও ঘুমাতে পারছে না। নিলয় সেই মেয়েটিকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলো। এর আগে নিলয় কখনো সেই মেয়েটিকে দেখেনি। নিলয় জানতোনা সেই বাড়িতেই মেয়েটি থাকে। নিলয় সব সময় অপেক্ষা করত হয়ত কোনদিন সেই মেয়েটি তার চিলেকোঠার ঘরের পাশে এসে দাঁড়াবে। কিংবা ছাদে এসে সময় কাটাবে। নিলয় তার জন্য প্রতীক্ষা করতে লাগলো। কিন্তু তার প্রতীক্ষা শেষ হয় না। একদিন হঠাৎ করে নিলয়ের স্বপ্ন সত্যি হলো। নিলয় যখন সকালবেলায় ছাদে হাঁটাহাঁটি করছিল এমন সময় দেখল সেই মেয়েটি গাছে পানি দিচ্ছে। নিলয়কে দেখে মেয়েটি বেশ লজ্জা পেল। এরপর দৌড়ে চলে গেল। নিলয় মনে মনে ভাবলো আর একবার যেহেতু তুমি আমায় দেখা দিয়েছো তাই তুমি আমার কল্পনা নয় তুমি আমার জীবনের বাস্তব।


নিলয় রোজ সকালে মেয়েটির জন্য অপেক্ষা করত। সে ভাবতো হয়তো কোনদিন সেই মেয়েটি তার পাশে এসে দাঁড়াবে। কিন্তু সেই মেয়েটি আর এলোনা। এভাবে নিলয় প্রত্যেকদিন মেয়েটির প্রতীক্ষায় বসে থাকতো। একদিন সন্ধ্যায় নিলয় মনের আনন্দে গান গেয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে তার দরজায় কেউ কড়া নাড়লো। দরজা খুলে সেই মেয়েটিকে দেখে নিলয় অনেকটা অবাক হয়ে গেল। মেয়েটির হাতে ছিল এক বাটি পায়েস। নিলয় মেয়েটিকে দেখে অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকলো। এরপর মেয়েটি কিছু না বলেই নিলয়ের হাতে পায়েসের বাটিটি দিয়ে চলে গেল। মেয়েটির চলে যাওয়া নিলয় চেয়ে চেয়ে দেখলো। মেয়েটি কোন কিছু না বলেই চিলেকোঠার সেই ঘর থেকে চলে গেল। নিলয় মনে মনে ভাবল মেয়েটি তার সাথে একটু কথাও বলল না। মনে মনে কিছুটা অভিমান হল নিলয়ের। এভাবে আরো কিছুদিন কেটে গেল। হঠাৎ একদিন নিলয় দেখল মেয়েটি আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। নিলয় পিছন থেকে গিয়ে তাকে বলল আপনি কি আকাশ পছন্দ করেন? মেয়েটি কোন কথা বলল না । এবার নিলয় বলল আপনি যদি আকাশ পছন্দ করেন তাহলে মাঝে মাঝে আসতে পারেন আমার এই চিলেকোঠার ঘরের পাশে দুজনে মিলে না হয় আকাশ দেখবো। কারণ আকাশ দেখতে আমার খুবই ভালো লাগে। তবে আকাশের সৌন্দর্য দুজনে মিলে দেখলে সময়টা আরো সুন্দর হবে। মেয়েটি কিছু না বলে এবারও চলে গেল।


এরপর পরের দিন নিলয় যখন ঘুম থেকে উঠে ছাদে যাওয়ার জন্য দরজা খুলল তখন দেখতে পেল দরজার সামনে একটি চিরকুট। অনেক কৌতূহলের সাথে নিলয় চিরকুটটি খুলে দেখলো কিছু কথা লেখা যেখানে। লেখা ছিল আমি আকাশ দেখতে পছন্দ করি। তবে একা একা আকাশ দেখতে আমার বেশ ভালো লাগে। কারণ আকাশের মাঝে নিজের মনের কথাগুলো খুঁজে পাই। আমি হয়তো নিজের মনের কথাগুলো কাউকে বলতে পারি না। তাইতো ওই দূর আকাশের মাঝে নিজের মনের কথা গুলো বিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। আমি কথা বলতে পারি না। তাইতো নিজের কথাগুলো কাউকে বলতে পারি না। তাই আমি নিঃসঙ্গতাকে সঙ্গী করে নিয়েছি। হয়তো কোনদিন চিলেকোঠার পাশে এসে আপনার সাথে গল্প করা হবে না। হয়তো কোনদিন বলা হবে না আকাশটা ভীষণ সুন্দর। কিংবা বলা হবে না আমি আকাশ দেখতে পছন্দ করি। মেয়েটির চিঠি পড়ার পর নিলয়ের অনেক খারাপ লাগছে। পরীর মত মেয়েটি কথা বলতে পারেনা এই কথাটি ভাবতেই নিলয়ের বেশ কষ্ট হচ্ছে। অবশেষে নিলয় মেয়েটির জন্য প্রতীক্ষায় থাকলো। নিলয় যখন মেয়েটিকে দেখল নিজের চিলেকোঠার পাশে তখন একটি খাতা কলম নিয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ালো। বলল তোমার মনের কথাগুলো আমার খাতায় লিখে দিও সেই কথাগুলো আমি হৃদয়ের খাতায় লিখে দিব। এভাবেই চলতে লাগলো তাদের মিষ্টি প্রেমের গল্প।


আশা করছি আমার লেখা গল্পটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লাগবে। আমার লেখা গল্পটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লাগে তাহলে আমার অনেক ভালো লাগবে। কারণ আপনাদের কাছে যদি ভালো লাগে তাহলে আমিও উৎসাহ পাবো নতুন নতুন গল্প লিখতে।


❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

Sort:  
 2 years ago 

প্রথমে যখন বলেছিলেন একটা সাদা পরী ফজরের নামাজ পড়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। আমি ভেবেছিলাম সত্যিকারের কোন পরি ☺️। পরে অবশ্যই গল্পটি পড়ে বুঝতে পারলাম। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনার এত সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। খুবই ভালো লাগে এমন রোমান্টিক গল্প গুলো পড়তে।

 2 years ago 

আমার গল্পের সাদা পরীকে বাস্তবতায় আনতে পেরে ভালো লেগেছে। যাই হোক নিলয় এবং সেই সাদা পরীর মিষ্টি প্রেমের গল্প এভাবেই এগিয়ে গেছে। আমার পোস্ট পরিদর্শনের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 2 years ago 

আপু আপনার চিলেকোঠার ঘর গল্প টা পড়ে খুব ভালো লাগলো।আপনার গল্পটি পড়তে পড়তে গল্পের ভেতর ঢুকে গিয়েছিলাম।চরিত্র গুলো যেনো চোখের সামনে ভাসছে।এরকম আরও সু্ন্দর গল্প চাই আপনার থেকে।অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

চিলেকোঠার ঘর গল্পটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। আসলে যখন গল্পের চরিত্রগুলো চোখের সামনে ভেসে বেড়ায় তখন মনে হয় যেন সবকিছুই চোখের সামনে ঘটছে। যখন পাঠক গল্পের মাঝে কল্পনার চরিত্র গুলোকে বাস্তবতায় রূপ দেওয়ার চেষ্টা করে তখন লেখা সার্থক হয়।

 2 years ago 

আপু, আপনার গল্পের নিলয়ের মন খুবই উদার,আর তাই সে সাদা পরির মত দেখতে মেয়েটি বোবা হওয়া সত্বেও,তার মনের কথা বলার জন্য নিলয়ের খাতা নিয়ে এসেছে।আর সেই কথাগুলো নিলয় তার হৃদয়ে লিখে নিবে। দারুন গল্প লিখেছেন আপু, পড়তে ভীষণ রকম ভালো লাগলো। আর তাই পরবর্তী সময়েও সুন্দর সুন্দর গল্প শেয়ার করবেন এই কামনা করছি। ধন্যবাদ

 2 years ago 

নিলয়ের মত এমন কিছু মানুষ আছে যারা আজও নিজের উদারতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। যাই হোক আমার লেখা গল্পটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে যেন ভালো লাগলো। মন্তব্য প্রকাশ করে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 2 years ago 

সত্যিকার অর্থে প্রকৃত ভালোবাসা হয় এক পলকে ই। যাকে একবার দুচোখে ভালো লেগে যায় তাকে হৃদয় থেকে সরানো যায় না। সেখানে লুকিয়ে থাকে তার রূপের হাজারো বর্ণনা। আপনি দারুন লিখেছেন বেশ মজা লেগেছে। চিলেকোঠা ঘর ভালোবাসার নিদর্শন সত্যি অনেক ভালো হয়। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 2 years ago 

হয়তো সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো এমনই হয়। তাইতো এক পলকের একটু দেখার মাধ্যমে ভালবাসায় তৈরি হয়। অনেক সুন্দর ভাবে মন্তব্য প্রকাশ করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 2 years ago 

আপনি অনেক সুন্দর একটি গল্প লিখেছেন। গল্পের নিলয় সত্যিই অনেক ভালো মানুষ। গল্পটা যতক্ষণ পড়ছিলাম যেন গল্পের ভেতরে ঢুকে পড়লাম। যেন অচেনা রাজ্যে হারিয়ে গেলাম। নিলয় সাদা পরীর মত মেয়েটিকে দেখে ভালোবেসে ফেলল। যদিও মেয়েটি বোবা ছিল। নিলয় সত্যি অনেক উদার মনের মানুষ।

 2 years ago 

আমার গল্পের অন্যতম চরিত্র নিলয় সত্যি অনেক ভালো মানুষ। সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে সত্যিকারের ভালোবেসেছিল। আশা করছি এভাবে হাজার হাজার ভালোবাসা বেঁচে থাকবে।

 2 years ago 

আপনার পুরো গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো আমার। খুবই রোমাঞ্চকর গল্প আমাদের মাঝে উপহার দিয়েছেন। গল্পের মাঝে অনেকগুলো বিষয়ে ফুটিয়ে তোরা চেষ্টা করেছেন। এত সুন্দর দুর্দান্ত গল্প শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। আপনার থেকে এই ধরনের গল্প আরো আশা করি।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59131.70
ETH 2599.11
USDT 1.00
SBD 2.40