দীর্ঘদিন পর বরযাত্রী যাওয়ার অনুভূতি

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম,

আমার বাংলা ব্লগের সকল বন্ধুরা ,আপনারা সবাই কেমন আছেন ? আশা করি সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে খুব ভালো আছি।

আজকে আমি আপনাদের সামনে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। গতকালকে আমি আমার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। দূর সম্পর্কের আত্মীয় হচ্ছে বর এবং তাদের বাসা আমাদের এলাকাতেই, কিন্তু সে যেখানে বিয়ে করছে, তার মানে কনে পক্ষের বাসা হচ্ছে নয়াপুর নানাখীতে। নয়াপুর নানাখী আমাদের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানায় অবস্থিত এবং আমাদের বাসা থেকে নয়াপুর নানাখী যেতে প্রায় এক ঘন্টা সময় লাগে। যাইহোক আমরা জুম্মার নামাজ শেষ করে বরযাত্রীরা দুপুর ২ টার দিকে, আগে থেকেই ভাড়া করা বাসে চড়ে রওনা দিলাম। আমরা বরযাত্রী প্রায় ১৫০ জনের মত গিয়েছিলাম।

20221223_152356.jpg

20221223_152606.jpg

20221223_161139.jpg

রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম থাকার কারণে আমাদের পৌঁছাতে বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিল। আমরা দুপুর ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে নয়াপুর নানাখী পৌঁছালাম। বাস থেকে নেমে আমরা প্রায় ৭-৮ মিনিটের মত পায়ে হেঁটে কনের বাড়িতে পৌঁছালাম। কনের বাড়িতে যাওয়ার রাস্তায় আমি খুব সুন্দর একটি মসজিদ দেখতে পেলাম। মসজিদটি আমার কাছে খুবই আকর্ষণীয় লেগেছিল, তাই আমি মসজিদটির ফটোগ্রাফি করে নিলাম। তারপর বিয়ের গেট এবং আশেপাশের আরো কিছু ফটোগ্রাফি করে নিলাম। অনেকক্ষণ ট্রাফিক জ্যামে বসে থাকার কারণে, ভীষণ খিদে পেয়েছিল। তাই কনের বাড়িতে গিয়ে আমরা সরাসরি খাবার টেবিলে বসে পড়লাম। প্রথমে প্লেটে পোলাও নিলাম এবং তারপর রুই মাছ নিলাম।

20221223_161429.jpg

20221223_155710.jpg

রুই মাছ রোস্ট এর মত করে রান্না করা হয়েছিল, সেজন্য খেতে ভীষণ সুস্বাদু হয়েছিল। এরপর পর্যায়ক্রমে মুরগির রোস্ট, চিকেন ফ্রাই, গরুর মাংস, মুগ ডাল, জর্দা এবং বোরহানি খেলাম। খাবারের মান বেশ ভালো ছিল, প্রতিটি খাবারই খুব ইয়াম্মি হয়েছিল। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে চলে গেলাম স্টেজের সামনে, যেখানে পাত্র বসে ছিল। তারপর আমি পাত্রের ফটোগ্রাফি করলাম। বিয়ের অনুষ্ঠানটি খুবই সাধারণভাবে হলেও আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। কারণ গ্রাম্য পরিবেশ আমার এমনিতেই সবসময় বেশি ভালো লাগে। এরপর আমরা কয়েকজন মিলে গ্রামটি ঘুরে দেখতে বের হলাম এবং ফাঁকে ফাঁকে কিছু ফটোগ্রাফিও করে নিলাম।

20221223_160947.jpg

20221223_161208.jpg

20221223_153428.jpg

অল্প একটু সামনে যেতেই দেখলাম অনেক বড় ক্ষেত এবং একটি লোক ধানের চারা রোপণ করছে। সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আশেপাশের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করলাম এবং কয়েকটি ফটোগ্রাফিও করে নিলাম। তারপর আমরা কিছুক্ষণ হেঁটে কনের বাড়িতে আবারও প্রবেশ করলাম। ভাবলাম বিয়েটা সম্পন্ন হলে তারপর বাসায় চলে যাব। তবে একটি মজার ঘটনা দেখলাম, আর সেটা হচ্ছে কয়েকজন হিজড়া এসেছে টাকা নেওয়ার জন্য। তারা ৫০০০ টাকা দাবি করছে কনে পক্ষের কাছ থেকে।

20221223_160054.jpg

20221223_160343.jpg

আমি কনে পক্ষের একজনের কাছে জিজ্ঞেস করলাম, হিজড়ারা কেন টাকা চাচ্ছে। তখন সেই লোকটি বলল এদিকে যেকোন অনুষ্ঠান হলেই নাকি হিজড়ারা টাকা নিতে চলে আসে। তো যাইহোক কনে পক্ষ ৩০০০ টাকা দিতে রাজি হয়েছে, কিন্তু হিজড়ারা ৫০০০ টাকার কম নিবেই না। এক পর্যায়ে হিজড়ারা চিৎকার চেঁচামেচি করে পুরো বিয়ে বাড়ি গরম করে ফেলল। অবশেষে কনে পক্ষ ৫০০০ টাকা দিয়ে হিজড়াদেরকে বাড়ি থেকে বিদায় করল।

20221223_160042.jpg

20221223_160343.jpg

হিজড়াদের এই ব্যাপারটা এর আগে আমি শুনেছিলাম, কিন্তু স্বচক্ষে এই প্রথম দেখলাম যে, তারা কোন অনুষ্ঠানে গিয়ে এভাবে চাঁদা আদায় করে। যাইহোক বন্ধুরা আপনাদের এমন বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। তারপর আরো অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর জানতে পারলাম যে, বিয়ে সম্পন্ন করতে আরো অনেকক্ষণ সময় লাগবে। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম যে বাসায় চলে যাব। তারপর আমরা কয়েকজন মিলে মেইন রোডে চলে গেলাম বাসে চড়ার জন্য। বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটের দিকে আমরা নয়াপুর নানাখী থেকে রওনা দিলাম এবং প্রায় এক ঘন্টা পর বাসায় পৌঁছালাম।

20221223_161845.jpg

Location

বন্ধুরা আজকে এই পর্যন্তই। আপনাদের কাছে পোস্টটি কেমন লাগলো, তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আবারো ইনশাল্লাহ দেখা হবে অন্য কোন পোস্টে।সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

ক্যাটাগরিভ্রমণ
ফটোগ্রাফার@mohinahmed
ডিভাইসSamsung Galaxy Note 20 Ultra 5g
তারিখ২৪.১২.২০২২
স্থানw3w
Sort:  
 2 years ago 

রুই মাছের সাথে পোলাও কখনও খাওয়া হয়নি। যাইহোক যেহেতু অন্যান্য খাবারও ছিল তাই মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়ির খাওয়া দাওয়া বেশ ভালই হয়েছে। আর আপনি যেহেতু বরপক্ষ থেকে গিয়েছেন তাহলে তো আদর আপ্যায়ন অনেক ভালো হয়েছে। গ্রামীন পরিবেশে দারুন একটি বিয়ের অনুষ্ঠান উপভোগ করছেন সেখানে গিয়ে। সুন্দর একটি সুন্দর মসজিদ দেখেছেন জেনে ভালো লাগলো। শুভকামনা রইল ভাইয়া।

 2 years ago 

জি আপু রুই মাছ রোস্টের মত রান্না করা হয়েছিল, তাই খেতে ভীষণ সুস্বাদু হয়েছিল। আর আপ্যায়নও অনেক ভালোভাবে করেছিল। সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

এখন শীতকাল আর এই শীতের সময় অনেক বিয়ের অনুষ্ঠান দেখা যায়। আপনি বরযাত্রী গিয়েছেন দেখে ভালো লাগলো ভাইয়া। তবে রুই মাছ দিয়ে পোলাও খাওয়ার নতুন একটি অভিজ্ঞতা জেনে নিলাম। আমাদের এদিকে বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে হিজড়ারা আসে না ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে বরযাত্রী যাওয়ার এত সুন্দর মুহূর্ত শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

ঠিকই বলেছেন আপু শীতের সময় অনেক বিয়ের অনুষ্ঠান দেখা যায়। রুই মাছ দিয়ে পোলাও একদিন খেয়ে দেখবেন ,আশা করি খুব ভালো লাগবে। সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

ভাইয়া আমাদের এখানেও হিজড়াদেরকে টাকা দিতে হয়। বিয়েতে ,নতুন বাচ্চার জন্ম হলে হিজড়াদেরকে বড় অংকের টাকা দিতে হয়। অনেকদিন পর বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা শুনে বিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে। বরযাত্রী হিসেবে গিয়েছেন নিশ্চয়ই বেশ ভালই আদর আপ্যায়ন পেয়েছেন।

 2 years ago 

আপনাদের দিকেও হিজড়াদেরকে টাকা দিতে হয়, তার মানে অনেক জায়গাতেই এরকমটা হয়ে থাকে। যাইহোক সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পাশে থাকার জন্য, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

আসলে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার অনুভূতি সত্যি খুবই অন্যরকম হয়ে থাকে। সকলের সাথে সুন্দরভাবে সময় কাটানো, খাওয়া দাওয়া, গল্প গুজব করা সব মিলিয়ে দুর্দান্ত সময় পার হয়। গ্রামীন পরিবেশে খাওয়া দাওয়া নিশ্চয় অনেক সুন্দর ভাবে খেয়েছেন। রুই মাছ দিয়ে পোলাও খাওয়ার কখনো হয়নি। পোস্টটি শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

 2 years ago 

গ্রামীণ পরিবেশে খাওয়া দাওয়া, আশেপাশে একটু হাটাহাটি, গল্প গুজব করা, সব মিলিয়ে অনূভুতি বেশ ভালো ছিল। গুছিয়ে মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

বিয়ে অনুষ্ঠানে একসাথে যাওয়া এবং একসাথে বসে খাওয়া মজাই আলাদা। আপনি বিয়ে বাড়িতে খুব সুন্দর করে মজা করে খেয়েছেন। ফটোগ্রাফি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তবে আমাদের এইদিকেও হিজড়া গুলো যেকোনো বিয়ে অনুষ্ঠানে এসে টাকা চাই। না দিলে অনেক ঝামেলা করে। আপনি খুব সুন্দর করে বিয়ে যাওয়ার অনুভূতি এবং খাওয়ার অনুমতি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এবং আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।

 2 years ago 

জি আপু ঠিকই বলেছেন বিয়ের অনুষ্ঠানে একসাথে যাওয়া এবং একসাথে বসে খাওয়ার মজাই আলাদা। সুন্দর মতামত প্রকাশ করার জন্য এবং আমাকে শুভকামনা জানানোর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকেও।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 58363.73
ETH 2484.43
USDT 1.00
SBD 2.39