হানিমুন ট্যুর কক্সবাজার ভ্রমণ ৩য় (শেষ পর্ব), ১০% বেনিফিশিয়ারি @shy-fox, ৫% বেনিফিশিয়ারি @abb-school
আসসালাম ওয়ালাইকুম, আশা করি সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে খুব ভালো আছি। এর আগে আমি হানিমুন ট্যুর কক্সবাজার ভ্রমণ ২য় পর্ব আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম এবং আজকে ৩য় (শেষ পর্ব) শেয়ার করতে যাচ্ছি। আশা করি আপনাদের কাছে খুব ভালো লাগবে। ইনানী বীচে ঘোরাফেরার পর আমরা চলে গেলাম হিমছড়িতে পাহাড় দেখতে। সিএনজি দিয়ে যেতে যেতে আশেপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং সী বিচের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতেছিলাম। এরই মধ্যে আমরা হিমছড়ি চলে আসলাম। তারপর আমরা টিকিট কেটে গেইটের ভিতরে ঢুকলাম হিমছড়ির পাহাড় এবং ঝর্ণা দেখার জন্য।
লোকেশন - হিমছড়ি পাহাড়ের উপর থেকে তোলা ছবি
আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম প্রথমে আমরা পাহাড়ে উঠবো তারপর ঝর্ণা দেখব। আমরা সিঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠতে থাকলাম, লোকজন খুব বেশি ছিল না মোটামুটি ছিল। উপড়ে উঠতে উঠতে আমরা মাঝেমধ্যে বিরতি নিচ্ছিলাম, কারন আমার ওয়াইফ খুব ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছিল কেননা সে পাহাড়ে এর আগে তেমন একটা উঠেনি। তারপর অবশেষে আমরা সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ের উপরে উঠে গেলাম। এতক্ষণ সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে পুরো শরীর ঘেমে একেবারে বাজে অবস্থা হয়ে গিয়েছিল,কারণ তাপমাত্রা অনেক বেশি ছিল। তাই পাহাড়ে উঠে প্রথমে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে শরীরটাকে শীতল করে নিলাম। চারিদিকে শীতল বাতাস বয়ে যাচ্ছিল, ইচ্ছে করছিল মুখটাকে হা করে সব বাতাস পেটের ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলি। যাইহোক সেটা তো আর সম্ভব না। তারপর পাহাড়ে অনেকক্ষণ হাটাহাটি করলাম এবং আশেপাশের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ উপভোগ করলাম।
লোকেশন - হিমছড়ি পাহাড়ের উপর থেকে তোলা ছবি
পাহাড়ের উপর থেকে সমুদ্রের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম, এত ভালো লাগছিল যা বলে বোঝানো যাবে না। পাহাড়ের উপর থেকে সমুদ্রের ছবি তুললাম এবং আশেপাশে একটু ঘোরাফেরা করে আরো কিছু ছবি তুলে পাহাড় থেকে নিচে নেমে পড়লাম। তারপর আমরা চলে গেলাম ঝর্ণা দেখতে,সেখানে গিয়েও দেখতে পেলাম লোকজন এর সমাগম মোটামুটি রয়েছে। ঝর্ণাটি তেমন বড় না,ছোটই বলা যায়। অনেকে দেখলাম ছবি তোলা নিয়ে খুব ব্যস্ত। দুএকটি ছবি তুলে বের হয়ে পরলাম সেখান থেকে। তারপর সিএনজি নিয়ে চলে গেলাম একেবারে হোটেলে। তারপর ফ্রেশ হয়ে রুমের মধ্যে বিশ্রাম করলাম অনেকক্ষণ। রাত আটটার পর সুগন্ধা বীচ এর দিকে গেলাম একটু হাঁটাহাঁটি করার জন্য। বীচের মধ্যে একটু হাঁটাহাঁটি করার পর সী ফিশ খাওয়ার প্ল্যান করলাম। কিন্তু আমার ওয়াইফ বলল সে নাকি চিংড়ি ছাড়া অন্য কিছু খাবে না, আর আমি ঠিক করলাম স্যালমন ফিশ এবং অক্টোপাস খাব। কারন অনেকদিন হলো অক্টোপাস খাওয়া হয়না, কোরিয়াতে যখন ছিলাম তখন প্রচুর পরিমাণে অক্টোপাস খেয়েছি।
লোকেশন - হিমছড়ির ঝর্ণা
অনেকদিন পর চোখের সামনে অক্টোপাস দেখে লোভটা আর সামলাতে পারলাম না। তারপর অনেক দামাদামির পর চিংড়ি, অক্টোপাস এবং একটা স্যালমন ফিস নিয়ে নিলাম। কিন্তু এর মধ্যে আমার ওয়াইফ ঝামেলা বাঁধালো।সে আমাকে আস্তে আস্তে বলতে লাগল আমি যদি অক্টোপাস খাই তাহলে সে নাকি আমার সাথে এক সপ্তাহ কথা বলবেনা। কারণ তার নাকি অক্টোপাস দেখলেই কেমন ঘৃণা লাগে। তো কি আর করার অবশেষে শুধু চিংড়ি আর স্যালমন ফিস বারবিকিউ করার জন্য বললাম। ছয়টা চিংড়ি আর একটা স্যালমন ফিস ৬০০ টাকা নিল একেবারে বারবিকিউ করা পর্যন্ত। বারবিকিউ করা শেষ হয়ে গেলে সেখানে বসেই খেয়ে নিলাম। বারবিকিউটা আসলেই খুব অসাধারণ হয়েছে কারণ টমেটো সস দিয়ে খেতে ভীষণ টেস্টি লাগছিল। সত্যিই খুব ইয়াম্মি ছিল সী ফিসগুলো।
লোকেশন- হিমছড়ি
তারপর হোটেলে চলে গেলাম, রাত ১০টার দিকে হোটেলের রুমের মধ্যেই ডিনার করে নিলাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে আমরা ঘুমিয়ে পরলাম। পরের দিন সকালে উঠে প্ল্যান করলাম আজকে রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ডে যাব ঘুরতে এবং সেখান থেকে মেইন বার্মিজ মার্কেটে যাবো বাসার জন্য কিছু কেনাকাটা করার জন্য। কারণ পরের দিন সকালে আমরা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা করব। হোটেল থেকে বের হয়ে প্রথমে আমরা ঝাউবন রেস্তোরাঁতে নাস্তা করে নিলাম। তারপর চলে গেলাম সেন্টমার্টিন শান্তি পরিবহনের কাউন্টারে টিকিট কেনার জন্য। পরের দিন সকাল ১১টায় ডলফিন মোড় থেকে বাস রওনা দেবে, ১৪০০ টাকা দিয়ে দুইটা নন এসি বাসের টিকিট কিনে নিলাম। একদিন আগে টিকিট কেনার উদ্দেশ্য হচ্ছে বাসের সামনের দিকের সিটগুলো এভেলেবেল পাওয়া যায়। তারপর আমরা একটা অটো ভাড়া করে চলে গেলাম ঝাউতলা মেইন রোডের দিকে, রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড সেখানেই অবস্থিত। ৬০০ টাকা দিয়ে দুইটা এন্ট্রি টিকেট কিনে রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড এর ভিতরে প্রবেশ করলাম। তারপর ভিতরে অনেকক্ষণ ঘোরাফেরা করলাম, অ্যাকুরিয়ামের ভিতরে থাকা দেশি-বিদেশি অনেক ধরনের ফিস দেখতে পেলাম।
লোকেশন- সুগন্ধা বীচ সংলগ্ন
বড় মাঝারি ছোট বিভিন্ন কালারের নানা রকমের অনেক সুন্দর সুন্দর ফিস দেখতে পেলাম। যা দেখে যেকোনো মানুষের মন ভালো হয়ে যাওয়ার কথা। তারপর কিছু ছবি তুলে সেখান থেকে বের হয়ে গেলাম। তারপর আমরা সেখান থেকে চলে গেলাম বার্মিজ মার্কেটে কিছু কেনাকাটা করার জন্য। আমরা বার্মিজ মার্কেট থেকে বিভিন্ন ধরনের শুটকি, চকলেট, আচার, জামা-কাপড়, পাথরের সেট এবং কিছু খেলনা কিনলাম। কেনাকাটা শেষ করে একটি অটো ভাড়া করে চলে গেলাম হোটেলের দিকে। তারপর হোটেলে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করে লম্বা একটা ঘুম দিলাম। ঘুম থেকে উঠলাম সন্ধ্যার একটু আগে, তারপর চলে গেলাম সুগন্ধা বীচ এর দিকে। বীচের মধ্যে একটু হাটাহাটি করলাম এবং কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর টুকিটাকি আরো কিছু কেনাকাটার পর চলে গেলাম হোটেলে। তারপর রাতে ডিনার শেষ করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম কারণ পরের দিন সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে হবে।
লোকেশন- রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করার পর ব্যাগ গুছিয়ে ১০.৩০ এর দিকে হোটেল থেকে চেক আউট করে, একটি অটো ভাড়া করে চলে গেলাম ডলফিন মোড়ে। সেন্টমার্টিন শান্তি পরিবহনের কাউন্টারে অপেক্ষা করতে লাগলাম বাসের জন্য। বেলা ১১ টায় বাস আসার কথা থাকলেও ৩০ মিনিট দেরি হয়ে যায়। বেলা ১১.৩০ এর দিকে রওনা দিলাম ডলফিন মোড় থেকে এবং সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমরা মদনপুর পৌঁছে গেলাম। তারপর বাসায় চলে আসলাম লম্বা একটা ট্যুর শেষে। বন্ধুরা আজকে এই পর্যন্তই,আমি আমার কিছু ভালো লাগার মুহূর্ত এবং অনুভূতিগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আপনাদের কাছে কেমন লাগলো তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না এবং কোনো ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ও ধরিয়ে দিবেন সেই আশা করছি। আপনাদের সাপোর্ট পেলে আবারো ইনশাল্লাহ দেখা হবে অন্য কোন ব্লগে,সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
ক্যাটাগোরি - ভ্রমণ
ফটোগ্রাফার - @mohinahmed
ক্যামেরা - স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ৯ প্লাস
তারিখ - ১৩.১০.২০২২
হানিমুন ট্যুর কক্সবাজার। আপনি অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। সত্যি বলতে ভাই টমেটোর সস দিয়ে খেতে অনেক সুস্বাদু লাগে। পাহাড়ের উপর থেকে সমুদ্রের দিকে যখন আপনারা কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন হয়তো একটু চোখে ঝাপসা মত দেখা গিয়েছিল। সব মিলিয়ে আপনাদের ঘোরাঘুরি বেশ দারুন ছিল।
জি ভাই আপনি ঠিকই বলেছেন সী ফিস টমেটো সস দিয়ে খেতে খুব ইয়াম্মি লেগেছিল। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার ফলে চোখ হালকা একটু ঝাপসা লেগেছিল। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর মন্তব্য করার জন্য এবং উৎসাহ দেওয়ার জন্য।