♥ আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা -২০, প্রথম প্রেমের অনুভূতি♥

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

love-g59ee47e39_640.jpg
source

আসসালাম ওয়ালাইকুম, আশা করি সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে খুব ভালো আছি। আজকে আমি আমার লাইফের প্রথম প্রেমের অনুভূতি শেয়ার করব। এই ঘটনাটি হচ্ছে আমার লাইফের চরম বাস্তব একটি ঘটনা। এমন একটি ঘটনা যা কখনো ভুলবার নয়। পোস্টটি পড়ে আপনারাও হয়তো মর্মাহত হবেন কারণ ঘটনাটা আসলেই হার্ট টাচিং। তো শুরু করা যাক, ঘটনাটি ২০১০ সালের ঘটনা। আমি দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার জন্য মিরপুরের জার্মান টেকনিক্যাল থেকে দুই মাস কোরিয়ান ভাষা শিখি। তারপর কোরিয়ান ভাষার ইন্টারভিউ দিয়ে পাশ করার পর ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য ওয়েট করতে ছিলাম। আমাদের পাশের এলাকার এক সিনিয়র বড় ভাই নাম রাকিব আমাকে বলতেছিলো উনার বাসায় গিয়ে আমি যেন ওনাকে কোরিয়ান ভাষা শিখাই। মূলত ঘটনাটির সূত্রপাত তখন থেকেই হয়, আমি যখন ওনাদের বাসায় যাই রাকিব ভাইয়ের চাচাতো বোনকে প্রথমবারের মতো দেখতে পাই।

ওর নাম হচ্ছে নিশি। দেখতে মাশাল্লাহ খুবই সুন্দর এবং খুবই নম্র -ভদ্র টাইপের একটা মেয়ে। নিশি তখন ক্লাস নাইনে পড়তো এবং তখন আমার বয়স ১৯/২০ হবে । রাকিব ভাইদের ফ্যামিলি ছিল যৌথ ফ্যামিলি। রাকিব ভাইদের ফ্যামিলি এবং আরও ২ চাচার ফ্যামিলি সহ সবাই এক বাসায় থাকতেন। ওনাদের বাড়িটা অনেক বড় ছিল এবং বাড়িতে অনেক বড় উঠোন ছিল। নিশিদের ফ্যামিলিতে নিশি এবং তার ছোট একটি বোন ছিল এবং ওর বাবা-মা। চাচাতো বোন হলেও রাকিব ভাই নিশিকে নিজের আপন বোনের মতো দেখতো। কোরিয়ান ভাষা শিখাতে যখন ওদের বাসায় যেতাম নিশিকে যখন দেখতাম নিশির দিকে তাকিয়ে থাকতাম। নিশিও মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো কিন্তু আমাদের কোনো কথা হতো না। তো এভাবে প্রতিদিন দেখতে দেখতে ভালো লাগা কখন যে ভালোবাসাতে পরিণত হয়ে গেল টেরই পেলাম না।

আমি নিশিকে মনে মনে ভালবাসতে শুরু করলাম। নিশিকে তখন কিছুই বলিনি কারণ রাকিব ভাই যদি ব্যাপারটা শুনে তাহলে আমাকে খারাপ ভাবতে পারত। কিন্তু এটাও বুঝতে পারতাম যে নিশিও হয়তো আমাকে একটু একটু পছন্দ করতে শুরু করেছে।তারপর আমার একটা ফ্রেন্ড নাম হচ্ছে জিসান ওর সাথে পুরো ব্যাপারটা শেয়ার করলাম। জিসান আমাকে বলল নিশিকে ব্যাপারটা বলার জন্য কিন্তু রাকিব ভাইয়ের কথা ভেবে আমি তবুও কিছু বলিনি। এক মাসের বেশি সময় আমি কোরিয়ান ভাষা শিখাই উনাদের বাসায় গিয়ে। প্রতিদিন ওনাদের বাসায় যাওয়া হতো এবং রাকিব ভাই মোটামুটি কোরিয়ান ভাষা শিখতে পারে। দেখতে দেখতে আমারও ভিসা প্রসেসিং হয়ে গেল এবং ফ্লাইটের তারিখ ঠিক হয়ে গেল তারপর দক্ষিণ কোরিয়াতে চলে গেলাম। যাবার পর আমার ফ্যামিলি এবং নিশিকে ভীষণ মিস করতে লাগলাম।এভাবেই কয়েক মাস চলে গেল এবং এর মধ্যে রাকিব ভাই কোরিয়ান ভাষার পরীক্ষা দিয়ে মোটামুটিভাবে পাশ করেছে।

তারপর ভিসা প্রসেসিং হয়ে গেলে ২০১১ সালে রাকিব ভাই দক্ষিণ কোরিয়াতে চলে আসে। রাকিব ভাই ছিল বিবাহিত এবং রাকিব ভাই দক্ষিণ কোরিয়াতে চলে আসার পর আমি উনাকে অনেকভাবে সাপোর্ট দিই। আমি উনাকে সব ধরনের সাপোর্ট দেই যেটা রাকিব ভাইয়ের ফ্যামিলির সবাই খুব ভালোভাবে জানতো।রাকিব ভাই দক্ষিণ কোরিয়াতে চলে আসার পর রাকিব ভাইয়ের বউ নীলা এবং নিশি রাতে একসাথে ঘুমাতো।আমি মাঝেমধ্যে নীলা ভাবির সাথে ফোনে কথা বলতাম এবং নীলা ভাবীকে বললাম নিশিকে যেন আমার কথা বলে। আরো বললাম যে নিশির সাথে আমাকে ফোনে কথা বলার ব্যবস্থা করে দিতে। তো নীলা ভাবী যখন নিশিকে আমার ব্যাপারটা বলল নিশি মনে মনে ভীষণ খুশি। তারপর রাতের বেলা ভাবীর ফোন দিয়ে এই প্রথম আমি আর নিশি অনেকক্ষণ কথা বললাম। এভাবে প্রতিদিন আমরা রাতে কথা বলতাম এবং নিশিকে গান শোনাতাম। তারপর কয়েকদিন পর নিশিকে আমি আমার ভালোবাসার কথা জানালাম এবং নিশি ওর মনের কথা বলল। নিশিও আমার ভালোবাসার প্রস্তাবে সাড়া দিলো এবং বলল সেও আমাকে অনেক ভালোবাসে। ভালোবাসা জমে একেবারে ক্ষীর, প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা আমাদের কথা হতো। ভাবীর কম্পিউটার দিয়ে ভিডিও কলে কথা বলতাম।নিশি আমার অনেক কেয়ার করতো এবং আমাকে পাগলের মত ভালবাসত। আমার অনুমতি ছাড়া কোথাও যেতো না, মোট কথা আমি যা বলতাম তাই শুনত।একটা পর্যায়ে নিশির ফ্যামিলি এবং বাড়ির সবাই আমাদের সম্পর্কের কথা জানতে পারল।

যেহেতু আমি দক্ষিণ কোরিয়াতে রাকিব ভাইকে বিভিন্নভাবে সাপোর্ট দিয়েছি সেজন্য নিশির বাড়ীর মোটামুটি সবাই আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিল।তারপর থেকে নিশির আম্মুর ফোন দিয়ে আমরা কথা বলতাম এবং নিশির আম্মুও সেটা দেখতো। নিশির আম্মুও আমাকে খুব পছন্দ করত।আমিও আমার ফ্যামিলিকে নিশি এবং আমার সম্পর্কের কথা বলে দিলাম। প্রথমে আমার আম্মু একটু দ্বিমত পোষণ করলেও পরে আমার কথা শুনে রাজি হয়ে যায়। খুব ভালোভাবে দিন অতিবাহিত হচ্ছিল আমাদের, কিন্তু কথায় আছে না কারো কারো ভাগ্যে সুখ বেশি দিন সয়না। নিশির বাবা একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করতো এবং মোটামুটি সচ্ছল ছিল ওদের ফ্যামিলি। নিশির বাবা বাড়িতে ফাউন্ডেশন দিয়ে বিল্ডিং এর কাজ শুরু করেছিল। এরমধ্যে কেউ একজন আমার আম্মুকে বলে যে আমি নিশির বাবাকে টাকা পয়সা দিয়ে হেল্প করতেছি। যদিও কথাটি ছিল সম্পূর্ণ বানোয়াট। যেহেতু পাশাপাশি এলাকাতে আমাদের বাড়ি আমার আম্মু এই কথা শুনে নিশিদের বাসায় যায় এবং এই নিয়ে তুমুল ঝগড়া হয়। তারপর আমি এই ঘটনা শোনার পর আমার আম্মুকে ফোন দিয়ে অনেক রাগারাগি করি। কারণ পুরো ঘটনাটি না জেনে, আমাকে জিজ্ঞেস না করে মানুষের কথায় কান দিয়ে এমন একটি ঝগড়ার সৃষ্টি করার কোন মানেই হয়না। তারপর নিশির ফ্যামিলি সিদ্ধান্ত নিল যে আমার সাথে নিশির সম্পর্ক কন্টিনিউ করতে দিবেনা এবং যেভাবে পারে নিশিকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিবে। রাকিব ভাই এবং আমি নিশির আম্মুকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করি যে এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি, সেজন্য নিশি এবং আমার লাইফটা নষ্ট করে দিবেন না।

তারপর নিশির আম্মু মেনে নিলেও নিশির বাবা মানতে নারাজ। কোনভাবেই আমি নিশির সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না, নীলা ভাবীর সাথেও নিশিকে এখন রাতে ঘুমাতে দেয় না। আমাদের যোগাযোগ করার সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে নিশির বাবা। মাঝে মাঝে নিশির আম্মুর ফোন চুরি করে আমাকে একটু কল দিত ২/১ মিনিট কথা হতো। এরমধ্যে নিশির বাবা একজন পাত্র ঠিক করল নিশিকে বিয়ে দেবার জন্য। ছেলেটির বাসা ওদের এলাকাতেই। এই কথাগুলো আমি নীলা ভাবীর কাছ থেকে জানতে পারলাম। এটাও জানতে পারলাম নিশি খাওয়া-দাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে এবং আমার ও প্রায় একই অবস্থা। দক্ষিণ কোরিয়াতে আমি যে অফিসে জব করতাম সেই অফিসের অনেক কোরিয়ান কলিগরা আমাদের সম্পর্কের কথা জানত। কোরিয়ান ম্যানেজারের সাথে আমি বিভিন্ন সময়ে এসব ব্যাপার নিয়ে আলাপ করতাম কারন তার সাথে আমার সম্পর্ক খুবই ভালো ছিল। যেহেতু আমার মনমানসিকতা খুবই খারাপ ছিল কোরিয়ান ম্যানেজারকে বলে অফিস থেকে এক মাসের ছুটি নিলাম।কারণ কাজের প্রতি আমি ফোকাস করতে পারছিলাম না একেবারেই। এরমধ্যে নিশি আমাকে ফোন দিয়ে বলল ওই ছেলের সাথে বিয়ের কথা মোটামুটি পাকা করে ফেলেছে ওর বাবা এবং যেভাবেই পারি আমি যেন বাংলাদেশে এসে ওকে নিয়ে পালিয়ে যাই। আমিও মোটামুটি প্রস্তুতি নেই বাংলাদেশ যাবার জন্য এবং আমার আম্মুকে ফোন দিয়ে বিষয়টা বললাম। আম্মু সরাসরি আমাকে আসতে নিষেধ করে দিল। কারণ তিনি চান না এগুলো নিয়ে আর কোন ঝামেলা হোক।

এমন একটা পরিস্থিতি আমি আমার ফ্যামিলিকেও বুঝাতে পারছিলাম না এবং নিশির বিয়েও ঠেকাতে পারছিলাম না। কি যে একটা কষ্টের মধ্যে ছিলাম যা বলে বোঝানো যাবে না। নিশির বাবা যার সাথে বিয়ে ঠিক করেছিল আমি তাকে ফোন দিলাম এবং নিশিকে বিয়ে করতে নিষেধ করলাম। সে আমাকে বলল যে ঠিক আছে সে নিশিকে বিয়ে করবে না কিন্তু ভিতরে ভিতরে বিয়ের কথা সে ঠিকই আগাচ্ছে। এরমধ্যে নিশি আমাকে ফোন দিয়ে খুব দ্রুত বাংলাদেশে আসতে বলল, আমি কান্না জর্জরিত কন্ঠে খুবই কষ্টে নিশিকে বললাম আমি এখন আসতে পারছিনা তুমি একটু ম্যানেজ করো কয়েকটা দিনের জন্য। নিশিও অনেক চেষ্টা করেছিল কিন্তু নিশির বাবা একপ্রকার জোর করেই নিশিকে সেই ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিল। আপনারা বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা আমি কখনো কল্পনাতেও ভাবিনি যে নিশি অন্য কারো হবে। এটা মানতে আমার কি পরিমাণে কষ্ট হয়েছিল আপনাদেরকে বলে বোঝানো যাবে না। আমি যখন বিছানায় শুতাম আমার মনে হত আমার বুকের মধ্যে পাথর চাপা দিয়ে রেখেছিল কেউ। আমার লাইফের ফার্স্ট আমি এত পরিমাণ কান্না করেছিলাম যা বলার বাহিরে। আমি আগে ভাবতাম মানুষ কেন সুইসাইড করে, আমি ওই মুহূর্তে বুঝতে পেরেছি একটা মানুষের কি পরিমাণ কষ্ট হলে মানুষ সুইসাইড করে।

কোরিয়াতে আমার যারা বন্ধু-বান্ধব ছিল তারা আমাকে অনেক সাপোর্ট করে হয়তোবা তাদের সাপোর্ট এর কারণেই আমি এখনও বেঁচে আছি। নয়তো ওই সময় যেকোন কিছু হয়ে যেতে পারত। আমি ভুল করে যেকোনো খারাপ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারতাম। আমাদের প্রায় দুই বছরের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেল। ২০১৩ সালে নিশির বিয়ে হয়, বিয়ের প্রায় এক বছর পর ২০১৪ সালে আমি বাংলাদেশে ছুটিতে আসি। নিশি সেটা জানতে পারে এবং আমার ফোন নাম্বার ম্যানেজ করে আমাকে কল করলো। তারপর আমরা একদিন দেখা করলাম এবং সেদিন নিশি আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করেছিল, আমিও চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। এভাবে প্রায়ই আমরা দেখা করতাম এবং ফোনে কথা বলতাম। কিন্তু আমাদের ভালোবাসা আগের মত ঠিক তখনও খুব পবিত্র ছিল। নিশির হাজবেন্ডও এ ব্যাপারটা জানতে পারলো এবং এ নিয়ে ওদের মধ্যে অনেক ঝগড়া হলো। ওদের সংসার প্রায় নষ্ট হবার মত অবস্থা। তারপর আমি নীলা ভাবীকে বললাম যে নিশি যেন আমাকে আর কল না করে। আমার সাথে কোন যোগাযোগ না করে কারণ আমি চাই নিশি ভালো থাকুক অনেক ভালো থাকুক। কারণ আমি মন থেকে নিশিকে ভালোবেসে ছিলাম এবং ভালোবাসার মানুষ যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক এটাই কাম্য। শুনেছি নিশির বেবি হয়েছে এবং খুব ভালো আছে। হয়তো ওর মনের এক কোণায় আমি আছি আর আজীবন থাকব এটাই কম কিসের।

কিন্তু আজো আমি নিশিকে ভুলতে পারিনি, হয়তো কখনো পারবোও না। যারা ভালোবেসে সাকসেস হয় তারা আসলেই খুব লাকি, যেটা সবার ভাগ্যে হয় না। পরিশেষে এটাই বলতে চাই প্রথম প্রেম আসলেই ভুলবার মত নয়। তো বন্ধুরা আমি আমার প্রথম প্রেমের অনুভূতি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরে খুব ভালো লাগছে এবং আপনাদের কাছে কেমন লাগলো তা কমেন্ট এ জানাতে ভুলবেন না। দোয়া করবেন আমার জন্য যেন ভালো থাকতে পারি। কোন ভুল ত্রুটি হলে আশা করি ধরিয়ে দিবেন। আপনারাও ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

Coin Marketplace

STEEM 0.25
TRX 0.11
JST 0.033
BTC 63006.70
ETH 3075.91
USDT 1.00
SBD 3.82