জেজো-দো দ্বীপ,দক্ষিণ কোরিয়া,১০% বেনিফিসিয়ারী @shy-fox,৫% বেনিফিসিয়ারী @ abb-school
আসসালাম ওয়ালাইকুম, আশা করি সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে খুব ভালো আছি।আজকে আরো একটি নতুন ব্লগ নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হলাম।এই ব্লগটি হচ্ছে ভ্রমণ সংক্রান্ত। অনেকদিন আগে আমি এবং আমার কিছু ভাই ব্রাদার সহ জেজু-দো ঘুরতে গিয়েছিলাম। এটা দক্ষিণ কোরিয়ার একটা দ্বীপ। যার সৌন্দর্য বলে শেষ করা যাবে না। এখানে এত এত পর্যটন এরিয়া যা দেখতে লক্ষ লক্ষ পর্যটক ভিড় করে থাকে। যেহেতু এটা একটি দ্বীপ সেজন্য প্লেন অথবা জাহাজে করে যেতে হবে। জাহাজে যেতে অনেক সময় লাগবে তাই আমরা প্লেনে করে ইনছন এয়ারপোর্ট থেকে রওনা দিবো।সকাল ৯টা বাজে বাসা থেকে সবাই বের হলাম এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে।
লোকেশন-ইনছন এয়ারপোর্ট
তারপর বেলা ১১.৩০ মিনিটে প্লেন ছাড়ল জেজো এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে, ১ঘন্টা ৩০মিনিট পর জেজো এয়ারপোর্টে পৌঁছলাম।এয়ারপোর্টে নেমে কিছু ছবি তুললাম সবাই।
লোকেশন- জেজো এয়ারপোর্ট
তারপর হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। হোটেল আগেই অনলাইন থেকে বুক করে রেখেছিলাম, তারপর হোটেলে চেক ইন করলাম। তারপর লাঞ্চ করে একটু বিশ্রাম নিয়ে জংবাং ঝর্ণাতে চলে গেলাম গোসল করতে। হোটেল থেকে হেঁটে ১০ মিনিট লেগেছিলো যেতে। এই
ঝর্ণার পানির গতি এতটা বেশি ছিলো যে দূরে থেকেই আমরা ভিজে যাচ্ছিলাম। কি যে একটা মানসিক প্রশান্তি পাচ্ছিলাম যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। তারপর কিছু ফটোগ্রাফি করলাম এবং গোসল করে হোটেলে চলে আসলাম।
লোকেশন-জংবাং ঝর্ণা
তারপর সন্ধ্যার পর হোটেলের আশেপাশে একটু ঘুরাঘুরি করলাম এবং তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে সেজন্য। সকালে লাইফের প্রথমবারের মতো সাবমেরিনে উঠবো। সবাই খুব উত্তেজিত ছিলো এটা নিয়ে। তারপর সাবমেরিনে উঠার জন্য টিকিট কিনলাম এবং জাহাজে উঠলাম। প্রথমে জাহাজে করে সমুদ্রের মাঝখানে নিয়ে গেলো তারপর সাবমেরিনে উঠার আগে সবার ছবি তুলে সাবমেরিনে উঠালো সবাইকে।অনেক মানুষ ছিলো সাবমেরিনে।সবাই উঠার পর সাবমেরিনটি ৪৫ মিটার পানির নিচে ডুবে গেলো। আমরা সাবমেরিন এর ভিতরে বসে মনিটরে দেখতে পাচ্ছি পানির উপরের ভিউটা।কত মিটার পানির নীচে সাবমেরিন অবস্থান করছে সেটাও দেখতে পাচ্ছিলাম মিটার স্কেল এ। সমুদ্রের তলদেশ,শেওলা,ছোটো ছোটো বিভিন্ন কালারের মাছ। সত্যিই মন ছুঁয়ে যাবার মতো দৃশ্য, যা কখনো ভুলে যাবার মতো না ।সাবমেরিন এর একজন ডুবুরী সবাইকে বিনোদন দিচ্ছে সাবমেরিন এর আশেপাশে ঘুরে, মাছগুলোর সাথে খেলা করে। যেটা সবার মন ছুঁয়ে গিয়েছিলো। তারপর কিছু ছবি তুললাম সাবমেরিন এর ভিতরে। প্রায় 30 মিনিট পর সাবমেরিনটি উপরে উঠলো এবং আমাদের সবাইকে অন্য জাহাজে উঠিয়ে দিলো। তারপর আমরা নামলাম জাহাজ থেকে এবং আমাদেরকে সার্টিফিকেট দিলো ছবিসহ ।যেটা সারাজীবন মেমরি হিসেবে থেকে যাবে।
লোকেশন-সগিপো সাবমেরিন
তারপর দুপুরে গেলাম হামদক বীচে গোসল করতে। বীচে গিয়ে মনটা ভরে গেলো আনন্দে কারণ এত সুন্দর সীবীচ আমি আগে কখনো দেখিনি।পাশাপাশি ২টা বীচ এবং পানির কালার হচ্ছে নীল রঙের।এমনিতে নীল রঙ আমার প্রিয় তাই আর দেরী না করে কখন যে পানিতে নেমে গোসল করবো আর অপেক্ষা করতে পারছিলাম না। তাই তাড়াতাড়ি কিছু ছবি তুললাম বীচে এবং নেমে পড়লাম পানিতে গোসল করতে। পানির কালার নীল রঙের এবং অনেক পরিষ্কার। অস্থির একটা অনুভূতি হচ্ছিলো তখন চারিদিকে নীল রঙের পানি আর মাঝখানে আমি, সেই একটা অনুভূতি যা বলার মতো না।
লোকেশন-হামদক বীচ
তারপর অনেকক্ষণ বীচে থেকে হোটেলে চলে আসলাম এবং লাঞ্চ করে বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে চলে গেলাম মানজাংগুল গুহা দেখতে। এই গুহাটি কয়েকলক্ষ বছরের পুরোনো গুহা। ভিতরে ঢুকলাম গুহার তারপর হাঁটা শুরু করলাম, অনেক পিচ্ছিল ছিল তাই সাবধানে হেঁটে গুহার শেষদিকে গিয়ে কিছু ছবি তুললাম ।এই গুহাটি পৃথিবীর ২য় দীর্ঘতম লাভা টিউব।ভিতরে মনে হচ্ছিলো যেন ভূতের রাজ্যে চলে আসছি, সবাই খুব উপভোগ করার পর সন্ধ্যার পর হোটেলে চলে আসলাম।
লোকেশন-মানজাংগুল গুহা,লাভা টিউব
পরের দিন সকালে হাললাসান পাহাড় দেখতে যাব এবং বিকেলের ফ্লাইটে বাসায় চলে আসবো। সকালে ঘুম থেকে উঠে হাললাসান পাহাড়ে চলে গেলাম ।৬৩৮৮ ফিট উচ্চতার এই পাহাড়টি দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। তারপর আমরা ৮ জন পাহাড়ে উঠা শুরু করলাম কিন্তু ১ ঘণ্টার মত উঠে বাকিরা আর উঠবে না তাই নেমে গিয়েছিল কারণ সিরিগুলো অনেক খাড়া খাড়া ছিলো।
লোকেশন-হাললাসান পাহাড়
কিন্তু আমি আর একজন, আমরা এই ২ জন প্রায় ৩ ঘণ্টার মতো উঠেছিলাম ।উপরে যখন উঠেছি মেঘের মধ্যে আমরা হারিয়ে গিয়েছিলাম, ঠান্ডা শীতল বাতাসে মনটা একেবারে শান্তিতে ভরে গেছে। এত কষ্ট করে যে উপরে উঠেছি সেই কষ্ট লাগব হয়ে গিয়েছে। মনের মধ্যে এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করতে ছিলো যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। তারপর কিছু ছবি তুলে আস্তে আস্তে পাহাড় থেকে নেমে পড়লাম।
লোকেশন- হাললাসান পাহাড়
তারপর হোটেলে চলে আসলাম এবং সবাই ব্যাগ গুছিয়ে এয়ারপোর্ট চলে গেলাম। তারপর বাসায় চলে আসলাম অনেক সুন্দর একটা ট্যুর শেষ করে। আমার ভালো লাগার মুহূর্তগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আপনাদের কেমন লাগলো সেটা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। কোনো ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন এবং আপনাদের সাপোর্ট পেলে আবারো হাজির হবো অন্য কোনো ব্লগ নিয়ে সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
ফটোগ্রাফি- মহিন আহমেদ
ডিভাইস- Samsung galaxy s9 plus