জেনারেল রাইটিং পোস্ট || জীবন যুদ্ধে হার না মানা একজন সংগ্রামী যোদ্ধার গল্প
আসসালামু আলাইকুম,
আমার বাংলা ব্লগের সকল বন্ধুরা ,আপনারা সবাই কেমন আছেন ? আশা করি সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে খুব ভালো আছি।
প্রতিদিনের মতো আজকেও আমি আপনাদের সামনে আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকে আপনাদের সাথে একটি জেনারেল রাইটিং পোস্ট শেয়ার করবো। আজকে আপনাদের সাথে জীবন যুদ্ধে হার না মানা একজন সংগ্রামী যোদ্ধার গল্প শেয়ার করার চেষ্টা করবো। গত ২১ শে মার্চ অর্থাৎ রমজান মাসে আমি উত্তরা বিআরটিএ গিয়েছিলাম ব্যক্তিগত কাজে। আমি মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশন থেকে উত্তরা উত্তর মেট্রোরেল স্টেশনে গিয়েছিলাম মেট্রো তে চড়ে। তো গুলিস্তান থেকে রিকশা নিয়ে যখন মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলাম,তখন গুলিস্তানের ইম্পেরিয়াল আবাসিক হোটেলের সামনে রিকশাওয়ালা লোকটাকে পুলিশ লাঠি দিয়ে জোরে আঘাত করেছিল। এটা দেখে সত্যিই ভীষণ খারাপ লেগেছিল আমার।
মূলত ইম্পেরিয়াল হোটেলের সামনে একটি শটকার্ট রাস্তা আছে জিপিও এবং বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনের দিকে যাওয়ার জন্য। আপনারা যারা সেখানে যান,তারা ভালোভাবে ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন। তো রিকশাওয়ালা সেই শর্টকাট রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ দেখে ফেলে,আর তখনই জোরে আঘাত করে লাঠি দিয়ে। রিকশাওয়ালা লোকটা যদি সেই শর্টকাট রাস্তা দিয়ে না যাওয়ার চেষ্টা করতো,তাহলে কিছুটা রাস্তা ঘুরে আসতে হতো। অনেক সময় সিগন্যালের জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। তাই অনেক রিকশাওয়ালা সময় বাঁচানোর জন্য মূলত সেই শর্টকাট রাস্তাটি ব্যবহার করে। যাইহোক আমরা মাওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশনের দিকে যাওয়া শুরু করেছিলাম।
তো রিকশাওয়ালা ভাইয়ের নাম ছিলো ইসহাক। উনি পুলিশের লাঠির আঘাতে বেশ ভালোই ব্যথা পেয়েছিলেন। তাই রিকশা চালানোর পাশাপাশি বারবার হাত দিয়ে সেই জায়গাটা মাসাজ করার চেষ্টা করছিলেন। তো আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম ব্যথা বেশি পেয়েছেন নাকি। উনি বললেন হ্যাঁ অনেক ব্যথা পেয়েছি। তারপর নিজে থেকেই বললেন প্রায় ৩১ বছর ধরে অর্থাৎ ১৯৯৩ সাল থেকে রিকশা চালাচ্ছেন ঢাকা শহরে,কিন্তু এমন ঘটনা উনার সাথে এই প্রথম ঘটলো। তারপর উনার জীবন সম্পর্কে বেশ কিছু কথা আমার সাথে শেয়ার করলেন। উনি ১৯৭১ সালে জন্মগ্রহণ করেন কুষ্টিয়া জেলায়। উনি ২১ বছর বয়সে অর্থাৎ ১৯৯২ সালে এসএসসি পাশ করেন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবং ১৯৯২ সালেই বিয়ে করেন। তারপর বছর খানেক চাকরি খোঁজার পর চাকরি না পেয়ে, অবশেষে বাধ্য হয়ে ঢাকায় চলে আসেন ১৯৯৩ সালে এবং তখন থেকে এখন পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
ইসহাক ভাইয়ের পরিবারে উনার স্ত্রী, ২ ছেলে এবং একটি মেয়ে আছে। ইসহাক ভাইয়ের পরিবার কুষ্টিয়া তে থাকেন এবং তিনি ২/৩ মাস পরপর কুষ্টিয়া তে যান ৩/৪ দিনের জন্য। তো উনার মেয়ে অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়াশোনা করা অবস্থায় কিছুদিন আগে বিয়ে হয়ে যায়। উনার বড় ছেলে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়াশোনা করছে এবং পাশাপাশি একটি কোচিং সেন্টার দিয়েছে। তাছাড়া উনার ছোট ছেলে ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারে পড়াশোনা করছে। উনি রিকশা চালিয়ে উনার ৩ সন্তানকে পড়াশোনা করাচ্ছেন, এটা জেনে সত্যিই ভীষণ ভালো লেগেছিল। উনি কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহ করলেও, এক হিসেবে উনি সফল এবং এটা নির্দ্বিধায় বলাই যায়। কারণ অনেক মা বাবারা স্বচ্ছল থাকা সত্ত্বেও, ছেলেমেয়েদের ঠিকমতো পড়াশোনা করাতে পারে না।
তো ইসহাক ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছিলাম,সেটা টেরই পাইনি। তারপর আমি উনাকে ১০০ টাকা ভাড়া দিয়েছিলাম। মূলত গুলিস্তান থেকে মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশন পর্যন্ত ৬০ টাকা ছিলো ভাড়া। কিন্তু আমি উনাকে বললাম বাড়তি ৪০ টাকা দিয়ে ব্যথার ট্যাবলেট কিনে খাওয়ার জন্য। তিনি বাড়তি ৪০ টাকা পেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছিলেন। তারপর আমি উনার একটি ছবি তুললাম। ইসহাক ভাইয়ের মতো এমন সংগ্রামী যোদ্ধা যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকুক, সেই কামনা করছি। যাইহোক তখনই ভেবে রেখেছিলাম এই পোস্টটি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। কিছুটা দেরিতে হলেও আপনাদের সাথে এই পোস্টটি শেয়ার করতে পেরে সত্যিই ভীষণ ভালো লাগছে।
পোস্টের বিবরণ
ক্যাটাগরি | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @mohinahmed |
ডিভাইস | Samsung Galaxy Note 20 Ultra 5g |
তারিখ | ১৯.৪.২০২৪ |
লোকেশন | মতিঝিল,ঢাকা,বাংলাদেশ |
বন্ধুরা আজকে এই পর্যন্তই। আপনাদের কাছে পোস্টটি কেমন লাগলো, তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আবারো ইনশাআল্লাহ দেখা হবে অন্য কোনো পোস্টে। সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমার পরিচয়
🥀🌹আমি মহিন আহমেদ। আমি ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ জেলায় বসবাস করি এবং আমি বিবাহিত। আমি এইচএসসি/ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর, অনার্সে অধ্যয়নরত অবস্থায় দক্ষিণ কোরিয়াতে চলে গিয়েছিলাম। তারপর অনার্স কমপ্লিট করার সুযোগ হয়নি। আমি দক্ষিণ কোরিয়াতে দীর্ঘদিন ছিলাম এবং বর্তমানে বাংলাদেশে রেন্ট-এ- কার ব্যবসায় নিয়োজিত আছি। আমি ভ্রমণ করতে এবং গান গাইতে খুব পছন্দ করি। তাছাড়া ফটোগ্রাফি এবং আর্ট করতেও ভীষণ পছন্দ করি। আমি স্টিমিটকে খুব ভালোবাসি এবং লাইফটাইম স্টিমিটে কাজ করতে চাই। সর্বোপরি আমি সবসময় আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে আন্তরিকতার সহিত কাজ করতে ইচ্ছুক।🥀🌹
আসলে ঢাকা শহরে এরকম রিক্সাওয়ালা অনেক রয়েছে যারা কষ্ট করে সারাদিন তারপরও মেয়েদেরকে ভালোভাবে পড়াশোনা করায় । আমিও কিছুদিন আগে একটা রিক্সায় উঠেছিলাম তখন দেখলাম যে সেই রিক্সাওয়ালার ছেলেটা ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ে সে কষ্ট করে রিকশা চালায় ছেলেটিকে পড়াশোনা করাচ্ছে । আর পুলিশরা তো খামাখাই রিক্সাওয়ালাদের গায়ে হাত তুলে ।ওরা একটু সময় বাঁচানোর জন্য অলিগলি দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে আর তখনই দেখলে তোদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায় । রিক্সাওয়ালা চাচা মেট্রিক পাশ করেও কত কষ্ট করে যাচ্ছে দিন-রাত । আর এরকম ঘটনা ঘটলে সত্যি খুব খারাপ লাগে ।
হ্যাঁ আপু ঢাকা শহরে প্রায়ই এমন রিকশাওয়ালা দেখা যায়। যাইহোক পোস্টটি পড়ে যথাযথ মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
আসলে ভাইয়া বাস্তবতা বড়ই কঠিন। সত্যি ভাইয়া এমন মানুষের জন্য অনেক অনেক দোয়া ও আর্শিবাদ রইল। ইসহাক চাচার মতো সবারই উচিত জীবন যুদ্ধ জয়ী হওয়া।আপনি অনেক ভালো করেছেন চাচাকে বেশি করে টাকা দিয়ে। আসলে এমন মানুষের একটু বেশি টাকা দিলে তারা মন থেকে অনেক দোয়া করে। ধন্যবাদ আপনাকে।
ঠিক বলেছেন আপু, এমন মানুষদের বাড়তি টাকা দিলে তারা মন থেকে দোয়া করে। যাইহোক পোস্টটি পড়ে এভাবে সাপোর্ট করার জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
আমিও মাঝে মধ্যে চেষ্টা করি এমন মানুষের সাথে কথা বলে কিছুটা সান্ত্বনা দিতে। কারণ এমন মানুষের নিকটে না গেলে আমরা বুঝতে পারিনা জীবন সংগ্রাম কতটা কঠিন। আপনি উনার থেকে বেশ অনেক তথ্য নিয়েছেন এবং তা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আমাদের দেশে এমন লোক সংখ্যা অনেক অনেক। তুমি একপ্রকার যোদ্ধা কারণ নিজের সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ রাখেন নি তিনটা সন্তানই লেখাপড়ার চালিয়ে গেছে। মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে জেনে ভালো লাগলো। তবে আমাদের সকলের উচিত কমবেশি তাদের পাশে দাঁড়ানো। আর ঈদের আনন্দের সময় তাদের মুখে হাসি ফোটানো। যাইহোক ভাই খুবই ভালো লাগলো একজন মানুষের জীবনী এখানে উপস্থাপন করেছেন দেখে।
এমন মানুষ দেখলে আমার সত্যিই খুব মায়া লাগে। তাই কথা বলার আগ্রহ বেড়ে যায়। যাইহোক পোস্টটি পড়ে আপনার মূল্যবান মতামত প্রকাশ করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
আসলে এরকম রিক্সাওয়ালা অনেক জায়গায় রয়েছে৷ যারা সব সময় নিজের কষ্টের টাকা দিয়ে নিজেদের সন্তানদেরকে ভালোভাবে পড়াশোনা করানোর চেষ্টা করে৷ সব সময় তারা চেষ্টা করে যাতে করে তাদের সন্তানরা তাদের মতো রিক্সাওয়ালা না হয়। যাতে করে বড় কোনো পর্যায়ে তারা অবস্থান করতে পারে৷ এজন্য তারা প্রতিনিয়ত কষ্ট করতে থাকে এবং তারা সবসময়ই তাদের সন্তানকে নিয়ে চিন্তা করে কিভাবে তাদের সবকিছু তারা সম্পন্ন করবে। আর পুলিশরা শুধু শুধুই তাদের উপরে হাত তুলে এবং তাদেরকে মারতে থাকে৷ এমন করা কখনো ঠিক না৷
এসব খেটে খাওয়া মানুষদের ছেলে মেয়েরাই একসময় ভালো অবস্থানে পৌঁছাতে পারে। যাইহোক পোস্টটি পড়ে এতো চমৎকার মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ এরকম মূল্যবান একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।