হংকং এবং ম্যাকাও ভ্রমণ (১ম পর্ব) , ১০% বেনিফিশিয়ারি @shy-fox, ৫% বেনিফিশিয়ারি @abb-school
আসসালামু আলাইকুম, আশা করি সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে খুব ভালো আছি।আজকে আরো একটি নতুন ব্লগ (১ম পর্ব) নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হলাম।এই ব্লগটি হচ্ছে ভ্রমণ সংক্রান্ত। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সাউথ কোরিয়া থেকে হংকং এবং ম্যাকাও ভ্রমণে গিয়েছিলাম। সেপ্টেম্বর মাসের ১২-১৫ তারিখ পর্যন্ত ছুসকের বন্ধ ছিল। ছুসক হচ্ছে কোরিয়ানদের বড় একটি উৎসব আর প্রতি বৎসর ১বার হয়ে থাকে। তো আমি এবং আমার আরো ৩ জন বন্ধু প্ল্যান করলাম যেহেতু ৪ দিনের লম্বা একটা ছুটি আছে তাহলে অন্য কোন দেশে ঘুরতে যাওয়ার জন্য। তো যেই ভাবা সেই কাজ,সিদ্ধান্ত নিলাম যে হংকং এবং ম্যাকাও যাবো ঘুরতে। যেহেতু ৪দিন এর ছুটি তাই ২দিন হংকং এবং ২দিন ম্যাকাও থাকার প্ল্যান করলাম।
কিন্তু আমাদেরকে আগে থেকেই ভিসা নিতে হবে এম্বাসি থেকে। আমি আগে থেকেই জানতাম যে সাউথ কোরিয়াতে হংকং এবং ম্যাকাও এর কোনো এম্বাসি নেই। চায়না এম্বাসির মাধ্যমে ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। আমি আগে ২/৩ বার চায়না ঘুরতে গিয়েছিলাম আর তখন চায়না এম্বাসিতে জিজ্ঞেস করেছিলাম। যাইহোক আমরা ৪ জন আগষ্টের প্রথম সপ্তাহে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস নিয়ে সিউলে চলে গেলাম ভিসার জন্য আবেদন করতে। আর সেখানেই চায়না এম্বাসি অবস্থিত। তারপর আমরা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ ভিসা ফি দিয়ে সিংগেল এন্ট্রি টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করলাম। আর বললো যে ভিসা পেতে ১৫-২০ দিনের মতো লাগতে পারে। তারপর আমরা বাসায় চলে আসলাম। প্রায় ১৮ দিন পর এম্বাসিতে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ভিসা হয়েছে কিনা।তারপর ওরা আমাদেরকে এম্বাসিতে যেতে বললো পাসপোর্ট আনার জন্য। পরের দিন আমরা অফিস থেকে হাফ বেলা ছুটি নিয়ে চলে গেলাম এম্বাসিতে পাসপোর্ট আনতে।
কিন্তু যাবার পর সবার মন খারাপ হয়ে গেলো কারণ আমি ছাড়া বাকি ৩ জনের ভিসা রিফিউজ করা হয়েছে। এম্বাসিতে জিজ্ঞেস করলাম যে ভিসা কেন রিফিউজ করা হলো। কিন্তু তারা নির্দিষ্ট কোনো কারণ বললো না।তবে আমার ধারণা ওদের ৩ জনের পাসপোর্টে কোরিয়া ছাড়া অন্য কোন দেশের ভিসা ছিলো না সেজন্য হয়তোবা তাদের ভিসা রিজেক্ট করা হয়েছে। কিন্তু আমার পাসপোর্টে কয়েকটা দেশের ভিসা ছিলো কারণ এর আগেও আমি কয়েকটা দেশে ঘুরতে গিয়েছিলাম। তারপর কি আর করার সিদ্ধান্ত নিলাম যে একাই যাবো ঘুরতে হংকং এবং ম্যাকাও। এরইমধ্যে আমি এয়ার টিকেট কিনে ফেললাম অনলাইন থেকে ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে। সাউথ কোরিয়া থেকে প্রথমে যাবো হংকং তারপর হংকং থেকে ম্যাকাও যাবো এবং ম্যাকাও থেকে সাউথ কোরিয়াতে চলে আসবো,এভাবে টিকেট কিনলাম। দেখতে দেখতে সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখ চলে আসলো এবং অফিস থেকে ৪ দিনের ছুটি দিয়ে দিল আর সাথে ছুটির জন্য বোনাসের টাকাও দিয়ে দিল। তারপর বাসায় এসে হোটেল বুকিং এর জন্য অনলাইনে ঘাটাঘাটি করতে লাগলাম। অনেক খুঁজাখুঁজির পর হংকং এয়ারপোর্ট থেকে মোটামুটি দুরত্বের একটি হোটেলের একটা রুম বুকিং দিলাম।
তারপর লাগেজ গুছিয়ে রাখলাম রাতের বেলা কেননা ১২ তারিখ সকাল ১০.৩০ মিনিটে আমার ফ্লাইট ইনছন এয়ারপোর্ট থেকে। সকাল ৮টার আগেই আমি বাসা থেকে বের হলাম ইনছন এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। আমার বাসা থেকে ৫০ মিনিটের মতো লাগলো যেতে। ৯টার আগেই আমি এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেলাম। তারপর প্রথমে আমি সিম কার্ডটি রোমিং করে নিলাম এবং কিছু হংকং ডলার কিনে নিলাম খরচের জন্য আর সাথে তো ক্রেডিট কার্ড রয়েছে।তারপর বোর্ডিং পাস নিয়ে ইমিগ্রেশন ক্রস করে ভিতরে চলে গেলাম। একটু পরেই হংকং এয়ারলাইনসে উঠে পরলাম এবং তার একটু পরেই প্লেন ছেড়ে দিল হংকং এর উদ্দেশ্যে। প্রায় ৩ ঘন্টা ৩০ মিনিট পর হংকং সময় দুপুর ১টার দিকে সেখানে পৌঁছে গেলাম। হংকং এর সময় কোরিয়ান সময়ের চেয়ে ১ ঘন্টা স্লো। তারপর এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে একটা ট্যাক্সী ভাড়া করলাম এবং ড্রাইভারকে হোটেলের ঠিকানা বললাম।
প্রায় ২৫ মিনিট পর হোটেলের সামনে নামলাম। তারপর হোটেলে চেক ইন করার জন্য রিসিপশনে গিয়ে সব ফর্মালিটি শেষ করে রুমে চলে গেলাম। রুমটি ২৪তলায় অবস্থিত এবং হোটেলটি ৩০ তলা বিশিষ্ট। হোটেলের নাম রেম্বলার গার্ডেন হোটেল এবং এটি তিন তারা বিশিষ্ট একটি হোটেল। রুমে গিয়ে গোসল করে বের হলাম লাঞ্চ করার জন্য। রিসিপশনে জিজ্ঞেস করলাম আশেপাশে কোনো ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট আছে নাকি। তারপর রিসিপশন থেকে আমাকে এমটিআর ম্যাপ দিল আর বুঝিয়ে দিল যে আমাকে টিসিং ওয়াইআই স্টেশন থেকে উঠতে হবে এবং ওয়ান চাই স্টেশনে গিয়ে নামতে হবে। সেখানে নাকি অনেক ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তারপর আমি ম্যাপ দেখে দেখে চলে গেলাম সেখানে। সেখানে গিয়ে দেখলাম এলাকাটি খুবই জমজমাট এবং আশেপাশে অনেক ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট রয়েছে। আমি একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকে হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি খেলাম এবং খাবারটা বেশ মজার ছিলো।তারপর রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেলাম এবং আশেপাশে কিছুক্ষণ ঘুরলাম। তারপর দেখলাম যে সেখানে ইমিগ্রেশন হেডকোয়ার্টার্স রয়েছে।
অনেক রেস্টুরেন্ট, শপিং মল এবং বিনোদনের অনেক জায়গা রয়েছে। তারপর ওয়ান চাই স্টেশনে ঢুকে পড়লাম হোটেলে চলে আসার জন্য। তারপর হোটেলে এসে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিচ্ছিলাম আর ম্যাপ দেখে পরের দিন কোথায় কোথায় ঘুরতে যাব সেই প্ল্যান করছিলাম। তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম যে প্রথমে যাব ওশেন পার্কে এবং তারপর ডিজনিল্যান্ড রিসোর্টে যাব। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেল। তারপর ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলাম। বেলা ১২ টার দিকে রেডি হয়ে হোটেল থেকে বের হলাম ওশেন পার্কের উদ্দেশ্যে। এমটিআর ট্রেনে উঠে চলে গেলাম ওশেন পার্কে। সেখানে যেতে ৫০ মিনিটের মত সময় লাগলো।সেখানে গিয়ে প্রথমে এন্ট্রি টিকেট নিলাম এবং আশেপাশের কিছু ফটোগ্রাফি করে নিলাম। কারণ জায়গাগুলো এত সুন্দর ছিল যা বলার মত নয়। যতই ঘুরছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। খুব সুন্দর একটা সময় অতিবাহিত করলাম সেখানে।
ক্যাটাগরি | ভ্রমণ |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @mohinahmed |
ক্যামেরা | স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ৯ প্লাস |
তারিখ | ২৬.১০.২০২২ |
স্থান | ওশেন পার্ক,হংকং |
বন্ধুরা আজ এই পর্যন্তই, আমার এই ভালো লাগার মুহূর্তগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আপনাদের কাছে কেমন লাগলো তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না এবং কোনো ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ও ধরিয়ে দিবেন সেই আশা করছি। আপনাদের সাপোর্ট পেলে আবারো ইনশাল্লাহ দেখা হবে ২য় পর্বে। সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
হংকং এবং ম্যাকাও ভ্রমণে খুব সুন্দর মুহূর্ত অতিবাহিত করেছেন। আপনার ফটোগ্রাফি দেখে খুব ভালো লাগলো। আসলে আলোচিত্র গুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যি মনে মুগ্ধকর এত সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই
এত কষ্ট করে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে এত সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।