ভ্রমণ পোস্ট || দক্ষিণ কোরিয়া থেকে মালয়েশিয়া ভ্রমণ (দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব)

in আমার বাংলা ব্লগ5 months ago

আসসালামু আলাইকুম,

আমার বাংলা ব্লগের সকল বন্ধুরা ,আপনারা সবাই কেমন আছেন ? আশা করি সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে খুব ভালো আছি।



প্রতিদিনের মতো আজকেও আমি আপনাদের সামনে আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকে আমি আপনাদের সাথে একটি ভ্রমণ বিষয়ক পোস্ট শেয়ার করবো। যাইহোক দক্ষিণ কোরিয়া থেকে মালয়েশিয়া ভ্রমণের প্রথম পর্ব আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি ইতিমধ্যেই। আজকে দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব শেয়ার করতে যাচ্ছি। আমি গত পর্বেই বলেছিলাম যে,মালয়েশিয়ান সময় রাত ১ টার পর আমি কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে নেমেছিলাম। তারপর একটি ট্যাক্সি নিয়ে ১০/১৫ মিনিটের মধ্যেই হোটেলে পৌঁছে গিয়েছিলাম। তবে এয়ারপোর্টে নামার পর থেকে হোটেলে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত একটু মজার ঘটনা ঘটেছিল। সেটাই প্রথমে শেয়ার করে নিবো এখন। তো এয়ারপোর্টে নামার পর ইমিগ্রেশন ক্রস করার সময়, একজন মহিলা ইমিগ্রেশন অফিসার আমাকে জিজ্ঞেস করলো দক্ষিণ কোরিয়া থেকে কেনো মালয়েশিয়া গিয়েছি।


Notes_240401_010029_7e2.jpg


তখন আমি বললাম যে মালয়েশিয়ার কয়েকটি সুন্দর সুন্দর জায়গা ঘুরতে এসেছি। সাধারণত ইমিগ্রেশন ক্রস করার সময় প্রায় সব এয়ারপোর্টেই এটা জিজ্ঞেস করে থাকে,তবে সেই মহিলা ইমিগ্রেশন অফিসার একটু ভিন্ন ভাবে এবং হেঁসে হেঁসে মজা করে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল এটা,আর ব্যাপারটাও আমার কাছে খুব ভালো লেগেছিল। যাইহোক তারপর ট্যাক্সি তে যখন উঠলাম, তখন ট্যাক্সি ড্রাইভার একেবারে জঙ্গলের ভিতরের রাস্তা দিয়ে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল। প্রথমত তখন মাঝরাত ছিলো, আর দ্বিতীয়ত একেবারে জঙ্গলের ভিতরের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম। তাছাড়া মালয়েশিয়ায় ততোটা নিরাপত্তা নেই। অহরহ বিভিন্ন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেই থাকে। তো ট্যাক্সি ড্রাইভার যেতে যেতে আমাকে উপদেশ দিলো, আমি যেনো পরের দিন হোটেল পরিবর্তন করে কুয়ালালামপুর টাউন এর দিকে চলে যাই।


Notes_240401_010036_cbd.jpg


তো মজার ব্যাপার হচ্ছে, জঙ্গলের ভিতরের রাস্তা দিয়ে আমরা যখন মেইন রাস্তায় গেলাম,তখন ড্রাইভার বললো যে তিনি ভুল করেছেন জঙ্গলের ভিতরের রাস্তা দিয়ে গিয়ে। কারণ মেইন রাস্তা দিয়েই যাওয়ার সুযোগ ছিলো। তখন আমাকে বললো হোটেল পরিবর্তন না করলেও কোনো সমস্যা নেই। হোটেলের এরিয়াটা খুব সুন্দর ছিলো। যাইহোক হোটেলে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে লম্বা একটা ঘুম দিয়েছিলাম। তারপর পরের দিন সকাল ১০ টার দিকে ঘুম থেকে উঠে, খাওয়া দাওয়া করে আশেপাশে একটু হাঁটাহাঁটি করলাম। তারপর মোবাইলে এলআরটি ট্রেনের ম্যাপ এবং মালয়েশিয়ার একমাত্র সরকারি ট্যাক্সি গ্রেব ট্যাক্সির অ্যাপ ইন্সটল করে, দুপুরের পর বাসা থেকে বের হলাম। আমি দক্ষিণ কোরিয়ার ইনছন এয়ারপোর্ট থেকে আগেই আমার সিম রোমিং করে নিয়েছিলাম।


Notes_240401_010045_d46.jpg


যাইহোক প্রথমে গ্রেব ট্যাক্সির মাধ্যমে এলআরটি ট্রেন স্টেশনে পৌঁছে, সেখান থেকে কেএলসিসি টাউনে চলে গেলাম পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারের দিকে। হোটেল থেকে কেএলসিসি টাউনে পৌঁছাতে ৫০ মিনিটের মতো সময় লেগেছিল। আমি সবসময় ট্রেন জার্নি পছন্দ করে থাকি। যাইহোক প্রথমে একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকে,লাঞ্চ করে নিয়েছিলাম। সত্যি বলতে মালয়েশিয়ান খাবার খুবই সুস্বাদু লেগেছিল খেতে। তারপর পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারের সামনে চলে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখলাম যে প্রচুর মানুষ। কারণ জায়গাটা পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয় এবং জায়গাটি আসলেই খুব সুন্দর। বিকেলের দিকে সেই জায়গায় মানুষের আনাগোনা থাকে অনেক। আপনারা অনেকেই জানেন যে, পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার ৮৮ তলা বিশিষ্ট একটি টাওয়ার। দুটি টাওয়ারের মাঝখানে একটি স্কাই ব্রিজ রয়েছে এবং সেই স্কাই ব্রিজের মাধ্যমে এই টাওয়ার দুটিকে সংযুক্ত করা হয়েছে


Notes_240401_010032_a10.jpg


স্কাই ব্রিজটি খুব সম্ভবত ৪১ এবং ৪২ তলার মধ্যে নির্মিত করা হয়েছে। স্কাই ব্রিজ দিয়ে এক টাওয়ার থেকে অপর টাওয়ারে খুব সহজেই যাতায়াত করা যায়। শুনেছি যে টুইন টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে স্টিল এবং পাথর দিয়ে। যাইহোক টুইন টাওয়ারের নিচের ৭/৮ তলা পর্যন্ত শপিং মল রয়েছে। তার মধ্যে ৪/৫ তলা মাটির নিচে আর মাটির উপরে ২/৩ তলা রয়েছে। টুইন টাওয়ারের ভিতরের শপিং মলে একটু ঘুরাঘুরি করে,আমি চলে গিয়েছিলাম সুরিয়া কেএলসিসি তে। সুরিয়া কেএলসিসি টুইন টাওয়ারের একেবারে পাশেই অবস্থিত। বিশাল বড় সুরিয়া কেএলসিসি শপিং মলটি এককথায় দুর্দান্ত। ঘুরে ঘুরে যতই দেখছিলাম, ততই মুগ্ধ হচ্ছিলাম। আমার মোবাইলে চার্জ ছিলো না বলে, সুরিয়া কেএলসিসি শপিং মলের একটি মোবাইল শপে প্রায় ঘন্টা খানেক মোবাইল চার্জ দিয়েছিলাম এবং সেই দোকানটি বিশাল বড় ছিলো। সেই দোকানে বেশ কয়েকজন নেপালি স্টাফ ছিলো।


Notes_240401_010034_7d0.jpg


তাদের সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললাম এবং জানার চেষ্টা করলাম তারা মালয়েশিয়ায় চাকরি করে কেমন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। এরপর সন্ধ্যার একটু আগে শপিং মল থেকে বের হয়ে, আরও কিছুক্ষণ টুইন টাওয়ারের বাহিরের সাইডে ঘুরাঘুরি করলাম। সেখানে কেএলসিসি পার্কও রয়েছে। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল বলে, পার্কে ঢোকা হয়নি। যাইহোক তারপর আবারও এলআরটি ট্রেন এবং ট্যাক্সি তে চড়ে হোটেলে ফিরে গিয়েছিলাম। এরপর অবশ্য আরও বেশ কিছু জায়গায় ঘুরাঘুরি করেছিলাম এবং শপিং করেছিলাম। কিন্তু ছবিগুলো ডিলিট হয়ে গিয়েছে বলে শেয়ার করতে পারলাম না। এরপর মালয়েশিয়া ট্যুর শেষ করে দক্ষিণ কোরিয়াতে ফিরে গিয়েছিলাম। সবমিলিয়ে চমৎকার অভিজ্ঞতা হয়েছিল এবং সম্পূর্ণ ট্যুর দারুণ উপভোগ করেছিলাম।


Notes_240401_010038_e49.jpg



2FFvzA2zeqoVJ2SVhDmmumdPfnVEcahMce9nMwwksSDdRvZA8GzS2DQRCenaYmQc8PKmKoqUpUeK1EYkXvpDQ1G4vq9r2thnL24nVMe9HEoTA18P3XxZmEBqKV5Qa.png

পোস্টের বিবরণ

ক্যাটাগরিভ্রমণ
ফটোগ্রাফার@mohinahmed
ডিভাইসSamsung Galaxy S9 Plus
তারিখ৫.৪.২০২৪
লোকেশনw3w

বন্ধুরা আজকে এই পর্যন্তই। আপনাদের কাছে পোস্টটি কেমন লাগলো, তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আবারো ইনশাআল্লাহ দেখা হবে অন্য কোনো পোস্টে। সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

9vWp6aU4y8kwSZ9Gw15LFL3aMdhmgmBBFMpDJregpdP328CzpX9QvbjSPXbrW8KqUMMwTrRCn3xcSQ6EA6R67TcD5gLnqAWu8W41xe41azymkyM19LEXr548bkstuK4YE8RXJKQJWbxQ1hVAD.gif

আমার পরিচয়

IMG-20240212-WA0036.jpg

🥀🌹আমি মহিন আহমেদ। আমি ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ জেলায় বসবাস করি এবং আমি বিবাহিত। আমি এইচএসসি/ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর, অনার্সে অধ্যয়নরত অবস্থায় দক্ষিণ কোরিয়াতে চলে গিয়েছিলাম। তারপর অনার্স কমপ্লিট করার সুযোগ হয়নি। আমি দক্ষিণ কোরিয়াতে দীর্ঘদিন ছিলাম এবং বর্তমানে বাংলাদেশে রেন্ট-এ- কার ব্যবসায় নিয়োজিত আছি। আমি ভ্রমণ করতে এবং গান গাইতে খুব পছন্দ করি। তাছাড়া ফটোগ্রাফি এবং আর্ট করতেও ভীষণ পছন্দ করি। আমি স্টিমিটকে খুব ভালোবাসি এবং লাইফটাইম স্টিমিটে কাজ করতে চাই। সর্বোপরি আমি সবসময় আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে আন্তরিকতার সহিত কাজ করতে ইচ্ছুক।🥀🌹

5ZJ4Z52ZRyQfNkCWFfXsATSsPtfkBwT3a5k8RVinr67352Jpu6E5J43D5L7yhn5d5CrcpnTvTLcF5db3ftZK7V9GzsAkLjb3PriF27x53soS8yKq9EnT1Gez2W6L2XUZu7jXnMduxdzGd4QzpYoozSDTPz3jUEkZ8x9rPrFry12vk2pkpsukTxq2kgJhF2zDYwrV.png

cyxkEVqiiLy2ofdgrJNxeZC3WCHPBwR7MjUDzY4kBNr81RRg3nBstm6z4qmufGsvFT24rqXwtpQD564XVCvACqesd3KULjLw7vQPhCNBNpraDPBk9z8jqn3ncuykugzMhQ2.png

6nSeSEzKEwjJN68tMqgZXvpyk1cf2ihqXgmWESDgXSh21PxWHDWW9CETD5B5Jw9Q6ERAnD25KhyHKAX53jBLJKQRtPJf1WFG3aJd6PXbp2rpTXdWPxnRnq65CqtM8PawHiD5knScnfCbWvcVRuFVv1rtwzsXe59AixEGDGYZT2EWzPMzrWjWrbujcJd79Q1Sjs2X.gif

Sort:  
 5 months ago 

ভাই আপনি আজকে আমাদের মাঝে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে মালয়েশিয়া ভ্রমণের শেষ পর্ব শেয়ার করেছেন। আপনার পোস্ট পড়ে সেখানকার শপিং মল দেখতে অসাধারণ সৌন্দর্য। এবং সবাই সেখানে গিয়ে ছবি তুলছে এমন সময় আপনিও খুব সুন্দর একটি ফটোগ্রাফি করেছেন আর ফটোগ্রাফির সাথে খুব সুন্দর ভাবে বিস্তারিত আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন দেখে খুবই ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 5 months ago 

পোস্টটি পড়ে এতো চমৎকার মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি সামনেও এভাবেই সাপোর্ট করে যাবেন।

Posted using SteemPro Mobile

 5 months ago 

ভাইয়া মালয়েশিয়ে ভ্রমণ নিয়ে চমৎকার লিখেছেন। ভালো লেগেছে আপনার ভ্রমণ কাহিনী। আপনার লেখার মধ্য দিয়ে মালয়েশিয়ার পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলাম। পোস্টের ছবি গুলোও অনেক সুন্দর হয়েছে। ভ্রমণ কাহিনীটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

 5 months ago 

চেষ্টা করেছি পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার সম্পর্কে আপনাদের সাথে কিছু তথ্য শেয়ার করার জন্য। যাইহোক পোস্টটি পড়ে এমন প্রশংসনীয় মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

Posted using SteemPro Mobile

 5 months ago 

মালয়েশিয়াকে যত মানুষ চিনে তার থেকে বেশি চিনে পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারকে। বিশ্বের এমন কোন মানুষ নেই যে এই টাওয়ারের ছবি দেখে নাই। মূলত এই টাওয়ারের মাধ্যমেই মালয়েশিয়া বেশি পরিচিত লাভ করেছে। আর যারা মালয়েশিয়া ঘুরতে যায় এই টাওয়ার নিচে ছবি তুলবেই তুলবে। সেখানে আপনার অনুভূতি দারুন ছিল। ধন্যবাদ।

 5 months ago 

ঠিক বলেছেন ভাই, পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারের মাধ্যমেই মূলত মালয়েশিয়া সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। যাইহোক পোস্টটি পড়ে যথাযথ মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

Posted using SteemPro Mobile

 5 months ago 

আপনার এই দক্ষিণ কোরিয়া থেকে মালয়েশিয়া ভ্রমণের প্রথম পর্ব আমি পড়েছিলাম৷ আজকে এর দ্বিতীয় পর্ব পড়ে খুবই ভালো লাগলো৷ আপনি এখানে খুব সুন্দর কিছু সময় অতিবাহিত করেছেন এবং খুব সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফিও শেয়ার করার মাধ্যমে এই দেশের সৌন্দর্যগুলো আমাদের মাঝে ফুটিয়ে তুলেছেন৷ যা দেখে খুবই ভালো লাগছে৷ ধন্যবাদ সুন্দর একটি স্থানে ভ্রমন করে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য৷ আশা করি পরবর্তীতে আরো সুন্দর কিছু ভ্রমণের স্থান আপনার কাছ থেকে জানতে পারবো৷

 5 months ago 

আমি আসলেই সেখানে দারুণ সময় কাটিয়েছিলাম। যাইহোক পোস্টটি পড়ে এতো চমৎকার মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

 5 months ago 

আসলে ভ্রমণের মাঝে একটি আলাদা ভালোলাগা কাজ করে৷ যা আপনার এই পোস্ট পড়েই বুঝতে পারলাম।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.15
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 56651.60
ETH 2364.32
USDT 1.00
SBD 2.27