“মেলায় ফিরে যাওয়া: খেলার সুখ ও মাটির জাদু”
শরতের আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর বাতাসে ধানের মিষ্টি গন্ধ জানান দিচ্ছে, দুর্গাপূজা এসে গেছে। চারদিকে পূজার আমেজ, আর শহরজুড়ে সাজ-সজ্জার প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। সিরাজগঞ্জ শহরের রাস্তা ঘাটে লাইটিং এবং আলোকসজ্জা যেন আগাম উৎসবের বার্তা বয়ে নিয়ে এসেছে। প্রতি বছরের মতো এবারও শহরটাকে লাইটিং করে সাজানো হচ্ছে, পূজার আগে পুরো শহর যেন নতুন রূপে সেজে উঠছে।গতকাল বিকেলে হাঁটতে বের হয়েছিলাম, পূজার প্রস্তুতি দেখতে। শহরের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ল এক রাস্তার ফুটপাতে বসে থাকা লোকটির দিকে। পূজা শুরু হতে এখনো কিছুদিন বাকি থাকলেও, সে আগেভাগেই মাটির তৈরি খেলনা, মাটির পুতুল, মাটির বাঘ-সিংহ, কাঠের ছোট ছোট খেলনা নিয়ে বসে আছে। এই জিনিসগুলো দেখে যেন আমার শৈশবের বৈশাখী মেলার স্মৃতিগুলো আবারও জীবন্ত হয়ে উঠল।আমাদের ছোটবেলার সেই বৈশাখী মেলার কথা মনে পড়ে গেল, যেখানে এসব জিনিসপত্রের প্রতি ছিল আলাদা এক ধরনের আকর্ষণ। তাই নস্টালজিয়ায় ভেসে গিয়ে সেই সমস্ত মাটির তৈরি সুন্দর সুন্দর খেলনার ছবি তুলে নিলাম।
আজকের ব্লগটি মূলত সেই ছবিগুলোর গল্প, যেখানে আমি আপনাদের শেয়ার করবো শৈশবের স্মৃতির কথা এবং ঐতিহ্যের এক বিশেষ অংশের কথা।এই ব্লগটি অন্যান্য ব্লগের চেয়ে একটু ভিন্ন হতে পারে, কারণ এখানে রয়েছে শৈশবের মেলায় ফেরা এবং সেই সব খেলার সামগ্রী নিয়ে কিছু কথা। তো আর বেশি দেরি না করে চলুন, শুরু করি আজকের ব্লগ...
মেলায় মাটির তৈরি খরগোশ, হাতি, বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ—এইসব প্রাণীগুলোর প্রতি আমাদের বিশেষ টান ছিল। মেলার এই মাটির খেলনাগুলো যেন আমাদের শৈশবের কল্পনার জগতে নতুন মাত্রা যোগ করত। প্রতিটি প্রাণীর আকৃতি, রঙিন সাজসজ্জা, আর তাদের ছিমছাম গড়ন শিশুদের মন ভরিয়ে দিত।এসব প্রাণী দেখে মনে হতো যেন তারা সত্যিকারের জীবন্ত, আর আমরা তাদের সঙ্গী। মাটির তৈরি হাতি বা বাঘ হাতে নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলার আনন্দ ছিল অন্যরকম। এগুলোর প্রতি আমাদের মুগ্ধতা ছিল শুধুই খেলার জন্য নয়, বরং সেগুলো যেন এক টুকরো মেলার স্মৃতি হয়ে যেত।মাটির এই প্রাণীগুলো আমাদের শৈশবের অনেক আনন্দের প্রতীক ছিল, যা আজও আমাদের মনের গভীরে স্মৃতির সঞ্চয় হিসেবে রয়ে গেছে।
মেলায় মাটির তৈরি হাড়ি-পাতিল, ফলমূল, থালা-বাটি—এসব জিনিসের প্রতি বিশেষ করে মেয়েদের এক আলাদা আকর্ষণ ছিল। মাটির ছোট ছোট রান্নার সরঞ্জাম দেখে মনে হতো, যেন তারা নিজেদের একটি ক্ষুদ্র পৃথিবী বানিয়ে সেখানে খেলতে পারবে। ছোট্ট বাচ্চারা এসব দিয়ে মাটির ভাত রান্না, খাওয়ার অভিনয় করত, যা তাদের শৈশবের কল্পনার খেলা আরো রঙিন করে তুলত।মেয়েরা বিশেষ করে মাটির তৈরি ফলমূল, যেমন ছোট ছোট কলা, আপেল, কাঁঠাল—এসব দেখলেই কেনার জন্য আবদার করত। তারা এই সামগ্রীগুলো দিয়ে নিজেদের ছোট্ট রান্নাঘর তৈরি করত এবং তা নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা খেলত। এই মাটির তৈরি জিনিসগুলো যেন তাদের শৈশবের অপরিহার্য অংশ ছিল।মাটির হাড়ি-পাতিল আর ফলমূল শুধু খেলনার চেয়ে বেশি ছিল; এগুলো মেয়েদের শৈল্পিক চিন্তা এবং গৃহকর্মের অনুকরণে একটি বিশেষ ভূমিকা রাখত, যা আজও মেলার স্মৃতিতে অমলিন।
মেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিসগুলোর মধ্যে আমার প্রিয় ছিল কাঠের তৈরি টমটম খেলনা। মেলায় গেলেই প্রথম নজর খুঁজত এই টমটমগুলোকে, যেন এগুলো আমার শৈশবের অন্যতম মুগ্ধতার কেন্দ্রবিন্দু। ছোট্ট কাঠের গাড়ি, যার চাকা ঘুরতো, আর সামনের দিকে টানলে টমটমের ঘূর্ণন যেন এক বিস্ময়ের সৃষ্টি করত।বিশেষ করে এই টমটমের প্রতি আমার গভীর টান ছিল। অন্যান্য কাঠের খেলনাগুলোর মধ্যে যেমন কাঠের পুতুল বা গাড়ি ছিল, কিন্তু টমটম যেন আমাকে মুগ্ধ করত। তার সাদা-লাল বা নীল রং এবং নকশা দেখে ছোটবেলায় নিজেকে যেন টমটম চালক ভাবতাম।কাঠের তৈরি টমটম আমার কাছে শুধু একটি খেলনা ছিল না, বরং সেটি ছিল শৈশবের নিঃশর্ত আনন্দের প্রতীক। মেলার এই কাঠের খেলনাগুলো আজও সেই স্মৃতির ভাণ্ডার থেকে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
মেলার অন্যতম মজার আকর্ষণ ছিল বেলুনের বাঁশি। মেলায় ঢুকতেই দূর থেকে ভেসে আসা বাঁশির সুর যেন আমাদের মন্ত্রমুগ্ধ করত। বেলুনের বাঁশি শুধু দেখতে নয়, শুনতেও ছিল অসাধারণ। এই বেলুনে বাঁধা ছোট্ট বাঁশির সুর আমাদের শৈশবের আনন্দকে আরও গভীর করে তুলত।বাচ্চারা মেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে এই বেলুনের বাঁশি হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াত, আর সেই বাঁশির সুর ছড়িয়ে পড়ত পুরো মেলাজুড়ে। বেলুনের নানান রঙ আর বাঁশির মিষ্টি সুর মিলিয়ে একটি আবেগঘন অনুভূতি তৈরি করত, যা আমাদের ছোটবেলার মেলার স্মৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছিল।প্রতিটি বেলুনের সাথে বাঁশির ছোট্ট সুর যেন মেলার আনন্দকে আরও বহুগুণে বাড়িয়ে তুলত। মেলায় গেলে এই বেলুনের বাঁশি কেনার জন্য আমরা আবদার করতাম, কারণ সেটি শুধু একটি খেলনা ছিল না, ছিল আনন্দের প্রতীক।
মেলায় মাটির পুতুল ছিল একটি অন্যতম আকর্ষণ, বিশেষ করে জামাই-বউয়ের পুতুল। মেলার বিভিন্ন দোকানে সাজানো মাটির পুতুল দেখে মুগ্ধ হতাম, আর তার মধ্যে জামাই-বউয়ের পুতুল ছিল বিশেষ প্রিয়। এই পুতুলগুলো ছিল ছোট্ট এক জগতের প্রতীক, যেখানে জামাই-বউয়ের সাজসজ্জা আর তাদের মুখের অভিব্যক্তি ছিল দারুণ আকর্ষণীয়।জামাই-বউয়ের পুতুলে বউয়ের শাড়ি আর জামাইয়ের ধুতি-পাঞ্জাবি দেখে মনে হতো যেন আসল বিয়ের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ দেখা যাচ্ছে। ছোটবেলায় এই পুতুলগুলো দেখে আমরা ভাবতাম, এগুলো দিয়ে নিজেদের গল্প তৈরি করে খেলতে পারব।এগুলোর প্রতি শুধু আমাদের শৈশবের কল্পনার টান ছিল না, বরং বাঙালি সংস্কৃতির এক বিশেষ অংশ হিসেবে জামাই-বউয়ের পুতুল ছিল মেলার ঐতিহ্যের প্রতীক। মেলার নস্টালজিয়া আর এই পুতুলের প্রতি আকর্ষণ আজও আমাদের মনের গভীরে রয়ে গেছে।
আশা করছি আজকের ব্লগটা আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। মেলায় মাটির তৈরি খেলনা, জামাই-বউয়ের পুতুল, কাঠের টমটম, বেলুনের বাঁশি—এসব শৈশবের স্মৃতি ভাগ করে নিতে পেরে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। আমাদের ছোটবেলার মেলার এই ছোট ছোট জিনিসগুলোই তখনকার আনন্দকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিত। আপনাদেরও হয়তো শৈশবের মেলা বা এসব খেলনা নিয়ে কোনো স্মৃতি জাগ্রত হয়েছে।আপনাদের মন্তব্যের মাধ্যমে সেই স্মৃতিগুলোও জানতে খুব ভালো লাগবে। আজকের ব্লগ কেমন লাগল, তা অবশ্যই জানাবেন। সবাইকে ধন্যবাদ।
প্রত্যেকটা ছবি তোলার লোকেশন এবং ডিভাইসের নামঃ
Device:Samsung A33 (5G)
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
ফোনের বিবরণ
মোবাইল | Samsung A33 (5G) |
---|---|
ধরণ | “মেলায় ফিরে যাওয়া: খেলার সুখ ও মাটির জাদু” |
ক্যমেরা মডেল | A33 (48+8+5+2) |
ক্যাপচার | @mohamad786 |
অবস্থান | সিরাজগঞ্জ- বাংলাদেশ |
https://x.com/mohamad786FA/status/1842492191832522930?t=U0Ad05jYd4JNkhDSRg0b9A&s=19
এইসব খেলনা দেখলে ছোট বাচ্চারা না ভাইয়া বড় মেয়েরাও অনেক আকর্ষিত হয়। আমার তো এই ধরনের খেলনা গুলো দেখে ইচ্ছে করে সবগুলো নিয়ে এসে বাড়িতে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখি। আপনার ধারণ করা ফটোগ্রাফি গুলো দেখছিলাম আর মনে হচ্ছিল যেন নিয়ে নেই। সত্যি মাটির এই প্রাণীগুলো দেখলে আমাদের শৈশবের কথা ঝটপট মনে পড়ে যায় সবকিছু। ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
মেলার এই সকল জিনিসপত্রের সাথে আমাদের শৈশবের এক যোগ সূত্র আছে।শুধু শৈশবেই নয়, এখনো যদি আমরা এসব পাই তাহলে ছোটবেলার মতোই খেলা শুরু করে দিব।
আপনার মেলার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলে ভাইয়া মেলার এই মাটির খেলনা গুলো সবার কাছে অনেক জনপ্রিয়। তবে বর্তমান মেলা ছাড়া আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। বিশেষ করে মেয়েদের খেলনা গুলো অনেক পছন্দ। আমি মেলাতে গেলেই মেয়েদের জন্য এই মাটির খেলনা গুলো কিনি।আপনি মেলাতে বেশ ভালো একটা সময় কাটিয়েছেন। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর কাটানো মূহর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
জ্বী আপু, মেলায় ছাড়া আর কোথাও এরকম জিনিসপত্র পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে বৈশাখী মেলা হয় আর এই দুর্গাপূজার সময় এসব জিনিসপত্র পাওয়া যায়।আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
অনেকদিন পর মেলাতে থাকা জিনিসপত্র দেখতে পারলাম। আগে প্রায় লক্ষ্য করে দেখতাম এই সমস্ত মাটির বিভিন্ন প্রকার পশু পাখির খেলনা নিয়ে উপস্থিত হতেন অনেক বিক্রেতা। তবে এখন মাঝেমধ্যে লক্ষ্য করা যায় ওয়াজ মাহফিলের মেলাতে। এছাড়াও পূজার মেলাতে থাকতে পারে কিন্তু দেখা হয় না তত একটা। যাহোক ভালো লাগলো মেলা ভ্রমণের সুন্দর এই পোস্ট দেখে।
গ্রাম অঞ্চলে যে সমস্ত মেলা হয় সেখানে কমবেশি এরকম মাটির তৈরি খেলনা দেখা যায়।কিন্তু শহরাঞ্চলে এগুলো খুঁজে পাওয়া অনেকটা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
আসলে আগে মেলায় যাওয়ার একমাত্র আকর্ষণ ছিল এই মাটির খেলনা জিনিসপত্র গুলো কেনা। জিনিসপত্র গুলো মেলায় গেলে এত সুন্দর লাগতো যে মন চাইতে সবকিছুই কিনে নিয়ে আসি। আপনার এই পোস্টটি দেখে আগের স্মৃতি গুলো মনে পড়ে গেল।
মাটের তৈরি এসব জিনিসপত্রের সাথে আমাদের শৈশবের এক গভীর যোগসূত্র আছে।যাইহোক ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনাকে এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
পুজোর এই মেলায় আপনি সমস্ত রকম খেলনা সামগ্রী জিনিসপত্রের ছবি তুলে সুন্দর করে পোস্ট দিলেন। খেলনা দেখলেই যেন ছেলেবেলা কথা মনে পড়ে যায়। সব থেকে বেশি নস্টালজিক হলাম কাঠের টমটম খেলনা দেখে। যদিও এই গাড়িটির নাম আমি আজ প্রথম আপনার কাছে জানলাম। ছেলেবেলায় বহু খেলেছি এই গাড়ি নিয়ে। আজকাল শহরের মেলাগুলো যেন মেকানিক্যাল হয়ে গেছে। সেখানে আর এসব জিনিস পাওয়া যায় না। আপনার পোস্ট খুব ভালো লাগলো।
টমটম নামক এই গাড়ি নিয়ে ছোটবেলায় আমরা কম বেশি সবাই খেলেছি।এখনো যদি আশেপাশের টমটম গাড়ি দেখতে পাই খেলা শুরু করে দেই।যাইহোক আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
আহ ভাই কী ছিল সেই দিনগুলো। আপনার পোস্ট টা পড়ে মনে পড়ে গেল। ঐ সময় মেলায় যেতাম। আগে থেকে বায়না ধরতাম কি কি কিনব। মাটির ব্যাংক পুতুল খেলনা গাড়ি বাঁশি কোন কিছুই বাদ দিতাম না। সে ছিল অন্যরকম এক সুন্দর দিন। চমৎকার ছিল আপনার পোস্ট টা চমৎকার ছিল আপনার ফটোগ্রাফি গুলো ভাই।
একদম ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দিলেন ভাই। শৈশবের সেই স্মৃতি ফিরে আসলো আপনার পোস্ট এর মাধ্যমে। ছোটবেলা কত বায়না করতাম মাটির পুতুল, মাটির হাড়িপাতিল কেনার জন্য।মেলা হলেই বাবার সাথে যাওয়ার জন্য বায়না করতাম।ধন্যবাদ ভাই আমাদের এভাবে শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বর্তমানে তো প্রায় সব হারিয়েই যাচ্ছে।