শাহিন ভাইয়ের মুদি দোকান নিয়ে গল্প 🛖পর্ব -৩( শেষের পর্ব)
বন্ধুরা আজকে আমি আপনাদের মাঝে শাহীন ভাইয়ের দোকানে আগুন লাগার ঘটনা তৃতীয় পর্ব অর্থাৎ শেষ পর্ব নিয়ে হাজির হয়েছি। এই শেষ পর্বের মাধ্যমে আমরা জানতে পারব শাহীন ভাইয়ের দোকানে কিভাবে আগুন লেগেছিল। তো বন্ধুরা এই শাহীন ভাইয়ের দোকানে আগুন লাগার বিষয়টি সবাইকে মর্মাহত করেছে। গ্রামের সকল মানুষ শাহীন ভাই এর পক্ষে থাকার কারণে গ্রামের সবাই খোঁজ করতে ছিল কে আগুন ধরিয়েছে।আর শাহীন ভাইয়ের দোকানে আগুন লাগার বিষয়টি বের করার জন্য দায়িত্ব নেয় গ্রামের চেয়ারম্যান এবং ঐ তিন ছেলে।যাদেরকে দোষ দেওয়া হয়েছিল।তে আজকে আমরা জানতে পারব কিভাবে শাহীন ভাইয়ের দোকানে আগুন লেগেছিল, বন্ধুরা চলুন গল্পটি পড়া শুরু করা যাক।
তো গ্রামের চেয়ারম্যান যখন দায়িত্ব নিল আগুন ধরেছে কি ভাবে তা বের করবে এবং ঐ তিনজনও গ্রামের মধ্যে খোঁজ নিতে ব্যস্ত হয়ে পরেছে।ওই দোকানে যখন আগুন লাগানো হয় তখন আগুন লাগানোর হয়েছিল একটা মশাল দিয়ে।যে মশাল দিয়ে আগুনটা লাগানো হয়েছিল সেই মশালটা রহিম চাচার বাড়িতে রাখা হয়।আর মশালের হাতের কাছে পেট্রোল মাখানো ছিল। যখন ওই মশাটা হাতে ধরে ছিল তখনই পেট্রোলের গন্ধ পাওয়া গিয়েছিল। সেটা রহিম চাচা তখনি বলেছিলো।ওই মশালটা রহিম চাচার বাড়িতে ছিল, একদিন রাতে ওই তিনজন ছেলে, রহিম চাচার বাড়িতে গেল এবং চাচাকে জিজ্ঞেস করল আসার রহিম চাচা আপনার কাছে দোকারে আগুন ধরানোর যে মশালটা ছিলো ওটা কি এখনো আছে। রহিম চাচা বলল হ্যাঁ ওটা আমার কাছে এখনও রয়েছে। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওটা আমি যত্ন করে রেখে দিবো।তখন কি ছেলেদের মধ্যে একজন বলল ঠিক আছে চাচা আমাদের একটু দেখানতো, তখন রোহিম চাচা বললো এই মশালে কিন্তু পেট্রোল মাখানো ছিল। কারণ আমি তখন পেট্রোলের গন্ধ পেয়ে ছিলাম। তখন যে আগুন লাগিয়েছে সে মশালটা খুবি যত্নসহকারে বানিয়েছে এবং এখানে খড়ের সাথে নারিকেলের খোসা রয়েছিল।রহিম চাচার কথা মতো ঐই তিন জনের একজন বললো আচ্ছা গ্রামের তো পেট্রোল ঐ দিনকে কিনেছে খোঁজ নিতে কিছু জানতে পারবো।আমাদের গ্রামের বাজার দুটি পেট্রোল এর দোকান আছে।আর এই দোকানে গেলেই দেখা যাবে ওই দিন কে পেট্রোল কিনেছিল। কারণ গ্রামে খুব একটা পেট্রোল চলে না। যারা কারণে পেট্রোল এর দোকানে খোঁজ নিতে লাগলো।
তারপরে গ্রামের দুটি পেট্রোল এর দোকানে খোঁজ নিল এবং ঐ দিন পেট্রোল কে কে কিনেছিল তার খোঁজ নিলো।গ্রামে পেট্রোল খুবই কম চলে। তাই তারা বলল অনেকদিন হলো পেট্রোল কেনে না। তবে সেই দিন বা তার দুইদিন আগে মাত্র ৫ জন ব্যক্তি পেট্রোল কিনেছিল।এর মধ্যে তিনজনই গ্রামের শিক্ষক। আর একজন গ্রামের মেম্বার আরও একজন রয়েছে যে মধুর ব্যবসা করে অর্থাৎ গাছে থেকে মধ্য কাটে।সে শাহীন ভাইয়ের চাচাতো ভাইয়ের নাম ছিল পলাশ।তখন ওই তিনজনের মধ্যে সন্দেহ হল, পলাশ ভাই কিসের জন্য পেট্রোল কিনেছিল ঐদিন, কারণ পলাশ ভাই তো মধুর ব্যবসা করে। তার তো পেট্রোল এর প্রয়োজন হয়না। আর ওই তিনজন একদিন পলাশ ভাইয়ের সাথে কথা বলছিল, যে আমাদের বাকির খাতায় কথা পলাশ ভাইকে বলেছিলো। পলাশ ভাই ওদের বলেছিল বাকীর খাতাটা চুরি করে ফেল কাহিনী শেষ। তাই ঐ তিনজনের মোটামুটি ধারণা হলো পলাশ কিছু একটা করেছে। তারা পলাশ ভাইয়ের সাথে দেখা করলেন।পলাশের সাথে দেখা করে তারা জিজ্ঞেস করল আচ্ছা ভাই তুমি কিসের জন্য ঐদিন পেট্রোল কিনেছিলে। পলাশ ভাই সঠিক জবাব দিতে পারল না,বললো এমনিই দরকার হয়েছিল। এমনি এমনি কেউ পেট্রোল কেনে, এটা জানতে পেরে ওই তিনজন তখনই গ্রামের চেয়ারম্যানকে খবর দিলো। ওরা বলল যে আমাদের সন্দেহ হচ্ছে পলাশ ভাই পেট্রোল কিনেছিল এবং সে কিছু একটা করেছে। আর মশালটা যে সুন্দরভাবে বানিয়ে ছিল কারণ এই মশালটা পলাশ ভাই ভালো বানাতে পারে, কারণ সে মধু গাছ থেকে সংগ্রহ করে, আর মশাল নিয়ে মৌমাছিকে তাড়াই।আমাদের মনে হচ্ছে পলাশ ভাই আগুন দেয়ার সাথে জরিয়ে আছে।
ওই তিনজন ছেলে যখন পলাশ ভাইয়ের কথা চেয়ারম্যানকে জানালো চেয়ারম্যানের মনের একটু সন্দেহ হল। যে হ্যাঁ এখানে কিছু একটা হতে পারে। তখন চেয়ারম্যান পলাশ ভাইকে ইউনিয়নের ডাক দিয়েছিল এবং একটা অন্ধকার রুমে নিয়ে ভয় দেখাল।বললো পলাশ সত্যতা স্বীকার করে,চেয়ারম্যান পলাশকে বলল তুই যা করেছিস সব আমরা জেনে গেছি। আমরা বড় একটি কবিরাজ ধরেছিলাম এবং সেই কবিরাজ বলেছে তুই দোকানে পেট্রোল দিয়ে আগুন লাগিয়েছিস, কেন লাগিয়েছিস বল সত্যিটা। না হলে তোকে সারা জীবন জেলে থাকতে হবে।স্বীকার করলে বাঁচিয়ে রাখবো।পলাশ ভাই কবিরাজের কথা শুনে বললো সব জেনে গাছেন আর উপায় নেই আমার। আমি স্বীকার করছি চেয়ারম্যান সাহেব। পলাম তখন বললো চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে বাঁচিয়ে দিবেন তো পুলিশের দিয়েন না আমি সব স্বীকার করছি।চেয়ারম্যান বললো ক্যান আগুন লাগিয়েছি সেটা বল।তখন পলাশ চেয়ারম্যান সাহেবকে বলল-আসলে চেয়ারম্যান সাহেব শাহিন গ্রামের সকলের কাছে প্রিয় পাত্র হয়ে গেছে এবং সততার সাথে ব্যবসা করছে। তার ব্যবসা খুব ভালভাবে চলছে আর আমার মধুর ব্যবসা ভালো ভাবে চলছে না। যার কারণে আমি শাহিনের চাইতে উপরে ছিলাম ভালো চলাচল করতাম, কিন্তু এখন আমার কামায় কম যার কারণে আমি ভালোভাবে চলতে পারিনা। আর শাহীন দিন দিন উন্নতি করছিল, এই হিংসা থেকে আমি এই কাজটি করেছি। আর আমাদের গ্রামের বাজারে আমার খালাতো ভাই রয়েছে, শাহিনের দোকান দেওয়ার কারণে তার দোকানও ভাল চলছিলো না, তাই আমরা দুজন মিলে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনা করি। আর যেহেতু শাহিনের সাথে গ্রামের ঐ তিন জন ছেলের মারামারি হয়েছিল, বাকীর খাতা নিয়ে ওরা খাতাটি চুরি করতে চেয়েছিল এই সুযোগে আমি পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছি, যাতে এই বিষয়টা ওদের তিনজনের পরে দোষ চাপে। চেয়ারম্যান সাহেব আমার ভুল করেছি আমাকে মাফ করে দিন।সে বলল ঠিক আছে আগামী শুক্রবারে জুমার নামাজ পড়ে বিচার হবে, ওই বিচারের সবকিছু স্বীকার করবি।
চেয়ারম্যান সাহেব তখন গ্রামের মুরুব্বিদের বলল শাহিনের দোকানে যে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে তাকে পাওয়া গেছে। আগামী শুক্রবারে জুমার নামাজ পর বিচার হবে। বিচারের সবাই আপনার উপস্থিত থাকবেন। তো আগামী শুক্রবারের যখন জুমার নামাজ পড়ে বিচারের আয়োজন করা হলো, বিচারের সবার সামনে তখন পলাশ স্বীকার করল যে তার খালাতো ভাইয়ের সাথে মিলে শাহীন ভাইয়ের দোকানে আগুন লাগিয়েছে। শাহিন ভাই কথাটা শুনে খুবই কষ্ট পেলো, কারণ পলাশকে তার নিজের ভাইয়ের মত দেখতো, শেষমেষ তার চাচাতো ভাই এত বড় ক্ষতি করল। আসলে নিজের মানুষরা এত বড় ক্ষতি করতে পারে এটা জানতে পেরে শাহীন ভাই মাটিতে বসে পরল।আর চেয়ারম্যান সাহেব বললো পলাশ যে ক্ষতিটা করেছে শাহিনের, এই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যদি ক্ষতিপূরণ পলাশকে আর তার খালাতো ভাই না দেয় আমরা গ্রামবাসীরা তাদের পুলিশ দিয়ে। তখন পলাশ এবং পলাশের যে খালাতো ভাইয়ের এর অবিভাবকেরা বলল ঠিক আছে আপনারা যে বিচার করবেন, এই বিচার আমরা মাথা পেতে নেব। তখন গ্রামের মুরুব্বীরা এবং চেয়ারম্যান বলল শাহিনের দোকানে যত টাকার মাল ছিল, সেই টাকা আগে দিতে হবে।শাহিন ভাইকে চেয়ারম্যান বলল তোমার দোকানে কত টাকার মাল ছিল। তখন শাহীর ভাই বললো আমার দোকানে তিন লক্ষ টাকার মাল ছিল।গ্রামের মুরুব্বিগণ চেয়ারম্যান পলাশকে বললো যে ভাবেই হোক তিন লক্ষ টাকা তুমি এক মাসের মধ্যে ম্যানেজ করে আমার হাতে দিবা। আর এই তিন লক্ষ টাকা তো দিবে আর ভবিষ্যতে এ ধরনের জঘন্যতম কাজ করলে আগে পুলিশে দিয়েছে। না হলে হাত পা ভেঙ্গে গ্রামে ভঙ্গ করে রাখবো। আর যদি শাহিনের সাথে কোন রকম খারাপ ব্যবহার হয় আগে তোমাকে ধরা হবে। তুমি নিজের চাচাতো ভাইয়ের সাথে এরকম জঘন্য অপরাধ করলে। তখন পলাশ এবং তার খালাতো ভাই চেয়ারম্যান এর পা ধরে বলল আমরা আর জীবনে এ ধরনের কোন কাজ করবো না। শাহীন ভাই চেয়ারম্যান সাহেব ওপর অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো কারণ গ্রামের মুরুব্বিগণ ও চেয়ারম্যানের কারণেই শাহিন ভাই তার সঠিক বিচার পেল। আসলে সত্য কখনো চাপা থাকে না। একদিন প্রকাশ পায়, গ্রামের সকল মানুষ শাহীন ভাইয়ের এই বিপদে এগিয়ে এসেছিল। যার কারণে সঠিক বিচার পেল।
আজ এখানেই শেষ করছি। আবারো অন্য কোনদিন ভিন্ন কোনো কন্টেট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন, এই দোয়া রইল। আল্লাহ হাফেজ।🙏🤲🙏
আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ ।আমি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে সিরাজগঞ্জ জেলায় বসবাস করি। আমি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমি আমার জন্মভূমিকে খুবই ভালোবসি ।আমি সর্বদাই গরীব-দুঃখীদের সেবায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি এবং নতুন সৃজনশীলতার মাধ্যমে কিছু তৈরি করতে আমার খুবই ভালো লাগে।এই ছিল আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়, আপনারা সবাই আমার পাশে থেকে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে উৎসাহিত করবেন, ধন্যবাদ সবাইকে।
👉বিশেষভাবে ধন্যবাদ সকল বন্ধুদের যারা এই পোস্টকে সমর্থন করছেন🌺🌹🌺
শাহীন ভাইয়ের দোকান পোড়ানোর আসল ঘটনাটা জানতে পারলাম। আসলে নিজের মানুষের বেশি ক্ষতি করে। এটা কখনও ভাবা যায় নাই। তবে সত্য কখনো চাপা থাকে না। শাহীন ভাইয়ের চাচাতো ভাই পলাশ আগুনটা লাগাবে এটা ভাবতে পারিনি। এই গল্পটি পড়ে খুবই খারাপ লাগলো এবং গ্রামবাসীকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।বিশেষ করে চেয়ারম্যানকে, যার কারণে শাহিন ভাই সঠিক বিচার পেয়েছে। আসলেই গ্রামের চেয়ারম্যান যদি ভাল হয় তাহলে সেই গ্রামে শান্তি আসে।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই
আপনার মুদি দোকানের গল্প পোস্ট টি বেশ ভালো ছিলো। পরে সত্যি অনেক ভালো লাগলো। তবে এই ধরনের ঘটনার সত্যি খুবই মর্মাহত। নিজের আপন জন এভাবে ক্ষতি করবে তা কল্পনা করা যায় না। এ ধরনের ঘটনা আমাদের সমাজের প্রায় ঘটে থাকে। ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য।
আপনার সুন্দর মতামতের জন্য ধন্যবাদ
প্রথম আর দ্বিতীয় পর্ব পড়ে শাহীন ভাইয়ের জন্য খারাপ লাগছিল।আর মনে মনে ভাবছিলাম কে করেছে এই মারাত্মক জঘন্য কাজটি।ছেলে তিনটি চমৎকার উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে পেট্রোলের দোকানে খোজ নিয়ে।অবশেষে যে অপরাধী ধরা পড়েছে এবং শাস্তি পেয়েছে এবং শাহীন ভাই যে ক্ষতিপূরণ পেল তাতেই শান্তনা। ধন্যবাদ ভাই এমন বাস্তব কিন্তু রহস্যময় ঘটনা শেয়ার করার জন্য।
আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ ভাই
সত্য সত্যই। সত্যকে কখনও চাপা দেয়া যায়না। সত্যর জয় হয়েছে। পলাশরা আমাদের আশেপাশেই থাকে ! কারো ভাই কারো বন্ধু!! পলাশদের শুভবোধ হোক। আপনার ও শাহিন ভাইয়ের জন্য শুভ কামনা।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ