নেশা থেকে দূরে থাকি সুন্দর একটা জীবন গড়ি

in আমার বাংলা ব্লগ5 months ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি। আমি @mohamad786 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস করি।আমির সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে অধ্যায়নরত আছি।

নেশা এমন একটা জিনিস সুন্দর একটা পরিবার, সুন্দর একটা জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। আর এই নেশার কারণে আমাদের পরিবার এবং আমাদের সমাজ বা দেশ থেকে অনেক মেধাবী স্টুডেন্ট, মেধাবী মানুষ যেন হারিয়ে যাচ্ছে এই নেশার জগতে গিয়ে। আসলে নেশা খুবই খারাপ জিনিস। মানুষকে মানুষত্বহীন পশুর মত করে দেয় এই নেশা। মানুষের সাথে মানুষের ব্যবহার, বাবার সাথে সন্তানের ব্যবহার, ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের ব্যবহার, সকল কিছু নষ্ট করে দেয় একমাত্র এই নেশার কারণে। এমনকি মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক নষ্ট হয় এই নেশার কারণে। আর নেশা মুক্ত যদি জীবন গড়তে পারি তাহলে সেই জীবনটা হবে আলোকিত, সেই জীবনটা হবে সুন্দর। আমাদের সমাজ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পশুর মতন হয়ে যাচ্ছে এই নেশার কারণে। আর নেশার কারণে আমরা প্রতিনিয়ত মেধাবী স্টুডেন্ট, মেধাবী মানুষদের হারিয়ে ফেলছি।


স্কুল জীবন পার করেই যখন আমরা কলেজ জীবনে উঠি, তখন আমাদের ম্যাসে বা হোস্টেলে থাকতে হয়। আর হোস্টেলে থাকতে থাকতে হোস্টেলে যদি একজন খারাপ বন্ধু থাকে, যে সিগারেট খায়। সে যদি আমাদের রুমে থাকে,সেই আসতে আসতে এমন ভাবে ব্রেন ওয়াশ করে দেয়, অন্য ব্যক্তিরাও সিগারেট খাওয়া শুরু করে। আর নেশার প্রথম ধাপ হলো সিগারেট। আস্তে আস্তে সিগারেট খাবে এবং আরো নেশা করবে, এমন নেশায় আসক্ত হবে, সে যদি পড়াশোনায় ভালো থাকে নেশার কারণে আর ভালো থাকে না। আসলে এই নেশার কারণে প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজ থেকে ভালো ভালো স্টুডেন্ট হারিয়ে যাচ্ছে। আসলে নেশা এমন একটা জিনিস যা পড়াশোনার মন-মানসিকতা একদম নষ্ট করে দেয়। বিশেষ করে হোস্টেলের স্টুডেন্টদের বিষয়ে এই ধারণাগুলো বেশি হয়ে থাকে। আর এই স্টুডেন্টগুলো যেন আস্তে আস্তে নেশায় আসক্ত বেশি হচ্ছে এবং তাদের সুন্দর জীবন নষ্টের পথে ঢেলে দিচ্ছে।

hands-2847508_1280.jpg

Source

আসলে নেশা যে আমাদের জীবনকে কতটা নষ্ট করে দেয়, সেই বিষয়ে আজকে আপনাদের মাঝে একটি উদাহরণ তুলে ধরছি। আর এই উদাহরণটি একদম সত্যি ঘটনা। আমাদের গ্রামের রফিক ভাই এবং সুজন ভাই, এই দুইজন চাচাতো ভাই। তারা একই ক্লাসে পড়াশোনা করত। তারা একই হাই স্কুলে পড়াশোনা করত। আবার৷ সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে যখন তারা এইস এস সি পরীক্ষা দিল, তখন দুইজনে এ প্লাস পেয়েছিল। সুজন ও রফিক ভাইও পেয়েছিল। তবে সুজন ভাইয়ের নাম্বার ছিল বেশি। যার কারণে সুজন ভাই ঢাকা একটি কলেজে পড়াশোনা করল। আর রফিক ভাই সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজেই পড়াশোনা করল। তাদের এই পড়াশোনার যেন প্রতিযোগিতা ছিল। তারা বিসিএস ক্যাডার হবে, প্রথম থেকে তাদের স্বপ্ন ছিল। যার কারণে তারা প্রশাসনিক ক্যাডার হওয়ার লক্ষণ নিয়ে পড়াশোনা করে যাচ্ছিল, কিন্তু সুজন ভাই যখন ঢাকায় ভর্তি হলো তখন আর রফিক ভাইয়ের সাথে ওভাবে যোগাযোগ হলো না। রফিক ভাই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিল আমি সিরাজগঞ্জ থেকে এমনভাবে পড়াশোনা করব আমি যেন বিসিএস ক্যাডার হতে পারি প্রথমবারই, এই ধারণা নিয়ে রফিক ভাই খুবই ভালোভাবে পড়াশোনা করতে লাগলো।


ওইদিকে সুজন ভাই ভর্তি হয়েছিল ঢাকা কলেজে, আর ঢাকা কলেজে এমনিতেই রাজনৈতিক বেশি হয়ে থাকে। আর সুজন ভাইয়ের কপাল খারাপ ছিল, সে এমন একটা হলে পড়েছিল সেই হলে রাজনৈতিক নেতা ছিল এবং তাকে রাজনীতিতে ঢুকিয়ে দেয়। তার মধ্যেও রাজনীতি ক্ষমতার লোভ চলে আসে। যে ক্ষমতা পেলেই ঐ ভাবে চলতে শুরু করলো, রাজনীতিতে ঢুকে পড়ে এবং আস্তে আস্তে সিগারেট খাওয়া শুরু করে এবং সিগারেট থেকে অন্যান্য নেশাও করে। সে যেহেতু নেতা হয়েছে যার কারণে সমাজে অন্যান্য নেতার সাথে চলাফেরা করতে হয়, সেই মন মানসিকতা নিয়েই সে যেন পড়াশোনার বিষয়ে এখন উদাসীন হয়ে নেশাগ্রস্ত নিয়ে ব্যস্ত ছিল। এভাবেই যেন তার জীবন পার হলো এবং আস্তে আস্তে সে নেশার ভিতরে আটকে গেল। আর বের হতে পারল না। তার ভিতরে রাজনীতি ক্ষমতা আর নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে।


সুজন ভাই যখন নেশায় আসক্ত হয়ে যায়। তখন আর তার পড়াশোনার প্রতি ওইভাবে নেশা কাজ করে না। তারা স্বপ্ন এখন নেতা হবে এবং সমাজের কিভাবে দাপট দেখিয়ে চলবে এটাই ছিল। পড়াশোনার আর আগের মত করে না সে যেন পড়াশোনার বিষয়ে উদাসীন। সে যে এত ভালো একটা স্টুডেন্ট ছিল সে এখন অনেক খারাপ হয়ে গেছে। কারণ সে এমন মানুষদের সঙ্গ দিয়েছে, যারা তাকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছে শেষমেষ তাকে নেশায় আসক্ত করে ফেলেছে। আর নেশা খুবই খারাপ জিনিস, নেশা না করলে, সে যেন ভালই থাকতে পারেনা। বাড়ি থেকে অনেক টাকা নিতো, কারণ ঢাকা শহরে এমনিতে থাকতে হয়, তারপরে নেতা হয়েছে অনেক বেশি টাকা তার খরচ লাগে।খুব কষ্ট করে তার বাবা তাকে সেই টাকা দিতো আর সে হাজার রকমের নেশায় আসক্ত হয়ে জীবন পার করতো।


এদিকে রফিক ভাই তো তার মনের ভিতরে স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা করছে খুব ভালোভাবে। তার চাচাতো ভাই খবর তো সে মাথাই নিতো না। সে কিভাবে পড়াশোনা করবে চাচাতো ভাইয়ের মুখোমুখি দাঁড়াবে এটাই ছিল তার পরিকল্পনা। যার কারণে সে খুবই ভালোভাবে পড়াশোনা করল এবং কিছুদিন আগেই বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছিল এবং এই পরীক্ষায় সে বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। সে প্রশাসনিক ক্যাডার হয়েছে, আর এই প্রশাসনিক ক্যাডার হওয়াতে এলাকাবাসী অনেক আনন্দিত। আর সুজন যখন শুনল যে তার ভাই প্রশাসনিক ক্যাডার হয়েছে, সে গ্রামে এসে তার বাবার পা ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ল। আজ যদি ঢাকা শহরে ভালোভাবে পড়াশোনা করতো, তাহলে রফিক ভাইয়ের মত সুজন ভাই আজ ক্যাডার হয়ে যেত। আর সমাজে সবচাইতে মর্যাদাবান ব্যক্তি হতো। কিন্তু সুজন ভাই নেশাগ্রস্তর কারণে এলাকাবাসী তাকে আর দেখতেই পারে না। তাকে কেউ সম্মান করে না। তার যেন অবস্থান সর্বনিম্নস্তরে,আর তার চাচাতো ভাই যে কি না তার চাইতে একটু খারাপ স্টুডেন্ট ছিল, সে আজ সমাজে মর্যাদাবান ব্যক্তি।


সুজন ভাই আজ প্রশাসনিক ক্যাডার তার কথা গ্রামের মানুষ এখন অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। সে যেটা বলবে সেটাই যেন মোটিভেশন কথা এবং তার কথা এখনো সবাই শুনবে। তাই রফিক ভাই গ্রামে সকল মানুষকে দুই দিন আগে ডেকেছিল। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মদের ডেকেছিল। আমরাও সেখানে গিয়েছিলাম এবং রফিক ভাই বলল আমাদের জীবন ধ্বংস করার প্রধান কারণ হলো এই নেশা। নেশার ভিতর আমরা যখনই ঢুকবো তখনই আমাদের জীবন শেষ হয়ে যাবে। যার কারণে গ্রামের ভিতরে খুবই সুন্দর একটি আমি ক্লাব তৈরি করতে চায়। আর এই ক্লাবের দায়িত্ব থাকবে নেশার বিরুদ্ধে কাজ করা। বিশেষ করে আমাদের মহল্লা, আমাদের গ্রামের বেড়ে ওঠা একটা সন্তানও যেন সিগারেট থেকে শুরু করে অন্য নেশার দিকে না যায়। সেই বিষয়ে কাজ করতে হবে আসলে রফিক ভাইয়ের কথা মতো এলাকার মুরুব্বীরাসহ এবং তরুণ প্রজন্ম সবাই রাজি হল এবং সবাই এই নেশার বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য প্রতিজ্ঞা করল।


রফিক ভাইয়ের এখন অনেক ক্ষমতা সে এখন প্রশাসনিক ক্যাডার। তার এই ক্ষমতা ও এলাকা বাসীর সকলেরই সহায়তায়, এলাকার ভিতরে কোন তরুণ প্রজন্মকে আর নেশার ভিতরে ঢুকতে দেবে না। সে চায়না তার চাচাতো ভাইয়ের মতো এরকম সুন্দর ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাক। যার কারণে সে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবে এবং আমরাও এই নেশার বিরুদ্ধে কাজ করার প্রতিজ্ঞা করেছি। আমরা এই নেশার বিরুদ্ধে কাজ করব, কারণ নেশা সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেয়। বাবা-মা অনেক কষ্ট করে আমাদের পড়ার খরচ চালিয়ে, তারা অনেক স্বপ্ন দেখে আমাদের নিয়ে,সেই স্বপ্নগুলো আমরা নষ্ট করি একমাত্র নেশার কারণে। যার কারণে রফিক ভাইয়ের এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানিয়ে গ্রহন করেছি এবং রফিক ভাইয়ের কথামতোই আমরা সকল কিছু করার পরিকল্পনা করেছি। আশা করছি তার পরিকল্পনা মতে চলতে পারে আমাদের সমাজ থেকে নেশা অনেক কমে যাবে।তাই আমি মনে করি প্রত্যেকটা এলাকাতেই নেশার বিরুদ্ধে কাজ করা উচিত আমাদের সকলের।

আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

IMG_20230821_180423.jpg

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ ।আমি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে সিরাজগঞ্জ জেলায় বসবাস করি। আমি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমি আমার জন্মভূমিকে খুবই ভালোবসি ।আমি সর্বদাই গরীব-দুঃখীদের সেবায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি এবং নতুন সৃজনশীলতার মাধ্যমে কিছু তৈরি করতে আমার খুবই ভালো লাগে।এই ছিল আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়, আপনারা সবাই আমার পাশে থেকে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে উৎসাহিত করবেন, ধন্যবাদ সবাইকে।

Amar_Bangla_Blog_logo_png.png

👉বিশেষভাবে ধন্যবাদ সকল বন্ধুদের যারা এই পোস্টকে সমর্থন করছেন🌺🌹🌺

Sort:  
 5 months ago 

নেশা নিয়ে সুন্দর একটি সচেতনতা মূলক পোস্ট শেয়ার করেছেন ভাইয়া। দেশের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে নেশার করালগ্রাস পৌছেনি!নেশা নির্মূলের দায়িত্বে যারা আছেন তারাই এর প্রসারে কাজ করে যাচ্ছেন বলে, অভিযোগ পাওয়া যায়।আপনি আপনার সুজন ও রফিক ভাইয়ের চিত্র তুলে ধরে মাদকের ভয়াবহতা সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। আসুন আমরা সবাই মাদককে না বলি। সুস্থ সবল জীবন গড়ি। আপনার প্রসাশনিক ক্যাডার রফিক ভাইয়ের গড়া ক্লাব, আপনার এলাকায় নেশা নির্মূলে ভূমিকা রাখবে বলে আশাকরি। পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

 5 months ago 

আসলে নেশার কারণে আমাদের সমাজ থেকে অনেক মেধাবী স্টুডেন্ট হারিয়ে যাচ্ছে। আপনার কথাটি একদম বাস্তবমুখী এবং এই ঘটনা গুলো আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে। আজ রফিক ভাই সফল হয়েছে, সে বিসিএস ক্যাডার হয়েছে আর তারই চাচাতো ভাই সুজন ভাইয়ের অবস্থা আজ ভয়াবহ। একমাত্র এই নেশার কারণে। সুজন ভাই এই অবস্থা আশা করছি রফিক ভাইয়ের এই উদ্যোগটি এলাকার ভিতরে নেশার পরিমাণ অনেক কমিয়ে দিবে এবং সুন্দর একটি সমাজ তৈরি করতে সহায়তা করবে। আপনি এই সংগঠনের সাথে আছেন জানতে পেরে ভালো লাগলো।

 5 months ago 

বর্তমান সময়ে নেশা একটি স্বাভাবিক খাবারে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সময়ের যুবক ছেলেরা এই নেশার কবলে পড়ে প্রায় ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন রাস্তা ঘাটের মধ্যে দেখা যায় অনেক ছোট বাচ্চারাও এই নেশার সাথে জড়িত। আমাদের সকলের উচিত নেশা নামক দুনিয়া থেকে বের হয়ে আসা। তাহলে জীবন অনেক সুন্দর হবে।

 5 months ago 

লেখাপড়া জীবনে মানুষের মধ্যে অনেক কিছু এসে যায়। একদিকে রাজনৈতিক প্রভাব,আরেক দিকে নেশা জাতীয় দ্রব্য,আবার প্রেম পিরিতির বিষয়। তবে এই সমস্ত বিষয়গুলো এড়িয়ে যারা ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারে, সুন্দর একটা লক্ষ্য নিয়ে চলতে পারে, তারাই ভালোভাবে ভালো পর্যায়ে উঠতে পারে। যাইহোক খুব সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে আমাদের মাঝে পোস্ট শেয়ার করেছেন দেখে ভালো লাগলো। অবশ্যই সুজন ভাইয়ের এই জীবনটা মানুষের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 62404.06
ETH 2426.64
USDT 1.00
SBD 2.65