আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা - ২৪💞 //🤝আমার ফেলে আসা জীবনের বন্ধুত্বের স্মৃতি🌹 [10% Beneficiary @shy-fox]
বন্ধু ছাড়া লাইফ ইম্পসিবল, কথাটি চিরন্তন সত্য। কারণ বন্ধুত্বের বন্ধন খুব কঠিন বন্ধন। এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক গুলো সারাজীবন টিকে থাকে, আর বন্ধুদের ছাড়া যেন লাইফে কোনো আনন্দ হাসি খুঁজে পাওয়া যায় না। জীবন যদি সুন্দর করতে হয় তাহলে বন্ধুর প্রয়োজন। আর এই বন্ধু জীবনের একটি অংশ। বন্ধুদের ছাড়া হাসিখুশি ভাবে জীবন পার করা যায় না। আর বন্ধুত্বের বন্ধন সারাজীবন রয়ে যায় হৃদয়ের মাঝে। ফেলে আসা বন্ধুত্বের এই স্মৃতিময় গল্প আমার বাংলা ব্লগের ২৪ তম প্রতিযোগিতার মাধ্যমে জানতে পারব এবং আমার ফেলে আসা বন্ধুদের সাথে সেই হারানো দিনের গল্প শেয়ার করতে পারব।এত সুন্দর একটি প্রতিযোগিতা আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য আমার বাংলা ব্লগের এডমিন এবং মডারেটর অসংখ্য ধন্যবাদ। তাই আজকে আমি এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমার ফেলে আসা বন্ধুত্ব গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করতে এসেছি। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
আমি যখন ক্লাস ফাইভ পাস করে সিক্সে হাইস্কুলে ভর্তি হলাম। হাই স্কুলে ভর্তি হওয়ার মুহূর্তগুলো অনেক আনন্দের ছিল। কারণ আমরা অনেক বন্ধুরা একসাথে হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছি। হাইস্কুলের মুহূর্তে অনেক আনন্দের ছিল। অনেকদিন হলো ভাবতেছিলাম কবে ক্লাস ফাইভ পাস করবে এবং হাই স্কুলে ভর্তি হবো। হাই স্কুলের স্টুডেন্ট হব এই নিয়ে অনেক আনন্দ অনেক মনের ভিতর কল্পনা ছিল। যখন হাইস্কুলে ভর্তি হলাম তখন অনেক ভালো লাগলো। এক মাসের মধ্যেই অনেক বন্ধু হয়ে গেল এবং আমি ভালো স্টুডেন্ট থাকার কারণে অনেকেই আমার পিছে পিছে ঘুরতে লাগল। তখন খুবই ভালো লাগলো। দলবেঁধে হাই স্কুলে বন্ধুদের সাথে চল আর সেই মুহূর্তগুলো ছিল অসাধারণ।এই সব বন্ধুদের মধ্যে রবিন এবং সাজু আমার সবচাইতে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলো। আমার সব সময় এক সাথে থাকতাম। জানের জান বন্ধু, যেখানে যায় না কেন একসাথেই যাই এবং যেখানেই থাকি না কেন একসাথে থাকি।স্কুলে যাওয়ার পর থেকে সারাটা সময় শুধু এই তিন বন্ধু এক জায়গায় থাকি এবং তিন বন্ধু মিলে আমরা প্রতিদিনই ফাস্ট বেঞ্চিতে বসতাম।এই বেঞ্চি যেন আমাদের জন্য দখল করা। এখানে আর কেউ সাহস পায় না বসার।সত্যিই ওই মুহূর্তগুলো অনেক আনন্দের ছিল।
তো এভাবে বন্ধুদের সাথে নিয়ে ক্লাস সিক্স থেকে যখন সেভেনে উঠলাম,তখন সেভেনের এক মাসের মধ্যে আরও একটি ছেলে বিজয় নামের আমাদের ক্লাসে ভর্তি হল।তার বাবা সরকারি চাকরি করতো যার কারণে সে ট্রান্সফার হয়েছে আমাদের এই দিকে।তাই বিজয় টি সি নিয়ে এসেছে আমাদের স্কুলে ভর্তি হলো এবং আমার ক্লাসে বিজয় ছিল হিন্দু ধর্মের। আর আমরা ছিলাম মুসলমান যার কারণে বিজয়ের সাথে প্রথম যখন ক্লাস করতাম অনেকেই হাসাহাসি করতো। নানান কথা বলতো কিন্তু বিজয় ছেলেটা কিছু বলতো না,সব সময় চুপ চাপ থাকতো। কারণ আমাদের ক্লাসে একজন হিন্দু ধর্ম ছাত্র ছিল,যার কারণে বিজয়য়ের সাথে ঐ ভাবে মেশা হয়নি।কিন্তু একদিন বৃষ্টি হচ্ছিল আমি সাইকেলে করে স্কুলে যেতাম এবং বৃষ্টির মধ্যে স্কুলে যেতে আমি রাস্তা পরে গেলাম কাদার মধ্যে।সাইকেল থেকে আমি নিচে পড়ে যায়, পায়ে খুব ব্যথা পায়। অনেক বেশি ব্যথা পেয়েছিলাম উঠতে পারছিলাম না এবং তখন দেখতে পেলাম বিজয় হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে এবং আমাকে দেখে আমার কাছে আসলো এবং আমার সাইকেলটা উঠল এবং আমাকে ধরে আমাদের বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসলো।
আমার সাথে বিজয় আমাদের বাড়িতে আসলো ঐদিন আমার আম্মা বিজয়কে অনেক ধন্যবাদ জানালো এবং মা বলল বিজয় সাথে সব সময় থাকবা,বিজয় খুব ভাল একটা ছেলে। তার পরের দিন সকালবেলা স্কুলে গেলাম এবং বিজয় জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করতে লাগলাম। বিষয় যখন রাস্তায় আসলো তখন বিজয়কে জড়িয়ে ধরে বললাম বন্ধু আজকে থেকে তুমি আমার ভালো বন্ধু। আমার আরো দুইজন বন্ধু ছিল ওদের সাথে বিজয়ের ভালো বন্ধুত্ব করিয়ে দিলাম। তারপরে থেকে আমরা চারজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে গেলাম এবং এই বন্ধু স্কুলের ভিতর যেন একটা আলোড়ন সৃষ্টি করলাম। আমরা এতটা মিলিয়েছিলাম থাকতাম, সবাই যেন বলতো ওরা চারজন একই মায়ের সন্তান সব সময় একই জায়গায় থাকে। যা করে একসাথে কখনো আলাদা হতে দেখিনি। খুব ভালোভাবে চলতে লাগলাম একটা বছর।তো এভাবেই আমার বন্ধুত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সব সময় একই সাথে থাকতাম। খেলাধুলা করতাম স্কুলের পুরোটা সময় যেন মাতিয়ে চলতাম। বন্ধুদের সাথে নিয়ে স্কুলের কাটানো সেই মুহূর্তগুলো ছিল অসাধারণ।
তারপরে একদিন হঠাৎ বিজয় স্কুলে আসছে না। আমি চিন্তিত হয়ে গেলাম। বিজয় কেন স্কুলে আসছে না। আমরা সকল বন্ধুরা স্কুলে বিজয় জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।যে বিজয় আসছে না কেন,একটু পরে আমরা খবর পেলাম বিজয় এবং তার বাবা মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট করেছে এবং তারা সিরাজগঞ্জের সদর হসপিটালে ভর্তি আছে।আমরা ক্লাস করা বাদ দিয়ে তিন বন্ধু মিলে সিরাজগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।গিয়ে দেখি বিজয়ের বাবা মোটামুটি সুস্থ আছে তবে বিজয়ের হাতের রগ কেটে গেছে। যার কারণে অনেক রক্ত পড়েছে এবং তাকে রক্ত দিতে হবে। রক্ত দিলে কোন সমস্যা হবে না। তো আমার রক্তের সাথে বিজয়ের রক্তের গ্রুপ মিল রয়েছে যার কারণে আমি রক্ত দিলাম এবং বিজয় ৩ দিন হসপিটালে ছিলো। আমি রক্ত দিয়ে বাড়ি আসলাম এবং বাড়ি আসার পরের দিন আবারও আমার বন্ধু বিজয়ের কাছে গেলাম এবং বিজয়ের পাশে সারাক্ষন থাকলাম। সত্যিই সেই মুহূর্তটা খুবই খারাপ ছিল, কারণ বিজয়ের অসুস্থতা আমাকে অনেকটাই মর্মাহত করেছে আমাদের। আসলে বন্ধু যখন অসুস্থ হয় তখন এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক কতটা আপন সেটা তখন বোঝা যায়। যখন বন্ধু সুস্থ হয়ে বাড়ি আসলো তখন খুবই আনন্দ হল। আবার হাসিমুখে বন্ধুকে হসপিটাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসলাম। প্রায় ১৫ তিন পরে আবারও আমাদের সাথে ইস্কুলে ক্লাস করতে লাগল বিজয় বন্ধুর।সেই মুহূর্তগুলো আরও আনন্দ উপভোগ করতে লাগলাম। সত্যিই স্মৃতিময় দিনগুলো খুব মনে পড়ছে।
আজ এখানেই শেষ করছি। আবারো অন্য কোনদিন ভিন্ন কোনো কন্টেট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন, এই দোয়া রইল। আল্লাহ হাফেজ।🙏🤲🙏
আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ ।আমি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে সিরাজগঞ্জ জেলায় বসবাস করি। আমি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমি আমার জন্মভূমিকে খুবই ভালোবসি ।আমি সর্বদাই গরীব-দুঃখীদের সেবায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি এবং নতুন সৃজনশীলতার মাধ্যমে কিছু তৈরি করতে আমার খুবই ভালো লাগে।এই ছিল আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়, আপনারা সবাই আমার পাশে থেকে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে উৎসাহিত করবেন, ধন্যবাদ সবাইকে।
👉বিশেষভাবে ধন্যবাদ সকল বন্ধুদের যারা এই পোস্টকে সমর্থন করছেন🌺🌹🌺
বন্ধু ছাড়া নিজের লাইফ ইম্পসিবল কখনো চিন্তা করা যায় না আপনি একদম ঠিক বলেছেন ভাই। সত্যি বলতে ভাইয়া মায়ের কথা শোনা উচিত আপনার মা আপনার বন্ধু বিজয়ের সাথে আপনাকে সব সময় থাকতে বলেছেন কেননা বিজয় একটা ভালো ছেলে। একদম ঠিক ভাই বন্ধুত্ব আসলে কখনোই ভোলা যায় না। সারা জীবন যেন আপনার বিজয় বন্ধু আপনার হৃদয়ের বুকে থাকে এই দোয়াটি করি ভাই আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
আসলে হাই স্কুল লাইফের বন্ধু গুলো হৃদয়ের সাথে মিশে আছে। এই বন্ধু গুলো আর অন্যান্য বন্ধুর সাথে কখনই মেলে না।
আপনার রাস্তায় পড়ে পায়ে ব্যথা পাওয়ার পর বিজয় আপনাকে হেল্প করার ব্যাপারটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। যদিও আপনার তাদের সাথে খুব একটা মিসতেন না কিন্তু তারপরও সে আপনাকে হেল্প করেছে আপনার বিপদে। এবং বিজয়ের বাইক এক্সিডেন্ট এরপর তাকে রক্ত দিয়ে সাহায্য করার আপনার ব্যাপারটি আমার খুব ভালো লেগেছে। টিকে থাকুক আপনাদের এমন ভালোবাসা।
আসলে আমার বন্ধু বিপদে কথা শুনে রক্ত দিয়েছিলাম। আসলে তখন খুবই খারাপ লাগছিলো বন্ধু বিপদের কথা শুনে যেন পাগলপ্রায়। আসলে বন্ধু হয়ে বন্ধুর বিপদে ঝাপিয়ে পড়ে প্রকৃত বন্ধুর পরিচয়।
আসলেই স্কুল জীবনের বন্ধু গুলো এমনই হয়। এটা শুনে খুবই ভালো লাগলো বিজয়ের এক্সিডেন্ট হওয়ার পরে আপনি তাকে রক্ত দিয়েছেন। এটাই হচ্ছে বন্ধুত্ব সব সময় বন্ধুরাই তাদের বন্ধুদের বিপদে এগিয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক। এই ধরনের বন্ধুত্ব স্কুল জীবনে সব থেকে বেশি পক্ষ করা যায়।
আসলে ভাই বন্ধুত্বের সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কের মতো, আর এই সম্পর্কের মধ্যে ধর্ম বর্ণ ভেদাভেদ টিকে থাকে না।সত্যি বিজয় বন্ধু আমার হৃদয়ের সাথে মিশে আছে।
আসলে ভাই বন্ধুত্বের সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কের মতো, আর এই সম্পর্কের মধ্যে ধর্ম বর্ণ ভেদাভেদ টিকে থাকে না।সত্যি বিজয় বন্ধু আমার হৃদয়ের সাথে মিশে আছে।
ঠিকই বলেছেন একটা সময় আছে যখন বন্ধু ছাড়া মানুষের জীবনটা আসলেই ইম্পসিবল। আপনি যখন ক্লাস ফাইভে পড়তেন তখন তো আপনি ছোট ছিলেন হাই স্কুলে যাওয়ার পর অনেকগুলো বন্ধু পেয়েছেন এবং তার মধ্যে দুজন স্পেশাল বন্ধু পেয়েছেন যে যারা সব সময় আপনার সাথে মিলেমিশে থাকতো এরকম বন্ধুত্ব আসলে মানুষের জীবনের খুবই প্রয়োজন। আবার বিজয় নামের একটি হিন্দু ছেলের সাথে আপনার ভালো বন্ধুত্ব হয় আপনাকে সাহায্য করার কারণ এটা জেনে ভালো লাগলো যে প্রথমে হিন্দু বলে হাসাহাসি করেছেন পরে জানের বন্ধু হয়ে গিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত রক্ত দিয়ে বন্ধুত্বের সম্পর্কটিকে আরো গাঢ় করে নিয়েছেন। বন্ধুত্বের সম্পর্ক এমনই বুঝি হয় বিপদে একে অন্যের পাশে পাওয়া।
আসলে আপু বন্ধুত্ব সম্পর্ক হৃদয় সম্পর্ক আরেক বন্ধু বিপদে পড়লে অন্য বন্ধু ঝাঁপিয়ে পড়ে এটাই প্রকৃত বন্ধুর পরিচয়।
আসলে ভাই বন্ধু কখনো ধর্ম বর্ণ মিলে হয় না। বন্ধু হয় মনের সম্পর্কের আর এই বন্ধুত্বের বন্ধন সারাজীবন থেকে যায় হৃদয়ের মাঝে। আপনার বন্ধুত্বের গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। এভাবে আপনি আপনার বন্ধুর হৃদয়ে সারাজীবন থেকে যাবেন। ধর্ম বর্ণ মিলে আপনাদের বন্ধুত্বকে ভেদাভেদ করতে পারিনি। যাইহোক আপনার রক্তে তার শরীরে রয়েছে, এটা জানতে পেরে ভালো লাগলো।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমার পোস্ট পড়ার জন্য
ভাইয়া আপনাদের বন্ধুত্বের গল্প পরে ভালোই লাগলো, আসলে প্রথমে যায় সাথে একটু শত্রুর মত ভাব এবং হাসি ঠাট্টার করা হয় এক সময় তারাই খুব ভালো বন্ধু হয়ে থাকে, এছাড়া আমিও এটা অনুভব করতে পারতেছি, হসপিটালের সেই ১৫ দিন আপনাদের খুবই অস্তিরতায় কেটেছে, যাইহোক আপনাদের বন্ধুত্ব সারাজীবন অটুট থাকুক এই কামনায় করি, এবং আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
দোয়া করবেন ভাইয়া
ভাইয়া প্রথমে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য। আপনার বন্ধুত্বের গল্পটি পড়ে সত্যি অনেক ভালো লেগেছে। বিপদের সময় বন্ধু যদি বন্ধুর পাশে না থাকে তাহলে বন্ধুত্বের কোনো মূল্য থাকেনা। আপনার বন্ধুর এক্সিডেন্টের কথা শুনে ছুটে গিয়ে তাকে রক্ত দেওয়ার কথা জেনে খুব ভাল লেগেছে। আপনাদের জন্য দোয়া রইল যাতে সবসময় এভাবেই একে অপরের পাশে থাকেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ বন্ধুত্বের সুন্দর একটি সম্পর্কের গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ আপু,