(The basket) টুকরি, শর্ট ফিল্ম রিভিউ।
আজ - ২২ই আশ্বিন | ১৪২৮ বঙ্গাব্দ | বৃহস্পতিবার | শরৎকাল |
আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।
আজ আমি আপনাদের সাথে (The basket) টুকরি, শর্ট ফিল্ম রিভিউ করব।
ছবিঃ স্ক্রিনশট এর মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে।
আমি একসময় প্রচুর এনিমেশন মুভি দেখতাম কিন্তু এখন সময়ের অভাবে সেটা আর হয়ে উঠছে না। মন চাইলেও আর দেখতে পারছি না। তবে কিছুদিন আগে ইউটিউবে একটি এনিমেশন শর্ট ফিল্ম চোখে পড়ল। ফিল্মটি দেখার পর আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। তাই ভাবলাম ফিল্মটি রিভিউ আপনাদের সাথে শেয়ার করি।
আমি জানিনা আপনাদের এনিমেশন মুভি সম্পর্কে মতামত বা ধারণা কি। তবে আমি মনে করি একটি এনিমেশন মুভি তৈরিতে অনেক পরিশ্রম, ভালো গল্প এবং ভালো একটি বাজেটের প্রয়োজন। বর্তমান বিশ্বের বেশ ভালো ভালো এনিমেশন মুভি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে থাকলেও আমাদের নতুন কিছু তৈরি করার আগ্রহের কমতি নেই। আমাদের দেশে যদিও আগে কখনও কোনও অ্যানিমেশন কিছু তৈরি করা হয়নি। তবে কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিলে একে অ্যানিমেশন শর্ট ফিল্ম তৈরি করেছিল যেটির নাম হচ্ছে tomorrow। আমি মনে করি নতুন হিসেবে এ সর্ট ফিল্ম টা কিন্তু অনেক ভাল হয়েছে। অন্য কোন দিন আপনাদের সাথে এ শর্টফিল্মটি রিভিউ শেয়ার করব আশা করছি।
যাই হোক, আজকে আর সেটার দিকে যাচ্ছি না। আজকে যে শর্টফিল্ম নিয়ে নিয়ে আলোচনা করছি যেটির নাম হচ্ছে (The basket) টুকরি।
উল্লেখ্য যে, এ ফিল্মটিতে কোন চরিত্রের নাম উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ ফিল্মটির মধ্যে কোন ভয়েজ দেওয়া হয়নি। তাই এখানে আপনাদের বোঝানোর স্বার্থে চরিত্রগুলোর একটি কাল্পনিক নাম দিয়েছি। এখানে মূল চরিত্রের অভিনয় করা যে ছোট্ট মেয়েটি আছে তার নাম দিয়েছি মিনা।
নাটকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলীঃ
নাম | টুকরি |
---|---|
পরিচালক | সুরেশ আরিয়াত। |
দৈর্ঘ্য | ১৪ মিনিট। |
ধরন | বাস্তবিক । |
মুক্তির তারিখ | ৪.০৭.২০২০ইং। |
নাটকের সারসংক্ষেপ
মিনা একটি ছোট্ট মেয়ে যার বয়স আনুমানিক ৬ থেকে ৭ বছর হবে। মিনার পরিবারের তিনজন সদস্য তার বাবা-মা ও সে। তাদের পরিবার খুবই অভাবে কিন্তু তাদের পরিবারের ছিল সুখ শান্তি। মিনার বাবা ও মা দুজনেই বাহিরে কাজ করে।
মিনার বাবা মিনাকে খুব ভালোবাসে। প্রতিরাতে মিনার বাবা কাজ শেষে করে বাড়ি ফিরে তার সাথে খেতে বসে এবং খেতে বসার সময় তারা দুজনে অনেক দুষ্টামি করে। মিনার বাবা প্রতিদিন রাতে বেলায় যখন মিনা ও তার মা ঘুমিয়ে যেত। তখন সে তার একটি পুরনো বক্স থেকে একটি ফটো ফ্রেম এবং একটি পুরনো অ্যালার্ম ক্লক বের করে দেখতো। মূলত এখানে সে অ্যালার্ম ক্লক টি কোন একটি পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে। যা আমরা ওই ফটো থেকে জানতে পারি।
মিনার বাবা এই বক্সটি খোলার সময় খুবই সতর্ক থাকে যাতে কারো ঘুম না ভেঙে যায়। মিনা প্রতিদিন দেখে তার বাবা রাতের বেলায় বক্সটিতে কিছু একটা দেখে এবং পরে সেটি আবার রেখে দেয় । এই বিষয়টা নিয়ে মিনার মধ্যে একটি কৌতূহল সৃষ্টি হয়।এরপর দেখা যায় একদিন সকালবেলা প্রতিদিনের মত তার বাবা ও মা দুজনে বেরিয়ে পড়েছে কাজের উদ্দেশ্যে। আর সেই ফাঁকে মিনা একটি উঁচু টুল নিয়ে ওই বক্সটি খুলে দেখে। বক্সটি খুলে সে দেখতে পায় একটি ফটো ফ্রেম এবং লাল কাপড় মোড়ানো একটি ঘড়ি। ঘড়িটি হাতে নিয়ে মিনা কিছুক্ষণ দেখছিল কিন্তু হঠাৎ করে ঘড়িটা তার হাত থেকে নিচে পড়ে ভেঙে যায়। এরপর সে তারাতারি করে ভাঙ্গা ঘড়িটিকে ওই কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে আবারো আগের জায়গায় রেখে দেই।
প্রতিবারের মতো রাতের বেলায় মিনার বাবা যখন ওই ঘড়িটিকে দেখতে যায়। তখন সেই দেখে ঘড়িটি ভাঙ্গা পড়ে আছে। তখন সে খুবই কষ্ট পায়। কেননা এই ঘড়িটি তোর খুব পছন্দের এটির সাথে তার অনেক আবেগ, আনন্দ, অনুভূতি জড়িয়ে রয়েছে।
এই ঘটনার পর থেকে মিনার বাবার খুবই মন খারাপ থাকে। সে তার মেয়ের সাথে আগের মতো দুষ্টমি করে না। আর এ ব্যাপারটি মিনার কাছে মোটেও ভালো লাগে না। সে নিজেকে অপরাধী বলে মনে করে। কেননা তার কারণেই কিন্তু ঘড়িটা ভেঙ্গে গিয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে মিনারা এতই গরীব যে তার বাবার পছন্দের ঘড়িটা সারানোর মতো পয়সাটা ও পর্যন্ত তাদের কাছে নেই। মিনা তার বাবার এই ঘড়িটা ঠিক করার জন্য সে একদিন স্কুল না গিয়ে সারাক্ষণ বসে অনেকগুলো ঝুড়ি তৈরি করে।
এর পর সে এগুলো নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে বিক্রি করার জন্য। সে ভাবে এগুলো বিক্রি করার পর যে অর্থ আসবে সেগুলো দিয়ে তার বাবার এই ঘড়িটি কে সে ঠিক করে নিবে। সে ঝুড়ি গুলো নিয়ে প্রত্যেকটি গাড়ির সামনের যায় বিক্রি করার জন্য। কিন্তু কেউ তার ঝুড়িগুলো নেয়নি বরং তাকে আরো তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছিল। এরপর হঠাৎ একটি গাড়ি আসে এবং গাড়ির ভিতরে লোকটি সব ঝুড়িগুলো কিনে নেয় । এবং সে ঝুড়ি বিক্রির ওই টাকাগুলো নিয়ে দোকানে যায় । এবং দোকানে গিয়ে সে তার বাবার ভাঙা গাড়িটিকে সরিয়ে নেয়। এরপর দেখা যায় হঠাৎ করে একটি গাড়ির হর্ন শুনে মিনার হুশ ফিরে আসে। আসলে সে এতক্ষন যে ঝুড়ি বিক্রির বিষয়টি দেখছিল তা আসলে তার কল্পনা ছিল। সে এতক্ষণ পর্যন্ত একটি ঝুড়ি ও বিক্রি করতে পারেনি বরং একটি গাড়ির ধাক্কায় তার সব ঝুড়ি রাস্তায় পড়ে দুমড়ে-মুচড়ে উড়ে যায়।
আমি নাটকটি কে ৮/১০ দিচ্ছি।
আর এসব ঘটনায় মিনা মন খারাপ করে রাস্তার এক কোণে বসে থাকে। এবং সে এটা ভেবে কষ্ট পায় যে তার বাবার ঘড়ি সে বুঝি ঠিক করতে পারবেনা। এর পর দেখা যায় তার বাবা তার কাছে এসে হাজির, এবং সে আগের মতো হাসি খুশি এবং দুষ্টুমি করছে তার সাথে।
আর এভাবেই এই ফিল্মটি কে শেষ করা হয় এবার ।
শিক্ষা
এই শর্ট ফিল্মটির মধ্যে দেখানো হয়েছে একটি গরিব পরিবারের জীবনী। যেখানে তারা চাইলে সবকিছু করতে পারে না।
সবকিছুতেই তাদের একটি সীমাবদ্ধতা থাকে। এখানে সব থেকে যে বড় বিষয়টি সেটি হচ্ছে যে, আমরা রাস্তাঘাটে অনেক সময় দেখতে পাই, বিশেষ করে যখন রাস্তাঘাটে গাড়িগুলো জ্যামে থাকে তখন অনেক ছোট ছোট বাচ্চারা তাদের হাতে ফুল অথবা বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে আমাদের কাছে আসে বিক্রির জন্য। আমাদের মধ্যে এমন অনেকে আছে যারা ঐ সব মানুষগুলোর সাথে খুবই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করি। একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, তারা কিন্তু আমাদের কাছে হাত পাততে আসেনি বরং তারা এখানে এটি কর্ম করে খেতে এসেছে। আমরা যদি তাদের কাছে ওই জিনিস গুলো নি তবে তাদের কিছুটা উপকার হবে কিন্তু আমরা যদি সে উপকারটা ও না করতে পারি তবে অন্তত তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার থেকে দূরে থাকব।
ব্যক্তিগত মতামত
এ শর্টফিল্মটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। বিশেষ করে ভালো এই ফিল্মটি মধ্যে অসাধারণ একটি মিউজিক ছিল। এই ফিল্মটির মধ্যে কোন ভয়েস ছিল না। তবে আমি মনে করি এখানে কোন ভয়েসে প্রয়োজন নেই। কেননা ফিল্মটি এত সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যা সত্যিই প্রশংসনীয়। যাই হোক, সর্বশেষ বলতে গেলে আমার কাছে এই শর্টফিল্মটি অনেক অনেক বেশি ভালো লেগেছে। এটি যদিও একটি শর্টফিল্ম তবে এখানে অনেক বড় একটি ম্যাসেজ দেয়া হয়েছে।
অনেক ভালো লাগল ভাইয়া রিভিউটি। টুমরো শর্টফিল্মটি একটি এওয়ার্ড জিতেছে। আর এই ফিল্মটিতে অনেক বাস্তব বিষয় ফুটে উঠেছে যা আপনার রিভিউ পড়ে জানতে পারলাম। আর একটি বিষয় গাড়ি জ্যামে থাকলে অনেক ছোট বাচ্চাদের চকলেট,ফুল বিক্রি করতে দেখা যায় আমার অনেক খারাপ লাগে যখন কেউ সাড়া দেয়না। বাচ্চার মুখের দিকে তাকালে মায়া লাগে। এতো ছোট বাচ্চা পরিবারের সমস্যা দূর করতে রোজগারে নেমেছে। কিন্তু আমাদের সমাজ গরিবদের দিকে কখনো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়না। মানুষ অনেক নিষ্ঠুর ভাইয়া।
আসলেই ভাইয়া এনিমেশন মুভি বানাতে অন্য সাধারন মুভির থেকে পরিশ্রম এবং মেধা সবই লাগবে।একটা এনিমেশন ছবি বানাতে কিছুদিন আগে শুনেছিলাম অল্প কয়েক মিনিট এর শর্ট ফ্লিম সেটা বানাতে এক বছরের বেশি সময় নাকি লেগেছিলো ভাবা যায়।অনেক সুন্দর ভাবে মুভিটি উপস্থাপন করেছেন ধন্যবাদ ভাইয়া।
আসলে এই রকম কার্টুন মুভিগুলো খুব ভালো লাগে।কথায় আছে, সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নেই।তবুও গরীবরা মানুষ হয়।ধন্যবাদ সুন্দর লেখার জন্য।
আমিও বেশিরভাগ সময় ই পত্রিকা কিনি এই বাচ্চাগুলোর কাজ থেকে। তবে মাঝেমধ্যে কিছু বাচ্চা কাপড় বা ব্যাগ নিয়ে টানাটানি করে আর দূরে তাদের বাবা,মা কেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এটা একটু বিরক্তিকর।
এনিমেশন শর্ট ফিল্ম গুলো আমার ও খুব পছন্দের।
পুরো পোস্টটি পড়লাম। আমি যদিও অনেক শর্ট ফিল্ম ও বাংলা নাটক দেখি তবে এই টুকরি শর্ট ফিল্মটি আমার চোখে পড়েনি মনে হচ্ছে। সময় করে এটা দেখতে হবে। আসলে যে জিনিষটা নিয়ে কথা বলা হয় বা এটার প্রশংসা করা হয় সেটা হোক খারাপ বা ভালো দেখতে ইচ্ছা করে। আপনি খুব সুন্দর ভাবে রিভিউ টি করেছেন। সত্যি এর থেকে অনেক কিছুই শিক্ষার আছে আমাদের। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে।
নিজের প্রিয় কোনো জিনিস ভেঙ্গে গেলে সত্যিই অনেক কষ্ট লাগে এবং মেনে নিতে কষ্ট হয়।কিন্তু সমাজের মানুষরা গরিবদের পরিশ্রমের জিনিসটাকেও যথাযথ মূল্য দিতে ও দ্বিধা বোধ করে।অনেক সুন্দর কার্টুন মুভিটি।কার্টুন ভিডিও বা মুভিগুলো শিক্ষনীয় হয় সবসময়।ধন্যবাদ আপনাকে।
সম্পূর্ণ লেখাটি পড়লাম এবং পড়ে আসলে নাটকটি সম্বন্ধে খুব ভালো একটা ধারণা পেয়ে গেলাম। মনে হচ্ছে নাটক না দেখেই আপনার বর্ণনার মাধ্যমে নাটকের একটা অনুভূতি পেয়ে গেলাম। আসলেই ছোট ছোট সংসার গুলোতে অনেক বড় বড় ভালবাসা থাকে। মাঝে মাঝে সামান্য কষ্টে এবং খুব বেশি চাপে থাকলে হয়তোবা একটু ব্যতিক্রম হতে পারে তারপরও পরিবারের মধ্যে যে ভালোবাসা গুলো সেগুলো সব সময় থাকার মাধ্যমেই আমরা ভালো থাকতে পারি। আসলে টাকা পয়সার মধ্যে সুখ নেই বরং সুখ রয়েছে এরকম পরিবারের মধ্যে থাকা ভালবাসা ও আনন্দঘন মুহূর্তের মধ্যে। অনেক ভাল লেগেছে আপনার বর্ণনাটি এবং সুযোগ পেলে দেখার চেষ্টা করব।