সবসময় উপরে তাকাতে হয় না, মাঝে মাঝে নিচেও তাকাতে হয় ।
আজ- ১৮ ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, শরৎকাল |
আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।
মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। আমরা সবাই চাই জীবনে উন্নতি করতে, নতুন কিছু অর্জন করতে, বড় হতে। এজন্য ছোটবেলা থেকেই আমাদের বলা হয়—“উপরে তাকাও, বড় স্বপ্ন দেখো, আকাশ ছুঁতে চাও।” এ শিক্ষা খারাপ নয়, বরং জীবনের অগ্রগতির জন্য খুবই দরকার। কিন্তু জীবন কেবল উপরের দিকে তাকানোর নাম নয়। মাঝে মাঝে নিচের দিকেও তাকাতে হয়, কারণ সেখানেই লুকিয়ে আছে কৃতজ্ঞতার শিক্ষা, বিনয়ের সৌন্দর্য আর বাস্তবতার সত্য।
উপরে তাকালে আমরা স্বপ্ন দেখতে শিখি। এটি আমাদের বড় হতে উদ্বুদ্ধ করে, পরিশ্রম করতে শেখায়। একজন ছাত্র যখন বড় ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখে, তখন তার পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়ে। একজন ব্যবসায়ী যখন অন্য সফল প্রতিষ্ঠানের দিকে তাকায়, তখন তার নিজের ব্যবসায় উন্নতির ইচ্ছা জাগে। উপরে তাকানো ছাড়া এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই উপরের দিকে তাকানো আমাদের জীবনের জন্য একধরনের শক্তি।
তবে সবসময় যদি কেবল উপরের দিকে তাকানো হয়, তবে হতাশা তৈরি হতে পারে। কারণ পৃথিবীতে সবসময়ই আমাদের চেয়ে সফল, ধনী বা প্রতিভাবান কেউ না কেউ থাকবে। যদি আমরা কেবল তাদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করি, তবে মনে হবে আমরা কিছুই করতে পারিনি। তখন হীনমন্যতা জন্ম নেবে, আত্মবিশ্বাস কমে যাবে। তাই উপরে তাকানোর পাশাপাশি মাঝে মাঝে নিচের দিকে তাকানোও প্রয়োজন।
নিচের দিকে তাকানো মানে হাল ছেড়ে দেওয়া নয়। বরং এটি হলো বাস্তবতা উপলব্ধি করা। সমাজে আমাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে থাকা মানুষ আছে। কেউ প্রতিদিন দু’বেলা খাবার জোগাড় করতে পারে না, আবার আমরা তিনবেলা খেতে পারি। কেউ ঘরহীন, আমরা মাথার ওপর ছাদ পেয়েছি। কেউ শিক্ষার সুযোগই পায়নি, আর আমরা পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছি। নিচের দিকে তাকালেই আমরা বুঝতে পারি আমরা আসলে কতটা সৌভাগ্যবান।
নিচের দিকে তাকানো আমাদের কৃতজ্ঞ হতে শেখায়। কৃতজ্ঞ মানুষ সবসময় সুখী থাকে, কারণ তারা যা পেয়েছে সেটিকে মূল্য দেয়। তারা শুধু যা পায়নি, তার জন্য হতাশ হয় না। কৃতজ্ঞতা মানুষকে বিনয়ী করে, অহংকার কমায়। এটি হৃদয়কে শান্ত করে এবং জীবনে ধৈর্য আনে।
শুধু উপরের দিকে তাকালে আমরা হয়তো বড় হবো, কিন্তু সন্তুষ্টি পাবো না। শুধু নিচের দিকে তাকালে আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো, কিন্তু স্বপ্ন হারাবো। তাই জীবনে দুটোই দরকার—উপরে তাকানো আর নিচে তাকানো। উপরে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখতে হবে, আবার নিচে তাকিয়ে কৃতজ্ঞ হতে হবে। এই ভারসাম্যই জীবনের আসল সৌন্দর্য।
বাস্তব উদাহরণ দিয়ে বলি। একজন চাকরিজীবী প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করছে বড় পদে উন্নীত হওয়ার জন্য। সে যদি শুধু বড় পদে থাকা মানুষদের দিকে তাকায়, তবে হয়তো হতাশ হবে। কিন্তু যদি মাঝে মাঝে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে অনেক মানুষ চাকরিই পাচ্ছে না, পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, তবে সে নিজের অবস্থার জন্য কৃতজ্ঞ হবে। তখন তার ভেতরে আবার শক্তি আসবে, নতুন উদ্যম জাগবে।
আবার ধরুন একজন ব্যবসায়ী বিশাল সাফল্যের স্বপ্ন দেখছে। সে যদি কেবল বড় কোম্পানিগুলোর দিকে তাকায়, তবে মনে হতে পারে তার কিছুই হয়নি। কিন্তু যদি নিচে তাকিয়ে দেখে অনেক ব্যবসায়ী টিকে থাকতে পারেনি, তবে সে বুঝবে তার অর্জন ছোট নয়। তখন সে কৃতজ্ঞ হবে এবং নতুন করে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পাবে।
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এ শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। পড়াশোনায়, চাকরিতে, ব্যবসায়, সম্পর্কের ক্ষেত্রেও আমরা যদি কেবল উপরের দিকে তাকাই, তবে হতাশ হবো। কিন্তু যদি মাঝে মাঝে নিচের দিকে তাকিয়ে নিজের অর্জনকে মূল্য দিই, তবে জীবন অনেক সহজ আর সুন্দর হবে।
উপসংহার হলো, জীবনে সঠিক ভারসাম্য দরকার। সবসময় উপরের দিকে তাকাতে হবে না, মাঝে মাঝে নিচের দিকেও তাকাতে হবে। উপরে তাকানো আমাদের স্বপ্ন জাগায়, লক্ষ্য স্থির করে, পরিশ্রমী করে। আর নিচে তাকানো আমাদের কৃতজ্ঞ হতে শেখায়, বিনয়ী করে, শান্ত রাখে। এই দুইয়ের মিশ্রণই আমাদের জীবনে এনে দেয় সত্যিকারের সুখ।
তাই মনে রাখবেন—সবসময় উপরে তাকাতে হয় না, মাঝে মাঝে নিচেও তাকাতে হয়। কারণ আকাশ আমাদের স্বপ্ন দেখায়, আর মাটি আমাদের বাস্তবতার শিক্ষা দেয়। আর স্বপ্ন আর বাস্তবতার এই সমন্বয়েই তৈরি হয় এক সুন্দর, সার্থক এবং শান্তিপূর্ণ জীবন।
সকলকে ধন্যবাদ অনুচ্ছেদ টি পড়ার জন্য।


250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

VOTE @bangla.witness as witness

OR
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community