পরিস্থিতি মানুষকে ভিন্ন কিছু শেখায়।

কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভালো আছেন। দেখতে দেখতে ফেব্রুয়ারি মাস চলে যাচ্ছে। আসলে ফেব্রুয়ারি মাস হচ্ছে বাঙ্গালীদের জন্য অনেক গর্ব করার মত একটি মাস। কেননা এই মাসেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে শহীদ হয়েছেন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার সহ আরো অনেকেই। পৃথিবীর একমাত্র ভাষা হচ্ছে বাংলা যে ভাষার জন্য মানুষ নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছে। সে সকল শহীদদের কে স্মরণ করেই আমি আমার আজকের পোস্টটি শুরু করছি।

আসলে মানুষের জীবন বড়ই অদ্ভুত। মানুষের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হয় কিংবা আমরা যে সকল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায় , সেটি মাঝেমাঝে নাটক সিনেমার গল্প কাহিনী কেও হার মানায়। কেননা পরিস্থিতি মানুষকে সব সময় ভিন্ন কিছু করতে কিংবা ভিন্ন কিছু উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।

আজ আমি আমার জীবনের দু একটি বাস্তব ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করব তাহলেই বুঝতে পারবেন পরিস্থিতি একটা মানুষের জীবনকে কিভাবে বদলে দেয়। আমি আমার এই ছোট ২৫ বছরের জীবনকে দুই ভাগে ভাগ করি। একটি হচ্ছে আমার বাবা মারা যাওয়ার আগের জীবন। আরেকটি হচ্ছে এর পরবর্তী হতে এখন পর্যন্ত। আমার বাবা মারা যান ২০১৭ সালের মার্চ মাসে, তখন আমি ব্যাচেলরের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলাম। পড়ছিলাম ভালো একটা ইউনিভার্সিটিতে। আমার বাবা মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের পরিবারের সমস্ত সব কিছুই বাবার নিয়ন্ত্রণের ছিল এবং আমাকে পড়ালেখা ব্যতীত অন্যকিছু নিয়ে কখনো চিন্তা করতে হয়নি। সারাক্ষণ শুধু পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। পরিবারের অন্য কিছু নিয়ে কখনোই আমাকে চিন্তা করতে হয়নি। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর পরিস্থিতির সম্পন্ন উল্টো হয়ে যায়। পরিবারের সবকিছু এখন আমাকে দেখাশোনা করতে হয়। আসলে ভাবতে অবাক লাগে সময় কিভাবে মানুষের জীবনকে দ্রুত পরিবর্তন করে দেয়। আগে সারাক্ষণ সময় কাটতো পড়ালেখা করে, টিভি দেখে এবং বন্ধুদের সাথে ঘোরাফেরা করে। কিন্তু পরবর্তীতে নিজেকে ভালো রাখার জন্য নিজের পরিবারকে ভালো রাখার জন্য সবকিছু বিসর্জন দিয়ে প্রফেশনাল কাজে লেগে গেলাম।

এরপর যদি আরেকটি ঘটনা কথা বলি, যেটা বেশি দিন আগে না খুবই সাম্প্রতিক সময় ঘটা, নরমালি আমাদের বাসার সমস্ত রান্না বান্না আমার আম্মুই করে। আমি শুধু বসে বসে খাই। রান্না বান্না কখনোই আমার দ্বারা সম্ভব ছিল না বা করেনি। আমি মনে করতাম রান্না বান্না খুবই সহজ, এটি এমন কি কঠিণ কাজ, কিন্তু কিছুদিন আগে সাপ্তাহ খানেক এর জন্য আম্মু যখন একটা কাজে ঢাকাই গিয়েছিল। তখন বুজেছিলাম রান্না করাটা কম কষ্টের নয় । তবে হ্যাঁ সেটা আমার দ্বারা অসাধ্য ও নয়। পরিস্থিতির শিকার হয়ে আমার নিজের রান্না নিজেই করে খেতে হয়েছিল এই কয়েকদিন। তাই বললাম আসলে পরিস্থিতি মানুষকে ভিন্ন কিছু শেখায়।

আসলে ওই মানুষই জীবনে সফল হতে পারে যে কোন পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে সহজেই, আর পরিস্থিতি মানুষকে নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সাথে সম্মুখীন হতে বাধ্য করে, নতুন কিছু শিখাই, যদিও সে সফল বা ব্যর্থ হোক না কেন।

আজ এ পর্যন্তই, আবারো আমাদের সকল ভাষা শহীদদেরকে সম্মান এবং শ্রদ্ধা জানিয়ে আমার পোস্টটি শেষ করছে। কেননা তারা তাদের নিজের জীবনকে আত্মাহুতি না দিলে আজ আমরা বাংলা ভাষায় লিখতে বা বলতে পারতাম না। হয়তো এতদিন বাংলা একটা অপ্রচলিত ভাষা হিসেবেই থেকে যেত।