"জামাই থেকে বউ বড় " নাটকের রিভিউ।

আজ আমি আপনাদের সাথে "জামাই থেকে বউ বড় " নাটকের রিভিউ করব।

নাটকের শুরুতে আমরা মুন্না নামের একজন ছাত্রকে দেখতে পাই। মুন্নার বোন তার থেকে বয়সের ছোট হওয়া সত্বেও তারা এখন একই ক্লাসে পড়ছে। কেননা সে তিন বছর ধরে একই ক্লাসে পড়ে আছে। আর তিন বছর ধরে একই ক্লাসে পড়ে থাকার মূল কারণ হচ্ছে , তার ভালোবাসার মানুষটিকে তার মনের কথাটি বলার জন্য। এত বছর ধরে চেষ্টা করার পরে ও তার মনের কথাটি এখনো পর্যন্ত তার পছন্দের মানুষটিকে বলতে পারেনি। তার পছন্দের মানুষটি হচ্ছে তারই প্রিয় শিক্ষক লুনা ম্যাডাম।

এরপর লুনা ম্যাডাম মুন্না কে জিজ্ঞেস করে সে বারবার ফেল করছে? পড়ালেখায় কেন মনোযোগি হচ্ছে না। আর এই প্রশ্নে মুন্না ম্যাডামকে বলে - মুন্না বলে "পাস করে কি হবে যার জন্য তিন বছর ধরে একই ক্লাসে পড়ে আছি সে তো মনের কথা বুঝলো না" । তার এমন অদ্ভুত কথায় ক্লাসের সবাই হেসে উঠেছে। এবং ম্যাডাম ও খুব বিরক্ত হয়।

এরপর দৃশ্য পরিবর্তিত হয় আর আমরা দেখতে পাই। মুন্না লুনা ম্যাডামকে দেখার জন্য দাঁড়িয়ে আছে । আর আর এ বিষয়টি লুনা ম্যাডাম লক্ষ্য করলে সে মুন্নার কাছে যায় এবং ক্লাসে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো সম্পর্কে কথা বলে। ম্যাডাম তাকে জানাই এতদিন ধরে শুধুমাত্র একটি মেয়ের জন্য একই ক্লাসে পড়ে আছে এ বিষয়টি তা জানা ছিল না। ম্যাডাম তাকে সাহস যোগায়, এতদিন ধরে না বলা কথাগুলো তাকে বলে দেওয়ার জন্য। কেননা এই বিষয়টির কারণেই তার পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। ম্যাডামের মুখে এ সকল কথাগুলো শুনে মুন্না বেশ সাহস পায়। এবং সিদ্ধান্ত নেই যে ম্যাডামকে তার মনের কথাটি বলবে।

এরপর দেখা যায় মুন্না এর পরের দিন বোর্ডে লুনা ম্যাডামের নাম লিখে রেখেছে এবং ম্যাডাম ক্লাসে ঢুকে মাত্রই তাকে ফুল দিয়ে তার মনের কথাটি বলে। মুন্নার এই সব পাগলামি দেখে ম্যাডাম বেশ হতভাগ হয়ে যায়। এবং প্রিন্সিপাল স্যারকে ডেকে পাঠায়।

মুন্নার এই সকাল কর্মকাণ্ডে প্রিন্সিপাল স্যার তার উপর অনেক রেগে যায় এবং তাকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে।

মুন্নার বাবা সব সময় তাকে বকাঝকা করে তার পড়াশুনা অবহেলা জনিত কারণে। কিন্তু মুন্নার মা তাকে সবসময় প্রতিটা ক্ষেত্রে প্রতিটা কাজে সাপোর্ট করে।

এদিকে দেখা যায় মুন্না কে স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার পরেও সে লুনা ম্যাডামকে দেখার জন্য কলেজ এবং ম্যাডামের বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এবং ম্যাডাম এতে বিরক্ত হয় এবং তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে সে যেন এসব কিছু মাথা থেকে বাদ দিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে। আবার তাকে কলেজে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করবে ম্যাডাম। কিন্তু মুন্না জানাই সে আর পড়াশোনা করতে চাই না। সে ম্যাডামকে খুবই ভালোবাসে ম্যাডামকে না পেলে সে আত্মহত্যা করবে।

মুন্নার এই সকলই কথাবার্তা শুনে ম্যাডাম তার উপর কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। ম্যাডাম ভাবতে থাকে তিনি তো একজন শিক্ষক তিনি কিভাবে একজন মেধাবী স্টুডেন্টকে কিভাবে শেষ হয়ে যেতে দেখতে পারে। এছাড়া মুন্না তাকে তো পাগলের মত ভালোবাসে। সে তো জীবনে বড় একা। তার কি উচিত মুন্নার প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়া। কিন্তু সমাজ! সমাজ কি মেনে নেবে তাদের এই সম্পর্কে।

এইসব চিন্তাভাবনার এক পর্যায়ে এসে ম্যাডাম একটি সিদ্ধান্ত নেয়। ম্যাডাম মুন্না কে জানাই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে। মুন্না তখন ও পর্যন্ত ম্যাডামের বাসার নিচে দাঁড়িয়ে ছিল ম্যাডাম এর অপেক্ষায়। দিন গড়িয়ে রাত হয়ে গেল কিন্তু ম্যাডাম তখনো পর্যন্ত আসছিল না। ম্যাডাম আসছে না কেন সেটা দেখতে মুন্না যখন যাচ্ছিল তখন ঠিক সেই মুহূর্তে দেখা যায় ম্যাডাম বেশ সেজেগুজে মুন্নার কাছে আসছে।

তখন ম্যাডাম বলে আমি বলে এসেছি আমার ছেলেকে। কি বলেছেন? তখন ম্যাডাম বলল আমি যাচ্ছি। তখন মুন্না বলল কোথায় যাচ্ছি ম্যাডাম। ম্যাডাম তখন বলল কাজি অফিসে। মুন্না তখন পর্যন্ত বুঝতে পারিনি ম্যাডাম কেন কাজি অফিসে যাচ্ছে। পরে যখন সে বিষয়ে বুঝতে পারে সে তো এখন প্রচন্ড খুশি হয় এবং আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে ।

এর পর দেখা যায় মুন্না ম্যাডামকে বিয়ে করে নিয়ে তাদের বাসায় আসে। মুন্নার বাবা মা তার ম্যাডামকে বিয়ে করেছে দেখে ওখানে বেহুশ হয়ে যায়। তারা কোনভাবে এ বিষয়টিকে মেনে নিতে পারছে না। কিন্তু মুন্নার ম্যাডাম এই বিষয়টি সাধারণভাবে মেনে নেওয়ার কথা বলে এবং তাদেরকে অনেকভাবে বোঝাই। কিন্তু কোন ভাবেই তারা এই বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করে না বরং মুন্নার ম্যাডামকে দোষারোপ করতে থাকে তার ছেলেকে বিয়ে করার জন্য।

এদিকে মুন্না তার থেকে অধিক বয়সে একজন মহিলাকে বিয়ে করার এই বিষয়টি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মিডিয়ার লোক এবং পাড়া প্রতিবেশী সকালে এসে এ বিষয়টাকে নিয়ে আলোচনা আলোচনা সমালোচনা, কটাক্ষ করতে থাকে। আর সকলেই তাদের সম্পর্কটাকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথা বলতে থাকে। আর এই সকল কিছু মেনে না নিতে পেরে ম্যাডাম মুন্নাকে এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি দিয়ে চলে যায়। মুন্না তার ম্যাডামকে অনেক আটকানোর চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পারেনি। আর এখানেই নাটকটির সমাপ্তি ঘাটে ।

শিক্ষা

---

মানুষের জীবনের কিছু স্বাভাবিক ঘটনাকে সমাজ স্বাভাবিকভাবে মেনে না নিয়ে বরং অস্বাভাবিক করে তোলে। ওই স্বাভাবিক ঘটনাটি নিয়ে ওই সমাজের মধ্যে শুরু হয় বিশৃঙ্খলা । সমাজে প্রচলিত নিয়মগুলোর বিরুদ্ধে সমাজ কখনো কোন কাজ মেনে নিতে চায় না।

উপরোক্ত নাটকে আমরা দেখতে পাই , লুনা এবং মুন্নার বিয়ে করার এই বিষয়টি সমাজ ভালো চোখে মেনে নেয়নি। শুধুমাত্র তাদের বয়সে পার্থক্য থাকার কারণে। কিন্তু অন্যদিকে সমাজ অধিক বয়সের একজন ছেলের সাথে কম বয়সী একটি মেয়ের বিয়ে হয় তখন সে সম্পর্কটাকে স্বাভাবিকভাবেই দেখে।

ব্যক্তিগত মতামত

---

বেশ কয়েক মাস আগে ঘটে যাওয়া শিক্ষক এবং ছাত্রের বিয়ের একটি বাস্তব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই নাটকটি নির্মিত হয়েছে। যদিও নাটকের প্রত্যেকটি ঘটনায় যে বাস্তবে ঘটে যাওয়া সে ঘটনা গুলোর সাথে পুরাপুরি মিল তা কিন্তু নয়। কিছু কিছু ঘটনা গল্পের সৌন্দর্য বর্ধনে আলাদা করে যোগ বিয়োগ করা হয়েছে। সর্বশেষ বলতে গেলে নাটকটি আমার খুবই ভালো লেগেছে। নাটকের কিছু কিছু দৃশ্য ছিল খুবই মজার এবং আবেগি। চাইলে নাটকটি দেখতে পারেন। আশা করছি আপনাদের ও ভালো লাগবে।

ব্যক্তিগত রেটিং

---

আমি নাটকটি কে ৯/১০ দিচ্ছি।

নাটকের লিংক

---