আনন্দ কখনো যেন দুঃখের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

আজ - ১৮ই, বৈশাখ, | ১৪২৯ , বঙ্গাব্দ | গ্রীষ্মকাল |


আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।




cloud-g66de92417_1280.png
ছবি এখান হতে নেওয়া হয়েছে।

অসহ্য উত্তপ্ত রোদ আজ নেই। পরিবেশটা আজ কিছুটা শীতল। মৃদু মৃদু বাতাস বইছে চারিদিকে। রাস্তাঘাট গুলো আজ কিছুটা ভেজা। কেননা রাতে প্রচন্ড ঝড় হয়েছিল। যদিও ঝড় থেমে গিয়েছে ভোর হওয়ার আগেই। তবু সেই ঝড়ের রেশ এখনো রয়ে গেছে কিছুটা । যাই হোক আজকের আবহাওয়াটা খুবই ভালো লাগছে। বেশ উপভোগ্য। যদি এখনও বলা যেতে পারে না বেলা বাড়ার সাথে সাথে গরমটা হয়তো আরো বাড়তে পারে তবুও অনন্য দিনগুলোতে সাধারণত এই সময়টিতে প্রচন্ড রোদ থাকে। আজকের রোদগুলো কিছুটা হালকা সহ্য করার মত। যাই হোক বলা যেতে পারে না সামনের দিনগুলোতে আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে হয়তো বড় কোন ঘূর্ণিঝড় বা প্রাকৃতিক বড় কোনো দুর্যোগ। তাই আমাদের সকলকে সচেতন থাকতে হবে নিরাপদে থাকতে হবে।

নগরের রাস্তাঘাটগুলো এখন অনেকটাই ফাঁকা। সত্যি বলতে ঈদের এই সময়টাতে নগরের চিত্র যেন পুরোপুরি পাল্টে যায়। রাস্তাঘাটে মানুষজন তেমন একটা দেখা যায় না। অথচ যেখানে মানুষের জন্য দাঁড়ানোর সুযোগ ছিল না। সকলে চলে গেছে নিজ নিজ গ্রামে পরিবারের সাথে ঈদ কাটাতে।

যাই হোক আজ আমি আপনাদের সাথে একটি গল্পের মাধ্যমে বর্তমান সময়ের একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করব। তো চলুন শুরু করি আমার আজকের এই গল্পটি।




keywords-ge83d4a00c_1920.png
ছবি এখান হতে নেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে ঢাকায় থাকছে রাফি। বেশ কয়েক বছর আগে পড়াশোনা এবং চাকরির সুবাদে ঢাকায় এসেছে সে। পড়াশোনা এবং কাজের কারণে সে ঢাকায় বসবাস করলেও তার মন সবসময় পরিবারের কাছে পড়ে থাকে। সারা বছর পড়াশোনা কাজের বিভিন্ন চাপের কারণে তার তেমন একটা বাড়ি যাওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠে না। তবে সে প্রত্যেক বছর ঈদ তার পরিবারের সাথে পালন করে। তবে গত দুই বছর ভাইরাসের কারণে পরিবারের সাথে তার ঈদ পালন করা হয়নি। এজন্য সে এবছর যেভাবে হোক সে তার পরিবারের সাথে ঈদ পালন করবে এমনটাই মনে মনে সংকল্প করে নিয়েছে। বাড়িতে যাওয়ার জন্য অফিসের ছুটি না পাওয়ায় আগে থেকে ট্রেনের টিকিট কাটে রাখতে পারেনি সে। ঈদের মাত্র আর দুই দিন সময় আছে হাতে তাই তাকে যে করেই হোক এই দুদিনের মধ্যে বাড়িতে পৌঁছাতে হবে। কিন্তু ট্রেনের টিকিটের ব্যাপক সংকট কেননা রাফির মতো সকলেরই একটাই লক্ষ্য ঈদে প্রিয়জনের সাথে ঈদ পালন করার। অনেক চেষ্টার পরও ট্রেনের কোন টিকিট সে সংগ্রহ করতে পারেনি। যেহেতু তার বাড়িতে ট্রেনে যাওয়া ছাড়া বাসে যাওয়া সম্ভব না। তাই যে করে হোক তাকে ট্রেনের টিকেট সংগ্রহ করতে হবে।

রাফির সাথে তার একজন রুমমেট ছিল তারও একই অবস্থা সেও কোন টিকিট পায়নি বাড়ি ফেরার জন্য। তাই তারা দুই বন্ধু ঠিক করে ট্রেনের টিকিট ছাড়াই ট্রেনে উঠবে। অর্থাৎ ট্রেনের ছাদে করে তারা বাড়ি যাবে। রাফি এবং তার বন্ধু নই, ওখানে এমন অনেক মানুষ আছে যারা ট্রেনের টিকিট পায়নি তাই তারা ঈদে বাড়ি ফেরার জন্য ট্রেনের ছাদে কেউ আবার জানালায় ধরে প্রিয়জনদের সাথে কাটাবে বলে বাড়ি যাচ্ছে ।




london-g997fc941c_1920.jpg
ছবি এখান হতে নেওয়া হয়েছে।

যাইহোক রাফি এবং তার বন্ধু ট্রেন ছাড়ার কিছু মুহূর্ত আগে গিয়ে ট্রেনের ছাদে বসে পড়ে। এরপর যথারীতি তে ট্রেন ছাড়ে। ট্রেন ছাড়ার প্রথমদিকে ট্রেন বেশ আস্তে আস্তে চলেতে থাকে কিন্তু পরবর্তীতে যখন ট্রেনের গতি বাড়তে থাকে তখন তাদের ট্রেনের উপর বসে থাক কিছুটা কষ্টকর হয়ে যায়। রাফি ও তার বন্ধু জীবনে এই প্রথমবারের মতো ট্রেনের ছাদে উঠেছে। তাই তাদের ট্রেনের উপর বসে থাকাটা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে উঠছে। ট্রেন চলন্ত অবস্থায় তাই তারা নামতে পারছে না। প্রচন্ড রোদের ট্রেনের ছাদ গুলো উত্তপ্ত হয়ে আছে।

তবে তারা শত কষ্ট সহ্য করে মনের মধ্যে আশা নিয়ে বসে আছে এবার পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করবে বলে। এছাড়াও রাফি বুঝতে পারছে ওখানে বসে থাকা প্রত্যেকটি লোক তারই মতো পরিবারের সাথে ঈদ কাটবে বলে এমন ঝুঁকি গ্রহণ করেছে। তারা অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে কখন ট্রেন গন্তব্যস্থলে পৌঁছবে। কিন্তু সবেমাত্র ট্রেন চলা শুরু করেছে। এখনো অনেক ঘন্টা তাদের এভাবেই বসে থাকতে হবে। কিছুদূর যেতেই ট্রেনের গতি আরও বাড়তে থাকে।




train-gab2b71d6f_1920.jpg
ছবি এখান হতে নেওয়া হয়েছে।

এরপর রাফি হঠাৎ শুনতে পায় পিছনের কিছু লোক গোলযোগ করছে। সেই কৌতূহল নিয়ে সকলকে জিজ্ঞেস করছি এখানে কি হয়েছে এমনটা হচ্ছে কেন। এরপর রাফি জানতে পারে তাদের মতো ট্রেনের ছাদে বসে থাকা একজন নিচে পড়ে গিয়েছে। যেহেতু চলন্ত ট্রেন থেকে নিচে পড়ে গিয়েছে তাই সম্ভাবনা নেই প্রাণে বেঁচে থাকার যদিও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় তাহলে সে যে খুবই গুরুতর আহত হয়েছে এমনটাই মনে মনে কল্পনা করছে রাফি। সে আরো ভাবছে ওই লোকটির পরিবারের কথা কত আশা নিয়ে গেছে পরিবারের সাথে ঈদ পালন করবে বলে কিন্তু তার সে স্বপ্ন আজ ধুলায় মিশে গেল তার পরিবারের আনন্দের বদলে নেমে দুঃখের ছায়া।

লোকটির কথা তার পরিবার কথা ভাবতে ভাবতে কাটতে থাকে তার সময়। ট্রেনে চলতে থাকে তার গন্তব্যস্থলে। এতক্ষন বাড়ি ফেরার যে আনন্দ তার চোখে-মুখে ছিল। এই ঘটনা শোনার পর থেকেই যেন সে সবকিছু এক নিমিষেই ধুলোয় মিশে গেছে।

যদিও গল্পটি কাল্পনিক তবে রাফির মত এমন অনেককে রয়েছে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাড়ি ফিরে প্রিয়জনদের সাথে ঈদ করার জন্য। কিন্তু সে আনন্দের মাঝে যেন পরিবারের মানুষদের দুঃখের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। মনে রাখতে হবে সবকিছুর উপর হচ্ছে একজন মানুষের জীবন। হয়তো তার এবারে পরিবারের সাথে ঈদ পালন করা হলো না কিন্তু তাতে কি হয়েছে কিন্তু পরবর্তী ঈদ কিংবা অন্যান্য সময়ে গুলো তে তো তার একসাথে পালন করা হতো। তাই আমরা সবসময় চেষ্টা করব ঝুঁকিবিহীন পরিবহন করার।

সকলে ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং সচেতন ও নিরাপদ থাকবেন।

সকলকে ধন্যবাদ অনুচ্ছেদ টি পড়ার জন্য।


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Sort:  
 2 years ago 

যদিও গল্পটি কাল্পনিক তবে রাফির মত এমন অনেককে রয়েছে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাড়ি ফিরে প্রিয়জনদের সাথে ঈদ করার জন্য।

ভাইয়া আপনি একদম ঠিক বলেছেন আপনার লেখা গল্পটির মাঝে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় আছে। আসলে এরকম ঘটনা সব সময় ঘটছে। বিশেষ করে ঈদের সময় সবাই বাড়ি ফিরতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যেকোন উপায়ে সবাই তাদের প্রিয়জনের কাছে ফিরতে চায়। তাদের ঈদের আনন্দ প্রিয়জনের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে যেকোন উপায়ে বাড়ি ফিরতে চায়। কিন্তু তাদের এই তাড়াহুড়া এবং খামখেয়ালিপনা তাদের পরিবারের প্রিয় মানুষগুলোর দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অসচেতনভাবে চলাচল করলে অনেক সময় মৃত্যু হতে পারে। আসলে দুর্ঘটনা থেকে আমাদেরকে সচেতন থাকতে হলে অবশ্যই সাবধানে যান চলাচল করা উচিত। অনেক শিক্ষনীয় একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে জানাচ্ছি ধন্যবাদ। আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো ভাইয়া। 💝💝

 2 years ago 

ভাই আপনাদের ওদিকে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি হলেও আমাদের এদিকে অতটা হয়নি। তবে আবহাওয়া অনেকটাই ভালো। আপনার গল্পটি পড়লাম। অনেক সুন্দর বাস্তবধর্মী একটি গল্প লিখেছেন। বাংলাদেশে প্রতিবছর ঈদের সময় ট্রেনের ছাদে হাজার হাজার মানুষ এভাবে ভ্রমণ করে থাকে। একটুখানি পারিবারিক সময় কাটানো বা আনন্দের জন্য তারা জীবনে বিসর্জন দেয়ার মতো ঝুকি নিয়ে থাকে কিন্তু কাজটি করা মোটেও ঠিক নয়। কেননা সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। এই জীবন চলে গেলে আর ফিরে পাওয়া যাবে না। ধন্যবাদ এত সুন্দর বাস্তবধর্মী গল্পের মাধ্যমে সবাইকে সচেতন করার জন্য।

This post has been upvoted by @italygame witness curation trail


If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness




CLICK HERE 👇

Come and visit Italy Community



Hi @moh.arif,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.

Come and visit Italy Community

 2 years ago 

রাফির এই কাল্পনিক গল্পের মাধ্যমে আপনি আমাদের সত্যি শিক্ষনীয় একটি বিষয় বুঝালেন ভাইয়া। আমরা চাইলে এক ঈদে না পারলে অন্য ঈদে পরিবারের সাথে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারি। কিন্তু এভাবে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় যদি কিছু হয়ে যায় তখন আনন্দর বদলে অনেক বেশি দুঃখ নেমে আসবে পরিবারের উপর। তাই আমাদের সকলেরই উচিত এ ধরনের ঝুঁকি গুলো এড়িয়ে চলার।
এই গল্পটির মাধ্যমে খুবই শিক্ষণীয় একটি বিষয় আপনি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন, খুবই ভালো লাগলো ভাইয়া। ধন্যবাদ।

 2 years ago 

হ্যাঁ ভাই সময়ের চেয়ে জীবনের দাম অনেক বেশি, আমি নিজেও এ ধরনের একটু সমস্যায় পড়েছিলাম। ট্রেনের ছাদে উঠে জার্নি করার সময় হঠাৎ করে উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তারের মধ্যে প্রায় আটকে গিয়েছিলাম, কিন্তু 10 সেকেন্ডের মধ্যে নিজকে সরিয়ে নেই। তারপর ওই যাত্রায় বাবা-মা দোয়ায় এবং আল্লাহর রহমতে বেঁচে যাই। তারপর আর কখনো ট্রেনের ছাদে যাত্রা করিনি। তাই আমাদের উচিত ট্রেনের ছাদে বাসের ছাদে কিংবা লঞ্চের ছাদে উঠে যাত্রা না করা।

 2 years ago 

রাফির মতো এমন অনেক ঈদ যাত্রী আছে যারা ট্রেনের ছাদে উঠে বাড়িতে যায়। প্রথমদিকে ট্রেন আস্তে চলে তাই তারা ঠিক বিপদটা বুঝতে পারে না। কিন্তু যখন ট্রেনটা আস্তে আস্তে জোরে চলতে শুরু করে তখন তাদের সেইখানে টিকে থাকা কষ্ট হয়ে যায়। এত কষ্টের মধ্যেও আমাদের একটাই স্বপ্ন থাকে সেটা হলো পরিবার পরিজনের সাথে আমরা ঈদ করবো। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

প্রতিবারই পেপার-পত্রিকায় এমন কিছু ঘটনা দেখতে পাওয়া যায় ই।আসলে এটা কাল্পনিক হলেও সম্পূর্ণ বাস্তব।

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 68220.71
ETH 3321.59
USDT 1.00
SBD 2.74