প্রিয় মানুষটিকে দেখার অপেক্ষা।steemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

আজ - ২৭ই, কার্তিক |১৪২৯ , বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল |


আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।




train-g067065609_1920.jpg
ছবি এখান হতে নেওয়া হয়েছে।

সাধারণত দেখা যায় দাদুর বাড়ির ফ্যামিলির তুলনায় নানুর বাড়ি ফ্যামিলির মানুষদের মধ্যে বন্ধন টা বেশ ভাল থাকে। আমাদের পরিবারে ও ঠিক তাই। দাদুর বাড়ি ফ্যামিলির তুলনায় নানুর বাড়ির ফ্যামিলির সাথে বেশ ভালো একটি সম্পর্ক আমাদের। যদি ও এমনটা নয় যে, দাদুবাড়ি ফ্যামিলির সাথে আমাদের সম্পর্কটা তেমন একটা ভালো নয় কিংবা তাদের সাথে আমাদের খুব একটা যোগাযোগ নেই। দাদুর বাড়ির ফ্যামিলির সাথে বেশ ভালো একটি সম্পর্ক রয়েছে আমাদের। তারপরও কেন জানিনা তাদের তুলনায় নানুর বাড়ি ফ্যামিলির সাথে কানেকশন টা খুব বেশি। আর আমি মনে করি প্রত্যেকটি ফ্যামিলিতেই এমনটা হয়।

যাই হোক, দাদী মারা গিয়েছে আমার ও জন্মের অনেক আগে। আমার আম্মু পর্যন্ত দেখিনি আমার দাদিকে। সেই হিসেবে আমার দেখার তো প্রশ্নই উঠে না। আমার আব্বুর খুব ছোট বয়সে আমার দাদী মারা যায়। তখনকার কলেরার এক মহামারীতে। ওই সময় ওই মহামারীটি পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং অনেক মানুষ মারা গিয়েছে। আমাদের এখনকার এই করোনাভাইরাস এর মতো তখনকার ওই মহামারীটি ও ছিল প্রাণঘাতী। এছাড়াও দাদা মারা গিয়েছেন আমার খুব ছোট বয়সে। তাই দাদাকে খুব একটা মনে নেই আমার। তাই বলা যায় দাদা-দাদির আদর আমি একদমই পাইনি। কিন্তু আমার নানা-নানি ছিল আমার চোখের মনি। দাদা-দাদির অভাব কখনো তারা বুঝতে দেয়নি। ছোটবেলার বেশিরভাগ সময় আমি নানু বাড়িতে নানুর কাছে বড় হয়েছি। সেই হিসেবে নানিই ছিল আমার জীবনের সবথেকে প্রিয় একজন মানুষ। আমার সব থেকে বেশি আবদার এবং বায়না ছিল আমার নানুর কাছে। কেননা আমি জানি তার কাছে কোন কিছু চাইলে সে কখনো না করবেন। নানুর সাথে আমার ছোট ছোট অনেক গল্প এবং মজা স্মৃতি রয়েছে সেগুলো না হয় কোন অন্যকোন একসময় শেয়ার করব।

যাইহোক, ২০১২ সালে মাত্র ৫৫ বছর বয়সে লিভার সিরোসিসে আমার নানু মারা যান। তখন আমি আমার জীবনে প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করতে পেরেছি যে প্রিয় মানুষ হারানোর যন্ত্রণা কতটুকু। নানু মারা যাওয়ার পর নানা পুরোপুরি একা হয়ে যায়। এবং কিছু বছর পর তিনি বিদেশ চলে যান বড় মামার কাছে। নানু থাকা অবস্থায় তিনি কখনোই বাংলাদেশ ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে চাইনি। তবে পরবর্তীতে নানু মারা যাওয়ার পর তিনি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন এবং কিছু দিনের জন্য বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আর এভাবে এক বছর দুই বছর করে বেশ অনেকটা বছর তিনি বিদেশের মাটিতে কাটিয়ে দেন।

তবে আজ দীর্ঘ ৮ বছর পর গত মাসের শেষের দিকে তিনি বাংলাদেশ এসেছে। এই ৮ বছরে তিনি একবারের জন্য ও আসেনি বাংলাদেশ। মাঝে অনেকবার আসার প্ল্যান ছিল কিন্তু ভাইরাসের কারণে কিংবা বিভিন্ন কারণে আর আসতে পারেননি। বর্তমানে তিনি ঢাকায় আছেন। এতো বছর পর তিনি বাংলাদেশে এসেছেন তাই আমরা সকলে ঢাকায় যাব ওনাকে দেখতে। তবে কখন যাব সেটা এখনো ফিক্সট হয়নি। কিছুদিনের মধ্যেই যাওয়া খুব সম্ভাবনা রয়েছে । এছাড়াও আমার আরেকটি মুখ্য উদ্দেশ্য আছে ঢাকায় যাওয়ার। আর যেটির জন্য আমি অধীর আগ্রহে বসে আছি। সেটা না হয় পরবর্তীতে জানাবো আপনাদের। আপাতত সারপ্রাইজ রইল বিষয়টি।

আর চার পাঁচটে নানা নাতির মতো আমার সাথে আমার নানা সম্পর্কটা খুব মধুর। খুবই দুষ্টামি করি ওনার সাথে। আদিকালের ধ্যান ধারণা অনুযায়ী তিনি নাতনিদের তুলনায় নাতিদের কে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কেননা তিনি মনে করেন ছেলেই হচ্ছে বংশের প্রদীপ। আমার মনে হয় এক ডজন কন্যা সন্তানের বাবা হওয়ার দরুন তার এই মন মানসিকতা।

বর্তমানে ৯৩ বয়স তার। তবে তিনি বয়সের তুলনায় শারীরিক ও মানসিকভাবে খুবই স্ট্রং। এই বয়সে ওনি যতটা নয় স্ট্রং আমারা তার সামান্যটুকুও না। খুবই বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষণ একজন মানুষ তিনি। উনার ধ্যান-ধারণা চিন্তাভাবনা সম্পূর্ণ আলাদা। আসলে এখনকার এই জেনারেশনের মানুষদের তুলনায় আগেকার মানুষেরা ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী এবং বুদ্ধিমান। যেটা আমি আমার নানাকে দেখেই বুঝতে পারি।

সত্যি অধীর আগ্রহে বসে আছি কখন যাব নানাকে দেখতে এত বছর পর নানা এসেছে। যদিও বার্ধক্য তাকে কিছুটা মজিয়ে দিয়েছে। এবং আগে থেকে কিছুটা বুড়ো হয়ে গেছে যা ওই দিন ভিডিওতে কলে দেখলাম। কানে কম শুনছো তবে হুঁশ-জ্ঞান বেশ ভালই আছে। ঢাকা যাওয়ার অনেক আগে থেকেই প্ল্যান ছিল ভেবেছিলাম উনি আসার আগেই আমরা সবাই গিয়ে ওখানে উপস্থিত থাকবো। তবে সকলেই ব্যক্তিগত কাজে এতটাই ব্যস্ত যে সেটা আর হয়ে ওঠেনি । এছাড়া যেহেতু এতদূর লং জার্নি করে এসেছেন তাই উনার এখন বিশ্রামের খুবই প্রয়োজন । এক পরিবেশ থেকে অন্য পরিবেশে এসে প্রথমদিকে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন আসলে তিনি। তবে এখন সুস্থ আছেন। সবাই দোয়া করবেন আমার নানার জন্য। যেন সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারেন আমাদের মাঝে।

সকলকে ধন্যবাদ অনুচ্ছেদ টি পড়ার জন্য।


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  

This post has been upvoted by @italygame witness curation trail


If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness




CLICK HERE 👇

Come and visit Italy Community



Hi @moh.arif,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.

Come and visit Italy Community

 2 years ago 

ভাইয়া আমার মনে হয় প্রত্যেকটি মানুষেরই দাদার বাড়ীর চাইতে নানুর বাড়ির সম্পর্কটাই বেশি মজবুত হয়। কেন জানিনা এটাই বোধহয় প্রকৃতির নিয়ম। আপনার নানার ৯৩ বছর এর পরেও আপনি বলছেন স্ত্রং তাহলে তো বুঝাই যাচ্ছে কেমন মানুষ ছিলেন তিনি। আর এখনকার মানুষ এতটা বয়স হায়াত পাইও না যে স্ট্রং থাকবে। আসলে আগেকার দিনের মানুষরা অনেক বছর পর্যন্ত সুস্থ অবস্থায় বেঁচে থাকতেন। যাই হোক আপনার নানা আপনার জন্য কতটা প্রিয় বোঝাই যাচ্ছে তাই তো আপনি তার অপেক্ষায়।

 2 years ago 

ঠিকই বলেছেন নানা আমার খুবই প্রিয় একজন। অধীর অপেক্ষায় আছি কখন তার সাথে দেখা হবে ।

 2 years ago 

আমি আমার দাদাকে কখনো দেখিনি। আপনি যেরকম আপনার দাদীকে আপনি দেখেননি। আসলে ঠিক বলেছেন নানা, নানুর আদরটা একটু বেশি পাওয়া যায়। যেমনটা আমি ও পেয়েছিলাম। আপনি আপনার নানুর কাছে বেশিরভাগ থেকেছেন এটা শুনে ভালো লাগলো। এই মানুষগুলো সত্যি আমাদের খুবই কাছের মানুষ। যদিও আপনার নানুর মারা যাওয়ার পর দীর্ঘ আট বছর আপনার নানা বিদেশে অবস্থান করেছেন। আট বছর পর যখন আসলেন সত্যিই অনেক আনন্দের মুহূর্ত। আসলে কেউ কেউ আছে বুড়ো হয়ে গেলেও অনেকটা স্ট্রং থাকে। আপনি নানাকে দেখতে ঢাকায় যাবেন বেশ ভালো লাগলো। কিন্তু ঢাকা যাওয়ার আর একটা মুখ্য উদ্দেশ্য কি সেটা জানার অপেক্ষায় রইলাম?

 2 years ago 

সে মুখ্য উদ্দেশ্য টা অবশ্যই আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

 2 years ago 

আপনার কথা ঠিক ভাইয়া।আমারও দাদা বাড়ির চাইতে নানা বাড়ির দিকে বেশি টান।কারন আমার বাবা ছোট তখন দাদা মারা যান।দাদার আদর কেমন হয়,জানি না। নানা খুব আদর করতো। কিন্তু আজ নানাও নেই। আপনি আসবেন দেখা করতে শুনে আমারও মনের মধ্যে ভাল লাগা কাজ করছে, আসলে এটার নামই অনুভূতি। অনেক দোয়া করি ভাইয়া আপনার নানার জন্য। অনেক ভাল থাকবেন পরিবার, পরিজন নিয়ে। অনেক শুভকামনা ভাইয়া আপনার জন্য।

 2 years ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। আপনি এবং আপনার পরিবারের জন্য ও দোয়া রইল ।

 2 years ago 

আপনার তুলনায় আমার ব্যাপারটা একদম ভিন্ন। আমার দাদি এখনো বেঁচে আছে আর আমার নানা তো অনেক আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছে। ওই মনে করেন আপনার নানা সে হিসেবে আমারও নানা হি হি।
তবে আরিফ ভাই নানার একটা ছবি দিলে কিন্তু ভালো হতো তার সাথে পরিচয় হয়ে যেতাম। আর ৯৩ বয়সেও সে কতটা স্ট্রং সেটা দেখতে পারতাম।

 2 years ago 

পরবর্তীতে অন্য কোন পোস্ট এ পরিচয় করিয়ে দিব সকলের সাথে নিশ্চয়ই।

 2 years ago 

ভাই আপনার লেখা গুলো পড়ে ৷ আমারও নানা নানীর কথা মনে পড়ে গেলো ৷ তবে আমি একটু ভিন্ন আমি নানা নানীর আদর ভালোবাসা কখনো পাই নি ৷
তবে আমি আমার দাদা দাদীর আদর পেয়েছি ৷ তবে বছর হলো দাদী মারা গেছে ৷ কিন্তু আমার দাদা এখনো বেঁচে আছে ৷ যার বয়স ৯৮ ৷ এখনো নিজ পায়ে চলতে পারে ৷ আমিও একদিন আমার দাদা কে নিয়ে লিখব ৷

 2 years ago 

সারা বিশ্বে সব জাতীর মধ্যেই মনে হয় নিজের বাবার বাড়ির তুলনায় মায়ের বাড়ির অর্থাৎ মামাবাড়ির সম্পর্ক মধুর হয়।আর আপনি নিজের দাদুকে(মামাবাড়ির) দেখার জন্য কতটা উদগ্রীব বুঝতে পারলাম। আমার তো দাদুকে দেখাই হল না। মায়ের বিয়ের অনেক আগেই আমার দাদু মারা গেছেন। মায়েরই তখন ১৬ বছর বয়স। ভীষণ মিস্ করে গেছি।আপনি ভাগ্যবআন। প্রতিটা মূহুর্ত গুব সুন্দর ভাবে কাটান দাদুর সাথে, এই কামনা করি।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.032
BTC 64103.87
ETH 2762.96
USDT 1.00
SBD 2.65