পুর্নজন্ম- ৩ নাটক এর রিভিউ।
আজ- ৩১শে আশ্বিন , | ১৪২৯ , বঙ্গাব্দ | শরৎকাল ||
আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।
ছবিঃস্ক্রিনশট এর মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে।
নাটকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলীঃ
নাম | পুনর্জন্ম ৩ |
---|---|
পরিচালক | ভিকি জাহেদ । |
অভিনয় | আফরান নিশো, মেহজাবিন চৌধুরী, খাইরুল বাশার, শাহেদ আলী। |
দৈর্ঘ্য | ১ ঘন্টা ২৫ মিনিট। |
ধরন | রহস্যজনক । |
ভাষা | বাংলা। |
মুক্তির তারিখ | ২.১০.২০২২ইং। |
নাটকের সারসংক্ষেপ
নাটকের দৃশ্য শুরু হয় রাফসান হকের কথার মাধ্যমে। যেখানে সে বলছে নিজের স্ত্রীকে কখনোই খুন করা উচিত নয়, সে যে পরিস্থিতি হোক না কেন। কেননা রাফসান হক তার স্ত্রীকে খুন করে তার লাশ সকলের কাছে লুকানোর জন্য সেই লাশটিকে টুকরো টুকরো করে রাশেদ চৌধুরী ছেলের বিয়েতে সকলকে সেই মাংস রান্না করে খাওয়াই। সে বিয়েতে আমন্ত্রিত তিন হাজার লোকের মধ্যে কেউ বুঝতে পারেনি যে সেটি কিসের মাংস ছিল। কিন্তু ডেকোরেটর কামাল মাংসের স্বাদ এবং গন্ধ পেয়েই বুঝে যায় এটি কিসের মাংস। কেননা কামাল ছিল একজন মুখোশধারী খুনি। তার কাজই হলো ভিকটিম এর মাংস খাওয়া।
নাটকের দ্বিতীয় পর্বে যেখানে নিলয় রাফসানকে বন্দি করে রেখেছে নীলার খুনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য। কিন্তু রাফসান হক নিলয় কে বিষাক্ত মাশরুম স্যুপ খাওয়ার মাধ্যমে অজ্ঞান করে দেয়। একবার নাটকের বর্তমান দৃশ্য দেখানো হয় যেখানে কামাল এসে রাফসানের বাধন খুলে দেয়। এরপর রাফসান হক নিলয়ের দেহটিকে টুকরো টুকরো করে কাটে। আর এখানেই নাটকের ৩ পর্বের সূচনা হয়।
এদিকে দেখা যায় এক মাসের ও বেশি ধরে সময় ধরে রকেয়াকে খুঁজছে পুলিশ কিন্তু তার এখনও কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে দিকে দেখা যায় নুরুলের অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি আগের মতোই রয়ে গিয়েছে। ওই এক্সিডেন্ট এর পর থেকে সে তেমন কোনো কথা বলছে না এবং মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। নুরুকে কোন হাসপাতালে ভর্তি না করিয়ে রাফসান হকই নুরুর দেখাশোনা করছে। নুরু যাতে পুরোপুরি সুস্থ না হয়ে উঠতে পারে তাই রাফসান হক প্রতিবার তার খাবারে ফাঙ্গাস যুক্ত জব মিশাচ্ছে যাতে তার স্মৃতি ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে। এবং সে তার পূর্বের ঘটনাগুলো মনে করতে না পারে।
এদিকে দেখা যায় ওসি হারুন রকেয়াকে খুঁজে পেয়েছে। ওসি হারুন নীলার খুন এর ব্যাপারটি নিয়ে রাফসান হককে সন্দেহ করছে। কিন্তু এত বড় একজন সেলিব্রিটির বিরুদ্ধে মামলা করার কোনো প্রমাণই তার কাছে নেই। তাই সেই রকেয়ার সাহায্য চাই। যাতে সেই রাফসান হাকের বাড়িতে গিয়ে কিছু প্রমাণ জোগাড় করে আনতে পারে। প্রথমদিকে রোকিয়া এ বিষয়টিতে রাজি না থাকলেও পরবর্তীতে ওসির অনুরোধে সে রাজি হয়। ও রকেয়ার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়টি ওসি নিশ্চিত করেন।
এরপর তাদের প্লান মতাবেক রাফসান হক যখন বাড়ির বাহিরে যায় তখন রকেয়া বাড়িতে ঢুকে সকলকে অজ্ঞান করে বিভিন্ন প্রমাণ নিয়ে বাহিরে বের হয়েছে এমন সময় কিছু লোক তাকে বন্দী করে নিয়ে যায়।
অন্যদিকে দেখা যায় বর্ষা নীলার বুকসেলফ পরিষ্কার করছে। নীলা বই পড়তে খুব ভালোবাসে। সে তার সময় বেশিরভাগ বই পরে পার করে। বুক সেলফ থেকে বইগুলো পরিষ্কার করার এক পর্যায়ে বর্ষা একটি ডাইরি খুঁজে পাই। ডাইরিটিকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখার জন্য নীলা ডাইরির উপরে বইয়ের কভার লাগিয়ে রেখেছিল। যাতে কেউই এই ডাইরির সম্পর্কে কখনো কিছু জানতে না পারে।
ডায়েরির মধ্যে নীলা তার প্রত্যেকটি ঘটনায় এবং কথা লিখে রাখত। ডাইরিটি পড়ার মাধ্যমে বর্ষা নীলার অনেক ঘটনায় জানতে পারে। নীলা নিখোঁজ হওয়ার আগে সে যে সর্বশেষ রাফসানের কাছে যাবে ক্ষমা চাওয়ার জন্য সে বিষয়টিও ডাইরিতে লেখা ছিল। ডাইরিটি পড়ার মধ্যে দিয়ে নাটকে অতীতের রাফসান এবং নীলার সম্পর্কের কিছু দৃশ্য দেখানো হয়।
সম্পন্ন ডাইরিটি পড়া শেষে বর্ষা বুঝতে পারে তার ভাবীর নিখোঁজ হওয়ার পিছনে তার ভাই দায়ী। আর এ বিষয়টি সে পুলিশের কাছে জানাতে যাবে এমন সময় পুলিশ তার বাসায় এসে হাজির হয়। বর্ষা পুলিশকে নীলার এই ডাইরিটির কথা বলে। কিন্তু সেখানে দেখা যায় ডাইরির জায়গায় একটি বই । আসলে রাফসান সেই ডাইরিটি পাল্টিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে পুলিশ বর্ষাকে অ্যারেস্ট করে নীলার নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারটি নিয়ে।
নীলা এবং বর্ষার মধ্যে খুবই ভাল একটি সম্পর্ক ছিল। তাই তারা মাঝে মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মজা করত। তেমনি একদিন মজার ছলে তারা একটি চিঠি লিখে তার ভাইকে দেওয়ার জন্য। সেই চিঠিতে লেখা ছিল বর্ষা তার উপর অমানবিক নির্যাতন করে। আর এই চিঠির সূত্র ধরেই পুলিশ বর্ষাকে অ্যারেস্ট করে।
অন্যদিকে দেখা যায় রকেয়া কে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয় রাফসান হকের কাছে। রাফসান রকেয়া কে কামালের হাতে তুলে দিয়ে যায় মেরে ফেলার জন্য । রকেয়া অনেক চিৎকার করে এবং নিজেকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করে কিন্তু সে ব্যর্থ হয়। এদিকে কামাল রোকিয়াকে মারার জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে এবং ছুরি ও ধার করে নেয়। এরপর একপর্যায়ে কামাল রকেয়ার বাঁধন খুলে তার কান কেটে নেয়। এদিকে রকেয়া কৌশলে তার কাছে থাকা ছুরি দিয়ে কামাল কে আক্রমণ করে বসে এবং সর্বশক্তি দিয়ে কামালের ঘাড়ে কয়েকবার ছুরি দিয়ে আঘাত করতে থাকে । আর কান কেটে নেওয়ার ফলে সে অনেকটাই দুর্বল এবং নিস্তেজ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে পড়ে।
এদিকে দেখাযায় বর্ষাকে পুলিশ এরেস্ট করে নিয়ে যাওয়ার সময় সে রাফসান কে বলে যে ডাইরির শেষ পাতা টি পড়ার জন্য। রাফসান ডাইরির শেষ পাতা পড়ে জানতে পারে যে নীলা অন্তঃসত্ত্বা ছিল। আর এই সন্তানের বাবা হচ্ছে রাফসান। আর এ বিষয়টি জানার পর রাফসানের চোখে পানি চলে আসে এবং সে হতবাক হয়ে যায়। এদিকে দেখা যায় নুরুল রাফসানের মাথায় বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে সম্পূর্ণ সুস্থ এবং সে রাফসান কে ধরার জন্য এতদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির মতো অভিনয় করে আসছে। সে বুঝতে পেরেছিলো গাড়ির ব্রেক ফেল হওয়ার পেছনে রাফসানই জড়িত । তাই রাফসানের আনা খাবারগুলো সেই কখনোই খেতে না।
আর এই দৃশ্যটার মধ্যে দিয়ে নাটকটির সমাপ্তি ঘটে।
ব্যক্তিগত মতামত
অনেকদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম পুনর্জন্ম নাটক ৩ নিয়ে। অবশেষে অক্টোবরে মুক্তি পেল নাটকটি। ভিকি জাহেদ এর পরিচালিত পুনর্জন্ম এক এবং দুই দর্শকের কাছে ব্যাপক সাড়া জেগেছে। তাই দর্শকরা অধীর আগ্রহে ছিলে পুনর্জন্ম 3 এর জন্য। অসাধারণ কাহিনী দ্বারা নির্মিত এই থ্রিলার নাটকটি সকলের মনে বেশ ভালোভাবেই জায়গা করে নিয়েছে।
পুর্নজন্ম ১ এবং ২ এর মতো পুর্নজন্ম ৩ ও আমার কাছে বেশ ভালই লেগেছে। নাটকের মাঝে কিছু কিছু দৃশ্য লোম দাঁড়িয়ে যাওয়ার মতো ভয়ঙ্কর ছিল। মেহজাবিন এবং আফরান নিশোর অভিনয়ের কথা তো আর নতুন করে কিছু বলার নেই। তাদের অভিনয় সবসময় সেরা। আর নাটকের মধ্যে কার মিউজিক কি ছিল অসাধারণ।
পুর্নজন্ম- ৩ সবার মাঝেই অনেক সারা ফেলেছে। বাংলা নাটক গুলো সব সময় ভালো লাগে। আর যদি প্রিয় শিল্পীরা যদি সেখানে অভিনয় করেন তাহলে তো আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। মেহজাবিন চৌধুরী ও আফরান নিশোর অভিনয় দক্ষতা সবাইকে মাতিয়ে রাখে। এই নাটকটির রিভিউ পড়ে অনেক ভালো লাগলো। যদিও এখনো দেখার সুযোগ হয়নি। তবে অবশ্যই দেখে নেব।
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
পুনর্জনম নাটক রিভিউ টি দেখে খুবই ভালো লাগলো ভাই। আসলে প্রত্যেকটা খুনের পিছনে রহস্যজনক কাহিনী লুকিয়ে থাকে। আর এই রহস্যজনক ভূমিকায় সবচেয়ে বেশি আপন জনরাই জড়িত থাকে। কিন্তু খুন এমন একটা জিনিস আজ না তো কাল অবশ্যই এর রহস্য উন্মোচন হবেই। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
লাশটির কাটার কথা শুনে আসলেই আমার ভয়ে হয়ে গেছে 😬, আরফান নিশোর নাটকগুলো আমি প্রায় দেখি ওনির নাটকগুলো আমার অনেক ভালো লাগে। এই নাটকের একটা ক্লিপ আমি একবার ফেসবুকে দেখেছিলাম তবে পুরো নাটকটি সম্পূর্ণ দেখা হয়নি তবে দেখার জন্য অনেক আগেই হয়ে উঠলাম আপনার এই পোস্টটি পড়ে, মেহজাবিন এবং আরফান নিশোর নাটকগুলো সব সময় মার্কেটে হিট করে, সময় পেলে অবশ্যই নাটকটি দেখার চেষ্টা করব ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে।
আসলেই নাটকের কিছু কিছু দৃশ্য সত্যিই ভয়ঙ্কর ছিল। আফরান নিশো এবং মেহজাবিন চৌধুরী অভিনয় সত্যিই সেরা।
পুর্নজন্ম- ৩ নাটকটি আমি দেখেছি আর এই নাটকটির প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্ব আমি দেখেছি। সত্যি অসাধারণ নাটকটির কাহিনী গুলো।নাটকটি খুবই আকর্ষণীয়। নাটকটি আমি খুবই মনোযোগ দিয়ে দেখেছি। আমার খুবই ভালো লেগেছে আপনি খুবই সুন্দর ভাবে রিভিউ করলেন। আসলে এই নাটকটি ইংলিশে ট্রান্সলেট করলে আরো ভালো হতো বলে আমি মনে করি, তাহলে বিদেশেও সুনাম অর্জন করতো। খুবই ভালো মানের একটি নাটক।
বাংলাদেশের মুভির গুলোর সুনাম না থাকলেও নাটকের বেশ সুনাম রয়েছে। স্বল্প বাজেটে অসাধারণ কাহিনী দিয়ে নাটকগুলো নির্মাণ করা হয় বিধায় সকলের মনে বেশ ভালোভাবে জায়গা করে নিতে পারে ।
১ আর ২ দেখা হয়নি তবে ৩য় পর্ব দেখেছি।আমার সবচেয়ে ভয়ানক লেগেছে কানের দৃশ্যটি।রিভিউ পড়ে ভালোই লাগলো।আসলে বাংলাদেশ এ ধরণের চলচিত্র হচ্ছে এটা আমাদের জন্যে গর্বের।
আপু ১/২ না দেখতে ৩ পর্ব ভালো বুঝবেন না।তাই ১/২ পর্ব দেখে নিবেন অনেক ভালো একটি নাটক।রহস্য দিয়ে ঘেরা।
বাংলাদেশ সিনেমাতে ভালো না করলেও নাটকের অনেক বেশি ভালো করে। আর নাটক গুলো দেখতে খুবই ভালো লাগে।আমি পুর্নজন্ম- ৩ নাটকটির প্রত্যেকটা পর্ব দেখেছি এবং তৃতীয় পর্বের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। শেষমেশ ৩য় পর্ব দেখে খুবই ভালো লাগলো।
আসলে ভাইয়া এই নাটকটির তুলনা হয়না এর তিনটা পর্বই অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং। সবাই হয়তো শুধু একটা দেখে বুঝবে না তিনটা পর্ব দেখতে হবে তবেই বুঝতে পারবে এই নাটকট।রাফসান সাহেব এর রান্নার প্রশংসা করতেই হয় দারুন রিভিউ করেছেন।
রাফসান হকের রান্না বলে কথা :)
Hi @moh.arif,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.
Come and visit Italy Community
আমি পুনর্জন্ম এক নাটকটি দেখেছিলাম। এখনো পর্যন্ত দুই এবং তিন দুটোই দেখা হয়নি। আমার কাছে নাটকটি অসাধারণ লেগেছিল। আসলে মেহজাবিন এবং আফরান নিশোর নাটক দেখতে ভীষণ ভালো লাগে। কিন্তু আজকাল সময়ের জন্য একদমই দেখা হয় না। তবে যেহেতু আপনি আজকে রিভিউ করেছেন এই জন্য নাটকের কথা আবারও মনে পড়ে গেল। অবশ্যই সময় করে দেখে নিব। লাশ কাটার কথা শুনে একটু ভয় পেয়ে গেলাম।
লাশ কাটার ওই দৃশ্য এটি গা চমকে উঠার মত ছিল।