একটি ইচ্ছার মৃত্যু।। 10% beneficiary to @shy-fox
আপনারা অনেকেই হয়ত জানেন কয়েকদিন আগে আমি গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম। যাওয়ার পর আম্মা আমাকে বললেন আম্মা দের হাই স্কুলের বন্ধু বান্ধব রা মিলে একটি গেট টুগেদার এর আয়োজন করেছে। আম্মাকেও দাওয়াত দিয়েছে। ব্যাপারটা ক্লিয়ার করে বলি। আম্মা দের ব্যাচে প্রায় ৬০ জন স্টুডেন্ট এখনো তাদের বন্ধুত্ব মজবুত রেখেছে। কিছুদিন পরপর তারা বিশাল আয়োজন করে গেট টুগেদার করে তাও সবার পরিবার নিয়ে এবং মজার ব্যাপার হলো প্রায় সবাই এটেন্ডে করে। যে কয়জন এটেন্ড করে না তাদের মধ্যে আম্মা একজন। যেহেতু সবাই প্রতিষ্ঠিত যেমন ডাক্তার, শিল্পপতি, আমেরিকান ব্যবসায়ী আছে সেহেতু ডোনেশন নিয়ে সমস্যা হয়না। আরেকটি কথা আমার আম্মা, আমি, আব্বা, ভাইয়া, ছোট বোন আমরা সবাই একই স্কুলে পড়ালেখা করেছি।
যেহেতু সুযোগ পেলেই আম্মার এই ব্যাচ প্রোগ্রাম করে তাই এই পর্যন্ত অনেক প্রোগ্রাম এর আয়োজন হয়েছে কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আম্মা একটি প্রোগ্রামে ও যেতে পারেনি ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও। এবার যখন বাড়ি গেলাম আম্মা বললেন আগামী ৯ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ কুমিল্লা বার্ড সেন্টারে আমাদের ব্যাচের সবাই একটি গেট টুগেদার এর আয়োজন করতে যাচ্ছে। আমার উপর ৩০০০ টাকা চাদা ধার্য্য করা হয়েছে তুমি এই টাকাটা পাঠিয়ে দিও। তোমার পরিবার আর আমি সবাই মিলে প্রোগ্রামে এটেন্ড করব। আম্মা বললেন সেখানে কালচারাল অনুষ্ঠান হবে, খেলা হবে, রাতে থাকার ব্যবস্থা হবে, মেয়েদের শাল শাড়ি দেয়া হবে, ছেলেরা পাঞ্জাবী পড়বে। আম্মা এটাও বললেন তাদের এক আমেরিকান প্রবাসী বন্ধু এই প্রোগ্রামে ৫০ হাজার টাকা দিচ্ছে । আমি বললাম ৯ তারিখ আমার অফিস খোলা কিভাবে যাব? আম্মা বললেন দেখ ছুটি নিয়ে আসতে পার কিনা। আমি বুঝলাম আম্মার খুব যেতে ইচ্ছা করছে। আর আমি না গেলে আম্মার যাওয়া হবে না। আম্মা কে আর না করিনি।
বাড়ি থেকে ঢাকায় এসে পরিবারকে বলার পর তারাও খুশি কারণ কুমিল্লা বার্ড এ তাদের ও যাওয়ার ইচ্ছা। আমি যখন বাড়ি থেকে আসি তখন সম্ভবত ২৫ তারিখ। এসেই আম্মার ব্যাচের একজন বদিউল আংকেল উনাকে ৩০০০ টাকা বিকাশ করে দিয়েছি। এর মধ্যে একদিন অফিসে বসকে বলে রাখলাম আমার একদিন ছুটি লাগবে । বস ইনিয়ে বিনিয়ে পরে রাজি হলেন। এদিকে আম্মা কেও বললাম তুমি মেন্টালি প্রিপেয়ার থেকো আমরা ৯ তারিখ যাওয়ার খুব সম্ভাবনা বেশি। আমি বলেছি তুমি রেডি হয়ে থাকলে আমি বাড়ি থেকে তোমাকে পিক করে নেব। আম্মাও খুব খুশি।
গতকাল মানে ৮ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ আমি আমার জুনিয়র অফিসারদের কাজ বুঝিয়ে দিয়েছি। বিকেল তখন প্রায় ৪ টা বাজে। আমার বস্ আমাকে ডেকে পাঠালেন। রুমে ঢুকার পর বললেন আগামীকাল ড্রাগস রিভিউ অডিট দিয়েছে। যেহেতু ড্রাগস অডিট সেহেতু সিনিয়র হিসেবে আপনাকে থাকতেই হবে। আমার মনে হল আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। আমি আমার আনন্দের ভাটা পড়েছে তাতে বিন্দুমাত্র মন খারাপ করিনি কিন্তু আমার আম্মা যে প্রতীক্ষায় আছে তার কথা চিন্তা করছিলাম। আমি বস্ কে যে ছুটির কথা বলব তার কোন অপশন নেই কারণ ড্রাগস অডিট কি আমি তা জানি। একটি কোম্পানির পরবর্তী ভবিষ্যত এই অডিটের উপর নির্ভর করে। অডিট ফেল হলে কোম্পানি ও বন্ধ করে দিতে পারে। একবার ভাবুন তো যদি আমার কারণে ৫০০ কোটি টাকার বাজেটের (আমাদের ফার্মাসিউটিক্যালস এর বর্তমান এপ্রক্সিমেট ভ্যালু) একটি কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে কি হতে পারে। আমি কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে চিন্তা করছিলাম কিভাবে আম্মা কে না করব।
অশান্ত মন নিয়ে বাসায় এসে আমার পরিবার কে বললাম। আমার ওয়াইফ যেহেতু ফার্মাসিস্ট সে জানে ড্রাগস অডিটের গুরুত্ব। সে বলল আম্মা কে বুঝিয়ে বললে বুঝবে। আমি বললাম আম্মা ত বুঝবে কিন্তু উনার মন কত খারাপ হবে বুঝতে পারছ। সে বলল এখন যেহেতু তোমার কোন অপশন নেই সেহেতু যত আগে বলবে তত ভাল।
আমি আম্মা কে ফোন দেয়ার পর যখন প্রথম বললাম আম্মা তখনই আম্মা বললেন কোন ঝামেলা হয়েছে? আসতে পারবে না? তখন আমার চোখ ছলছল করে উঠল। মা এক অদ্ভূত মহামানুষ। আম্মা বলতেই বুঝে গেলেন আমার সমস্যা আছে। আম্মা বললেন বাবা আমি বেঁচে থাকলে অনেক যেতে পারব কিন্তু তোমার অফিসে কোন ঝামেলা কর না। আমি আর কথা বলতে পারলাম না। ফোন রেখে মন খারাপ করে বসে রইলাম।
কোম্পানিতে আজ অডিট টিম এসেছে । অডিট ভালভাবেই সম্পন্ন হয়েছে । কোম্পানি হয়ত সেভ হয়ে গেল। হয়ত আমি না থাকলেও কোম্পানির অডিট পাশ হয়ে যেত কিন্তু একটি মায়ের ইচ্ছার মৃত্যু হল।
ধন্যবাদ সবাইকে।
খুবই খারাপ লাগলো ভাইয়া আপনার মা কত আশা করে ছিলেন কত পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা হতো।মন খারাপ কইরেন ভাইয়া পরের বছর ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করবেন। আসলে বাস্তবতার কাছে আমরা সবাই নিরুপায়।
ঠিক বলেছেন বাস্তবতা আমাদেরকে যেদিকে নিয়ে যাবে আমাদের সেদিকেই যেতে হবে। ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
মায়ের ইচ্ছে পূরণ করো না জেনে খুব খারাপ লাগলো। তবে ভবিষ্যতে অবশ্যই মায়ের ইচ্ছে পূরণ হবে। হতাশ না হয়ে অপেক্ষা করুন। ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
আশা আছে ভাই সুস্থ্য থাকলে আম্মার ব্যাচের এই গেট টুগেদার এ আম্মা কে একবার নিয়ে যাওয়ার। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
সত্যি ভাইয়া আপনার লেখাটা পড়ে চোখের কোনে জল চলে এলো। খুব কষ্ট লেগেছে লেখাটা পড়ে ।আপনার আম্মা কত আশা করে বসেছিলেন এবার হয়তো আপনাদের সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। আপনার অফিসের কাজের জন্য যাওয়াটা হলো না ।যাইহোক পরবর্তীতে কোন প্রোগ্রামের এরকম আয়োজন করা হলে অবশ্যই ভাই আপনি আপনার মাকে নিয়ে যাবেন সেই প্রত্যাশাই রইল ।ধন্যবাদ।
আপু আমার ইচ্ছা আছে আম্মার ব্যাচের এই গেট টুগেদার এ আম্মা কে একবার নিয়ে যাব। ধন্যবাদ আপু গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য।
ভাইয়া এটাই জীবন,আপনি মনে মনে চিন্তা করবেন একরকম,বাস্তবে হবে আরেক রকম। আমি যেদিন ছুটি নিয়ে বাড়ি যাবো সেইদিন অডিট,একাউন্সের সমস্ত জামেলা এসে দাড়াবে। মাঝে মাঝে মনে হয় চাকরি ছেড়েই দেয়। যায়হোক মন খারাপ করিয়েন না ভাই। হয়তো এভাবেই ভাগ্যের লিখন। ধন্যবাদ ভাইয়া।
ধন্যবাদ ভাইয়া বাস্তবতা বুঝার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
প্রথমেই আপনার এবং আপনার মেয়ের সুস্থতা কামনা করছি। সত্যি, মায়েরা যদি একটু খুশি হয় তার সন্তানদের জন্য অনেক বড় কিছু হয়ে দাঁড়ায়। মায়ের মাঝে মধ্যে আমাদের কাছে যদিও কিছু আবদার করে আমরা যদি তা পূরণ না করতে পারি তখন ভীষণ কষ্ট লাগে। হয়তো আপনার মা আপনাকে কিছু বলবে না কিন্তু মনে মনে সব মায়েরি কষ্ট থেকে যায়। খুবই খারাপ লাগলো আপনার মায়ের এরকম একটি ইচ্ছা পূরণ হলো না তাই। যাই হোক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
আপনার মায়ের জন্য খুবই কষ্ট লাগলো। সত্যি যখন বাবা-মা আমাদের কাছে কোন কিছুর আবদার করে তা যদি পূরণ না করতে পারি তাহলে তাদের কাছে যেমন খারাপ লাগে নিজেদের কাছে আরো বেশি খারাপ লাগে। মন খারাপ করবেন না অন্য একদিন অবশ্যই যেতে পারবেন আশা করছি সেই স্বপ্ন ভাঙবে না।আপনি এবং আপনার পরিবারের সবাই যেন সুস্থ থাকে সেই দোয়া করি। ধন্যবাদ ভাইয়া।
ধন্যবাদ ভাইয়া গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
প্রথমেই আপনার ও আপনার মেয়ের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি ভাইয়া।খুবই খারাপ লাগলো যে আপনারা আপনার মায়ের সঙ্গে সুন্দর মুহূর্ত কাটাতে পারেন নি।আসলে জীবনে কখন এভাবে মানুষের প্রতীক্ষাগুলি মিশে যায় ঠিক বুঝে ওঠা মুশকিল।পরের বছর আপনাদের অসম্পন্ন ইচ্ছা সম্পন্ন হবে বলে আশা করি, ধন্যবাদ ভাইয়া।
ধন্যবাদ দিদি সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।