ইউনিভার্সিটির প্রথম ক্লাসের সারপ্রাইজ।। 10% beneficiary to @shy-fox

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি। আজ আপনাদের সাথে আমি আমার ইউনিভার্সিটির প্রথম ক্লাসের দিন সম্পর্কে কিছু কথা শেয়ার করব। আমি গ্রাম থেকে স্কুল পাশ করেছি। কুমিল্লা শহরে থেকে ইন্টারমিডিয়েট কমপ্লিট করেছি। কিন্তু কিছু ব্যাপারে আমি খুব পিছিয়ে ছিলাম। যেমন মানুষের সাথে মেশা, নিজের পরিবার ছাড়া অন্য মেয়েদের সাথে কথা না বলতে পারা, দূরে কোথাও একা না যাওয়া এরকম অনেক কিছু। আসলে স্কুল বা কলেজে আমার ক্লাসে মেয়েই ছিল হাতে গুনা কয়েকটা। এই জন্য অনেক কথা শুনেছি বন্ধুমহল থেকে। কিন্তু যখন কলেজ শেষ করে ইউনিভার্সিটি ভর্তি হলাম পুরো সিনারিও পাল্টে গেল।


university-105709_1920.jpg

সোর্স pixabay



আমি কুমিল্লা থেকে ইন্টারমডিয়েট পাশ করে ঢাকা আসি ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হওয়ার জন্য। ঢাকা আমি অনেক আগে থেকেই আসি কিন্তু সেটা কোন আত্মীয় স্বজনের বাসায় বেড়াতে। আর বেড়াতে এসে নির্দিষ্ট কিছু মানুষ আর নির্দিষ্ট কিছু বাসা ছাড়া তেমন কারো সাথে মেলামেশা বা বাহিরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হতো না । আমার আগের কোন একটা পোস্টে আমি লিখেছি যে আমি একটু ইন্ট্রোভার্ট টাইপের। আর সে কারণেই নিজেরও তেমন ইচ্ছা ছিল না বাহিরের জগতের সাথে পরিচিত হওয়ার। আরেকটি মজার কথা বলি সেটি হচ্ছে আমি ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হওয়ার আগে স্কুল বা কলেজে কোন মেয়ে বান্ধবী ছিল না ওই যে সংকোচ, লজ্জা, ইন্ট্রোভার্ট এর কারণে আরো হয়নি ক্লাসে মেয়ে কম থাকার কারণে। কিন্তু মানুষ কি আর সারাজীবন এক গণ্ডির মধ্যে থাকে? সেই লজ্জা, সংকোচ একসময় চলে গিয়েছে। কিভাবে তা গিয়েছে সে সম্মন্ধে কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।


classroom-15593_1920.jpg

সোর্স pixabay


আমি তখন মাত্র ইউনিভর্সিটি তে ভর্তি হয়েছি। আমার মামার বাসা থেকে গিয়ে আমাকে ক্লাস করতে হবে। যেদিন ক্লাসে যাব তার কয়েক দিন আগে আমি ব্যাগ , জুতা, প্যান্ট , শার্ট কিনে এনেছি । আর ক্লাসে যাওয়ার আগের দিন অনেক জল্পনা কল্পনা করে রেখেছি। কিভাবে যাব, গিয়ে ক্লাসে চুপচাপ বসে থাকব, মনযোগ দিয়ে ক্লাস করব, সব নোট করে রাখব এই সব। যথারিতি আমি ক্লাসে গেলাম। ক্লাসে যেতে আমার ব্যাগ পোহাতে হয়েছে কারণ আমি খুব একটা চিনতাম না। আর গুলশান থেকে ধানমন্ডি তখন ডাইরেক্ট কোন বাস ছিল না। প্রথমে গুলশান ২ থেকে শাহজাদপুর গিয়ে ৬ নাম্বার বাসে ফার্মগেট, তারপর অনেকখানি হেঁটে খেজুরবাগান থেকে লেগুনায় উঠে শংকর বাস স্ট্যান্ড নেমে কিছুক্ষণ হেঁটে ভার্সিটি চলে গেলাম। ক্লাসে প্রথম দিন গিয়ে শুরুতে কারো সাথে কথা বলিনি। কোন ইগো না লজ্জায় আর সংকোচে। ক্লাসে ইন্ডিভিজুয়াল চেয়ার রাখা। চেয়ার গুলো আবার পাশাপশি । ছেলে মেয়ে পাশাপাশি দেখে আমার সংকোচ হতে লাগল । যাই হোক টিচার রা এসে সুন্দর সুন্দর কথা বলছিল। খুব ভালো লাগছিল। সেদিন প্রথম প্রজেক্টরে ক্লাস নেয়া দেখেছি। দেখে ত খুশিতে মন ভরে গেল আর চিন্তা করছিলাম কোথায় এলাম। এই বুঝি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির মজা। ক্লাসে তেমন কোন পড়া নেই শুধু গল্প করছিল আর প্রজেক্টরে ওরিয়েন্টেশনের কি কি স্লাইড দেখাচ্ছিল। এভাবে প্রায় ৩ টি ক্লাস শেষ হল। দুজন লেকচারার আবার ক্লাস নোটস দিল। লাস্ট ক্লাসের ফাঁকে প্রায় দুই ঘণ্টা গ্যাপ। আমি ত নোটস নিয়ে রীতিমত পড়া শুরু করেছি। এর মধ্যে দেখি ক্লাসে স্টুডেন্ট রা হৈ হুল্লোর শুরু করে দিয়েছে। আমি ভাবলাম এরা মনে হয় আগের পরিচিত। কিন্তু পাশের একজন থেকে জানতে পারলাম মেক্সিমাম স্টুডেন্ট এর আজই প্রথম পরিচয় হয়েছে কিন্তু এর মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে। আমি চিন্তা করলাম এত ফাস্ট এরা? কিছুক্ষণ পর ২-৩ জন এসে আমার পাশে চেয়ার টেনে বসল। আমি একটু ইতস্তত বোধ করছিলাম । একটি মেয়ে (তিথি) বলল এই তুমি কথা বলছ না কেন ক্লাসে? আর আজ ওরিয়েন্টেশন ক্লাস আজই তুমি পড়া শুরু করে দিয়েছ? আমি কি উত্তর দিব ভেবে পাচ্ছিলাম না। কারণ এভাবে কোন মেয়ে এত কাছ থেকে আমার সাথে এত ফ্র্যাংকলি কথা বলেনি। আমি দু একটা কথা বললাম। এরা আমি গুলশান থাকি শুনে অবাক হয়েছে । গুলশানের কথা শুনে আরো দু একজন এসে জিজ্ঞেস করল, গুলশান কত নাম্বারে থাকি? নিজের ফ্ল্যাট নাকি? প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে আসি কিনা? এইসব। আমি যথাযথ উত্তর দিয়েছি তবে ধীরে ধীরে। তারপর শেষ ক্লাসে সুন্দরী এক ম্যাম এসেছে। এত সুন্দর এবং মডার্ন ম্যাডাম দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম। বিকেলে ক্লাস শেষে বের হওয়ার আগেই সেই মেয়ে তিথি আমাকে বলছিল কিরে এখন কি সরাসরি বাসায় জাবি? আমি বাসায় যাব বলাতে বলল আর চল সংসদ ভবনে বসে আড্ডা দেই। আমি চিন্তা করলাম ফাস্ট হওয়া ঠিক আছে, তাই বলে সকাল থেকে বিকেল গড়াতেই তুমি থেকে তুই? আর প্রথম দিনেই অপরিচিত ছেলের সাথে ঘুরতে যাওয়া? আমি কোন রকমে সেদিন ক্লাস করে চলে এলাম।

পরে অবশ্য আমাদের ফার্মেসি ডিপার্টমেন্টের ৮ তম ব্যাচের দুই গ্রুপের সবার সাথেই (প্রায় ৭০ জন) তুই সম্পর্ক হয়েছে শুধু ২-৩ জন ছাড়া। এই ২-৩ জনের মধ্যে আমার বেটার হাফও ছিল।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Sort:  
 2 years ago 

প্রথম প্রথম অচেনা যে কোন জায়গায় গেলে একটু অস্বস্তি লাগে। তারপরও যদি সেখানে অনেকগুলো মেয়ে থাকে।মেয়েদের সাথে কথা বলতে এত লজ্জা পেতেন কেন? শেষ লাইনটায় এসে একটু খটকা লাগলো, যে দুই তিন জনের সঙ্গে তুই হয়নি তার মধ্যে আপনার বেটার হাফ কিভাবে হল। তিথি মেয়েটিকে আমারও একটু বেশিই ফার্স্ট মনে হয়েছে। পরে কেমন ছিল মেয়েটি।

 2 years ago 

শুধু এতটুকু বলব তিথি আসলেই সুপার ফাস্ট ছিল। পুরো চার বছরে তার অন্তত ৫-৬ টা বয়ফ্রেন্ড চেঞ্জ হয়েছে। তার জন্য পরবর্তীতে আমার খুব ক্লোজ ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়াও হয়েছিল। সে এক বিশাল ইতিহাস। আরেকদিন লিখব সেই ঘটনা নিয়ে। যাদের সাথে তুই হয়নি তাদের একজন এখন বর্তমানে আমার বউ। আর আরেকজন আমাকে কিঞ্চিত পছন্দ করত। ধন্যবাদ।

 2 years ago 

সারা জীবন দেখেছি পিছনে বসা ছেলেগুলো এবং কম কথা বলা ছেলেগুলো একটু লাস্ট পর্যায়ে গিয়ে হাউমাউ বেশি করে😜।শেষমেষ একেবারে গলাই রশ্মি পরিয়ে ঘর অবধি।দারুণ ছিলো জীবনের গল্পটা।তবে তিথি মেয়েটা কি বর্তমানে বেটার হাফ?জানতে আগ্রহী!!

 2 years ago 

তিথি আমার বেটার হাফ। মাফ চাই। সে এখন হাসবেন্ড নিয়ে লন্ডন থাকে। তাকে অর্ধেক ছেলে বললে ভুল হবে না। তিথির সাথে ত তুই তুকারি সম্পর্ক ছিল। ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

আসলে প্রথমে সবকিছুতেই একটু ইতস্ত লাগবে এটাই স্বাভাবিক।আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ইন্ট্রোভার্ট হলে তো কথাই নেই।তারপরও আস্তে আস্তে সবকিছু নিশ্চয়ই মানিয়ে নিতে পেরেছিলেন।আর ভাই তিথি নামের মেয়েটি যে আপনাকে সংসদ ভবনে বসে আড্ডা দেওয়ার কথা বলেছিল।আপনি না যেয়ে যে বাসায় চলে গিয়েছিলেন।পরে বিষয়টি অজানাই থেকে গেল।

 2 years ago 

বলেছি ত সেদিন কোন রকমে ক্লাশ থেকে চলে এসেছি, ওদের সাথে যাইনি। ওরাও গিয়েছিল কিনা মনে নেই। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

আসলে প্রথমে সব কিছুতেই একটু ইতস্ত লাগে, তারপর আস্ত আস্তে সব ঠিক হয়ে যায়।ইউনিভার্সিটি ভর্তি হবার আগে বান্ধবী না থাকা ভালো পড়াশোনায় মনোযোগ হয়। তবে আপনি মেয়েদের সাথে কথা বলতে এতো লজ্জা পেতেন কেনো।যাইহোক তিথি মেয়েটি মনে হচ্ছে একটু বেশি ফাস্ট। আর ক্লাসে( ২-৩) জন বাদে তুমি থেকে তুই হয়ে গেল হা হা হা।তিথি আবার নাকি আপনার সাথে সংসদ ভবনে ঘুরতে যেতে যায়।ফাস্ট ভালো তবে এতে ফাস্ট ভালো না। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

আসলে ছোটবেলা থেকেই একটু ঘরমুখো ছিলাম তাই মেয়েদের সাথে কথা বলতে লজ্জা পেতাম। ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

ইউনিভার্সিটি প্রথম দিনের ক্লাসে খুবই সুন্দর মুহূর্ত অতিবাহিত করেছেন তবে আপনার পোস্ট করে যেটা বুঝলাম সেটা হচ্ছে আপনি অনেকটাই লজ্জাশীল। প্রথম প্রথম আমরা যখন কোথাও যাই সেখানে যদি পরিচিত কেউ না থাকে তাহলে নিজের কাছে সত্যিই অনেক বেশি ইতস্ত বোধ হয় মনে হয় কি না কি বলে ফেলবো আবার কিনা কি তারা ভাববে মূলত আমার ক্ষেত্রেও এটাই ঘটেছিল যেদিন পলিটেকনিকে প্রথম ভর্তি হয়েছিলাম। যদিও সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তাদের সঙ্গে এখন ভালো একটা বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। যাই হোক ইউনিভার্সিটি লাইফ টা উপভোগ করুন শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 2 years ago 

ইউনিভার্সিটি লাইফ শেষ হয়েছে ভাইয়া। এখন মনে সেই লাইফটাই মজার ছিল । ধন্যবাদ আপনাকে ।

 2 years ago 

অচেনা জায়গা গুলো সব সময় একটু অস্বস্তি লাগে। পরে বসে চলতে চলতে ঠিকঠাক হয়ে যায়। ভেবেছিলাম তিথি আপনার বেটার হাফ 😁। ভাইয়া কেন সেদিন ক্লাস শেষে চলে এলেন?? সকাল থেকে বিকেল গড়তেই তুই তুকারির ব্যাপারটা বেশ মজার ছিল।আসলে বন্ধু বান্ধব গুলো এমনি হয়।

 2 years ago 

আসলে তিথি এবং আরো যারা ছিল এদের এত দ্রুত মিশে যাওয়া আমার ভাল লাগেনি। মনে হচ্ছিল এরা ধনী বাবার আলালের দুলাল। আর আমি যেখানে প্রথম এদের সাথে কথা বলছি কিভাবে প্রথম দিনই চলে যাই ঘুরতে? ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

নতুন কোথায় গেলে প্রথমে এরকমই লাগে। পরে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যায়।ইউনিভার্সিটির প্রথম ক্লাসে তিথি মেয়েটি আপনাকে তুই বললে ডাকল। এবং প্রথম দিনে বলল বিকেলবেলা একটু ঘুরতে। দেখা যাক পরের পর্বে কি হবে তার দেখার অপেক্ষায় আছি। ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের মাঝে খুব সুন্দর করে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

সুন্দর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

ওরে ভাই আমাকে তো একদম ফ্ল্যাশ ব্যাকে নিয়ে গেলেন 😅। আপনি এত লাজুক ছিলেন 😉,, আমার তো আরো মনে হয় আপনি কাপিয়ে বেড়িয়েছেন ভার্সিটি। আমি আবার সবার সাথে মিশে যেতাম খুব। তবে ব্যাচের মেয়েদের সাথে সব সময় দূরত্ব রেখে চলতাম ,, আমার বেশি মিল ছিল বড় আপুদের সাথে ,, ঐ যে কথায় বলে জীবনের লক্ষ্য সব সময় ওপরের দিকে থাকা উচিত 😉😉। তবে লাজুক হলেও ভাবীকে ঠিক চিনে নিয়েছেন ভাই 👌

 2 years ago 

হা হা হা। আপনার সাথে ডিসকরডে চ্যাট করলেই বুঝা যায় আপনি খুবই মিশুক। আর বড় আপুদের প্রতি আমারও একটা সফট কর্নার কাজ করে । ধন্যবাদ ভাই ।

 2 years ago 

আপনি তো দেখছি একদম লাজুক প্রকৃতির। সত্যি কথা বলতে আপনি যেন আমার সাথে মিলে গেলেন। আমিও স্কুলে থাকাকালীনন কোন ছেলের সাথে সেরকম কথাই বলতাম না। তবে ভার্সিটিতে প্রথম দিনেই তিথি এসে একদম আপনাকে চমকে দিল। তবে যে কিনা মেয়েদের সাথে একটু কথা বলত না। তাদের থেকে একজনকে বেটার হাফ করে নিল, এটা কিভাবে? আপনার বেটার হাফ হওয়ার ঘটনাটা একদিন লিখবেন। জানতে খুব ইচ্ছে করছে?

 2 years ago 

আপু আমার বেটার হাফের সাথে কিভাবে প্রথম প্রণয় শুরু হয়েছে তা তোমার জীবনের প্রথম প্রেমের অনুভূতি প্রতিযোগীতা পোস্টে কিছুটা শেয়ার করেছি। ধন্যবাদ আপু।

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 67753.34
ETH 3502.65
USDT 1.00
SBD 2.82