ছোটবেলার ঘটনা। তেতুল গাছে ভুত।। 10% beneficiary to @shy-fox

in আমার বাংলা ব্লগlast year
আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি। মাঝে মাঝে মনে হয় ছোটবেলার স্মৃতি মনে করেই সুন্দরভাবে বেঁচে আছি। বর্তমানের স্মার্ট দেশে বাস করতে গিয়ে কোন কিছুই আর স্মৃতিময় নয়। এখন এত ছবি তুলি, এত সুন্দর সুন্দর জায়গায় ঘুরতে যাই তাও মনে হয় তেমন ফিলিংস আসে না। কিন্তু ব্যস্ততার ভিড়ে একটু নিরিবিলি পরিবেশে যখন চিন্তা করি তখন ছোটবেলার কত ছবি যে মনে ভেসে আসে , আর সেই ছবি মেমোরি কার্ডে ঢুকালে মনে হয় কয়েক টেরাবাইট হার্ড ড্রাইভ দিলেও জায়গা হবে না হা হা হা। যাই হোক আজ আমি আপনাদের সাথে আমার ছোটবেলার একটি ঘটনা শেয়ার করছি। ঘটনাটি তেতুল গাছ নিয়ে।

forest-g19daddc18_1280.jpg

সোর্স pixabay

আমাদের বাড়ির ঠিক পেছনে একটি বড় তেতুল গাছ ছিল। সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি এই তেতুল গাছ বিশাল এক দৈত্যের মত দাড়িয়ে আছে। শুনেছি গাছের বয়স অনেক। এই তেতুল গাছের পাশেই ছিল বড়ই গাছ আর জাম গাছ। সেই বড়ই গাছ আর জাম গাছ থেকে সিজন আসলেই ফল পেরে খাওয়া হত। কিন্তু তেতুল গাছে কখনও উঠে তেতুল পারা হয়নি। তার কারণ হয়ত আপনারা সবাই জানেন। ছোটবেলায় সবার মুখে একটা কথাই শুনতাম সেটি হচ্ছে তেতুল গাছে ভুত থাকে। সেই কারণে আমাদের উঠা হয়নি তেতুল গাছটিতে। আর এত বড় গাছ ছিল একদম এক্সপার্ট লোক ছাড়া গাছে উঠত না, যদিও আমি দু একবার এটেম্পট নিয়েছিলাম উঠার কিন্তু আমার হাতে বের আসত না যে ধরে উঠব। তবে সেই তেতুল গাছে এত পরিমাণ তেতুল ধরত যে প্রতি বছর আমার দাদু কয়েক কলস পাকা তেতুল ঘরে রেখে দিত এবং অনেক তেতুল পারা প্রতিবেশীদের দেওয়া হত। আমরা মাঝে মাঝে বড়ই গাছ বা জ্যাম গাছে উঠতাম দেখে আম্মা আব্বাকে বলতেন তেতুল গাছটা কেটে ফেললে হয়না? বাচ্চারা এর আশেপাশেই থাকে কত কিছুই ত হতে পারে। আব্বা আবার আমাদের দুই ভাইয়ের মত এসব ভয় পেত না। তাছাড়া দাদুও এই গাছ কাটার বিপক্ষে তাই আব্বা চাইলেও এই গাছ কাটা সম্ভব ছিল না। কিন্তু আম্মা আমাদের নিয়ে খুব টেনশন করতেন যে আমরা আবার তেতুল গাছে উঠে বা আশেপাশে থেকে ভয় পাই কিনা।

forest-g1171b0274_1920.jpg

সোর্স pixabay

যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়। একদিন আমার খুব ইচ্ছে হল এই তেতুল গাছে উঠে কাঁচা পাকা তেতুল খাব। আর সেই সময় টা ছিল শেষ বিকেলে গুধুলী বেলার আগ মুহূর্তে। আসলে তখন এতটাই উদাস এবং বেপরোয়া ছিলাম তাই মন যা চাইত তাই করতাম। যখন উঠার প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম তখন আমি একা ছিলাম। আসলে কাউকে বললে উঠতে দিবে না বলে একাই চুপি চুপি উঠার জন্য চেষ্টা করলাম এমনকি ভাইকেও সাথে নেইনি। চেষ্টা করে একসময় উঠেই গেলাম গাছে। উঠে ত আমি মহা খুশি। খুব ইচ্ছে হয়েছিল ভাইকে দেখাব যে আমি তেতুল গাছে উঠেছি কিন্তু ভাই ত আশেপাশে ছিল না। যাই হোক গাছ থেকে পেরে তেতুল খেলাম আর কিছু পেরে পকেটে ভরে নিলাম ভাইয়ের জন্য। হঠাৎ খেয়াল করে দেখলাম সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে। আমার মাথায় তখন চিন্তা হল আমি ত এখন তেতুল গাছে আছি। এই ত মনে হতেই ভয় শুরু হয়ে গেল। আম্মার দেখানো ভুত নিয়ে ভয়গুলো মনে তাড়া দিতে লাগল। আসলে আম্মা ত ভয় দেখাতেন যেন আমরা তেতুল গাছে না উঠি। নামতে গিয়ে আর নামতে পারছি না। অনেক চেষ্টা করেও নামতে পারছি না তার উপর অন্ধকার হয়ে এসেছে। গাছের ডাল দুহাতে ধরে বসে আছি। এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে গাছ হাত দিয়ে বের পেল না তাহলে উঠেছে কিভাবে? আর গাছে উঠতে পারল নামতে পারছে না এটা কেন?

জাম গাছের একটি ডাল দিয়ে বেয়ে উঠে তেতুল গাছের আরেক ডালে উঠেছি। এই দুই ডালের মাঝে একটু গ্যাপ আছে। তেতুল গাছে উঠার পর সন্ধ্যা হয়ে যাওয়াতে এবং ভুতের কথা মনে পরতেই শরীর জমে এসেছিল। এক পর্যায়ে আমি চিৎকার করে আম্মা কে ডাকছিলাম কিন্তু বাড়ির পেছনে হওয়ায় আমার ডাক তেমন সাড়া দিচ্ছিল না আর অন্ধকারে আমাকে দেখাও যাচ্ছিল না। তার উপর ভয়ে গলা প্রায় শুকিয়ে এসেছিল তাই জোড়ে ডাকলেও আওয়াজ হয়ত পৌঁছায় নি। আমরা সাধারণত সন্ধ্যার মধ্যেই ঘরে চলে আসতাম । কিন্তু সন্ধ্যা হওয়ায় আমাকে না পেয়ে আম্মা, ভাই, দাদু টেনশনে বাড়ির বাহিরে এসে আমার নাম ধরে ডাকছিল। এক পর্যায়ে পাশের বাড়ির কাকাদেরও ডাকা হল। পরে এক কাকা বাড়ির পিছনে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে আসতেই আমার আওয়াজ শুনে তাড়াতাড়ি করে সবাইকে ডেকে নিয়ে আসল। ততক্ষণে আমার অবস্থা খারাপ। পাশের বাড়ী থেকে অনেক বড় মই এনে আমাকে নিয়ে একজন কাকা নিচে নেমে আসল। আমার ত অজ্ঞান প্রায় অবস্থা। আম্মা আমাকে নিয়ে সোজা ঘরে চলে আসলেন এবং দায়ের আগায় লবণ দিয়ে খাওয়ালেন। আমি রীতিমত কাপছিলাম। আম্মা আমাকে মাথায় পানি দিয়ে দিলেন এবং পরে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন।

এই খবর আব্বার কানে সাথে সাথে দেয়নি কারণ আব্বা জানলে আমাকে অনেক বকা ঝকা করতেন। পরে এক সময় আম্মা আব্বাকে বুঝিয়ে গাছ কাটিয়ে দিলেন এবং এতে দাদুও মন খারাপ করেননি আমাদের কথা বিবেচনা করে। তবে এখনও তেতুল গাছের কথা মনে হলে ভাল লাগে কারন অনেক স্মৃতি আছে বাড়িতে। আর খারাপ লাগে কারন আমার কারণে গাছটি কাটা পড়ে গিয়েছিল ।

আশা করি আমার ঘটনা পড়ে আপনাদের ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ সবাইকে।

Sort:  
 last year 

ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগল। আসলে আগের দিনের মানুষ বেশি ভয় পেত ভুত প্রেত্নীর। কিন্তু এখন কার মানুষ এগুলোয় বিশ্বাস করে না। যাইহোক ভাইয়া আপনার তেমন কিছু হয়নি জেনে অনেক ভালো লাগল। তবে তেতুল গাছ কেটে ঠিক করেছে যাতে সবারই ভয় দুর হয়ে গেছে। ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

আসলে আমিও অনেকবার শুনেছি যে তেঁতুল গাছে নাকি ভুত থাকে। যদিও বা আমি এগুলো বিশ্বাস করি না কিন্তু নির্জন জায়গায় তেঁতুল গাছ দেখলে রাতের বেলায় কাছে যেতে বেশ ভয় লাগবে। আমার বন্ধু একবার তেতুল গাছে উঠে আর নামতে পারছিল না। তবে সেটা দিনের বেলায় ছিল আর আমরা সবাই সাথে ছিলাম তাই সবাই মিলে ওকে নামিয়ে নিয়েছিলাম। যাইহোক আপনি শেষমেষ তেতুল গাছ থেকে ঠিক ভাবে নামতে পেরেছিলেন জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে এই সুন্দর পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 last year 

আমিও ভুত প্রেত বিশ্বাস করি না। ধন্যবাদ ভাইয়া গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

ছোটবেলায় তেতুল গাছ দেখলেই তো ভয় লাগতো আর আপনি তেঁতুল খাওয়ার লোভে তাও আবার সন্ধ্যা বেলায় তেতুল গাছে উঠে পরেছেন। সন্ধ্যাবেলায় আপনি তেঁতুল গাছের মাথায়, কিন্তু নামতে পারছেন না কি ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। অজ্ঞান হয়ে যে পড়ে যাননি তাইতো ভাগ্য যাক এই অজুহাতে আপনার আম্মার ইচ্ছাটা পূরণ হয়েছে। তেতুল গাছটা অবশেষে কেটে ফেলা হয়েছে। যদিও আমার এখন মনে হয় যে এগুলো হয়তো এমনিতেই বলা হতো। আসলে কি তেঁতুল গাছে ভূত থাকে নাকি?

 last year 

আমার ছোটবেলা গ্রামে কেটেছে কিন্তু কখনো ভুতের দেখা পেলাম না তাই কাল্পনিক ধরে নিচ্ছি। ধন্যবাদ আপু।

 last year 

ভাইয়া ঘটনা এমন হয়ে গেল যে আপনি কুমির কে নৌকা বেভে নদী পার হচ্ছেন। শেষ মাথায় এসে মনে পড়লো যে দেখি তো এটা নৌকা নাকি কুমির। যখন মনে হলো এটাতো কুমিরের মত দেখায় যায় তখন তীরে এসে নদীতে লাফ দিলেন,হা হা হা। তেতুঁল পেরে নেমে গেলই হতো। কি দরকার ছিল মায়ের ভূতের কথা মনে করার। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 last year 

ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

আমাদের বাড়িতেও অনেক বড় একটি তেঁতুল গাছ আছে সবাই তেতুল গাছ টিতে উঠে তেতুল পাড়ে। এমনিতে সবাই বলে থাকে তেঁতুল গাছে ভূত আছে কিন্তু কেউই দেখেনি। একজন দুইজন দেখেছিল অন্যরকম কিছু। আচ্ছা আপনি যখন তেঁতুল গাছটিতে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত থেকে ছিলেন কিছুকি দেখেছিলেন?? যদি কিছু দেখে থাকেন তাহলে যদি বলতেন ভালো হতো। আপনি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন তাই অজ্ঞান অবস্থায় হয়ে গিয়েছেন। আসলে ভুতুড়ে গল্পগুলো পড়তে ভীষণ ভালো লাগে। ভীষণ ভালো লাগলো আপনার গল্প পড়ে। আপনার জন্য তেঁতুল গাছটি অবশেষে কাটা পড়ে গেল।

 last year 

আরে না আপু ভুত টুত কিছু দেখিনি। আম্মার দেখানো ভয়গুলো মনে হচ্ছিল তাই ভয় পেয়েছিলাম। ধন্যবাদ আপু।

 last year 

হা হা হা । না হেসে কি আর পারা যায়? ছোট বেলার স্মৃতি আবার মেমোরি কার্ডে। যাই হোক ভূতরে গল্প পড়তে আমার বেশ ভালই লাগে। আর তেতুল গাছে তো ভূত থাকেই । আপনার তো দেখি বেজায় সাহস। আপনি তেতুল গাছে উঠে সন্ধ্যা পর্যন্ত কি করে থাকলেন। ভেবে তো আমি দিশেহারা। ভাবছি আপনি কি কিছু দেখেছিলেন যে অজ্ঞানের মত হয়ে গিয়েছিলেন। আশা করি এমন কোন গল্প থাকলে আমাদের মাঝে শেয়ার করবেন।

 last year 

আসলে ঝকের তালে উঠেছিলাম আর সন্ধ্যার আগে নামতেও মনে ছিল না। ধন্যবাদ আপু।

 last year 

তেঁতুল গাছের নাম শুনলেই আমার কাছে কেমন জানি ভয় লাগে। আপনিতো ভয় পেয়ে একেবারে অজ্ঞান অবস্থায় হয়ে গিয়েছেন। এমনিতে সবাই বলে তেঁতুল গাছে ভূত জিন থাকে। ভয়ে আপনার গলা শুকিয়ে গিয়েছিল তাই আপনার আওয়াজ কেউ শুনিনি। পরে আপনার এক কাকা আপনাকে দেখে গাছ থেকে নিচে নামিয়ে আনলো বিপদ থেকে মুক্তি পেলেন।আপনি মনে হয় একটু বেশি দুষ্টামি করতেন তাই তো কারো কথায় কোন কান না দিয়ে তেঁতুল গাছে উঠে পড়েছেন। তাই আপনারও একটা শিক্ষা হলো। ভালোই লাগলো পড়ে।

 last year 

জী ভাইয়া আমি একটু দুষ্ট ছিলাম। আমাকে বান্দর বলত অনেকে। ধন্যবাদ ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 68168.17
ETH 3256.43
USDT 1.00
SBD 2.67