মুভি রিভিউ ঃ ৭৭৭ চার্লি । ।
চলচিত্র | ৭৭৭ চার্লি |
---|---|
পরিচালক | কিরণরাজ কে |
প্রযোজক | জিএস গুপ্তা, রক্ষিত শেঠি |
রচয়িতা | কিরণরাজ কে |
অভিনয় | চার্লি, রক্ষিত শেঠি, সঙ্গীতা শ্রীঙ্গেরি, রাজ বি. শেট্টি, ববি সিমহা |
মুক্তি | ১০ জুন ২০২২ |
দেশ | ভারত |
ভাষা | কন্নড় |
সময় | ১৬৪ মিনিট |
মুভি রিভিউ
ধরমা নামের ব্যক্তি একটি কলোনিতে একা থাকে। তার কোন আত্নীয় স্বজন নাই যারা তার খোজ খবর নিবে। সে একটি ফ্যাকটরিতে চাকরি করে। তার বস তাকে খুব ভাল জানে কারন সে কখনো ছুটি কাটায় না, কাজে ফাকি দেয় না, সময়মত অফিসে চলে আসে। অন্যদিকে তার কলিগরা তার প্রতি হিংসাপরায়ণ। সে তার নিজের এবং বাসার কোন যত্ন করে না। প্রতিবেশিদের খোজ খবর রাখে না। তার নোংরামি এবং একাকী জীবনের কারনে প্রতিবেশিরাও তাকে দেখতে পারে না। একাকিত্ব কাটানোর জন্য সে প্রচুর ড্রিংকস করে এবং স্মোক করে। সে ছোটবেলা থেকেই চারলি চাপ্লিনের খুব ভক্ত এবং বড় হয়েও চারলি চাপ্লিনের শো দেখে।
একদিন ধরমা খেয়াল করল একটি কুকুর তাকে পিছন পিছন অনুসরণ করছে। আরেকদিন বৃষ্টির মধ্যে দরজা খোলে দেখে কুকুরটা ধরমার দরজার সামনে কাকভেজা হয়ে বসে আছে। কুকুরটা ঘরে ঢোকতে চাইলে ধরমা তাকে তারিয়ে দেয়। পরদিন আবার দরজা খোলে ধরমা দেখে কুকুরটা আবার বসে আছে কিন্তু আবারও তাকে তাড়িয়ে দেয়। সে ঘর থেকে রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিল, দেখে আরেক পাশ দিয়ে কুকুরটাও হেটে যাচ্ছে। বাসায় ফিরার পথে রাস্তায় কুকুরটার এক্সিডেন্ট হয় কিন্তু কেউ তাকে হাসপাতালে নেয়না। এদিকে আদি নামের একটি ছোট বাচ্চা মেয়ে তার বাবাকে বলে যেন কুকুরটাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় ৷ আদির বাবাও নিতে রাজি হয়না। ধরমা তার বাইকের পাশে একটি লাগেজ ব্যাগ লাগিয়ে তার মধ্যে কুকুরটাকে নিয়ে ডক্টর এর কাছে নিয়ে গেল। ডক্টর কুকুরের চিকিৎসা দিয়ে ধরমার কাছে দিয়ে বলল সে একজন এডপ্টকারি খুজে দিবে।
ধরমা কুকুর নিয়ে গিয়ে মহা বিপদে আছে। কুকুরটা তার ঘর নোংরা করে রাখে যা ধরমার খুবই অপছন্দ। একদিন ধরমা খুব অসুস্থ হয়ে পরল এবং শুধু কুকুরটাই তার পাশে ছিল। মধ্যে এডপ্টকারি পাওয়া গেল। তারা যখন কুকুর কে নিয়ে যাবে তখন ধরমার একটু খারাপ লাগলো। এর মধ্যে কয়েকদিন কেটে গেল কিন্তু যে ধরমা তার আশেপাশে মানুষ ত দূরের কথা কাওকেই পছন্দ করত না তার কুকুরটার জন্য খারাপ লাগা বেড়ে চলেছে। যেদিন সে কুকুরের লাইসেন্স বুঝাতে গেল। গিয়ে দেখে কুকুরটা ওই বাড়ির সব নষ্ট করে দিয়েছে। তা দেখে ধরমা খুশি হল ।
কুকুরটাকে নিয়ে গেল তার বাড়িতে এবং অনেক চিন্তা করে কুকুরের নাম ঠিক করল চার্লি। ধরমা এবং আদি মিলে চার্লিকে গোসল করিয়ে পরিস্কার করাল, নখ পরিস্কার করে দিল, দাত ব্রাশ করাল, গোসলের বাথটাব বানাল। ধরমা এবং চার্লির মধ্যে বন্ধুত্ব বেড়ে গেল। চার্লিকে নিয়ে ভালই যাচ্ছিল ধরমা এবং আদির দিনগুলো।
একদিন অফিসে যাওয়ার সময় চার্লি ধরমাকে যেতে দিচ্ছিল না। সেদিন অফিস থেকে এসে ধরমা দেখে চার্লি অসুস্থ হয়ে পরে আছে। ডক্টর এর কাছে নিতেই চেকাপ করে দেখল চার্লির ক্যান্সার হয়েছে এবং সে আর ২ বছর এর মত বাচবে। তা দেখে ধরমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল এবং ধরমা তখন ভাবতে লাগলো যে বিধাতা তার আপন সবই ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ধরমা খেয়াল করল চার্লির ও কিছু ইচ্ছা আছে যা চার্লি পুরন করতে চায়।
ধরমা তার বাইকে চার্লির জন্য আলাদা করে একটি বসার জায়গা করে নিয়ে চাকরি ছেরে দিয়ে চার্লিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। চার্লিকে নিয়ে ধরমা হোটেলে থাকে, দোকানে বসে খায়, লেকের পানিতে গোসল করে, সমুদ্রের তীরে যায়, প্যারাগ্লাইডিং করে আরো অনেক কিছু। চার্লি এবং ধরমা দুজনেই অনেক আনন্দ করে। এর মধ্যে মুভির নায়িকা (এনিমেল অফিসার) তাদের সাথে যোগ দেয়। পথিমধ্যে ধরমার বাইক নস্ট হয় এবং অন্য এক কুকুর প্রেমিক ভদ্রলোক তাদের লিফট দিয়ে বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে চার্লি এক নতুন বন্ধু (লিফট দেয়া ভদ্রলোকের কুকুর) পায়। সেই কুকুর প্রেমিক ভদ্রলোক ধরমাকে একটি ন্যাশনাল ডগ চ্যাম্পিয়নশিপের টিকিট দেয় এবং বলে চার্লিকে চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করাতে।
চার্লিকে নিয়ে ধরমা চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করে কিন্তু শুরুতে অনেক অপমানিত হয়। পরে চার্লি ভাল পারফর্ম করে। সে চার্লির শেষ ইচ্ছা বরফের মধ্যে লাফালফি করা পুরন করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ধীরে ধীরে ধরমার সব অর্থ শেষ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত পছন্দের বাইকটাও বিক্রি করে দেয়। কিছুদুর যেতে চার্লি আরও অসুস্থ হয়ে পরে এবং এক তান্ত্রিক মহিলা বলল চার্লি প্রেগন্যান্ট।
রাস্তায় পাহার ধসের কারনে আর্মির লোক গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়। ধরমা লুকিয়ে চার্লিকে নিয়ে বরফ পাহারের দিকে রওনা দেয়। একসময় চারলিকে নিয়ে ধরমা বরফ পাহারের চুরায় উঠে। চার্লি বরফের মধ্যে লাফায়, গড়াগড়ি করে, ধরমার সাথে খেলে। রাতে ঘোমানোর পর চার্লি ধরমার পাশ থেকে চলে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে চার্লিকে না পেয়ে ধরমা পাগলের মত খুজতে খুজতে বরফ পাহারের চুরায় একটি ঘরের পাশে চার্লিকে অসুস্থ অবস্থায় পায়। তার কিছুক্ষণ পর চার্লি মারা যায়। হঠাৎ ধরমা খেয়াল করে ঘরের ভেতর কিছু একটা আছে। ধরমা গিয়ে দেখে চার্লি একটি বাচ্চা রেখে গেছে। পরবর্তিতে কিছু মাস পর দেখা যায় ধরমা চার্লির নামে একটি রেস্কিউ সেন্টার খুলেছে এবং ভালই আছে।
আশা করি ছবিটি সবাই দেখবেন। আমার কাছে অসাধারন লেগেছে। এই ছবি দেখলে বোঝা যায় কুকুর কে ঠিকভাবে পালন করলে কুকুর মানুষের খুব আপন হয়ে যায়।
ভাই আমি মুভিটি দেখেছি তিন-চারদিন হবে। সত্যি বলতে আমার দেখা একটি শ্রেষ্ঠ মুভি ছিল। মুভিটি শেষ হতে না হতেই চোখ দিয়ে যেন পানি থামছিলো না। এতটা বাস্তবতা এবং মানুষের প্রতি একটা ভালোবাসা অবাক লাগল আসলে। কিন্তু বাস্তবে ককুরের ভালোবাসা এর থেকেও বেশি হয়ে থাকে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর ভাবে রিভিউ দেওয়ার জন্য।
ভাইয়া আমি ২ বার দেখেছি মুভিটা। আশ্চর্যের বেপার হল ২ বারই আমার চোখের কোনে পানি জমেছিল। নায়ক এবং কুকুরটা উভয়ই খুব ভাল অভিনয় করেছে। কুকুরের আরও কিছু মুভি দেখেছি কিন্তু এটা ব্যতিক্রম ছিল। ধন্যবাদ আপনাকে।
অনেকদিন হলো মুভি দেখা হয় না আপনার রিভিউ পড়ে খুবই ভালো লেগেছে। দারুন একটা মুভির রিভিউ দিয়েছেন সময় পেলে দেখার চেষ্টা করব।
মুভিটা দেখে রীতিমতো চোখে পানি চলে এসেছে। অবশ্যই মুভিটা দেখবেন, ভাল লাগবে। আমার মনে হয় যারাই এই মুভি দেখবে তারাই ইমোসানাল হয়ে যাবে। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার মন্তব্যের জন্য।
অনেকদিন হলো আমি কোন মুভি দেখিনি। আপনি আজকে আমাদের মাঝে খুব দারুন একটি মুভি করে শেয়ার করেছেন। ধন্যবাদ এত সুন্দর মুভি রিভিউ করে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
এই মুভিটা দেখেন ভাইয়া ভাল লাগবে। আমার অনেক ভাল লেগেছে। আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আপনি খুবই চমৎকারভাবে আমাদের মাঝে এই মুভি শেয়ার করেছেন আমি কয়েকদিন আগেই এই মুভিটি দেখেছি। আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে সত্যি বলতে পোশাক প্রাণীকে ভালোমতো পোষ মানালে তারা নিজেদের মধ্যে মিশে যায়। সংক্ষিপ্ত আকারে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।