কিছু মজার স্মৃতি এবং  প্রথম প্লেনে চড়ার অনুভুতি।। পর্ব ০১।steemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

field-6558125_1920.jpg

Source

আশা করি সবাই ভাল আছেন।আমিও ভাল আছি। মানুষের জীবন কত বিচিত্র। কত কিছু ঘটে যায়। কিছু মনে থাকে কিছু হারিয়ে যায় সৃতির পাতা থেকে। আমার মনে হয় মানুষ তার সুখের স্মৃতিগুলো মনে রাখতে চায় আর দুঃখ বা কষ্টে জড়িত স্মৃতি গুলো মনে রাখতে চায় না। আমার জীবনেও এমন অনেক স্মৃতি আছে যা মনে রাখার মত। তবে আমার দুই ধরনের স্মৃতি আছে যা মনে রাখার মত। সেই স্মৃতির ডায়েরি থেকে একটি আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। আমি জানিনা আপনাদের কাছে কতটুকু ভাল লাগবে তবে আমার কাছে এই স্মৃতিটা স্মরণীয়। আমার মেজ মামার বিয়েতে ঘটে যাওয়া কিছু স্মৃতি এবং সেই বিয়েতে এটেন্ড করতে গিয়ে আমার জীবনে প্রথম বিমানে চড়ার অনুভূতি নিয়ে আমি আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

feather-3237983_1920.jpg

Source



আজ থেকে প্রায় ১৯ বছর আগে ২০০৩ সালের কথা। আমি তখন কুমিল্লা থাকি আমার নিজ গ্রামের বাড়ি। আমার এস এস সি পরীক্ষা শেষ। আমি যখন ছাত্র ছিলাম তখন যেকোন বড় পরীক্ষা শেষ হলে একটি লম্বা ভেকেশান পাওয়া যেত। সেই ভেকেশানে অনেক ঘুরতে বা অনেক কিছু করতে ইচ্ছে করত যা পড়াশোনা করার সময় পারা যেত না। এস এস সি পরীক্ষা দেয়ার পর আমিও পেয়েছি অন্তত তিন মাস ছুটি। তাই কিছুদিন মনের আনন্দে ইচ্ছেমত ঘুরছি, খেলছি, টিভি দেখছি কেউ কিছু বলে না। আহ কি যে মজা হচ্ছিল। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর কেমন যেন একঘেয়েমি চলে এসেছে। প্রতিদিন একই রুটিন খেলা, পুকুরে লম্বা সময় নিয়ে গোসল করা, টিভি দেখা, খাওয়া, ঘুমানো। এভাবে প্রায় এক মাস চলে গেল।



একদিন আম্মা কে বললাম কি করব? এভাবে আর ভাল লাগছে না। আম্মা বললেন কোথাও গিয়ে কিছুদিন বেড়িয়ে আস। আমি জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যাব। আম্মা বললেন তোমার মেজ মামা আসবে কানাডা থেকে। তুমি চাইলে ঢাকা ঘুরে আসতে পার। আমি রাজি হয়ে গেলাম কারন মেজ মামা অনেক দিন পর দেশে আসবে। তার উপর তখন ঢাকা আমার কাছে খুব ভাল লাগত। অনেক রিলেটিভ থাকে তাদের বাসায়ও ঘুরা যাবে। বিভিন্ন জায়গা যেমন শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা, জাদুঘর যাওয়া যাবে। আর এখন আমার পড়া নেই তাই আব্বাও কিছু বলবেন না। যেই ভাবা সেই কাজ, আম্মার সাথে আলাপের কয়েকদিন পর আমি ঢাকা গেলাম। আমি ঢাকা ভাল করে চিনিনা তাই আমার এক ফুফাতো ভাইয়ের সাথে গিয়েছি।ঢাকায় আমি মামাদের বাসায় উঠেছি। মামাদের বললাম কারন আমার মামারা ৪ ভাই এবং মেজ মামা ছাড়া বাকি ৩ জন একই বাসায় থাকে।



আমি যাওয়ার ৩-৪ দিন পর মেজ মামা এসেছেন কানাডা থেকে। মামাদের বাসায় বেশ ভালই কাটছিল দিনগুলো। মেজ মামা ছুটি পেয়েছে ৩ মাস। একটি কথা বলে রাখি মেজ মামা বাংলাদেশে আসার অন্যতম একটি কারন হচ্ছে বিয়ে করা। বিয়ের আলাপ চলতে চলতে মামার বিয়ে ঠিক হয়েছে। পাত্রীর বাসা চট্টগ্রাম এবং বিয়ে চট্টগ্রামেই হবে। চট্টগ্রামের কিছু নিয়ম নীতি আছে যেগুলো নাকি তাদের মানতে হয় (সবার ক্ষেত্রে একই রকম নাও হতে পারে, চট্টগ্রামের কিছু আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে শোনা)। যেমন মসজিদে বিয়ে করা, ছেলেকে সুই সুতা থেকে শুরু করে সব কিছু দিয়ে দেয়া, চট্টগ্রামেই বিয়ের অনুষ্ঠান করা ইত্যাদি। যথারীতি আমরা বিয়েতে এটেন্ড করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। মামা তার কেনাকাটা নিয়ে অনেক ব্যস্ত কিন্তু বাকিদের খোজ খবরও রাখছেন। আমিও খুব এক্সাইটেড বিয়ের অনুষ্ঠানে যাব বলে তাও আবার ঢাকা থেকে সেই সুদুর চট্টগ্রামে। বিয়ের আর মাত্র দুদিন বাকি। দাওয়াত দেয়া, কেনাকাটাসহ অন্যান্য সবকিছুই করা হয়েছে।

suitcase-4410369_1920.jpg

Source



যেহেতু এত দুরের রাস্তা তাই ঢাকা থেকে বরযাত্রীর সংখা বেশি না। হিসেব করে বের হয়েছে প্রায় ২০ জনের মত ঢাকা থেকে যাব। এখন প্রশ্ন উঠেছে ঢাকা থেকে এত লোক যাব কিভাবে? ঢাকা থেকে তখন বাসে করে চট্টগ্রাম যেতে প্রায় ৮-৯ ঘন্টা লেগে যেত। তার উপর জ্যাম লাগলে ত আর কথাই নেই। বিয়ের দিন বাসে করে যেয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা কোনভাবেই সম্ভব না। বিয়ের ২ দিন আগে মিটিং হল এবং সিদ্ধান্ত হয়েছে বিয়ের আগের দিন দুটি হাইএস গাড়ি দিয়ে আমরা সবাই চলে যাব। সেজ মামা দুটি হাইএস গাড়ি ঠিক করলেন। বিয়ের আগের দিন চলে এল। আমরা যথারীতি সবাই সকালেই যার যার মত গোছগাছ করে রেডি কারন এত দুরের রাস্তা সকালে না বের হলে ঠিক সময়ে পৌছানো যাবে না। এর মধ্যে সেজ মামা বললেন দুটি গাড়ির মধ্যে একটি গাড়ি এসেছে আরেকটি গাড়ির ড্রাইভার ফোন ধরছে না। সবার ত মাথা প্রায় খারাপ। এই সময়ে গাড়ি না পাওয়া গেলে ত যাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে। সেজ মামা বুদ্ধি খাটিয়ে বড় মামা কে বলল বরসহ ১২ জন এই গাড়ি দিয়ে চলে যেতে। বাকিদের নিয়ে উনি পরে যাবে। সবাই চিন্তা করে দেখল এটাই ভাল ডিসিশন। মেজ মামাসহ ১৩ জন চলে গেলেন একটি হাইএস গাড়ি নিয়ে। তার মধ্যে আমি ছিলাম না। আমরা বাকি ৭ জন রেডি হয়ে বসে ছিলাম। আমাদের মন খারাপ হয়ে গেল। সেজ মামাকে দেখলাম পায়চারী করছে আর ফোনে ড্রাইভার কে কল করার চেষ্টা করছে। বেলা প্রায় ১২ টার দিকে ড্রাইভার ফোন ধরে বলল তার এক আত্মীয় মারা গিয়েছে তাই সে আসতে পারেনি। তাকে জিজ্ঞেস করা হল অন্য গাড়ি ঠিক করে দিতে পারবে কিনা সে বলেছে সে এখন পারবে না। মামা তাড়াতাড়ি করে আরও কয়েক জায়গাতে খোঁজ নিয়ে দেখল গাড়ি নেই।

airport-3511342_1920 (1).jpg

Source



আমাদের সকাল থেকে রেডি হওয়া আর মন খারাপ দেখে মামা একটি বড় ডিসিশন নিল। সোজা ফোন করেছে এয়ারপোর্টে। ফোন করে জেনেছে ডমেস্টিক ফ্লাইট আছে কিনা? শোনে কনফার্ম হল যে বিকেল ৪ টায় একটি ফ্লাইট আছে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। মামা এতটাই ইমোশনাল হয়েছিল উনি আর জিজ্ঞেস করেনি এতগুলো সিট এভেইলেবল আছে কিনা। যাই হোক মামা বললেন চল আজ তোমাদের বিমানে করে নিয়ে যাব। বিমানের কথা শোনেত আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল মামা মজা করেছে। পরে সবাই বের হয়েছে এবং প্রায় ১ ঘন্টা পর আমরা ধানমন্ডি থেকে এয়ারপোর্টে পৌছেছি। এটাই আমার প্রথম এয়ারপোর্টে যাওয়া। আমি ভিতরে ঢুকছি আর পুলকিত হচ্ছি এই ভেবে যে আর কিছুক্ষণ পর আমি বিমানে উঠব। তখন এয়ারপোর্টে ঢুকে বাম দিকে যেতে হত ডমেস্টিক এয়ারপোর্টে যেতে। কিছুক্ষণ পর আমরা ডমেস্টিক এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে পৌঁছেছি। আমার যতদুর মনে পরে তখন শুধু মাত্র বিমান বাংলাদেশ ই ছিল ডমেস্টিক এয়ারলাইনসে। মামা আমাদের লাউঞ্জে বসিয়ে টিকেট কাটতে গেল। তখন বাজে প্রায় বেলা ৩ টা। প্রায় ২০-২৫ মিনিট পার হয়ে গেল মামা আসছে না। আমরা টেনশনে পরে গেলাম। খানিক বাদে মামা এসে বলল ৬ টি সিট খালি আছে তাই ৬ টি কেটে নিয়ে আসছে। আমার সেজ মামী বললেন সবাই আশা করে আছি একসাথে যাব আরেকবার গিয়ে রিকুয়েষ্ট করে দেখ পাওয়া যায় কিনা। মামা বললেন এখানে রিকুয়েষ্ট করার কিছু নেই, এভেইলেবল থাকলে তারাই দিয়ে দিত। পরে ডিসিশন হল যেকোন একজন থেকে যেতে হবে। এইখানে সবার মধ্যে আমিই ছোট এবং বাকি যারা আছেন তাদের প্রোগ্রামে যেতেই হবে। স্বভাবতই মামা আমাকে বললেন তুমি ত সিচুয়েশন টা বুঝেছ যদি কিছু মনে না কর তাহলে তুমি যদি থেকে যেতে। আমার অনেক খুশি ভরা চেহারাটা মুহুর্তের মধ্যে অন্ধকার হয়ে এল। সেজ মামী বললেন এটা কেমন করে হয়। এই ছেলেটা এত আশা করে এসেছে আমাদের সাথে যাবে বলে। এই কথা বলে মামী বললেন আমি থেকে যাই ওকে নিয়ে যাও। মামা বললেন তা কি করে হয়। আমার এই ঘটনার অন্যতম মজার টুইস্ট হচ্ছে এখানে। তখন প্রায় ৩ঃ৪০ এর কাছাকাছি সময়। ওদিকে বারবার এনাউন্সমেন্ট দিচ্ছে আর কিছুক্ষণের মধ্যে ফ্লাইট ছেড়ে যাবে। তার মধ্যে বিমানের ২-৩ জন ক্রু এসে আমাদের তাড়া দিচ্ছিলো যেন তাড়াতাড়ি গিয়ে গাড়িতে উঠি (অনেকে মনে করতে পারেন বিমানে গেলে আবার গাড়িতে উঠবে কেন, ইমিগ্রেশন থেকে বিমান পর্যন্ত পৌছাতে গাড়িতে করে যেতে হয়)।.....

আজ এই পর্যন্ত। বাকী অংশ নিয়ে আবার আসব। আমার পোস্ট পড়ে আপনাদের অনুভূতি কমেন্ট করে জানাবেন।

আমি মীর আতিক আল ফারুক। আমি বাংলায় বলতে, লিখতে ও পড়তে ভালবাসি। বাংলা আমার অহংকার। আমি বাংগালী হিসেবে গর্বিত।

Sort:  
Loading...
 2 years ago 

আপনার জীবনে প্রথম বিমানে চড়ার গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। তবে আসল মজাটা এখনো রয়ে গেল, তার মাঝেই শেষ হয়ে গেল ইমিগ্রেশনের ভিতরেই আপনার গল্প। বাকি গল্পের আশায় রইলাম নিশ্চয়ই মজার কিছু আছে। শুভকামনা রইল আপনার জন্য স্মৃতির পাতার গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

আমার পোস্ট পড়ে আপনার ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগছে। পরের পর্বে বাকি অংশ জানতে পারবেন। আশা করি আপনারা বাকিটুকু উপভোগ করবেন। খুব দ্রুত বাকী অংশ নিয়ে আপনাদের সামনে আসব। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

বেশ থ্রিলার রয়েছে।আর ভাই সারফেক্সেল এর অ্যাডের কথা মনে পড়ে গেল।দাগ থেকে যদি দারুন কিছু হয় তবে দাগই ভাল।তেমনি ঝামেলা থেকে যদি এরকম ভাল কিছু হয় তাইলে ঝামেলাই ভাল।সেই না আসা ড্রাইভার কে ধন্যবাদ দিয়েন।পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

 2 years ago 

আমার কাছে ঐ সময় থ্রিলিং ই লেগেছিল। আপনি ঠিক বলেছেন ড্রাইভার আসলে হয়ত ঐরকম একটা সুযোগ হত না। আশা করি খুব দ্রুত আপনাদের সাথে শেষ পর্ব নিয়ে আসব। ধন্যবাদ ভাই।

 2 years ago 

আপনি ২০০৩ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে! আমি তো শুনেই অবাক তখন আমার বয়স মাত্র দুই বছর😁।আমার তো শুনে খুব ভালো লাগছে, আসলে হঠাৎ হঠাৎ প্ল্যানিং গুলো একটু বেশি মজা হয়। যদি আপনারা সেদিন হাইচ এ করে চলে যেতেন তাহলে পরে আর বিমানে করে যেতে পারতেন না। যাইহোক ভাই আপনার পরবর্তী বাকি অংশের অপেক্ষায় রইলাম , কিভাবে উঠলেন এবং কিভাবে যাওয়া হলো না হল অবশ্য জানাবেন।

 2 years ago 

আমার ঘটে যাওয়া মুহুর্তে আপনার বয়স অনেক কম ছিল। ড্রাইভার না আসাতেই আসলে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত পৌছাতে পেরেছিলাম। বাকিটুকু না হয় পরের অংশে বলব। ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

আপনার ঘটনাটি পড়ে বুঝাই যাচ্ছে যে আপনার প্লেনে চড়া হয়েছিল সেই দিন। তারপরও এমন একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছিল যার কারণে প্লেনে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল, আসলে সবকিছু ভাগ্যের ব্যাপার। যদিও আমি কথাটি অগ্রিম বলে ফেলেছি তার পরেও পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.11
JST 0.030
BTC 67689.07
ETH 3801.39
USDT 1.00
SBD 3.55