গল্প। পর্ব ০১। অনিশ্চয়তার ভালবাসা।। 10% Beneficiary to @shy-foxsteemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি। ভালবাসা শব্দটা যেমন সহজ, বাস্তব ভালবাসা কিন্তু অনেক কঠিন। ভালবাসি মুখ দিয়ে বললেই ভালবাসা হয়ে যায় না। এতে মনের মিল, পরিস্থিতির মিল, সমাজের গ্রহনযোগ্যতা সবকিছু থাকতে হয়। আবার কেউ আছে একজনকে একতরফা ভালবেসেই যাবে আরেকজন কি ভাবল না ভাবল, পছন্দ করল কি না করল এসব চিন্তা করে না যাকে আমরা ওয়ান সাইডেড লাভ বলি। শুধু আবেগ দিয়ে ভালবাসলে হবে না। পছন্দ হলে মনের ভাব প্রকাশ করা যায় কিন্তু নিশ্চিত আশা করা যাবে না। তা না হলে পরবর্তীতে কষ্ট পেতে হয়। আমি আজ আপনাদের সাথে আমার ভালবাসার গল্পের প্রথম অংশ শেয়ার করছি। আমার গল্পের টাইটেল হচ্ছে অনিশ্চয়তার ভালবাসা।


heart-742712_1920.jpg


সোর্স pixabay


সঞ্জয় সকালেই সাহেদের বাড়িতে চলে এল। তখন ৯ টা বাজে। সাহেদ বলল কিরে এত তাড়াতাড়ি চলে এসেছিস? সঞ্জয় বলল চল একটু আগেই যাই, কলেজে বাকিরা মনে হয় আড্ডা জমিয়ে দিয়েছে।

সঞ্জয় মধ্যবিত্ত হিন্দু পরিবারের ছেলে, আর সাহেদ সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের ছেলে। সঞ্জয় আর সাহেদ ছোটবেলা থেকেই একসাথে পড়াশোনা করে, খেলাধুলা করে। সঞ্জয় দেখতে সাহেদের চেয়ে বেশি সুন্দর এবং পড়াশোনাতেও সঞ্জয় ক্লাসে প্রথম। সঞ্জয়ের পরিবারের সাথে সাহেদের পরিবারের প্রতিবেশির সম্পর্ক। আর সাহেদের দাদুর সাথে সঞ্জয়ের দাদুর সই (বান্ধবী) পাতানো আছে। সঞ্জয়ের বাড়ি থেকে সাহেদের বাড়ি আসতে ২-৩ মিনিটের মত লাগে আর সাহেদের বাড়ি থেকে কলেজ যেতে আরও ৫ মিনিট লাগে। সাহেদ আর সঞ্জয় এইচ এস সি সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে, কদিন পড়েই টেস্ট পরীক্ষা। টেস্ট পরীক্ষা পাস করলেই তারা এইচ এস সি পরীক্ষা দিবে।
সাহেদের বাবা সঞ্জয় কে দেখে বলল তোমরা এত আগে কলেজে গিয়ে কি করবে, তোমাদের ক্লাস ত ১০ টায় শুরু। সঞ্জয় বলল আমাদের এইচ এস সি পরীক্ষা সামনে। আগে গিয়ে গ্রুপ স্টাডি করি। সাহেদের বাবা আর কিছু বললেন না।

সাহেদদের ক্লাসে একটি গ্রুপ আছে। এই গ্রুপের সবাই খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে। এরা একের বিপদে অন্যজন ঝাপিয়ে পড়ে। সাহেদদের সেই গ্রুপে মোট ৭ জন মেম্বার। এদের নাম হচ্ছে সাহেদ, সঞ্জয়, জিল্লুর, সোহেল, তানিয়া, প্রিয়তি আর সুচি। এদের মধ্যে আবার সাহেদ, সঞ্জয়, তানিয়া আর সুচি বেশি ক্লোজ। শুরু থেকে একটু বলি। সাহেদ, সঞ্জয়, তানিয়া, সুচি, আর সোহেল হাই স্কুল থেকেই একসাথে পড়াশোনা করছে এবং এখনো কলেজে আছে একসাথে। আর জিল্লুর এবং প্রিয়তি কলেজে জয়েন হয়েছে। জিল্লুর আর প্রিয়তি দুজনেই অন্য স্কুলের, তবে কলেজের শুরু থেকেই সাহেদ, সঞ্জয়দের সাথে খুব মিশে গিয়েছে। সোহেল কলেজ থেকে একটু দূরে থাকে, তাই ক্লাস শেষে বেশি থাকে না। প্রায় সময় আড্ডা বা গ্রুপ স্টাডি বেশি হয় সাহেদ, সঞ্জয়, তানিয়া আর সুচির মধ্যে কারন এদের বাসা স্কুলের কাছেই। এদের মধ্যে সঞ্জয় সবার সাথে বেশি মিশুক এবং যেকোন বেপারে সে সবার আগে থাকে।


heart-700141_1920.jpg



সোর্স pixabay

সাহেদ আর সঞ্জয় ক্লাসে ঢুকেই দেখে জিল্লুর, তানিয়া আর সুচিকে বই খাতা খুলে কি যেন পড়া বুঝাচ্ছে। সঞ্জয় বলল আরেকটু পর ক্লাস শুরু হয়ে যাবে কই আড্ডা দিবি না তোরা পড়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিস। তানিয়া বলে উঠল তুই ত ক্লাসের ফার্স্ট বয়, তোর চিন্তা কিসের। আমাদের অনেক পড়তে হবে। তা না হলে পরীক্ষায় গোল্লা পাব। তার উপর আজ রশিদ স্যারের ক্লাস তুই জানিস না? ব্ল্যাকবোর্ড এ গিয়ে অংক করতে না পারলে কি হবে তা ত জানই। তার উপর আজ হায়ার মেথের ক্যালকুলাস ধরবে। সঞ্জয় বলল এত তড়িঘড়ি করে আসলাম আড্ডা দিব বলে আর তোরা আছিস পড়া নিয়ে, বলেই সে পিছনের বেঞ্চে গিয়ে বসে পরল। সাহেদের প্রিপারেশনও ভাল না। সেও গিয়ে জিল্লুরের সাথে বসে ক্যালকুলাস বুঝছে। জিল্লুরও ভাল ছাত্র এবং অনেক টিচারও তাকে পছন্দ করে। ২ টি ক্লাসের পর রশিদ স্যার ক্লাসে ঢুকেই হুংকার দিয়ে বলল, আজ যে অংক করে দেখাতে না পারবে তার জন্য স্পেশাল ট্রিটমেন্ট আছে। একে একে সবাইকে বোর্ডে গিয়ে অংক করতে বললেন রশিদ স্যার। কেউ পারেনি শুধুমাত্র সঞ্জয় আর জিল্লুর ছাড়া। সব ছেলেদের মুরগী করে ফ্লোরে বসাল। আর মেয়েদের কান ধরে দাড় করিয়ে রাখল। রশিদ স্যারের পানিশমেন্ট নিয়ে একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। আপনারা পাঠকরা শুনতে চাচ্ছেন ত, তাহলে বলি, রশিদ স্যার একবার এক ছেলে অংক না পারায় বেত দিয়ে এত মার মেরেছে যে সেই ছেলের ঐদিন রাতে জ্বর চলে এসেছিল এবং তিনদিন ক্লাসে আসতে পারেনি। পরে সেই ছেলের বাবা এসে রশিদ স্যারের নামে কম্পলেইন করেছে। কলেজ কমিটি রশিদ স্যার কে বলে দিয়েছে যেন বেত দিয়ে আর কখনো না মারে। তাই এখন ছাত্র-ছাত্রীদের অন্যভাবে পানিশমেন্ট দেয়। এই পরিস্থিতি দেখে সঞ্জয়ের নিজেরই লজ্জা লাগলো। কারন শুধু সে আর জিল্লুর বসে আছে আর বাকিরা কেউ মুরগী হয়ে আছে কেউ কানে ধরে আছে। সাহেদের দিকে তাকানো যাচ্ছে না, সে লজ্জায় লাল হয়ে আছে। আর বার বার সুচির দিকে তাকাচ্ছে। সঞ্জয় খেয়াল করল সাহেদ আর চোখে সুচির দিকে তাকাচ্ছে আর ঘাম মুছছে।

আজ এই পর্যন্ত। আশা করি আমার লেখা গল্প আপনাদের ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ সবাইকে।

Sort:  
 2 years ago 

আমাদের গ্রুপেও প্রিয়তী নামে এক মেয়ে ছিল আর সে গ্রুপের আরেক ছেলের সাথে প্রেম করেছিল।হাহাহা। গল্প টি দেখে ওদের কথা মনে পড়ে গেল।ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্ট অনেক ভাল হয়েছে।আশা করি দুর্দান্ত একটি গল্প পাব।পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

 2 years ago 

আমার লেখা গল্পের সাথে আপনার গ্রুপের কারোর নাম এবং ঘটনা মিলে গিয়েছে জেনে ভাল লাগছে। আপনি অনেক ধৈর্য সহকারে আমার লিখার গল্পটি পড়েছেন। সুন্দর মন্তব্য দিয়ে পাশে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

 2 years ago 

বাহ আপনি খুব চমৎকার গল্প আমাদের মাঝে উপস্থিত করেছেন। গল্পটি পড়ে সত্যি খুব ভালো লাগলো। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা রইলাম। আশা করি আরো রোমাঞ্চকর মুহূর্ত উপভোগ করতে পারবো। শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আমার গল্পটি পড়ে আপনার ভাল লেগেছে জেনে আমার ভাল লাগছে। আমি চেষ্টা করেছি গুছিয়ে লিখে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার জন্য। পরবর্তী পর্ব খুব শীঘ্রই শেয়ার করব। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

অনিশ্চয়তার ভালোবাসার গল্প টি পড়ে খুবই ভালো লাগলো।আগের দিনে সই(বান্ধবী) পাতানো খুব হতো এখন তো যে কেউ বন্ধু হতে পারে কিন্তু সেটা বেশিদিন স্থায়িত্ব হয় না কিন্তু আগের দিনের বন্ধুত্বের অনেক মূল্য ছিল।গল্প টি পড়ে এখন পর্যন্ত বুঝতে পারছি না কে গল্পের নায়ক নায়িকা,সাহেদ,সুচি নাকি সঞ্জয,প্রিয়তী? দেখা যাক কি হয় পরবর্তী গল্পের অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া। ধন্যবাদ সুন্দর গল্পটি শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

আপনি ঠিকই বলেছেন, আগের দিনে সই শব্দটা অনেক প্রচলন ছিল। আমার দাদু এরকম সই পাতাতেন। আমার গল্পটি ধৈর্য সহকারে পড়েছেন বলে আপনাকে ধন্যবাদ আপু। পরবর্তী পর্ব খুব শীঘ্রই শেয়ার করব।

 2 years ago 

অনেক ভাল লাগলো পড়ে ভাইয়া। এগিয়ে যান পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। অনেক ধন্যবাদ অনিশ্চয়তার ভালবাসা গল্পটি শেয়ার করার জন্য। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

আমি চেষ্টা করেছি সুন্দরভাবে গুছিয়ে গল্পটি লেখার জন্য। আপনার ভাল লেগেছে জেনে আমার ভাল লাগছে। সুন্দর মন্তব্য দিয়ে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ আপু।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.028
BTC 68431.46
ETH 2457.08
USDT 1.00
SBD 2.60