ছোটবেলার স্মৃতি। ক্রিকেট খেলা নিয়ে মজার ঘটনা।10% beneficiary to @shy-foxsteemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি। আজ আবার এসেছি নতুন একটি ব্লগ নিয়ে। প্রতিদিন একটি করে ব্লগ পোস্ট করার চেষ্টা করি। আমার জন্য দিনের বেলায় ব্লগ এ সময় দেয়া খুব কঠিন হয়ে গিয়েছে। তার পরও ধারাবাহিকতার জন্য একটি ব্লগ আমি রেডি করেই ফেলি। হয়ত আমার অনেক ইচ্ছা আপনাদের সাথে মজার বা ভিন্ন কিছু শেয়ার করার । আসলে এখানে অনেকেই আছেন খুব ধারাবাহিকভাবে সৃজনশীল ব্লগিং করে যাচ্ছেন। তারা নিরবে নিভৃতে ব্লগিং করছেন কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারছি না। তবে তাদের ইউনিক এবং সৃজনশীল ব্লগিং দেখে অনেকেই বুঝতে পারেন যে তারা কারা। আমি চেষ্টা করি তাদের ফলো করতে। যায় হোক আজ আমি আপনাদের সাথে ছোটবেলার একটি স্মৃতি শেয়ার করছি।

sunset-1807524_1920.jpg

সোর্স pixabay

আমার খুব কাছের বন্ধুদের মধ্যে একজন হচ্ছে সৌরভ। সৌরবদের বাড়ি আমাদের পরের মহল্লায় তাও প্রায় ২০-২২ টা ঘর পর। মাঝে মাঝেই সৌরভ সহ আরো অনেকেই আমাদের বাড়ির আঙ্গিনায় ক্রিকেট খেলতাম। সেদিন বিকেলে আমরা প্রায় ১০-১২ জন মিলে দুটি গ্রুপ করে ক্রিকেট খেলছিলাম। আমি একটি টিম এর ক্যাপ্টেন এবং সৌরভ আরেক টিমের ক্যাপ্টেন। সৌরভ বলল আজ তোর টিম কে অনেক রানের ব্যবধানে হারাব। এমনিতে সৌরভ আমার জিগরি দোস্ত কিন্তু খেলার সময় আমরা একে অন্যের শত্রু। আবার খেলা শেষে দুজন আগের মত জিগরি দোস্ত।

প্রথম আমাদের টিমের বোলিং পড়ল। প্রথমে ব্যাটিং করে সৌরভ রা অনেক রান করল। আমরা ত টেনশন এ পড়ে গেলাম। পরে আমার টিমের এক এক করে ভাল প্লেয়ার নামাচ্ছি কিন্তু অল্প রান করে এক এক করে সব আউট হয়ে যাচ্ছিল। আমি নেমেছি মাঝে। আমি ধৈর্য ধরে ধরে রান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। এক এক করে উইকেট পড়ে গেল। খেলার এমন অবস্থায় আসল যে লাস্ট উইকেটে ৬ বলে ১২ রান দরকার। শেষের অভার তার উপর লাস্ট উইকেট । আমার মনের তখন খুব খারাপ অবস্থা। উইন উইন সিচুয়েশন। আমি রান নিয়ে এগিয়ে দিয়েছি কিন্তু শেষ বলে ২ রান দরকার। সমস্যা হচ্ছে শেষ বলে আমি ছিলাম রানার আপে এবং ব্যাটিং এ যে ছিল সে খুবই দূর্বল। লাস্ট ওভার করছিল সৌরভ। শেষের বল করতে না করতে আমি এগিয়ে গিয়েছি এই ভেবে ভেবে যে দৌড়ে হলেও দুই রান নিয়ে নিব। বল করা শেষ আমিও দৌড় দিয়েছি কিন্তু প্লেয়ার বোল্ড আউট। আমি ত রেগে আগুন। আমার হাতে থাকা ব্যাট জোড়ে ঢিল মেরে ফেলে দিলাম। সাথে সাথে বিশাল এক চিৎকারের আওয়াজ। ফিরে দেখি আমি যে ব্যাট ঢিল দিয়ে ফেলেছি তা গিয়ে পড়েছে সৌরভের উপর এবং সৌরভ খুব খারাপভাবে আঘাত পেয়ে মাটিতে পড়ে গিয়েছে। আমি ভয়ে তার কাছে গিয়ে ধরতে যাব এমন সময় সৌরভের এক চাচাত ভাই আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে সৌরভ কে ধরে টেনে তুলতে চেষ্টা করছে কিন্তু সে উঠতেই পারছে না। সৌরভের চাচাত ভাই আমার আম্মার কাছে নালিশ দিয়ে সৌরভ কে কাধে ধরে নিয়ে বাড়ি চলে গেল। সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছিল তখন কিন্তু আমি ভয়ে বাড়ি ঢুকছি না। আমার ত ভয়ে টেনশনে বাড়ি ঢুকতে ইচ্ছে করছিল না। তার উপর আব্বার কানে গেলে আমাকে কি করবে সেটা চিন্তা করতেই মাথা ঘুরে যাচ্ছিল। এর মধ্যে সৌরভের দাদু সৌরভ কে নিয়ে আম্মার কাছে নালিশ করে গেল আর বলল তোমার ছেলে আমার নাতির কি করেছে দেখ। পরে শুনলাম ব্যাট সৌরভের পেটে আঘাত করেছিল এবং পেট ফুলে গিয়েছিল।

cricket-724616_1920.jpg

সোর্স pixabay

আমি গিয়ে ঘরের পিছনে বাঁশ ঝাড়ের ওখানে লুকিয়ে আছি। বলে রাখি সন্ধ্যার পর এই বাঁশ ঝাড়ের দিকে তাকাতেও ভয় পেতাম কিন্তু সেদিন টেনশনে সন্ধ্যার পরও বাঁশ ঝাড়ের ওখানে লুকিয়ে ছিলাম। আম্মা আমাকে ডাকতে ডাকতে হয়রান কিন্তু আমি কোন উত্তর দিচ্ছি না। আম্মা বললেন তুমি ঘরে আস তোমাকে কিছু বলব না। ততক্ষণে আমার অন্ধকারের ভয় ঢুকে গিয়েছিল এবং আমি ঘরে চলে আসলাম। আম্মা বললেন হাত মুখ ধুয়ে আস। আমিও ভাবলাম আম্মা বুঝি আজ মাফ করে দিয়েছে। হাত মুখ ধুয়ে এসে বই নিয়ে পড়তে বসেছি আর আম্মার ঝাড়ুর বাড়ি শুরু হয়ে গিয়েছে। আমি ত আর পালানোর জায়গা পেলাম না। আম্মা কতক্ষন ঝাড়ু পেটা করে পরে ক্ষান্ত হলেন। তার পরও দুষ্টামি করা বন্ধ করিনি।সৌরভের সাথে বেশ কিছুদিন কথা বা খেলা হয়নি। এক সময় আমাদের মধ্যে আবার সক্ষতা তৈরি হয় ।

এখন বর্তমানে আমাদের খুব কথা হয় দেখা হয়। সৌরভ একটি গার্মেন্টস এ খুব ভাল অবস্থানে আছে।

আশা করি আমার পোস্ট আপনাদের ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ সবাইকে।

Sort:  
 2 years ago 

প্রথমে নতুন বছরের শুভেচ্ছা ভাই। ছোটবেলায় ক্রিকেট খেলার স্মৃতি আপনি খুবই সুন্দর ভাবে আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। আপনি এবং সৌরভ ভাই দুই দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন। লাস্টে ওভারে ১২ রান দরকার। শেষ দিকে এসে লাস্ট বলে দুই রান দরকার ছিল। আপনি দৌড় দিলেন কিন্তু ওদিকে আপনার বিপরীত ব্যাটিং বোল্ড আউট হয়ে গেছিল। এটা পড়া মাত্রই আমি হেসে পড়েছি।

 2 years ago 

প্রথমেই আপনাকে জানাই নতুন বছরের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ছোটবেলায় এরকম অনেক দুর্ঘটনা হয়ে থাকে। সবাই এভাবে ভয় পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থাকতো মায়ের কাছ থেকে বোকা না খাওয়ার জন্য। কিন্তু দিন শেষে বাড়ি ফিরতে হতো এবং তখন তো মায়ের বকা এবং জারুর বারি বন্ধ হতো না। মনে হচ্ছে আপনার বন্ধুর একটু বেশিই লেগেছিল আঘাত। যাই হোক এরকম ছোটবেলার স্মৃতি গল্প গুলো পড়তে একটু বেশি ভালো লাগে। ধন্যবাদ।

 2 years ago 

এভাবে ছোটবেলায় কতজনকে যে আমরা আঘাত করেছি এবং অন্যজনও আমাদেরকে এভাবে আঘাত করেছে সত্যিই ছোটবেলায় এরকম অনেক দুর্ঘটনা হয়ে থাকে। যেগুলো কখনো ভোলার নয়। কত বিচার এসেছে সবার পরিবারের কাছে এরকম কারণ এর জন্য। অনেক জনের বন্ধুত্ব ভেঙে গিয়েছে এরকম ছোট্ট ঘটনার কারণে। যাই হোক আপনাদের বন্ধুত্ব এখনো ঠিকই আছে জেনে ভীষণ ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

ছোটবেলার স্মৃতিগুলি কখনো ভুলে যাওয়া যায় না।কিন্তু এই ঘটনাগুলো যেমন মজার তেমনি বিপদজনক হয়ে থাকে কখনো কখনো।কারন আপনার ব্যাটের আঘাতে সৌরভের আরো বড় কিছু হতে পারতো।যদিও সকলের জীবনে এইরকম কিছু ঘটনা থাকে কয়েকদিন পর আবার ঠিক হয়ে যায়,আপনার জীবন ও তার ব্যতিক্রম নয়।বাঁশঝাড়ের পিছনে লুকানোর গল্পটি বেশ ছিল, ধন্যবাদ ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 76530.78
ETH 3054.36
USDT 1.00
SBD 2.63