গল্প।। লোপার ভালবাসা প্রাপ্তি। শেষ পর্ব।। 10% beneficiary to @shy-fox
শেষ পর্ব
লোপা অফিসে রেগুলারলি যাচ্ছে। লোপা এবং শাহেদ একসাথে লাঞ্চ করছে এবং অফিসে আগের মত তেমন গুজব নেই। আসলে গুজব না থাকার কারণ হচ্ছে অফিসের কোন এক পার্টিতে শাহেদ সবার সামনে ইন্ডিরেক্লটলি তার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখিয়েছে। যাই হোক দেখতে দেখতে ডিসেম্বর মাস চলে এসেছে। যেহেতু শাহেদ গ্রুপ একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি সেহেতু ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে তাদের ৪ দিনের একটি লম্বা বন্ধ থাকে। লোপা চিন্তা করল এই সুযোগে বাড়ি গিয়ে বাবা মা কে তার ভালোবাসার কথা বলবে। যেমন চিন্তা তেমন কাজ। লোপা ছুটিতে যাওয়ার সময় শাহেদ তার দামী গাড়ি দিয়ে লোপাকে পাঠিয়েছে। তবে লোপা বলেছে বাসা পর্যন্ত এই গাড়ি নিয়ে যাবে না।
লোপা বাড়ি ঠিকঠাক পৌঁছে গিয়েছে। তার বাবা মা দেখে খুব খুশি। রাতে খাবার টেবিলে লোপা তার ভালোবাসার কথা তোলার জন্য মাকে ইশারা দিচ্ছিল। লোপার মা তাদের ব্যাপারে আগে থেকেই জানত। লোপার মা লোপার বাবাকে শাহেদ এর ব্যাপারে বলল। লোপার বাবার শুনে কিছুটা মন খারাপ হয়ে গিয়েছে। তারপরও নিতান্ত ভদ্রলোক বলে বললেন এটা কি শাহেদ গ্রুপের মালিকের কথা বলছ? লোপার মা হ্যা বলল। তখন লোপার বাবা বললেন এত ধনী ব্যক্তি তোমাকে পছন্দ করল, এটা কি স্বাভাবিক? লোপা বলল বাবা তুমি একবার কথা বলেই দেখ, তুমি যেরকম মনে করছ সেরকম না। তোমার পছন্দ না হলে আমি আর কন্টিনিউ করব না তবে একবার তুমি কথা বলেই দেখ। লোপার বাবা হ্যা সূচক মাথা ঝাঁকাল। লোপা শাহেদ কে সব ভেঙ্গে বলল। শাহেদ বলল ঠিক আছে আমি ভেবে দেখছি কি করা যায়। লোপার কিছুটা মন খারাপ হয়েছে। সে ভেবেছে শাহেদ খুশিতে বলবে ঠিক আছে আমি কালই আসছি। যাই হোক পরদিন সকালে লোপার বাবা বাড়ির পাশেই টেইলার দোকানে কাজ করছে, মা রান্নার কাজে ব্যস্ত এবং ছোট ভাই এর স্কুল বন্ধ বলে বাসায় ওয়ালটনের ট্যাবে গেম খেলছিল। আর লোপা কিছুটা আনমনে পুকুর ঘাটে বসে ছিল। হঠাৎ কেউ একজন চিৎকার করে বলছে এই বাড়ির দিকে অনেক সুন্দর সুন্দর গাড়ী আসছে । লোপা প্রথমে বুঝেনি। কিছুক্ষণ পর দুটি গাড়ি এসে তাদের বাড়িতে থামল। লোপা বসে আছে আর তাকিয়ে আছে কে এসেছে। গাড়ি থামার পর শাহেদ গাড়ি থেকে নামছে দেখে লোপা লাফিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো।
লোপার বাবা দোকান থেকে বের হয়ে আসল। লোপা তার বাবা এবং মা কে শাহেদ এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। লোপার বাবা এত ধনী ব্যক্তি যাকে টিভি তে প্রায়ই দেখা যায় তার সামনে কিছুটা ইতস্তত বোধ করলেও নিজেকে মেয়ের বাবা হিসেবে চিন্তা করে সামলে নিয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে এত সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলে দেখে সে খুশি। অন্য গাড়ি থেকে শাহেদ এর বোন লিমা এবং তার হাসবেন্ড তুহিন নেমে আসল। শাহেদ এবংলিমা লোপার বাবা এবং মা কে কুশলাদি জিজ্ঞেস করল। লোপার মা খুব ভদ্রতার সাথে তাদের ভিতরে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালেন। শাহেদ ড্রাইভার কে কি একটা ইশারা দিয়ে ভিতরের দিকে গেল। কিছুক্ষণ পর ড্রাইভার এক এক করে গিফট বক্স নিয়ে সাজাতে সাজাতে অনেক উচু করে ফেলেছে। তা দেখে লোপার বাবা একটু গম্ভীর হয়ে গেলেন এই ভেবে যে টাকার গরম দেখাচ্ছে। ঐদিকে লোপার মধ্যে অনেক টেনশন কাজ করছে এবং শাহেদ বুঝতে পেরে লোপার বাবাকে বললেন আপনার ভাইবোন , কাছের কিছু আত্মীয় স্বজনের জন্য কিছু গিফট মাত্র। এটাকে অন্যভাবে নিবেন না প্লিজ। আপনাদের না জিজ্ঞেস করে নিয়ে এসেছি এটার জন্য দুঃখিত। লোপার বাবা শাহেদের ভদ্রতা দেখে কিছুটা খুশি। তারপর লোপার ভাই মন খারাপ করে ফিসফিস করে লোপার কানে বলল আমার জন্য কিছুই আনেনি। তখন শাহেদ ব্র্যান্ড নিউ আইপ্যাড টা লোপার ভাইয়ের হাতে দিয়ে বলল পড়াশোনা কিন্তু ভাল করে করতে হবে। সাথে সাথেই লোপার বাবাকে বলল আংকেল ওকে আমি ছোট ভাই হিসেবে দিয়েছি প্লিজ কিছু মনে করবেন না।
আলাপ করতে করতে দুপুর গড়িয়ে এল। সবাই খাওয়ার টেবিলে বসে খাচ্ছে। শাহেদ বড় যারাই আছে সবাইকে একসাথে নিয়ে খাবে বলে রিকুয়েস্ট করেছে। টেবিলে এত লোক জায়গা হবে না বলে নিজেই ফ্লোরে বসে পড়ল আর বলল আজ সবাই নিচে বসে একসাথে খাব। অনেক নিষেধের পরেও সে মানছে না দেখে নিচেই সবার জন্য আয়োজন করা হল। শাহেদের কার্যকলাপ দেখে লোপার বাবা মনে মনে অনেক খুশি। খেয়ে লোপার বাবা শাহেদ কে তার বানানো একটি ব্লেজার গিফট করল। শাহেদ স্যুট পেয়ে সাথে সাথে নিজের ব্লেজার খুলে গিফট করা ব্লেজার পড়ে নিল এবং সে এটা খুলছে না
। সেটা দেখে লোপার বাবা খুশি হলেন। লোপার বাবা শাহেদকে তার টেইলার শপ দেখলেন। সেটা দেখে শাহেদ লোপার বাবাকে কিছু বিজনেস টিপস দিলেন এবং উনি চিন্তা করে দেখলেন আসলেই এই টিপস ফলো করলে অনেক ভালো হবে ব্যবসা।
বিকেলে লোপার বাবা আর শাহেদ বাঁধের উপর হাঁটছে । লোপার বাবা শাহেদ কে বলল আমি মানুষের সাথে কিছুক্ষণ কথা বললে বা চলাফেরা করলে তাদের ভিতরগত অনেক কিছু বুঝে যাই। তোমাকে দেখে আমার ভাল লেগেছে। শাহেদ অনেক খুশি হয়েছে শুনে। লোপার বাবা বলল তবে আমি তোমাদের সম্পর্ক টা মেনে নিতে পারছি না কারণ সমাজ এটা মেনে নিবে না। একটি দেশের টপ ৩ জন ইন্ডাস্ট্রিয়াল লোক আমার মত তাতির মেয়েকে পছন্দ করে এটা নিতান্তই হাস্যকর মনে করবে সবাই। হয় আমি মানছি তুমি অনেক কর্মঠ, অনেক ভদ্র, শিক্ষিত একজন ছেলে। এমনকি আমাদের সাথে তুমি এবং তোমার বোন যে এত ফ্রি সেটাও আমার কাছে খুব ভালো লাগছে কিন্তু আমি কেন জানি ভরসা পাচ্ছি না। শাহেদ বলল আংকেল আপনারা মনে করেন সব ধনীরাই বুঝি টাকা আর অর্থের মোহে খারাপ হয়। কিন্তু আসলে এই কথাটা ভুল। আমার বাবা মা এই শিক্ষা দিয়ে যায়নি। আর যদি আমি খারাপ পথেই থাকতাম তাহলে আমার বিজনেস এত গ্রো করত না। আর পরিবারের কথা বলবেন? আমি আমার বোনের পরিবারের জন্য নিজের জন্য প্রতিদিন কিছু সময় বাচিয়ে রাখি। আমার পূর্ন বিশ্বাস আছে আমি লোপাকে খুব ভালবাসব এবং তাকে ভাল রাখব। লোপাকে আমি এটাও বলেছি যে সে না চাইলে আমার কোম্পানি তে থাকার জন্য জোর করব না। বরং সে বিজনেস পছন্দ করে এবং সেক্ষেত্রে আমি তাকে বুদ্ধি দিয়ে সাহায্য করব নট আর্থিকভাবে। আমি লোপাকে ভালোবাসি এবং এটাই সত্যি।
লোপার বাবা কিছুটা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছেন। সন্ধ্যায় শাহেদ এবং তার পরিবার হাসিমুখে বিদায় নিয়ে চলে গেল।
ছুটি শেষে লোপা অফিস জয়েন করল। লাঞ্চ টাইমে লোপা শাহেদের সাথে দেখা করেনি দেখে শাহেদ ভেঙ্গে পড়ল এবং ধরে নিয়েছে লোপার বাবা রাজি হয়নি। লোপা শাহেদের এসিস্ট্যান্ট কে দিয়ে একটি চিরকুট পাঠিয়েছে এবং তাতে লিখা ছিল বিকেল চার টা বাজে শাহেদের বেলকনিতে যেখানে লোপা লুকিয়ে লাঞ্চ করত সেখানে দেখা করতে। শাহেদ ঠিক চার বাজে সেখানে গিয়ে দেখে লোপা অন্য দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে। শাহেদ কে দেখে লোপা এক লাফ দিয়ে শাহেদ কে জড়িয়ে ধরল এবং বলল বাবা তোমাকে অনেক পছন্দ করেছেন এবং আমাদের ভালবাসা মেনে নিয়েছেন।
আশা করছি আমার ভালোবাসার গল্প লোপার ভালোবাসার প্রাপ্তির শেষ পর্ব পড়ে আপনাদের ভাল লেগেছে । ধন্যবাদ সবাইকে।
ভাইয়া অনেক সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করলেন। শাহেদ আর লোপার ভালবাসার গল্প পড়ে ভালই লাগলো। কখন যে কার মন মানুষিকতা পরিবর্তন হয়ে যায় সেটা কেউ বলতে পারে না। সব টাকাওলারা অহংকারী হয় না। কিছু কিছু বিনয়ী মানুষও থাকে। যায়হোক গল্পটা অনেক ভাল লাগলো। ধন্যবাদ ভাইয়া।
লোপা ও শাহেদের মিষ্টি প্রেমের গল্প অনেক ভালো লেগেছে। আসলে শাহেদ অনেক ধনী পরিবারের লোক তাই হয়তো লোপার বাবা ভয় পেয়েছিল। যদি শাহেদ লোপার ভালোবাসা কে অস্বীকার করে। যাইহোক অবশেষে লোপা ও শাহেদের ভালোবাসায় পূর্ণতা পেল। এটাই অনেক। ধন্যবাদ আপনাকে।
যাক তাহলে আপনি অবশেষে লোপাশেদের মিল করিয়ে দিলেন। বেশ ভালো রেখেছেন ভাইয়া গল্পটি। সেই প্রথম থেকে আপনার গল্পটি পড়ে যাচ্ছি। গল্পটি পড়ে যা বুঝলাম আপনার লেখার হাত আসলে বেশ ভালো। আশা করি আমাদেরকে আগামীতে শাহেদ আর লোপার মত আরো নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প উপহার দিবেন।
বেশ ভালো লেগেছে গল্পটি পড়ে অবশেষে লোপা এবং শাহেদের ভালবাসার মিলন হবে।আমাদের হাতের সব আঙ্গুল যেমন কখনো সমান হয় না ঠিক তেমনি সব বড় লোকও একই ধরনের হয় না।কিছু কিছু টাকাওয়ালা লোক আছেন যাদের মধ্যে ভদ্রতা ,শিক্ষা এবং নম্রতা ও মানুষকে সম্মান করার মন মানসিকতা থাকে যা শাহেদের মধ্যে উপস্থিত লক্ষ্য করা গেছে।অবশেষে লোপার বাবা মেনে নিলেন তাদের ভালবাসাকে।অনেক সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করেছেন সত্যি পড়ে বেশ ভাল লেগেছে।
এরকম মিষ্টি প্রেমের গল্প গুলো পড়তে আমার কাছে ভীষণ ভালো লাগে। লোপা এবং শাহিদের অবশেষে মিল হয়েছে এটা জানেই কেমন জানি ভালো লাগছে। সব ভালবাসার যদি এভাবেই মিল হতো তাহলে কতই না ভালো হতো তাই না। আপনার এই গল্পটির প্রত্যেকটি পর্ব আমি পড়েছিলাম। যার কারণে একটু বেশি ভালো লেগেছে আমার কাছে। অবশেষে তাদের দুজনের ভালোবাসা পূর্ণতা পেল। শাহিদের মত এরকম ছেলে সবারই ঘরে দরকার। এরকম গল্প আরো দেখার অপেক্ষায় থাকবো।
এত সুন্দর ভাবে এই মিষ্টি গল্পটি শেষ হবে তা কখনো ভাবতেই পারিনি। লোপার এবং শাহেদের মিলন হয়েছে তা ভাবতেই কেমন জানি ভালো লাগছে আমার কাছে। প্রথমে ভেবেছিলাম লোপার বাবার হয়তো তাদের এই সম্পর্ক মেনে নেবে না কিন্তু ভেবেচিন্তে এই সম্পর্কটি মেনে নিয়েছে খুবই ভালো লেগেছে তা দেখে। এটা কিন্তু একেবারে সত্যিই সব বড়লোকরা একই হয় না। অন্যান্য বড়লোকের মতো শাহেদ এরকম না। অবশেষে তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেল। সম্পূর্ণ পোস্ট এত সুন্দর ভাবে লিখেছেন দেখে ভীষণ ভালো লেগেছে।