ঘটনা ।। কখন ভোর হবে? 10% beneficiary to @shy-fox
শুরুতে কিছু কথা বলে রাখি তাহলে আপনাদের বুঝতে সুবিধা হবে। আমি তখন ক্লাশ সেভেন কি এইটে পড়ি। আমাদের পাশের বাড়িতে আমার বংশীয় এক কাকা বস করতেন। তিনি আমার আব্বার থেকে বয়সে ছোট। আমার আব্বা এবং সেই কাকা দুজনের নাম খোকন। এই গল্পের নেপথ্যে আছে সেই নাম। খোকন কাকা আর আব্বা একসাথে পার্টনারশিপে ব্যবসা করতেন। কাকা আব্বাকে খুব সম্মান করতেন। আব্বা যা বলতেন তাই শুনতেন। কাকা আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। কিন্তু যাদের সাথে রাজনীতি করতেন তারা ভালো লোক ন। আব্বা উনাকে প্রায়ই বলতেন তাদের সংগ ত্যাগ করার জন্য। বলার পর কিছুদিন কম যান পরে আবার আব্বার চক্ষুর অন্তরালে আবার মিশেন। একদিন আব্বা বাড়ি থেকে বাজারে যাচ্ছিলেন তখন দেখেন খোকন কাকা বাজে কিছু লোকের সাথে তর্ক করছে এবং একপর্যায়ে হাতাহাতি চলছিল । আব্বা তাড়াতাড়ি সেখানে গিয়ে ঝামেলা মেটান এবং খোকন কাকাকে এক প্রকার উদ্ধার করেই নিয়ে আসেন। আব্বা দোকানে এসে উনাকে বললেন তুমি যদি এসব ঝামেলা শেষ ন কর আর বাজে মানুষের সাথে চলা ন বন্ধ কর তাহলে আমি তোমাকে নিয়ে ব্যবসা করতে পারব না। পরে খোকন কাকা আব্বাকে হাত জোড় করে বললেন এবারের মত আমাকে মাফ করেন আমি আর কখনও এইসব লোকের সাথে মিশব না আর যত ঝামেলা শেষ করে দিব।
সেদিন খোকন কাকা কে আব্বা দায়িত্ব দিয়ে ঢাকা চলে গেলেন ব্যবসার কাজে। ২ দিন ঢাকা থেকে ব্যবসার কাজ শেষ করে তারপর আসবেন। আমি বিকেলে শুনতে পেয়ে মহা খুশি এই ভেবে যে আব্বা আজ বাড়িতে নেই অনেক মজা হবে। পড়াশোনা করব ন। রাতে খেলব আর টিভি দেখব। যাই হোক সেদিন আসলেই আমি আমার ভাই আর বোন কোন পড়াশোনা করিনি। হাসি ঠাট্টা করে পড়ার সময় পার করে দিয়েছি। আম্মা অনেক বলেছেন পড়তে কিন্তু কে শোনে কার কথা । সেদিন আমাদের বাসায় গেস্ট হিসেবে আমার ফুপাতো বোন ছিল। আব্বা বাড়ি নেই এর থেকে আনন্দ আর কি হতে পারে। রাতে খাবার খেয়ে আমরা যথারীতি ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ দরজায় বিকট আওয়াজে আমার ঘুম ভেংগে গেল। উঠে দেখি আম্মা দাড়িয়ে আছে আর বলছেন কে দরজা এর জোরে ধাক্কা দিচ্ছে? বাহির থেকে কিছু লোক বললেন আমরা পুলিশের লোক।
ছোটবেলায় পুলিশ নাম শুনলেই আমি ভয় পেতাম। আর সে সময় পুলিশ আমার বাড়িতে তাও আবার জোরে দরজা ধাক্কা দিচ্ছে। আম্মা বললেন পুলিশের লোক এত রাতে এসেছেন কেন। পুলিশ বলছে এটা খোকন সাহেবের বাসা ন? আম্মা বললেন জী এটা উনার বাসা। পুলিশ বললেন উনার বাসার সার্চ ওয়ারেন্ট আছে আমাদের কাছে। আম্মা বললেন আমার হাসবেন্ড বাড়ি নেই। আর উনি ত এমন কিছু করার কথা না যে পুলিশ তাকে ধরার জন্য খুঁজবে। পুলিশ বললেন আপনার ভাবা দিয়ে ত হবে না। পুলিশের কাছে সার্চ ওয়ারেন্ট এর কাগজ আছে। আম্মা বললেন আমি জানি কোন বাসায় রাতে সার্চ করার নিয়ম নেই। পুলিশ বললেন ইমারজেন্সি তে স্পেশাল অর্ডার এ সার্চ করা যায়। আম্মা বললেন বাসায় মহিলারা ঘুমিয়ে আছে আপনারা সকালে আসুন। তখন আবার কারেন্ট ছিল না। এই অন্ধকারে পুলিশের দরাজ গলার কথা শুনে আমি ভয়ে আম্মার কাছে জড়সড় হয়ে দাড়িয়ে আছি। আমার বোন তখন আম্মার কোলে আর ভাই আমার থেকেও বেশি ভয় পাচ্ছে। আমার এক ফুফাত বোন ছিলেন ইন্টারমিডিয়েট এ পড়তেন তখন উনিও রীতিমত ভয়ে আম্মার কাছে এসে দাড়িয়ে আছেন। পুলিশ বলল আপনি যদি দরজা না খুলেন আমরা দরজা ভেঙ্গে ঢুকতে বাধ্য হব। আম্মা তারপরও বললেন যে দেশের কি নিয়ম কানুন নেই। আপনারা আইনের লোক হয়ে বে আইনি কথা কিভাবে বলেন? তারপর কিছুক্ষণ পর তারা এত জোরে দরজা ধাক্কা দিচ্ছিল আম্মা আমরা ভাই বোনেরা অনেক ভয় পাচ্ছি দেখে সাহস করে দরজা খুললেন। তারা প্রায় ৪-৫ জন ছিলেন এবং পুলিশের ড্রেসেই। তারা ঢুকেই সবার চোখে মুখে টর্চ লাইট দিয়ে দেখছেন কে কে আছে আর বললেন কেউ কারো জায়গা থেকে নড়বেন না। আমার চোখেও লাইটের আলো এসেছিল। আমরা তো ভয়ে একদম ভীত হয়ে আছি। আম্মা কি মনে করে কিছু বললেন না। পরে শুনেছিলাম তারা জোর করে ঢুকাতে আম্মা ভেবেছিলেন হয়ত আব্বার নামে ওয়ারেন্ট আছে এবং ঘরে মহিলারা আছে দেখে আম্মা আর বাড়াবাড়ি করেননি। পরে তারা কাওকে না পেয়ে আম্মা কে অনেক কটাক্ষ করে বললেন উনি যেখানেই পালিয়ে থাকুক আমরা খুঁজে বের করব। এই বলে ধড়মড় করে বেরিয়ে গেল সবাই। আমি রীতিমত ভয়ে কাদছিলাম। পরে সবাই বসে আছি একই জায়গাতে হারিকেন জ্বালিয়ে। তখন কয়টা বাজে খেয়াল নেই তবে আমরা অপেক্ষা করছিলাম কখন ভোর হবে। সেই রাত মনে হচ্ছিল অনেক লম্বা। সময় কাটতেই চাচ্ছিল না।
সকাল বেলায় আমি বাজারে গিয়ে দোকানে শরু কাকাকে (আমাদের দোকানের কেশিয়ার) সব বললাম। শরু কাকা আব্বার কাছে বাজারের ফোন দিয়ে খবর পাঠালেন। আব্বা দুপুর নাগাদ চলে এসেছেন। এসে আম্মার কাছ থেকে সব শুনে বাজারে গেলেন। বিকেলে আব্বা এসে আম্মা কে বললেন আমাদের পাশের বাড়ির খোকন এর নামে তার সাথে থাকা খারাপ লোকগুলো কেস করেছে। আর তাদের হাত অনেক লম্বা বলে রাতারাতি ওয়ারেন্ট বের করে ধরার জন্য থানা থেকে পুলিশ পাঠিয়েছে। আমার নামও খোকন জেনে তারা ভুলে আমার বাড়িতে রেট দিয়েছে। আব্বা বললেন আমিও পাল্টা কেস করেছি।
বেশ কিছুদিন পর আব্বা বললেন যে পুলিশ বাজে ব্যয়ভার করেছে তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে ভুল বাড়িতে রেট দেয়ার কারণে।
এই ছিল আমার জীবনে ঘটে যাওয়া এক বিভীষিকাময় রাতের ঘটনা। এখনো মনে হলে আমার আম্মা কে সেলুট জানাতে ইচ্ছে করে। কারণ সেদিন রাতে আম্মা অনেক সাহসের পরিচয় দিয়েছেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।
পুলিশের ব্যবহারের কারণে আরও বেশি ভয় পেয়েছিলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া আমার লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
বিপদের সময়ে আন্টি অনেক ধৈর্য্য ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। ছোট্ট একটা ভুলের কারনে একটি পরিবার কতটা অসহায় হয়ে পড়েছিল এটা ভেবেই অনেক খারাপ লাগছে। পুলিশ সদস্যদের ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে আসা উচিৎ ছিল আর বাড়িতে পুরুষ মানুষের অনুপস্থিতিতে সার্চ করা একদম ঠিক হয়নি। ভয় ও কষ্টের রাত গুলো কিছুতেই কাটতে চায় না। সবমিলিয়ে আপনারা খুবই খারাপ একটি সময় পার করেছেন ভাইয়া। আপনার ভয়ও কষ্টের মুহূর্ত গুলো শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই ভাইয়া।
সেই রাতে আমরা এতটাই ভয় পেয়েছিলাম সবাই অপেক্ষা করছিলাম কখন সকাল হবে। কারণ এত রাতে কাউকে জানানোর মত অবস্থা ছিলনা। ধন্যবাদ আপু মন্তব্য করার জন্য।
সত্যি ভাইয়া আগে পুলিশের কথা শুনলে যেকেউ ভয় পেত। বিশেষ করে আমি ও অনেক ভয় পেতাম।যেহেতু বাসায় আপনার বাবা ছিল না রাত অনেক আপনারা ছোট। শুধু আপনার মা একা ছিল, তাই ভয় লাগা স্বাভাবিক। পুলিশ আপনার আম্মার সাথে যে ব্যবহার করেছে, হয়তো আপনার আব্বাকে পেলে ধরে নিয়ে যেত। যাই হোক ভুল বশত এরকম করেছে। তেমন কিছু হয়নি জেনে অনেক ভালো লাগল। ধন্যবাদ
ঠিক বলেছেন আপু সেদিন আব্বাকে পেলে খোকন কাকা মনে করে ধরে নিয়ে যেত। ধন্যবাদ আপু মন্তব্য করার জন্য।
এরকম ঘটনার সাক্ষী আমি হয়েছি একবার তাই ভয়াবহতা আন্দাজ করতে পারছি।মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়,এমন পরিস্থিতি তে।তার উপর রাত হলে তো কথাই নেই।আন্টি অনেক সাহসী।মাথা ঠান্ডা করে সুন্দরভাবে পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছেন।(ভাইয়া বানান গুলো আরেকবার যদি দেখতেন)।আপনার বাস্তব অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আম্মার সাহস দেখেই আমরা ভয় কম পেয়েছিলাম । ধন্যবাদ ভাইয়া ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য।
একদম ঠিক হয়েছে৷ ওই পুলিশ কে চাকরী থেকে স্থায়ী বহিস্কার করা দরকার ছিলো। একে তো সবাই বাড়িতে মহিলারা ছিলো। তার উপর পুলিশ ভুল বাড়িতে এসে চিল্লা চিল্লি। ভাগ্য ভালো আপনার বাবা সে রাতে বাসায় ছিলোনা। ভুল করে নিয়ে গেলেও দেখতেন কতগুলা টাকা খাইতো।।
আমার এখন মনে হলে তাই মনে হয়, সেই পুলিশ অফিসারের চাকরি চলে যাওয়ার দরকার ছিল। ধন্যবাদ।
সত্যিই অনেক ভয়ের একটি রাত ছিল। ভাগ্য ভালো আপনার বাবা বাড়িতে ছিলেন না। আর আপনার আম্মু মাথা ঠান্ডা রেখে সবকিছু মোকাবেলা করলেন। আসলে এরকম সময়ে ভেঙে না পড়ে সুন্দরভাবে মোকাবেলা করাটাই ভালো। আর সত্যি এরকম ভয়ংকর রাত অপেক্ষা করলে যেন কাটতে চায় না।
হ্যাঁ সেদিন আম্মা মাথা ঠান্ডা রেখে সিচুয়েশনটা হ্যান্ডেল করেছিল বলে আমাদের ভয়ের মাত্রা অনেকটাই কম ছিল। ধন্যবাদ আপু।
পোস্টটি পড়ে মনে হচ্ছে সেই রাতটি আপনার জন্য ছিল অত্যন্ত ভয়ংকর। পুলিশেরা ওদের তো কোন কাজ নেই একটু খোঁজখবর নি তারপর আপনাদের বাড়িতে যাওয়া উচিত ছিল। ওই যে বলে না নামে নামে জমি টানে। সেদিন আপনার অবস্থা হয়েছিল এরকম।অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝখানে শেয়ার করেছেন।
খোঁজখবর নিয়ে আসলে হয়ত আমাদের এই ভোগান্তি হত না। ধন্যবাদ আপু ।
আমার শুরু থেকেই মনে হচ্ছিলো যে হয় এটা ভুল বোঝাবুঝি অথবা তারা পুলিশের লোকই নন। আমাদের বাড়ির পাশে পর পর দুটো ছেলৈর ডাকনাম পল্টু। সেম জিনিস পুলিশ এসে করেছে রাত্রিবেলা। প্রথমে তো আমাদের বাড়িতেই এসেছিলো। অত রাতে পুলিশ দেখে আমি শেষ। পরে জানলা খুলতেই বলে, "পল্টুর বাড়ি এটা?"আমরা তারপর দেখিয়ে দিলাম পল্টুদের বাড়ি।
এগুলো ভুল বোঝাবুঝির কারণে দুর্বল চিত্তের লোকেজনের হার্টফেলও হতে পারে।
ছোট একটি ভুলের কারণে অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারত। ধন্যবাদ দিদি।