ডাক্তার নিয়ে ভোগান্তি অতঃপর স্বস্তির নিঃশ্বাস।। শেষ পর্ব।। 10% beneficiary to @shy-fox
ফাইল জমা দিয়ে বসে আছি আর টেনশন করছি। ভাবছি কখন আমাদের ডাক আসবে। দেখলাম জমা দেয়া ফাইলগুলো নিয়ে একজন নার্স পেশেন্টের নাম ধরে ডাকছে আর একটি রুমে নিয়ে যাচ্ছে। খেয়াল করলাম রুমটি হচ্ছে পেশেন্টের ওজন, ব্লাড প্রেশার, হার্ট বিট, হাইট মাপার (ভাইটালস) জন্য। সবার শেষে আমার মেয়ের ডাক পরল।আমি তখন কিছুটা স্বস্তি পেলাম। গিয়ে তার ভাইটালস দিয়ে তারপর আবার অপেক্ষা করতে বলা হল। ভাইটালস নেয়ার সময় মেয়েকে এক প্রকার জোরই করতে হয়েছে।
কিছুক্ষণ পর আবার ডাক আসল এবং ফাইল হাতে দিয়ে বলল চেম্বারের সামনে গিয়ে অপেক্ষা করুন। সেখানে গিয়েও বসে রইলাম প্রায় ২০ মিনিট। তারপর একজন এসে ফাইল নিয়ে গেল। আবার অপেক্ষা। আরও প্রায় ২০ মিনিট পর আমাদের ডাকা হল। ভাবলাম যাক তাহলে খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে ডাক্তার দেখানো। আমি আমার ওয়াইফ আর মেয়ে ঢুকতে যাচ্ছিলাম তখনি একজন এসে বললেন পেশেন্টএর সাথে একজন যাবেন। কি আর করা আমি মেয়েকে নিয়ে গেলাম। আমার হাতে ফাইল ধরিয়ে দিয়ে একটি চেয়ারে বসিয়ে বলল অপেক্ষা করুন। প্রায় ৫ মিনিট পর আবার ডাক এল। রুমে ঢুকে দেখি ম্যাডাম নেই কিন্তু একজন হ্যান্ডসাম ভদ্রলোক বসে আছেন। উনি বসতে বলে এক এক করে আমার মেয়ের আগের হিস্ট্রি জিজ্ঞেস করা শুরু করলেন। আমি বললাম ম্যাডাম দেখবেন না? উনি বললেন আমিও একজন ডাক্তার। আমি পেশেন্টের হিস্ট্রি নেব শুধু। তারপর ম্যাডাম দেখবেন। মনে মনে একটু রাগ হলেও সব বললাম। তারপর উনি কিছু লিখার পর বললেন বাহিরে গিয়ে অপেক্ষা করুন ম্যাডাম ডাকবেন। চিন্তা করলাম এত ফরমালিটিস ত দরকার ছিল না।
যাই হোক মেয়েকে নিয়ে আবার বাহিরে এসে অপেক্ষা করলাম। প্রায় ১ ঘন্টা ৪০ মিনিট পর আবার আমাদের ডাকল। এদিকে আমার মেয়ে বিরক্ত করা শুরু করেছে। যাই হোক আবার মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে গেলাম। গিয়ে ম্যাডাম দেখে, কিছু প্রশ্ন করে বলে দিলেন টেস্ট করে তারপর ফাইনাল ডিসিশন দিব। আবার বাহিরে চলে এলাম। এসে ক্যাশ কাউন্টারে টাকা জমা দিয়ে দিলাম এবং রিসিপ্ট নিয়ে চলে এলাম। সব মিলিয়ে ৬০০০ টাকা জমা দিলাম। বিলের কপি নিয়ে এসে আবার ডাক্তারের এসিস্ট্যান্টের কাছে দিলাম। তারপর তারা মেয়েকে ঘুমানোর জন্য একটি সিরাপ দিয়েছে, কারন টেস্ট ঘুমের মধ্যে করতে হয়। আর এই টেস্ট ম্যাডাম নিজেই করেন।
মেয়ে ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়েছে। প্রায় ৪০ মিনিট পার হয়ে গেল টেস্টের জন্য ডাকে না। গিয়ে নক দিতেই বললেন কিছুক্ষণ পরই ডাকা হবে। আরো প্রায় ৩০ মিনিট পর ডাকল টেস্টের জন্য। এই টেস্ট আগেও করিয়েছি। এটা আমি একা পারব না তাই রিকোয়েস্ট করে ওয়াইফ কেও সাথে নিলাম। ডাক্তারের চেম্বার কিছুটা অন্ধকার। ফাকে চেম্বারের একটি ছবি তোলে নিলাম। টেস্ট করানোর সময় মেয়ে একটু ঝামেলা করেছে কিন্তু ভালভাবেই করানো গিয়েছে। ডাক্তার বললেন রিপোর্ট ১ ঘন্টার মধ্যে পাবেন। নিয়ে এসে দেখা করুন। তারপর আবার বের হয়ে গিয়ে ওয়েটিং রুমে বসে রইলাম।
হঠাৎ ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি প্রায় ১২ঃ০০ টা বাজে। খেয়ালই নেই কেউ কিছু খাইনি। যেহেতু টেস্টের রেজাল্ট দিবে ১ ঘন্টা পর সেহেতু কিছু খেয়ে আসা যায়। তাড়াতাড়ি তাদের নিয়ে চলে গেলাম ক্যাফেটেরিয়ায়। সেখানে গিয়ে কিছু খেতে ইচ্ছে করল না দাম দেখে। এক বার্গার এর দাম ১৮০ টাকা। প্রচন্ড ক্লান্ত ছিলাম আর মাথা ব্যথাও ছিল। তাই আমরা শুধু কফি নিলাম। তবে ক্যাফেটেরিয়ার পরিবেশ আমার খুব ভাল লেগেছে। কফি খেয়ে আবার উপরে এসে খুজ নিয়ে দেখলাম রিপোর্ট রেডি আছে। রিপোর্ট নিয়ে সোজা চিলে গেলাম ডাক্তারের চেম্বারে। এবার আর বেগ পোহাতে হয়নি যেহেতু আমার সিরিয়াল শেষের দিকের ছিল।
ম্যাডাম রিপোর্ট দেখে বললেন আপনার মেয়েকে নিয়ে আর আসতে হবে না, সে এখন সম্পুর্ন ভাল আছে, আপনাদের আর ফলোআপে আসতে হবে না। আমি ম্যাডামের সামনেই হাসি দিয়ে ফেললাম আর আমার চোখের এক কোনে কিছুটা পানিও জমেছিল। আসলে বাবাদের কান্নাগুলো এমনই হয়। আমার আর তখন কোন ক্লান্তি লাগছিল না। বাহিরে এসে মেয়ের মা শুনে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেদেই দিয়েছে। অতঃপর আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। আমি গত এক মাসের সব পরিশ্রম ভুলে গেলাম। তারপর আনন্দের হাসি নিয়ে বাসায় ফিরলাম। সবাই আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন।
খুশিতে আমি শরীফ ভাইকে বলে আসতেই ভুলে গিয়েছিলাম। পরে অবশ্য উনাকে ফোন দিয়ে বলেছি।
ডিভাইস | স্যামসাং |
---|---|
মডেল | এ ৫০ এস |
ক্রেডিট | @miratek |
লোকেশন | (https://what3words.com/nags.resurgent.shelter) |
যারা আমার কথাগুলো ধৈর্য নিয়ে পড়েছেন তাদের অনেক ধন্যবাদ।
আপনার মেয়ে সুস্থ্য শুনে বেশ ভাল লাগল। বাবাদের আনন্দ ও কস্ট এমনই হয়। ভাল থাকুন আপনার পরিবার নিয়ে । অনেক অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য।
দোয়া করবেন আমাদের জন্য। আপনিও পরিবার নিয়ে ভাল থাকুন। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
ভাই, আপনার মেয়ে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ আছে কথাটি জানতে পেরে, আপনি গত একমাস যে পরিশ্রম করেছেন, তা মুহূর্তের মধ্যেই ভুলে গেছেন। সন্তান যখন অসুস্থ হয় তখন বাবা-মায়ের যে কি দুশ্চিন্তা হয়, তা আসলে বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আর যখন সন্তান সুস্থ থাকে তখন বাবা-মায়ের মুখে হাসিও থাকে। ভাই আপনার মেয়ের জন্য অনেক অনেক দোয়া করছি সে যেন সবসময় সুস্থ ও সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠে। অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনার পরিবারের জন্য।
জী ভাইয়া এখন সম্পূর্ণ সুস্থ তাই আমরাও অনেক খুশি। অনেকদিন যাবত ডাক্তার দেখাচ্ছিলাম এবং বেশ চিন্তিত ছিলাম। ধন্যবাদ আপনাকে গঠনমুলক মন্তব্য করার জন্য।
অসুস্থতা টা তার জন্মের পর কিছুটা খারাপ ছিল কিন্তু লাস্ট ২ টা ফলোআপের সময় ডাক্তার ভাল কিছুর আভাস দিয়েছিল। এইবার আমরাও আশাবাদী ছিলাম ভাল একটি রেজাল্ট পাব। আল্লাহর রহমতে ডাক্তার ভাল বলেছে। আপনার আন্তরিকতার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
সব ভাল যার শেষ ভাল।ভাতিজি যে সুস্থ হয়ে উঠেছে এটাই অনেক বড় ভাই।এগুলো ফর্মালিটিজ প্রয়োজন আছে ভাই।আমি রিসেন্টলি একটি সিরিজ দেখতেছি ডাক্তার দের নিয়ে,সেখানে ব্যাপারটি বিস্তারিত দেখালাম।তখনই বুঝেছি কেন টেস্ট আর ফর্মালিটি দরকার।ভাতিজির জন্য অনেক দোয়া রইল।
আমার মেয়ে এখন একদম সুস্থ। ফরমালিটিজ থাকা ভাল কিন্তু সময়ের মুল্য আছে সেটাও ভাবতে হবে। ধন্যবাদ ভাইয়া।