সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব || 10% beneficiary to @shy-fox.
হ্যালো আমার বাংলাব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
প্রতিদিনের মত স্বাভাবিক নিয়মেই আমি সকালবেলা বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম। আজকে শহর ছেড়ে খুব বেশি দূরে যাওয়ার ইচ্ছা নেই। তাই শহরের কাছেই ধরলা নদীর ওপারে একটি মার্কেটে ঘুরে আসার জন্য সিদ্ধান্ত নিলাম। ঠিক সেই চিন্তা করেই শহর ছেড়ে যখন ওই মার্কেটের দিকে রওনা দিলাম। তখন ঐ মার্কেটের কাছাকাছি গিয়ে এক বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হলাম। বন্যা শুরু হতে না হতেই এমন খারাপ অবস্থা হবে আমার ধারণা ছিল না। তাই অন্যদিনের মত আমি বাইক নিয়ে এই দিকে চলে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখলাম এই ভয়ানক পরিস্থিতি।
নদীর খুব কাছেই এই রাস্তাটায় যে সরু ব্রিজ ছিল সেটা ভেঙে নতুন ব্রিজ তৈরির কাজ চলছিল। ব্রিজের কাজ শুরু হয়েছিল দীর্ঘ চার বছর আগে। আজকের এই বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া এটাই সব চেয়ে বড় কারন। আজকে এখানে এই খারাপ অবস্থার সম্মুখীন হওয়া লাগতোনা যদি ব্রিজের কাজ যথা সময়ে সম্পন্ন হতো। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে আমার মত এখানকার লাখো মানুষের এই পরিস্থিতি। আমাদের জেলা সদরের অর্ধেকের বেশি ইউনিয়ন এই ধরলা নদীর ওপারে। আর তাই স্বাভাবিকভাবেই শহরের চেয়ে এদিকেই লোক সংখ্যা বেশি। প্রতিবছর বন্যার সময় দীর্ঘদিন এই জায়গাটায় খেয়া নৌকায় পারাপার হতে হয়।
এই হচ্ছে সেই ব্রিজের অবস্থা দীর্ঘ চার বছর ধরে কাজ চলছে তো চলছেই। মাঝখানে অবশ্য একটা দুর্ঘটনার কথা শুনেছিলাম সেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিকের মারা যাওয়ার খবর। অথচ যে ব্রিজের কাজ এক বছরেই শেষ করা সম্ভব। সেটা করতেই চারটি বছর চলে গেল এখনো কত কাজ বাকি আছে। কাজটি সঠিক সময়ে সম্পন্ন হলে অনেক লোকের যাতায়াত সহ ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের গতি সঞ্চার হতো।
উজানের ঢল ও লাগাতার বৃষ্টির কারণে নদীর পানি যখন বৃদ্ধি পায় তখন ছোটখাটো খাল-বিলে প্রবল বেগে পানি ঢুকতে থাকে। বন্যার সেই নতুন পানির স্রোতধারা দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। নদীর স্রোত হয়তো ফটোগ্রাফিতে ভালোভাবে বুঝা যাচ্ছে না কিন্তু সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে আমার খুব ভালো লেগেছিলো।
আমি বাইক একটা দোকানের সামনে রেখে খেয়ার নৌকা গুলোর দিকে যাচ্ছিলাম। যত সামনের দিকে এগোচ্ছি আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। এতোটুকু খেয়া পারাপারের জন্য এত নৌকার সমহার দেখে। খেয়াটা পার হতে দুই থেকে তিন মিনিট লাগে অথচ নৌকার সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ টা হবে। হবেই না বা কেন এদিকে লোকসংখ্যার অনেক যাতায়াত। তাই বেশি লোক দেখে আমি বাইক নিয়ে পার হওয়ার সাহস করলাম না। এমনিতেই আমি নিজে সাঁতার জানিনা যদি বাইক নিয়ে পড়ে যায় সেই ভয়ে।
নৌকায় উঠার কিছুক্ষণ পরেই পাশ দিয়ে আরেকটি নৌকা চলে গেল। অনেকদিন পর নৌকায় পার হতে ভালই লাগছিল কিন্তু সামনের দিকে তাকাতেই লক্ষ্য করলাম নৌকা থেকে লোকজন নামছে। এত অল্প সময়ের জন্য উঠে মন ভরলো না, মনে মনে ভাবতে লাগলাম আরো একটু থাকতে পারলে ভালো লাগতো। কি আর করা নৌকা ভ্রমনের জন্য তো আসেনি এসেছি কাজের জন্য তাই নামতেই হলো।
আমি কিছুক্ষণ আগে যে ভয়টি পাচ্ছিলাম এদিকে নামার পর সে ঘটনাটি ঘটে গেল। আমি যে ভয়ে আমার বাইকটা ওইপারে রেখে এসেছি আমার চোখের সামনে এক ভাই বাইকসহ নদীতে পড়ে গেল। আমি নৌকা থেকে নেমে যখন দাঁড়ালাম তার কিছুক্ষণ পরে একজন লোক লাফ দিয়ে নৌকা থেকে নেমে গেল। আর অমনি নৌকা দুলতে দুলতে বাইক সহ লোকটি নদীতে পড়ে গেল। কয়েকজন লোক ধরে বাইকটি টেনে উপরে উঠালো কিন্তু লোকটি ঠিকই নাকানি চুবানি খেয়েছে।
ডিভাইস | স্যামসাং গ্যালাক্সি A-10 |
---|---|
ফটো | @mayedul |
লোকেশন | w3w location |
যেহেতু বন্যার পানি ঢুকে গেছে তাই আশেপাশের জমিগুলোতে তড়িঘড়ি করে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এই অঞ্চলটা নদীর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার কারণে নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এলাকাগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। ফটোগ্রাফিতে যে বাড়ি দেখতে পারছেন প্রতিবছর বন্যায় এই বাড়ির উঠানে নৌকা নিয়ে ঢুকতে হয়। গতবছর দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কারণে এই বাড়ির ঘরের ভিতরে পানি ঢুকে পড়েছিল। আর আমার ফটোগ্রাফির মধ্যে দূরে যে মেশিনঘর দেখা যাচ্ছে সেটি একদম বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল।
সব মিলিয়ে আজকে এই অঞ্চলে এসে ভোগান্তির সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা ভালো লাগাও কাজ করেছে। অনেকদিন পর স্বল্প পরিসরে নৌকা ভ্রমন হলো। তবে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মানুষের এই ধরনের প্রশান্তি কোনোভাবেই কাম্য নয়। অথচ কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকি থাকলে এই ব্রিজটি অনেক আগে সম্পন্ন হয়ে যেত। যার ফলে এ অঞ্চলের মানুষ গুলো নির্বিঘ্নে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে দিতে পারতেন। আমার ফটোগ্রাফি গুলো আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন আশা করছি। আর ভুল ত্রুটি থাকলে মার্জনা করবেন।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
এই আর নতুন কি ভাইয়া,আমাদের দেশে।এক বছরের কাজ দশ বছরও শেষ হয় না।আর সকল কাজ গুলো শুরু হয় দেখবেন বৃষ্টি কিংবা বর্ষাকালে।মানুষদের ভোগান্তির জন্য।ভালে ছিলো।ধন্যবাদ
কাজের শুরু আছে কিন্তু শেষ যে কবে হবে তার কোন সঠিক সময় খুঁজে পাইনা।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
সত্যি কথা বলতে ভাই বাংলাদেশের এই রকম সমস্যা রয়েছে হাজারো। এগুলো দেখার মত কেউ নাই আসলে। তবে কিছু বললেই যেন বিপদ আর আপনার প্রতি চলে আসে। আমাদের এলাকায় ঐরকম একটা ব্রিজের কাজ চলতেছে। এক বছরের শেষ হওয়ার কথা ছিল প্রায় দুই বছর পার হয়ে গেছে এখনো কাজ বাকি রয়েছে। খুব সুন্দর একটি বিষয় আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন ভাই। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
কাজ হচ্ছে ঠিক আছে কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে সাধারণ জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে ।
আসলে বলার ভাষা নেই একদম। পুরো দেশে এই একই অবস্থা। যার ফল ভোগ করতে হয় আমাদের মত সাধারণ মানুষদের। বাইক নিয়ে যিনি পরে গিয়েছিলেন তার কথা ভেবে সত্যি খারাপ লাগলো। আর আমিও আপনার মত সাঁতার কাটতে পারি না ভাই। তাই নদী দেখলেই ভয় পাই। খুব সুন্দর লিখেছেন পারিপার্শ্বিক অবস্থা নিয়ে। ভালো লাগলো পড়তে বেশ।
সমস্যা তো এখানেই ভালো মন্দ যাই হোক না কেন ফলাফল ভোগ করতে হয় আমাদের মত সাধারন জনগনের।
বাংলাদেশেই এগুলো সম্ভব। সব চোরের দল। কাজ করার নাম নেই। ভাগাভাগি করে সব খেয়ে ফেলে। মানুষের কত ভুগান্তি এগুলো তাদের দেখার টাইম নাই। খারাপ লাগে এসব দেখলে। ভাল লিখেছেন আপনি
কাজ না করে খাওয়ার উপায় নাই
কিন্তু এই যে ভোগান্তিরও শেষ নেই
আপনি বাস্তব অভিজ্ঞতা আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। আপনার পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। আমাদের সব জায়গায় অব্যবস্থাপনা। কোন কাজেই সুষ্ঠু সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না। এত অসাধারন পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
ধন্যবাদ ভাই আমার পোস্টে এসে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
আসলে ভাই এগুলো দেখার বা বলার কেউ নাই। একটা ছোট ব্রীজ তৈরি করতে চার বছর ভাবা যায় বলেন। এবং এটাও বেশ বিশৃঙ্খল না হলে এইটুকু জায়গাই সত্যি এতো খেয়া বা নৌকা লাগে।
অনেকগুলো নৌকা হওয়ার যৌক্তিকতা আছে নৌকাগুলো সব ছোট। তাই ৫-১০ জনের বেশি লোক উঠানো সম্ভব নয়। আর এই অঞ্চলে সদর থানার প্রায় অর্ধেক লোক বসবাস করে।
আপনি ঠিকই বলেছেন ভাইয়া সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণেই আজকে আমাদের বাংলাদেশের এত অধঃপতন। যে ব্রিজ এক বছর হওয়ার কথা সেখানে চারটি বছর চলে গেল। ঠিকাদার যদি মারা যায় কিন্তু ঠিকাদারের তো অভাব নেই। চাইলে এক বছরের জায়গায় দুই বছরের ঠিক করতে পারে, কিন্তু মানুষের ভোগান্তি দেখে খুবই খারাপ লাগছে। তবে আপনার ধরলা নদীর স্রোত দেখতে হেব্বি লাগছিল। ফটোগ্রাফি গুলো ছিল অসাধারণ। এরকম জায়গাতে ঘুরতে বেশি ভালো লাগে। আমাদের সাথে এত সুন্দর ফটোগ্রাফি গুলো শেয়ার করার জন্য এবং বিস্তারিত গল্প আকারে লেখার জন্য, আপনার প্রতি রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা।
মানুষের ভোগান্তিটাই সবচেয়ে বড় সমস্যার কথা অথচ ব্রিজটা ভালো থাকলে নির্বিঘ্নে খেয়া-পারাপার ছাড়াই চলাচল করতে পারত।
এই অব্যবস্থাপনা গুলো পুরো দেশ জুড়ে বিদ্যমান। এগুলো মেরামত বা তৈরি করার বাজেট উপর মহল থেকে আসলেও সঠিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সুষ্ঠু ভাবে কাজ সম্পন্ন করার মন মানসিকতা কারোরই নেই। আর আমাদের শুধু আফসোসই করতে হয়।
আপনার মত আমিও সাঁতার পারিনা। তবে আমরা যারা সাঁতার পারিনা আমাদের জন্য সাঁতার শিখে নেওয়া খুবই দরকার।
যে ব্রিজের কাজ এক বছরে সম্পন্ন হওয়ার কথা সেই ব্রিজের কাজ ৪ বছর থেকে চলছে। যেমন নদীর পানি বৃদ্ধি হতে না হতেই সবাইকে খেয়া পারাপার হতে হচ্ছে।