অন্যরকম অভিজ্ঞতা || 10% beneficiary to @shy-fox.
হ্যালো আমার বাংলাব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
ঈদের পরে ঘটনাচক্রে আমাকে কয়েক দিনের জন্য প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে থাকতে হয়েছিল। গ্রাম হলেও গ্রামগুলো আর আগের মত নেই সেখানেও এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। এখন গ্রামের প্রত্যেকটা বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ লক্ষ্য করা যায়। আর আমি যেখানে ছিলাম সেখানে কয়েকদিন থাকতে আমার কাজ করতে কোন অসুবিধা হয়নি কারণ সে বাড়িতে ওয়াইফাই সংযোগ ছিল। যাইহোক এবার গ্রামে ঘুরতে গিয়ে আমার বেশ কিছু মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে একজন কৃষকের জমি থেকে ধান কেটে নিয়ে আসার পর মধ্যরাত অবধি চাল তৈরি করার প্রক্রিয়া।
আমাদের দেশের কৃষকেরা সেই চারা রোপণ করা থেকে শুরু করে ধান কাটা ও মাড়াই পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে। কিন্তু তাদের এই পরিশ্রম গুলো আমাদের কখনোই দৃষ্টিগোচরে আসে না। সেটা একমাত্র যারা কাছে থেকে দেখেছে শুধু তারাই উপলব্ধি করতে পারবে কৃষকের সেই না-বলা কষ্টের কথা। আজকের আর সেদিকে যাব না চারা রোপণ করা আগেই হয়ে গিয়েছিল। এখন ধান কাটা ও মাড়াই চলছে তাই এসব নিয়ে কথা বলাই শ্রেয়। ধান কাটা ও মাড়াই এর মধ্যেই তাদের কর্ম যজ্ঞের সীমাবদ্ধতা নয়। ধান কাটা ও মাড়াই সম্পন্ন হওয়ার পর মধ্যরাত অবধি তাদের চাউল তৈরি করার প্রক্রিয়া চলে।
ওই দিনটাতে আমি সকাল থেকে শুরু করে মধ্যরাত অবধি তাদের সমস্ত কার্যক্রম স্বচক্ষে দেখেছি। এটা বুঝতে পারলাম চারা রোপণ করা থেকে শুরু করে চাল তৈরি পর্যন্ত তাদেরকে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে লক্ষ করলাম পুকুর পাড়ে ধান কাটার আয়োজন নিয়ে কথা চলছে। তখন থেকেই সিদ্ধান্ত নিলাম আজকে সারাদিন এদের সঙ্গে থাকবো সমস্ত কাজ দেখার জন্য। কিছুক্ষণ পরেই আমি পুকুর পাড়ে বসে থাকতেই কৃষকরা ধান কেটে নিয়ে আসা শুরু করলো।
কৃষকরা ধান কেটে কাঁধে করে নিয়ে সেই ধান বাড়ির উঠানে ফেলতে লাগলো। দুপুর নাগাদ সমস্ত ধান উঠানে এসে জমা হল। তারা প্রখর রোদের মধ্যে এত পরিশ্রম করে ধান কেটে নিয়ে আসছে কিন্তু তাদের চোখে-মুখে আমি কোন ক্লান্তির ছাপ দেখতে পেলাম না। আসলে আমার কাছেও গ্রামের এই দৃশ্য গুলো দেখতে খুব ভালো লাগে। ওদের মনে একটা প্রশান্তি কাজ করে এই ভেবে যে তাদের নিজ হাতে ফলানো ফসলগুলো ঘরে তুলতে পেরেছে। অনেক সময় বন্যা খরা অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকদের কষ্টের ফসল নষ্ট হয়ে যায় তখন তাদের দুঃখের সীমা থাকে না।
ওই যে বলেছিলাম গ্রামেও এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। আমি ছোটবেলায় যখন গ্রামে যেতাম তখন দেখতাম দাদা বাড়িতে কাঠের শক্ত গুরির উপর পিটিয়ে ধান মাড়াই করতো। তারপর আবার উঠানের মধ্যে সমস্ত উঠানে খর গুলো বিছানোর পর গরু দিয়ে ঘুরিয়ে মাড়াই সম্পন্ন করত। আর এখন কত সহজেই মেশিনের সাহায্যে একত্রে অনেকগুলো লোক দাঁড়িয়ে ধান মাড়াই করছে। এই দৃশ্য দেখে অনেক ভালো লাগলো।
ধান মাড়াই করতে সহযোগিতা করার জন্য কয়েকজন মহিলা কর্মী নেয়া হয়েছিল। তাদের কাজ করা দেখে আমার মেয়ে আনন্দে ওদের সঙ্গে কাজে লেগে পড়েছিল। প্রথমে আমি দেখে কিছুটা রাগ করার পর আবার মেনে নিয়েছি। কারণ আমি ওর আনন্দটুকু নষ্ট করতে চাইনি। শহরে থেকে ওরা কখনো এই দৃশ্যগুলি দেখতে পায়না। এটা আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এটার সঙ্গে পরিচিত হওয়া উচিত।
এশার নামাজ পড়ে রাতে খাওয়া দাওয়া করে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। তারপর গভীর রাতে বাইরে কিছু শব্দে হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে গেল। আমি ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় এসে দেখলাম এই দৃশ্য। আমাকে অবাক করে দিয়ে তারা গভীর রাত অব্দি ধান থেকে চাল করার জন্য বাইরে আগুন জ্বালিয়ে ধান সিদ্ধ করতে বসিয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হল এই মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করে সিদ্ধ করা ধানগুলো কাল সকাল বেলা আবার রোদে দেওয়ার জন্য কাজে লেগে পরবে। কি পরিমান প্রাণশক্তি থাকলে এটা করা সম্ভব আমি তাই ভাবতে লাগলাম। আর ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম কারণ এটা দেখার জন্য আমাকেও সকালে উঠতে হবে।
ডিভাইস | স্যামসাং গ্যালাক্সি A-10 |
---|---|
ফটো | @mayedul |
লোকেশন | w3w location |
আমি সকালবেলা ঘুম থেকে উঠার আগেই আমার মেয়ে উঠে মহিলা গুলোর সঙ্গে কাজ করছে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। আসলে কাজ করার উদ্দেশ্য না সে উঠেছে আমার মতই দেখার জন্য। আর সাথে মনের আনন্দে মাথায় করে ধান নিয়ে যাচ্ছে উঠানে। যাইহোক এইভাবেই সিদ্ধ করা ধান গুলো রোদে শুকিয়ে চাল করার জন্য প্রস্তুত করে তুলবে। আর তাই প্রতিবছর এই কৃষক ভাইদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমাদের দেশের খাদ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ হয়।
সব মিলিয়ে আমার এই অভিজ্ঞতাটুকু আমার নিজের কাছে খুব ভালো লেগেছে। আমি কখনো এত কাছে থেকে কৃষকদের এই ধান মাড়াই করা থেকে শুরু করে চাল তৈরি করার প্রক্রিয়াগুলো দেখিনি। আজ এটা সম্পূর্ণ দেখতে পেরে আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। আর এই সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতাটুকু আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে পেরে মনে মনে একটু শান্তি পাচ্ছি। আমার আজকের পোস্টটি আপনাদের কেমন লাগলো মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন আশা করছি।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
আমার নিজের গ্রামে গিয়ে আমি এই দৃশ্যগুলো অনেক দেখেছি। আসলে আমি মনে করি যে কৃষকের কষ্ট অনেক হয় এই ধানগুলো মাড়াই করতে। তবে আদৌ কি তার সঠিক মর্যাদা পায় কিনা আমার সঠিক জানা নেই। আসলে অনেকের কাছে এই দৃশ্যগুলো অনেক ভালো লাগলে কৃষকের যে কতটা কষ্ট হয় তারাই একমাত্র বোঝে। ভালো লাগলো ভাই আপনার পোস্টটি। গ্রামের কৃষকের সুন্দর কিছু মুহূর্ত আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে এরকম সুন্দর কিছু মুহূর্তে আমাদের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
এখন কৃষকেরা এত পরিশ্রম করে ফসল ফলিয়ে নিশ্চিত ভাবেই সেই মর্যাদা ও মূল্যায়ন তারা পায় না। সে কারণে অনেকেই ধান চাষের বদলে অন্য ফসল চাষ করছে।
আপনি একদম ঠিক বলেছেন এখন প্রত্যেকটা গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। অন্যরকম অভিজ্ঞতা গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। আসলে এই সময় গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের বাড়িতে বাড়িতে ফসল সংগ্রহ করার ধুম চলে। ফসলের গন্ধ গুলো আমার অনেক ভালো লাগে। । এ ফসলের মধ্য দিয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফোটে। আপনার তোলা ফটোগ্রাফি গুলো খুব সুন্দর হয়েছে গ্রামের ফসল মাড়াই করার মুহূর্ত গুলো খুবই ভালো লাগছে দেখতে। অসংখ্য ধন্যবাদ।
গ্রামে এই সময়টায় প্রত্যেকটি ঘরে যেন উৎসবের বন্যা বয়ে যায়।
নতুন ফসল ঘরে তোলার উৎসব।
গ্রামের এই কাজগুলো অনেক উপভোগ করেছেন বুঝতে পারছি। ক্ষেত থেকে ধান কেটে আনা, সিদ্ধ করা আবার সেই ধান রোদে শুকানো এই কাজগুলো অনেক পরিশ্রমের হলেও নিজের ক্ষেতের ধানের ভাত খাওয়ার মধ্যে আলাদা এক ধরনের সুখ আছে। সুন্দর এই সময়গুলো আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ভাই
এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে এত পরিশ্রম করে ফসল ফলিয়েও তারা লাভবান হতে পারে না। তাই আমি প্রশ্নটা করাতে ঠিক এই উত্তরটাই পেয়েছিলাম ঘরের ভাত খাওয়ার জন্য।
আসলেই ভাইয়া কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সোনালী ফসল ধান উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। তারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কতটা পরিশ্রম করে তা শুধুমাত্র নিজের চোখে দেখা ছাড়া বিশ্বাস করা যাবেনা। যেহেতু আমি একজন গ্রামের মেয়ে তাই আমি এর মর্মার্থ অনেকটাই বুঝি। আপনার প্রতিটি ফটোগ্রাফি গ্রামীণ জীবনের কথা বলে। খুব সুন্দর ভাবে ফটোগ্রাফির মাধ্যমে আপনি বর্ণনাগুলো আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন যে আমার খুবই ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।
কিন্তু এত পরিশ্রম করার ফলেও তাদের পরিপূর্ণ মূল্যায়ন করা হয় না।
আসলেই ভাইয়া এই মুহূর্তগুলো সত্যিই অসাধারণ । আমি যে তুই গ্রামে বসবাস করি গ্রামের দৃশ্য গুলো প্রতিনিয়ত আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে । তবে এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় কৃষকের অনেক উন্নতি হয়েছে ।বিশেষ করে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতির কারণে ধান মাড়াই থেকে শুরু করে সবকিছুই এখন মেশিনের সাহায্যে হয়ে থাকে । এতে কৃষকের অনেকটা কষ্ট লাঘব হয়েছে ।
কষ্ট লাঘব হলেও আগে যেমন কৃষকেরা লাভবান হয়েছিল। এখন আর ফসলের মধ্যে সেই লাভ নেই।
আপনি একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া গ্রামগুলো আর আগের মত নেই এখন এখন একটি গ্রামে রয়েছে বিদ্যুতের সংযোগ। আবার এখন গ্রামগুলোতে ওয়াইফাই সংযোগ ও লক্ষ্য করা যায়।
ধানের যে দৃশ্যগুলো আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন সেগুলো এখন পর্যন্ত আমি আমাদের গ্রামে দেখতে পাই। গ্রামে থাকার সুবাদে এই দৃশ্যগুলো খুবই সাধারণভাবে আমার চোখের সামনে চলে আসে।
অনেকদিন পর হঠাৎ গ্রামে গিয়ে আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। সব সময় আপনার সামনেই দৃশ্যগুলো ঘটে বলে আপনার কাছে খুব সাধারন মনে হয় আমার কাছে অসাধারণ।
আপনার অন্যরকম অভিজ্ঞতা গল্পটি পড়ে আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। অনেক সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফির মাধ্যমে আমাদের মাঝে এই গল্পটি নিয়ে এসেছেন। আমাদের এইদিকে আগে এরকম হতো এখন আর হয় না মেশিনের মাধ্যমে এখন সবকিছু করা হয়। আপনার গল্পটা পড়ে আগের কথা মনে পড়ে গেল। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি গল্পের মাধ্যমে আমাদের আগের স্মৃতি গুলো তুলে ধরার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
আসলে যন্ত্রের কাছে আমাদের আসল সৌন্দর্য গুলো হারিয়ে গিয়েছে।
বাহ,ফসল ঘরে আনা থেকে শুরু করে সেদ্ধ করার পুরো প্রক্রিয়াটি আপনি সুন্দর করে দেখিয়েছেন ছবির মাধ্যমে।উপস্থাপনাটি সুন্দর ছিল, আসলে এই সময় কৃষকের মুখে হাসি থাকলে ও কাজের কমতি থাকে না।ধন্যবাদ ভাইয়া।
রাত্রে বেলা হঠাৎ করে ঘুম ভাঙতেই বারান্দায় গিয়ে দেখি গভীর রাতে ধান সিদ্ধ করার সেই দৃশ্যটা।
ঠিক বলেছেন ভাই গ্রামগুলো আর আগের মতো নেই গ্রামের আধুনিকতার ছোয়া লেগে গেছে। গ্রামের প্রতিটা ঘর থেকে এখন সিরিয়ালের শব্দ ভেসে আসে হা হা। আপনার পোস্টের ফটোগ্রাফি গুলো চমৎকার হয়েছে। এবং অনেক সুন্দর গুছিয়ে লিখেছেন।।
একদম ঠিক বলেছেন এই সিরিয়াল গুলোর যন্ত্রণায় ঠিক মতো টিভির সামনে বসে থাকা যায়না।