কর্তব্য পালনে যেতে হয়েছে অনেকদূর ||পর্ব -১||
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
হঠাৎ করেই দুদিন আগে আসতে হয়েছিল গ্রামে, এখনো সেই জায়গায়ই আছি। আমার কাছে মাঝেমধ্যে গ্রামীন পরিবেশে ঘুরতে কিন্তু ভালোই লাগে। এবার গ্রামে এসেছি, একটু ভিন্ন কারণে। ইচ্ছা করলেই অবসর সময়ে যেন বাচ্চাদের নিয়ে গ্রামে ঘুরতে পারি সেই বন্দোবস্ত করতেই আসা। আসলে শহরে থাকতে থাকতে আমরা আমাদের শেকড় কোথায় সেটা ভুলে গিয়েছি। তাই বাচ্চাদের আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই হয়তো এত কিছুর আয়োজন।
আমরা ছোটবেলায় জমি থেকে ধান কাটাসহ ধান মাড়াই করা এবং সেখান থেকে চাউল তৈরি করা, এইসব দৃশ্যের সঙ্গে ভালোবেই পরিচিত ছিলাম। গ্রামের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে আশেপাশের ডোবা ও নালায় পাট পচানোর সেই গন্ধ এখনো মিস করি। কিংবা সরিষা ক্ষেতের চোখ জুড়ানো হলুদ ফুলের সৌন্দর্য, এই সবকিছুই এখন অতিত ইতিহাস। আবার কনকনে ঠান্ডায় ভোরবেলা খেজুর গাছ থেকে নিজ হাতে কলসি নামিয়ে খেজুর রস খাওয়া। কতটা আনন্দময় ছিল সেই সব দিনগুলি ভাবা যায়। কিন্তু আমার ভাবতে বেশ ভালই লাগছে।
সকালবেলা গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে হাঁটতে কত না ভালোই লাগতো। ঘাসের উপর শিশিরবিন্দু গুলো দেখে মনে হতো ঠিক যেন মুক্তোর দানা। ঘাসের উপর দিয়ে হাঁটতে কুয়াশার পানিতে পায়ের স্যান্ডেল ও পা ভিজে যেত। তখন হয়তো কিছুক্ষণের জন্য হলেও সেই পরিস্থিতি গুলো খারাপ লাগতো। এখন এই সময়ে এসে সেই মুহূর্তগুলো খুব মনে পড়ছে। যাইহোক আগেই বলেছিলাম এবার গ্রামে আসার উদ্দেশ্য ভিন্ন। আমার শশুরের কোন ছেলে সন্তান নেই, শুধুমাত্র আমার সহধর্মিণী ও তার ছোটবোন। দুজনেরই বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আমার শ্বশুর-শাশুড়ি শহরে বাসায় একা একাই থাকতো।
প্রথমদিকে ভালো মন্দ মিলিয়ে চলে যেত, অবশ্য আমরা মাঝেমধ্যে তাদের দেখতে যেতাম। কিন্তু বুঝতে পারতাম তারা নিজেদের অনেক একা মনে করতো। আসলে এটা হওয়া খুব স্বাভাবিক পরিবারের চারজন সদস্যের মধ্যে হঠাৎ করেই অর্ধেকে নেমে এসেছে। এক মাসের ব্যবধানে দুটো মেয়েরই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। বুঝতে পারতাম ধীরে ধীরে একাকীত্ব উনাদের গ্রাস করে ফেলছিল। এক পর্যায়ে নিজেদের একদম গুটিয়ে ফেলে। অধিকাংশ সময় দুজনেই ঘরের মধ্যে বেশি সময় ব্যয় করে। বিষয়টি অনুভব করতে পারলাম এভাবে থাকলে হয়তো তারা ধীরে ধীরে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বে। সে কারণে আমার শ্বশুরের গ্রামের বাড়ি সংস্কার করে সেখানে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তাছাড়া আমার সন্তানেরাও মাঝে মাঝে গ্রামে বেড়াতে গেলে আমাদের ঐতিহ্য সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে।
বাড়ি থেকে বের হয়ে যখন কয়েক শ' মিটার পথ এগিয়ে আসলাম তখন রাস্তার মোড়ে এসে হঠাৎ উল্টো দিকে চোখ পড়লো। দৃশ্যটি আমার কাছে খুব ভালো লেগেছিল তখনি ফটোগ্রাফি টা নিয়েছিলাম।
রাজপথ দিয়ে এগিয়ে চলছি গ্রামের উদ্দেশ্যে। সবসময় এই রাস্তা দিয়ে আমার যাওয়া আসা কিন্তু কখনো আমার এত ভালো লাগেনি। তখন মনটা অনেক ভালো ছিল তাই সব কিছুই ভালো লাগছিল। এখনও আমি গ্রামের বাড়িতেই আছি। বেশ কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। শহরের বাড়ি থেকে আসার পর কোন কিছুরই যেন অভাব বোধ না করে তাই এই প্রচেষ্টা। আশেপাশে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে একদম নিরব নিস্তব্ধ। মাঝে মাঝে দু-একবার কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুধু শুনতে পাচ্ছি শুধু।
আমার শহরে বাড়ি থেকে ঠিক দুই কিলোমিটার দূরে আমার শশুর বাড়ি। মেয়েদের লেখাপড়ার সুবিধার্থে শহরে একটি বাড়ি করেছিলেন। ওনার গ্রামের বাড়ি শহর থেকে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে। যাইহোক আমরা গ্রামের বাড়ি সংস্কার করার জন্য কয়েকদিন আগে এসেছিলাম। এই বাড়িটি কাঠালবাড়ি ইউনিয়নের প্রসাদ কালোয়া গ্রামের দাসের হাট ছড়ার পাশে অবস্থিত। আর কে রোড থেকে যখন গ্রামের মেঠো পথের দিকে ঘুরলাম ঠিক সেই মুহূর্তে এই ফটোগ্রাফ।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
ডিভাইস | স্যামসাং গ্যালাক্সি A-10 |
---|---|
ফটো | @mayedul |
লোকেশন | w3w location |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
ঠিক বলেছেন ভাইয়া এখন কার ছেলে মেয়েরা গ্রাম কি জিনিস সেটা বলতে পারে না। শহরে থেকে থেকে একদম শহরমুখী হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সকলের উচিৎ বাচ্চাদের গ্রামের পরিবেশ গ্রামের মানুষের কষ্ট এগুলো বোঝানো উচিত। আপনার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছেন যা দেখে ভালো লাগলো ভাইয়া।বাবা মার যেমন খেয়াল রাখা উচিৎ তেমনি শশুর শাশুড়ি কেউ সেই চোখে দেখা। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে সুন্দর কিছু মূহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য।
আমরা ছোটবেলায় যখন স্কুল ছুটি হলে দুই একবার গ্রামে যেতাম কতইনা আনন্দ হতো সেই সময়টাতে। এখনকার ছেলেমেয়েরা আর গ্রামে যেতে চায় না।
ধন্যবাদ ভাই আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
কর্তব্য জিনিস টা অনেক বড়,আপনার যেহেতু শশুড়ের ছেলে সন্তান নেই।তাই আপনার উচিত তাদের পাশে থাকা।এক মাসের ব্যবধানে দুই মেয়ের বিয়ে হওয়াতে তারা একাকিত্ব বোধ করা স্বাভাবিক। আপনি ঠিক করেছেন এভাবে ঘরের ভিতরে থাকলে অসুস্থ হওয়া স্বাভাবিক। তার থেকে গ্রামের বাড়িতে থাকলে আপনার বাচ্চরা ও গ্রামে বেড়াতে পারবে,আপনার শশুর শাশুড়ীরা আনন্দে থাকবে।আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগল। ধন্যবাদ আপনাকে ।
একদম তাই বৃদ্ধ বয়সে একাকিত্ব অনেক কষ্টের হয়। এই বয়সে সবার সঙ্গে থাকতে পারলে বেশ ভালই লাগবে। তাছাড়া আমরাও মাঝে মাঝে গ্রামে ঘুরতে আসার সুযোগ পাবো।
আমরা নিজেদের কাছে রাখতে চেয়েছিলাম কিন্তু গ্রামে থাকতেই তারা বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করল।
ধন্যবাদ আপনাকে পাশে থাকার জন্য।
শুধু আপনার সন্তানরা না ভাইয়া,বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশই তাদের শেকড় ভুলে গেছে।আপনি আপনার সন্তানদের গ্রামে নিয়ে গিয়ে খুবই ভাল করেছেন।দেশের ৮০ভাগ মানুষ কিভাবে বাস করে তা জানা দরকার তাদের।শহরের বদ্ধগন্ডির বাইরেও যে একটি পৃথিবী আছে তা জানবে তারা।আর আপনার দায়িত্ববোধ দেখে অনেক ভাল লাগল।বাবা মার যেমন খেয়াল রাখা দরকার তেমনি শ্বশুড় শ্বাশুড়ির ও খেয়াল রাখা দরকার।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্টটির জন্য।
ঠিক বলেছেন এখন আমরাও তাদের দেখার উদ্দেশ্যে মাঝে মাঝেই গ্রামে আসতে পারবো। বাচ্চাদেরও ভালো লাগবে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
আমাকে উৎসাহিত করার জন্য।
অনেক মহৎ একটি কাজ করতে চলেছেন আপনি। শ্বশুর-শাশুড়ি একা অনুভব করেছে সেটি আসলে বুঝতে পারাটাই বড় বিষয়। কারণ অনেকে হয়তো বুঝতেও পারত না, যেটি আপনি বুঝতে পেরেছেন। আর এই বয়সে তাদেরকে সঙ্গ দেওয়া এবং কি তাদের একাকীত্ব দূর করা অনেক ভালো একটি কাজ।ধন্যবাদ আপনাকে আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
কিছুটা সময় হয়তো দিতে পারছি ভাই। কিন্তু আবার সবাইকে নিয়ে নিজ শহরে চলে আসতে হবে। তবে তাদেরকে গ্রামে রাখতে পেরে আমরাও কিছুটা স্বস্তি পাব। কিছু না হলেও একাকীত্ব আর অনুভব করবে না। সেখানে আত্মীয়-স্বজন পাড়া প্রতিবেশী অনেক আছে।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া শহরে থাকতে থাকতে আমরা গ্রামীন জীবন মনে হচ্ছে ভুলেই গিয়েছি। আপনার বাচ্চাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য গ্রামে গিয়েছেন জেনে ভালো লাগলো। সবসময় বন্দী অবস্থায় থাকতে থাকতে বাচ্চারাও একসময় বিরক্ত হয়ে যায় তার জন্য মাঝে মাঝে গ্রামীন পরিবেশে ঘুরতে গেলে মন ভালো থাকে। আপনি গ্রামের খুব সুন্দর কিছু দৃশ্য শেয়ার করেছেন যা দেখে আমারও গ্রামের কথা মনে পড়ে গেল। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
শহরে থাকতে থাকতে গ্রামের কথা ভুলে গিয়েছেন যেটা গ্রামে এসে স্মৃতিচারণ হয়েছে। ছোট্টবেলার গ্রামের কাটানো মধুর স্মৃতিগুলোর গল্প এবং সেই দৃশ্যপট গুলো স্মৃতিচারণ করা যেটা সত্যিই অনেক ভালো লাগার ছিল। আমার কাছেও এই গ্রাম্য পরিবেশে এই সুন্দর বিশুদ্ধ হওয়া উপভোগ করতে অনেক ভালো লাগে।
মাঝেমধ্যে গ্রামে আসলে সত্যিই অনেক ভালোলাগা কাজ করে। বিশেষ করে গ্রামের সবুজ শ্যামল প্রকৃতি, বিশুদ্ধ হওয়া মনকে দোলা দিয়ে যায়।
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আসলেই ভাই শহরে থাকতে থাকতে আমার আদের শিকড় এই ভুলে গেছি।আর আপনার পোস্ট পড়তে পড়তে অনেকটাই আবেগ আপ্লুত হয়ে গেলাম,খুব সুন্দর ছিল লেখনি।আসলে আমার মাঝেমধ্যে নিজেকে জিজ্ঞেস করতে মনে চায়,কিসের আশায় নিজের গ্রাম রেখে এতদূরে পড়ে আছি😢।
কিন্তু তারপরেও শহরে ফিরতেই হবে। তবে এই বাড়িটা সংস্কার করে একদিক থেকে খুব ভালোই হয়েছে।
মাঝে মাঝে ছুটি কাটাতে আসতে পারবো বাচ্চাদের নিয়ে।
ধন্যবাদ আপনাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য।
আসলে গ্রামের মাঝে একটা অন্য রকম প্রশান্তি আছে ৷ অনেকই শহরে থাকতে থাকতে গ্রামের শেকড়ের কথা ভুলেই গেছে ৷ আপনি ভালোই করেছেন ছোট বাচ্চাদের গ্রামে নিয়ে এসে ৷ সবাই মিলে গ্রামে থাকলে অনেকটা একাকিত্ব দূর হয়ে যাবে ৷ ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো ৷
হ্যাঁ ভাই গ্রামে থাকতে পারলে ভালোই হতো। সেটা তো মাত্র কিছুদিনের জন্য, দু-চার দিন পরে আবার ফিরতে হবে। তবে যে কয়েকটা দিন থাকবো আশা করছি দিন গুলো ভালই কাটবে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার গ্রামের বাড়ি সংস্কার করার জন্য কয়েকদিন আগে গ্রামে এসেছিলেন। আপনাদের বাড়িটি কাঠালবাড়ি ইউনিয়নের প্রসাদ কালোয়া গ্রামের, দাসের হাট ছড়ার পাশে অবস্থিত। তবে আর কে রোড থেকে যখন গ্রামের মেঠো পথের দিকে ঘুরছিলেন ঠিক সেই মুহূর্তে এই চমৎকার ফটোগ্রাফিটি আমার কাছে অসাধারন লেগেছে। সেই সাথে গ্রামীণ পরিবেশে
পরিচয় করানোর বিষয়টি কিন্ত খুবই চমৎকার একটি উদ্যোগ। ♥♥