শীতকালে রাতে নৌকা ভ্রমন করতে গিয়ে অপ্রত্যাশিত এক ঘটনার সম্মুখীন ||শেষ পর্ব||

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

hd-wallpaper-3605547_1920.jpg

source

রাত্রি তখন ১২ঃ৩০ মিনিট কনকনে শীতের রাত্রি। তাছাড়া নদীতে ঠান্ডার পরিমাণ যেন অনেক গুণে বেড়ে গিয়েছে। অনবরত উত্তরের হিমেল হাওয়া বইছে এই ঠান্ডায় যেন একেবারে জমে যাচ্ছিলাম। এখনো নৌকা নিয়ে আটকে যাওয়া চরের মধ্যে এদিক ওদিক ঘুরছি। কোনভাবে নৌকা কিছুক্ষণ চলতে শুরু করলে সামনে গিয়ে আবার আটকে যাচ্ছে। এভাবেই বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর আমরা একসময় আশা ছেড়েই দিলাম। মাঝি ভাইকে ডেকে বললাম এখানেই না হয় নোঙ্গর ফেলেন আমরা ঘুমিয়ে পড়ি। উনি বলে ফেললেন চেষ্টা করে দেখি শেষ মুহূর্তে না হলে তাই করতে হবে। আমরা শীতের কাপড় ছাড়াও নদীতে ঠান্ডা হবে উপলব্ধি করে চাদর নিয়ে এসেছিলাম। বাপ বেটা মিলে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম।

এক পর্যায়ে কনকনে শীতের রাত্রিতে আশার আলো উঁকি দিতে লাগলো। নৌকা চলতে শুরু করেছে, অনেকক্ষণ ধরে চলছে কিন্তু গন্তব্য খুঁজে পাচ্ছি না। রাতের বেলা চড়ে নৌকা আটকে গেলে ঘুরতে ঘুরতে দিক ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থেকে যায়। কারণ রাতের অন্ধকারে নদীর যেদিকে তাকাবেন একই রকম দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। তাই ঘুরতে ঘুরতে অনেক সময় উল্টো পথে নৌকা চলে যায়। ওইদিন ঠিক সেরকমটাই হয়েছিল। আমরা আমাদের গন্তব্যের উল্টো দিকে যাত্রা শুরু করেছিলাম। তাই তো দীর্ঘক্ষন নৌকা চলার পরেও আমরা ঘাটে পৌঁছাতে পারিনি।

আমাদের নৌকা চলতে চলতে ১৫-২০ কিলোমিটার দক্ষিনে চিলমারী বন্দরের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। আর কিছুক্ষণ গেলে হয়তো চিলমারী ঘাট পৌঁছে যেতাম। এমন সময় দূরে মৃদু কিছু আলোকরশ্মি চোখে পড়লো। নৌকা সেদিকে ঘুরিয়ে নেয়া হলো কাছাকাছি আসতেই বুঝতে পারলাম মাছ ধরার নৌকা। নৌকা কাছাকাছি নিয়ে মাঝি জিজ্ঞাসা করল এটা কোন জায়গা ? জেলেদের কাছে জানতে পারলাম আমরা রাস্তা ভুল করে অনেক অনেক দূরে চলে এসেছি। আর কিছুদূর গেলেই চিলমারী ঘাট পৌঁছে যেতাম। আমাদের নৌকা তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে ঘুরে গন্তব্যের দিকে আবারো ছুটে চলল।

মানুষ জীবন ও জীবিকার জন্য কত কষ্টই না করে। নদীতে জেলেরা এই ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে মাছ ধরছে। পরের দিন সকালে চিলমারী ঘাটের কাছে পাইকারি বাজারে নিয়ে মাছ বিক্রি করবে। অথচ আমরা বাজারে মাছ কিনতে গিয়ে কত দর কষাকষি করি। তাদের এই কষ্টের কাছে আমরা যে মূল্য দেই সেটা কিছুই না। আমরা দূরে থেকে হয়তো বুঝতেই পারিনা প্রত্যেকটা কাজের পিছনে কি পরিমাণ কষ্ট ও শ্রম দিতে হয়। আর জেলেরা শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সবকিছু উপেক্ষা করে প্রতিনিয়ত এই কাজটি করে যাচ্ছে। যাইহোক আমরা গন্তব্যের দিকে ছুটতে থাকি।

নৌকা ছুটছে তো ছুটছেই কিন্তু কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছি না। কেমন যেন মনের মধ্যে কু ডাকছে। এরকম সময় এই ভুলটা হওয়া স্বাভাবিক। এর আগেও বিভিন্ন নৌকার যাত্রী এরকম বিপদে পড়েছিল। চলতে চলতে নৌকা ইন্ডিয়ার বর্ডার ক্রস করেছিল। সেই দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে আমি মাঝি ভাইকে ডেকে বললাম। যেহেতু আমরা এখন পর্যন্ত গন্তব্যের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারিনি তাই আমাদের বিকল্প কিছু ভাবতে হবে।

ঠিক সে সময় দূর থেকে একটি স্পিড বোট আসছে লক্ষ্য করলাম। অনেক ধরনের দুশ্চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এরকম সময় নদীতে ডাকাতের পাল্লায় পরা নতুন কিছু নয়। গভীর রাত্রে কোন নৌকা পথ হারিয়ে ফেললে অনেক সময় দেখা যায় তারা ডাকাতের খপ্পরে পড়ে যায়। তাই সবাই অনেক ভয় পেয়ে গেল। কে কিভাবে এই বিপদে মোকাবেলা করবে সে নিয়ে শলা-পরামর্শ চলছে। আস্তে আস্তে সার্চ লাইটের আলোর তীব্রতা বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের মনেও ভয় আরও তীব্র হচ্ছে। সবাই একেবারে ভয়ে সংকুচিত হয়ে আছে।

বোটটি যখন একবারে আমাদের কাছে চলে আসলো। তখন আমাদের মন থেকে ভয় একেবারেই চলে গেল। আরে এ তো দেখছি রাতের কিছু টহল পুলিশ। আমাদের এই অঞ্চলে একটি পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। স্থানীয় ভাবে আমরা এটাকে জল থানা বলি। যাইহোক আমি পুলিশ সদস্যদের বিস্তারিত সবকিছু বুঝিয়ে বললাম। তারা আমাদের আশ্বস্ত করলেন পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। এবং তারা আমাদের সম্ভাব্য বিপদের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন।

আমরা হয়তো আর পাঁচ মিনিট নৌকা চালিয়ে উত্তর দিকে গেলেই ইন্ডিয়ার বর্ডার ক্রস করতাম। সেদিকে চলে গেলে হয়তো পরের দিন সকালে গিয়ে আর আমার উদ্দেশ্য সফল হতো না। বর্ডার পার হয়ে গেলে আইনি অনেক জটিলতায় পড়ে যেতাম সেখান থেকে সহজেই ছাড় পেতাম না। হয়তোবা বি, ডি, আর ও বিএসএফের পতাকা বৈঠকের পর সেখান থেকে ছাড় পাওয়া যেত। সেই পরিস্থিতি করে চিন্তা করে আমার গা শিউরে উঠলো। যাক সে বিপদে থেকে এ যাত্রা হয়তো বেঁচে গেলাম।

রাত প্রায় ভোর হয়ে আসছিল পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতায় আমরা ঘাটের কাছাকাছি পৌঁছে এসেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঘাটে আর পৌঁছতে পারিনি। রাত্রে ঘাটের কাছাকাছি এসে নোঙ্গর ফেলে রাত্রি যাপন করতে হয়েছিল। এদিকে এসে নৌকা এমনভাবে চরে আটকে গেল। কিছুতেই আর চর থেকে নামছে না। যেহেতু কাছাকাছি চলে এসেছি আর ঘাটের কাছে নেমেও রাত্রে নৌকায় ঘুমানো ছাড়া কোন উপায় নেই। এত রাত্রে কোন গাড়িও পাওয়া যাবে না শহরে যাওয়ার জন্য।

তাই রাত্রিবেলা নৌকায় ঘুমিয়ে পরের দিন ভোরে সবাই উঠে নৌকা ঘাটে নামতে পেরেছি। আমিও আমার বাবাকে নিয়ে দ্রুত একটি অটো রিক্সা নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেলাম। গোসল করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। তারপর সকালের খাবার খেয়ে চলে গেলাম ব্যাংকের কাজে। জরুরী ভিত্তিতে যে কাজটি সম্পন্ন করার জন্য এসেছিলাম। লাঞ্চের আগেই অবশ্য আমার সেই কাজটি হয়ে গিয়েছিল। তাই দ্রুত সকল কাজ গুটিয়ে ঐদিন বিকালেই আবার ফিরে চলে আসি। ফেরার পথে আর সেই ভুল করিনি। একদম শর্টকাট নদী পার হয়ে বাসে চেপে বাসায় ফিরে আসলাম।

সব মিলিয়ে সারাটা দিন এবং রাত অনেক কষ্টই হয়েছে। আবার রাতের নৌকা ভ্রমনের মধ্যে বেশ একটা অ্যাডভেঞ্চার ফিল পেয়েছি। আসলে কিছু কিছু কষ্টের মাঝেও আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। কথাটা একটু কেমন হয়ে গেল তাই না !! কিন্তু আসলেই সত্যি সেদিন রাত্রে কষ্ট করার পরেও অনেক আনন্দ পেয়েছিলাম।

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

Logo.png

3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif

Sort:  

Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

 2 years ago 

আপনার এই নৌকা ভ্রমনের অভিজ্ঞতা শুনে আমার গা ছমছম করছিল। আর একটু হলেই ইন্ডিয়ার বর্ডার ক্রস করে ওপারে গেলেই বিপদে পরে যেতেন। আল্লাহ হেফাজত করেছেন।
তবে নৌকার মাঝি একদমই অদক্ষ।

 2 years ago 

শীতকালে নদীর পানি অনেক শুকিয়ে যায়।
আর রাতের বেলা দক্ষ মাঝি হলেও খুব একটা কাজে দেয় না।

 2 years ago 

শীতকালে রাতে নৌকা ভ্রমন গল্পের অভিজ্ঞতা থেকে বলা চলে এটি কষ্টকর। পথ ভুলে অন্য পথে চলা অনেক ক্ষানি বিপদ। কুয়াশ্যা অনেক সময় নিজের চেনা পথও ভুলে যায় আর সেখানেতো নদী পথ ছিল , তবে কোণ বিপদে পরেনি এটা অনেক ভালো।

 2 years ago 

একদম ভাই শীতকালে রাতে নৌকা ভ্রমন অনেকটাই বিপজ্জনক।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59325.16
ETH 2609.11
USDT 1.00
SBD 2.41