অনেক ভোগান্তির পর নীড়ে ফেরা

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

দুদিন আগে আমি আমার এক কলিগের টাকা আত্মসাৎ করার বিষয় নিয়ে পোস্ট করেছিলাম। সেদিন অনেক ঝড় ঝাপটা মাথায় নিয়ে আমি শেষ পর্যন্ত আমার কলিগের বাসায় পৌঁছে গিয়েছিলাম। কিন্তু বাসায় পৌঁছে সবার সঙ্গে কথা বলে কোন লাভ হয়নি। আমার সেই কলিগ জোড় গলায় বলছে সে ব্যাংকে ঠিকঠাক টাকা জমা করেছিল। তাই উপায় না পেয়ে আমি সেখান থেকে চলে এসেছিলাম।

চলে এসেছিলাম মানে যে আমি চুপচাপ বসে আছি তা কিন্তু নয়। আমি যথারীতি রবিবার ব্যাংকে গিয়েছিলাম। যেহেতু কাস্টমার কপি আমার সঙ্গেই ছিল তাই ডেট দেখে ব্যাংকে এসে কাগজ গুলো খুঁজে বের করা আমার খুব একটা কষ্ট হয়নি। তারপরও ব্যাংকের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে আমি সিসি টিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখতে চেয়ে অনুরোধ করি। স্বাভাবিকভাবেই ব্যাংকের ম্যানেজার আমার কথা মেনে নিয়ে লেনদেন শেষ হওয়ার পর আমাকে পুনরায় ব্যাংকে আসতে বলে।

যাই হোক বিস্তারিত জানার পর প্রমাণ সহ আজকে আমি আবারও ওই কলিগের বাসায় গিয়ে কিছুটা হলেও সমাধান করতে পেরেছি। এই কিছুক্ষণ আগেই বাসায় ফিরতে পারলাম। বাসায় ফিরে ফ্রেশ হওয়ার পরপরই নামাজ শেষ করেছি। তারপর এখন লিখতে বসলাম। ব্যাংকে যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কয়েকটি ঘটনা না বললেই নয়।

20220905_231550.jpg

লেনদেন শেষে বিকেলবেলা ব্যাংকে আমি পুনরায় গিয়েছিলাম। যাওয়ার পর ওই তারিখ অনুযায়ী সিসি টিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ আমাকে দেখানো হয়। সেখানে স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলাম আমার কলিগ টাকা গুনে জমা দিচ্ছে। অথচ সেদিন আমাকে বলেছিল সে নাকি তার চাচাতো ভাইয়ের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা করেছিল। আজকে বুঝতে পারলাম আমাকে ডাহা মিথ্যা কথা বলেছে। আর তখনই আমার কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যায় এই লোক কতখানি প্রতারক হতে পারে।

প্রমাণসহ আজকে তার বাসায় গিয়ে আবার বৈঠক করি। আজকে অবশ্য সেই ভুল করিনি যাওয়ার সময় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেবকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলাম। সবকিছু দেখে চেয়ারম্যান সাহেব তাকে বুঝিয়ে বলল তুমি অনেক বড় জালিয়াতি করেছ। এখন তোমার কোম্পানি থেকেও তুমি মামলায় জড়াতে পারো। আবার ব্যাংক থেকেও জালিয়াতির মামলা খেতে পারো। অতএব টাকা দিয়ে দ্রুত সমাধান করে নাও। পরবর্তীতে অর্ধেক টাকা আমার হাতে জমা দিয়ে দুই সপ্তাহের সময় নিয়ে নেয়। আমি সঙ্গে সঙ্গে আমার অফিসে ফোন করে সবকিছু ক্লিয়ার করি। মনে মনে কিছুটা আশ্বস্ত হলাম টাকা উদ্ধার করতে পেরেছি। অনেক রাত হয়েছে এখন বাড়ি ফেরা যাক।

গ্রামের রাস্তাঘাট সন্ধ্যার পরপরই লোকজন কমে যায়। এশার নামাজ হয়ে গেলে তো আর কোন লোকেরই দেখা পাওয়া যায় না। সাথে বেশ কিছু টাকা আছে তাই একটু ভয়ও করছে। কিছুদূর হেটে আসার পর একটু অটো রিক্সার দেখা পেলাম। কিন্তু সে যেতে চাচ্ছিল না। কিছু ভাড়া বাড়িয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে যেতে রাজি করলাম বললাম আমাকে স্ট্যান্ড অবদি পৌঁছে দাও। যাক শেষ পর্যন্ত রাজি হল আমি অটো রিক্সায় উঠে স্টান্ডে পৌঁছে গেলাম।

20220903_214338.jpg
20220903_214335.jpg

কিন্তু ভুলে গিয়েছিলাম আজকে স্থানীয় একটি ধর্মঘট চলছে। তাই বাসায় যেতে হলে অটো রিক্সায় করেই যেতে হবে। আস্তে আস্তে রাত গভীর হয়ে যাচ্ছে তখন পর্যন্ত কোন অটোরিকশা পাচ্ছি না। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর যদিও বা একটি অটো রিক্সা পাওয়া গেল। কিন্তু আমাকে একা নিয়ে যেতে রাজি হচ্ছে না। তাই আমিও তার সঙ্গে এদিক-ওদিক লোক খুঁজতে লাগলাম। ভাগ্য সুপ্রসন্ন তাই দুজন লোক আসছে দেখতে পেয়ে আমি দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলাম। তারাও আমার সঙ্গে একই গন্তব্যে যাবে জেনে কি যে ভালো লাগলো বলে বোঝাতে পারছি না।

20220903_213836.jpg
20220903_213802.jpg

অবশেষে অটো রিক্সা তিনজনকে নিয়ে যেতে রাজি হল। শর্ত একটাই ভাড়া একটু বাড়িয়ে দিতে হবে। আমরাও অনেক রাত হয়েছে ভেবে রাজি হয়ে গেলাম। তিনজনকে নিয়েই রাতের অন্ধকার ভেদ করে আমাদের অটোরিকশা ছুটে চলছে। বেশ ভালই যাচ্ছিলাম হঠাৎ করে অন্ধকারের মধ্যে দুজন লোক আমাদেরকে দাঁড় করালো। আমি মনে মনে একটু ভয় পেয়ে গেলাম। যদি টাকাগুলো ছিনতাই হয়ে যায় তাহলে কোম্পানির কাছে আমাকেই পূরণ করতে হবে। মুহূর্তেই সব ভয় কেটে গেল। ওই লোকদুটো আমাদের মতই বিপদে পড়েছে। যাইহোক ঘন্টাখানেকের মধ্যে আমি গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। এখন এখান থেকে রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে এসেছি। এত কষ্টের পরেও প্রশান্তি একটাই টাকাগুলো উদ্ধার করতে পেরেছি।

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

Logo-1.png

3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif

Sort:  
 2 years ago 

টাকা-পয়সার লেনদেনের ব্যাপারে ডকুমেন্ট রাখা খুবই জরুরী। তবে শেষ পর্যন্ত যে আপনার সেই প্রতারক কলিগ তার প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে এটা জেনে ভালো লাগলো। সাথে আপনার টাকাও উদ্ধার হয়েছে। তবে আপনি রাতে যে পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন আমার এমন পরিস্থিতিতে পড়ার অভিজ্ঞতা আছে বেশ কয়েকবার। আর আজকাল রাস্তাঘাটে টাকা নিয়ে বের হতে দেখছি সবারই ভয় করে। বিশেষ করে রাতের বেলায়। যাক শেষ পর্যন্ত যে নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছেছেন এটা জানতে পেরে ভালো লাগলো।

 2 years ago 

স্বীকার না করে আর উপায় ছিল না কারণ আমি সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে স্পষ্টভাবে দেখা গিয়েছিল সে দুই বারে ৫০০০ এবং ৬০০০ জমা করেছে। পরবর্তীতে ডানদিকে একটি করে শূন্য ও কথায় ty যোগ করে অফিসে রিপোর্ট দিয়েছিল।

 2 years ago 

টাকা পয়সা লেনদেনের ব্যাপার তো অন্য রকম একটা বিষয়।তবে অবশেষ আপনার প্রতারক কলিগ তার প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে। আর আপনি টাকা গুলো উদ্ধার করতে পেরেছেন জেনে ভালো লাগল।এ রকম বিপদে কখনো পড়িনি তাই কোন অভিজ্ঞতা নেই। অবশেষে ভালোভাবে বাড়িতে পোঁছাছেন জেনে ভালো লাগল। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

আমার কলিগের টাকা আত্মসাতের বিষয়টা অস্বীকার করার আর কোন উপায় ছিল না। আমি সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ এবং অন্যান্য প্রমাণ আমার সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম।

 2 years ago 

ভাইয়া আজকে আপনার পোষ্ট পড়ে এটা বুঝতে পারলাম যে জীবনে যত সমস্যাই আসুক না কেন,মাথা ঠান্ডা করে সমাধানের পথ খুজতে হবে। যায়হোক আপনি টাকাটা উদ্ধার করতে পরেছেন। আপনার চেষ্টা সফল হয়েছে। ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আসলেই একটু ধৈর্য ধরে চিন্তা করলে পরিত্রাণের পথ খুঁজে পাওয়া যায়।

 2 years ago 

সমাজটা দিন কে দিন এতো খারাপ জায়গায় পৌঁছাচ্ছে যে কি বলব! মাত্রাহীন অবক্ষয় হচ্ছে। মানুষ কাকে যে বিশ্বাস করবে আর কাকে যে করবে না কে জানে? নিজের মায়ের পেটের ভাই বোনকেই আজকাল কেউ বিশ্বাস করে না।

 2 years ago 

মানুষ কে বিশ্বাস করা আসলেই বর্তমান অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। এটা একপ্রকার সামাজিক অবক্ষয় বলতে পারেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59404.52
ETH 2610.92
USDT 1.00
SBD 2.41