অতঃপর ২৫ বছরের পুরনো স্মৃতি ফিরে পাওয়াsteemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

20221012_171134.jpg

গত শুক্রবার গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম ব্যক্তিগত একটি কাজ নিয়ে। খুব দ্রুত কাজগুলো সেরে নিয়ে পুরনো স্টোর রুমটা খুললাম। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি দেখতে চাইলাম প্রয়োজনীয় কিছু আছে কিনা। সাধারণত গ্রামে খুব কম আসা হয়। আর এত বছরেও এই ঘরে কি আছে খুলে দেখা হয়নি। মাঝেমধ্যে দু-একদিনের জন্য আসলেও প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সেরে আবার দ্রুত ফিরে আসি। এবার যেহেতু গ্রামের বাড়িটা মেরামত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই প্রথমে স্টোর রুম খুলে দেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম।

স্টোর রুমে সাধারণত প্রয়োজনীয় জিনিসের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় জিনিস বেশি থাকে। প্রথমে গ্রামের যে দুজন লোক নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম তাদেরকে যতটুকু সম্ভব দিয়ে দিলাম। একদম শেষ মুহূর্তে একটি বস্তায় পুরনো কিছু জিনিসের মাঝে দুটি হারিকেন পেলাম। হারিকেন দুটো অনেক পুরনো হিসাব করে দেখলাম ২৫ বছরের কিছু বেশি হবে। দুটো হারিকেনের মধ্যে একটি ছিল বড় আরেকটি ছোট। মুহূর্তের মধ্যে বড় হারিকেনটি ছিনতাই হয়ে গেল। মানে কাজ করা লোক দুজনের মধ্যে একজন নিয়ে গেলো।

আমি অনেক ডাকা ডাকির পরেও সে ফিরে আসলো না। আমি অবশ্য তাকে দেখেছিলাম শুধু ফটোগ্রাফি নেয়ার জন্য, ছিনিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু আমি যদি তাকে আর না দেই সেই ভয়ে সে ফিরে আসেনি। একেবারে বাসায় রেখে তারপর কাজে এসেছে। অগত্যা ছোট হারিকেনটি নিজের কাছে রেখে দিলাম স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য। হারিকেন দুটো দেখে পুরনো অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল। এমন এক সময় ছিল গ্রামের লোকজনের রাতের বেলা হারিকেন ছিল একমাত্র সম্বল। বিশেষ করে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য হারিকেনের কোন বিকল্প নেই।

আমার জীবনে মাত্র একটি বছর গ্রামে ছিলাম। বাবা ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী তাই গ্রামে থাকা হয়নি। শহরে থাকতে থাকতে সেখানকারই বাসিন্দা হয়ে গিয়েছি। এখন শুধু মাঝে মাঝে প্রয়োজনের তাগিদে গ্রামে আসতে হয়। সেই সময় হারিকেন দিয়ে পড়তে মোটেও বিরক্ত লাগে নি। শুধু গরমের সময় একটু যা কষ্ট হতো। আমার এখনো মনে আছে হারিকেন সামনে নিয়ে পড়ার সময় আলো যেন চোখে না লাগে সেজন্য চিমনিতে কাগজ আটকে দিতাম। হারিকেনের আগুনের তাপে কাগজটি অনেক শক্ত হয়ে কুড়মুড়ে হত। কাগজের জন্য হালকা আলো চোখে লাগতো তখন আর অসুবিধা হতো না।

এত বছর পর এই সময়ে এসে হারিকেন দেখে আবার এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। বিদ্যুতের বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে মনে হয় আবার হারিকেনের যুগে ফিরে যেতে হবে। লোডশেডিং চরম পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। এখন মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ থাকার চেয়ে চলে যায় বেশি। মাঝে মাঝে আসে শুধু চলে যাওয়ার জন্য। গরমের কথা বাদই দিলাম স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীরা ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারছে না। লোডশেডিংয়ের এই বেহাল দশায় জনজীবন এক প্রকার অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছে। এখন আক্ষেপ করে বলতে হয় বিদ্যুতায়নের এই যুগের চেয়ে হারিকেনের যুগ সম্ভবত ভাল ছিল।

20221012_171111.jpg

আমার পরবর্তী প্রজন্মকে স্মৃতি বিজড়িত হারিকেন দেখানোর জন্য বাসায় নিয়ে এসেছিলাম। একটু খারাপ লাগছে বড় হারিকেন টা আনতে পারিনি এইভেবে। হারিকেন হাতে নিয়ে রুমে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে আমার পরিবারের ছোট সদস্য দৌড়ে চলে এলো। আমার বড় মেয়ে আসার আগে ই ছোট ছেলে এসে হারিকেনটি হাতে নিল। সে এই বিষয়ে কিছুই জানে না, অনেক পুরনো কিন্তু তার কাছে নতুন এই জিনিস। হারিকেন টি ধরতে পেরে সে বেজায় খুশি।

20221012_171003.jpg
20221012_170947.jpg

ওর খুশির কারণ ভিন্ন। আমরা বাসার সবাই মিলে অনেক পুরনো হারিকেন দেখে বিভিন্ন ধরনের গল্প করছিলাম। পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে অনেক হাসাহাসি হচ্ছিল ঘরের মধ্যে। সিনান হারিকেন নিয়ে ঘরের ভেতরে ছোটাছুটি করছে আর সবাইকে দেখাচ্ছে। বাসায় নিয়ে এসে হারিকেন টি পরিষ্কার করার সময় পাইনি। এই হারিকেন নিয়ে আমার একটি পরিকল্পনা আছে। প্রথমেই ভালো করে পরিষ্কার করে রং করতে হবে।

20221012_171041.jpg

আমার ছেলে সিনান ওর আনন্দ উৎফুল্ল ও লাফালাফি দেখে আমি মোবাইলে ধারণ করার জন্য ক্লিক করছি। সেটা ও দূর থেকে লক্ষ্য করছে। সিনান বুঝতে পেরেছে আমি ওর ফটো তুলছি। তাই সে হারিকেন টি ক্যামেরার সামনে এনে দেখাচ্ছে। আর আমাকে বলছে বাবা ছবি তোলো। আসলে এখনকার বাচ্চারা অনেক এডভান্স। এখনো ওর দুই বছর পূর্ণ হতে তিন মাস বাকি আছে। অথচ তার কথা ও প্রশ্নের উত্তর দিতে মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে যাই। বিশেষ করে আমি বাসায় ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় আমার সাথে কথা বলা।

হারিকেন নিয়ে আমার পরিকল্পনার কথা বলেই ফেলি। প্রথমে সুন্দর করে রং করে নেয়ার পর বাইরে ঝুলিয়ে রাখবো। বারান্দায় যে বাল্ব টি দেয়া আছে সেটি হারিকেন ঝুলিয়ে রাখার পর ভেতরে একটি হোল্ডার দিয়ে সেট করে দেব। একটু কম পাওয়ারের বাল্ব দিলে দূর থেকে মনে হবে হারিকেন চলছে। এটাই আমার পরিকল্পনা জানিনা কতটুকু সফল হব।

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

Sort:  
 2 years ago 

হারিকেনের সাথে আমার তেমন কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি কখনো।তবে যে একদমই সম্পর্ক নেই আবার তাও না।
২৫ বছর বেশ লম্বা সময়।বোঝাই যাচ্ছে,অনেক কিছুর স্বাক্ষী এই হারিকেন।
সিনানের কথা শুনে ভালো লাগলো।বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটুক আরো ভালোভাবে।শুভ কামনা রইলো ❤️

 2 years ago 

এত বছর পর এই জিনিস যে আবার ফিরে পাব কল্পনায় ছিল না।
দোয়া করবেন ভাই ছেলে যেনো ভালো মানুষ হতে পারে।

 2 years ago 

আমি একটি জিনিস বিশ্বাস করি সেটি হলো আজ থেকে ১০ বছর আগে যে কালচারটা আমরা আকারে বড় হয়েছি ঠিক ১০বছর পর আবার সেই কালচারটি আমাদের ভিতরে নতুন রূপে নতুন আঙ্গিকে আসে। যেমন আমি ডিজাইন জগতে দেখেছি যে ডিজাইনটি আজ থেকে পনের বছর আগে ছিল ঠিক সেই ডিজাইনটি আবার নতুন করে নতুন আঙ্গিকে নতুনভাবে আমাদের মনে ধরা দেয় এবং আত্মপ্রকাশ ঘটে।

 2 years ago 

খুব ভালো লাগলো আপনার কথাটা, আমিও দেখেছি পুরনো জিনিস গুলোই বারবার ফিরে আসে।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.033
BTC 64349.87
ETH 2775.11
USDT 1.00
SBD 2.65