আমার জীবনের প্রথম প্রেমের অনুভূতি || আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা - ২০
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
![]() |
---|
আমি তখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি প্রথম দিনেই একজনকে দেখে খুব ভালো লেগে যায়। পঞ্চম শ্রেণীতে প্রথম দেখার কারণ তার আগে আমি অন্য শহরে ছিলাম। বছরের প্রথম দিন স্বাভাবিকভাবেই সবার মনে একটা আনন্দ থাকে। কখন সবাই স্কুলে গিয়ে প্রথম বইটি হাতে নিতে পারবো নতুন বইয়ের গন্ধ শুকে দেখবো। ঠান্ডা হলেও শীতের কাপড় গায়ে দিয়ে স্কুলে চলে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি স্যার ও ম্যাডামরা চেয়ার টেবিল নিয়ে রোদের মধ্যে বসে বই বিতরণ করছে। বই নিতে গিয়েই সেই মেয়েটির চোখে চোখ পড়ল। বলতে পারেন তার চোখের সৌন্দর্য দেখেই আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। ভেতরে ভেতরে কেমন যেন একটা ভালো লাগা কাজ করতে লাগলো।
আমি প্রথমের দিকেই বই হাতে পেয়েছিলাম তারপরও সেই মেয়েটিকে দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর বই নিয়ে যখন সে বাড়ির দিকে রওনা দিল। আমিও কিছু না বুঝেই সেই দিকে হাঁটতে লাগলাম। কিছু পথ যাওয়ার পর লক্ষ্য করলাম আমার বাড়ির খুব কাছাকাছি মনে মনে একটু খুশিই হলাম। তো এভাবেই চলতে থাকলো আমাদের যাওয়া আসা। আমি কখনোই মেয়েদের সঙ্গে আগ বাড়িয়ে কথা বলতাম না সেই অভ্যাসটা আমার এখনো আছে। সব সময় প্রত্যাশা করতাম যে মেয়ে আমাকে প্রথম ভালবাসার কথা বলবে আমিও তাকেই ভালোবাসবো। সেজন্যই মনে হয় আমার জীবনে প্রেম এত দেরিতে এসেছে হা হা হা।
এভাবে শুধু ভালোলাগা সেই চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে থাকতেই প্রাইমারির শিক্ষাজীবন শেষ করলাম। তারপর হাই স্কুল জীবনে আমরা আলাদা আলাদা স্কুলে ভর্তি হয়ে গেলাম। ও গভমেন্ট গার্লস স্কুলে আর আমি গভমেন্ট বয়েজ স্কুলে এভাবেই চলতে লাগলো আমাদের শিক্ষা জীবন। কিন্তু আমি কখনো তাকে দেখার লোভ সামলাতে পারেনি। প্রত্যেকদিন সকালবেলা সে প্রাইভেটে যেত। একেবারে কাকডাকা ভোরে সাড়ে ছয়টা কি সাত টা হবে। কাক ঢাকা ভোরে বললাম এই কারণে শীতকালে সকালে একটু দেরিতেই হয়। প্রচন্ড কুয়াশার মাঝে আমি তার পিছু পিছু স্যারের বাসা পর্যন্ত যেতাম তাই সেই দিনগুলোর কথা বেশি মনে আছে। প্রচণ্ড ঠান্ডা লেগেছিল তো সেটা কি আর ভোলা যায় হা হা হা। আমি যে সব সময় লুকিয়ে লুকিয়ে ওকে দেখি সেটা সে ভালোই বুঝতে পারে। তাই যখন সে বাঁকা চোখে আমার দিকে তাকায় আমার কি যে ভালো লাগে তা অবর্ণনীয়।
এভাবেই দেখতে দেখতে এসএসসি পরীক্ষা চলে আসলো আমি কখনোই তাকে ভালোবাসার কথা বলতে পারিনি। এটা অবশ্য আমার ইগো থেকে ওই যে বললাম এ কারণেই হয়তো আমার জীবনে প্রেম এত দেরিতে এসেছিল। সেই মেয়েটিকে দেখতে দেখতে আমার দিনগুলো খুব ভালই কেটে যাচ্ছিল। আমি কখনো আর অন্য কোন মেয়ের দিকে সেভাবে তাকাইনি। সেটা আমার কখনো হয় না এখন বুঝতে পারছি সেটা খুব ভুল ছিল তা না হলে প্রেমটা হয়েই যেত। যাইহোক পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পর সে যে কোথায় ভর্তি হলো আর তাকে খুঁজেই পেলাম না। আমিও নিজ জেলায় সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে গেলাম। এইচএসসি পাশ করার পর ভার্সিটিতে চান্স না হওয়ায় সেখানেই অ্যাকাউন্টিং নিয়ে অনার্সে ভর্তি হই। ও হ্যাঁ আপনাদের সেই মেয়ের নামটাই বলা হয় নি
ওর নাম সুরভী।
![]() |
---|
আমি নিয়মিতভাবে ক্লাস করতে থাকলাম এমন সাবজেক্ট নিয়েছি ফাঁকি দিলে আর চলবে না। বন্ধুদের মধ্যে বেশ কয়েকজন এই কলেজেই বোটানিতে ভর্তি হয়েছিল। একদিন কি যেন এক কারণে আমার ক্লাস অফ ছিল। আমার বন্ধুদের সাথে টাইম পাস করার জন্য বোটানির ক্লাসরুমে গিয়ে আড্ডা দিতে থাকি। ঠিক সেই মুহূর্তে স্যার এসে পড়ায় সেখানেই বসে যাই ওদের সঙ্গে। আশ্চর্য আমি এটার জন্য কোনভাবেই প্রস্তুত ছিলাম না। আমি আবিষ্কার করলাম সেই চোখ। আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। আরে এ তো "সুরভী" মনে মনে একটি প্রশ্ন বারবার উকি দিচ্ছিল এতদিন সে কোথায় ছিল। তারপর হঠাৎ করে যখন আমার দিকে একবার তাকালো আমি সেখানেই ঘায়েল হয়ে গেলাম।
এখন আমি প্রতিদিন একবার হলেও বোটানির ক্লাসে এসে বসে থাকি। এবার সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আর সেই ভুল করবোনা যেভাবেই হোক ওর মোবাইল নাম্বার পেতেই হবে। ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয় মোবাইল নম্বর নিয়ে একদিন টুক করে একটা মিসড কল দিলাম। তার দু একদিন পর কল দিলাম রিসিভ হওয়ার পর আমি নিশ্চুপ থেকে তার কন্ঠ শুনলাম। এভাবেই ধীরে ধীরে তার সঙ্গে ফোনালাপ চালিয়ে গেলাম। একদিন হঠাৎ করে আমি প্রাইমারি থেকে শুরু করে সমস্ত কথাগুলো সুরভীকে বলে দিলাম। তারপর কয়েকদিন আর সুরভীকে ফোন করিনি। তারপর যখন ফোন করলাম তখন লক্ষ্য করলাম সে আমার সাথে বেশ সহজ ভাবে কথা বলতে লাগলো। আস্তে আস্তে আমাদের কথা বলার সময়টা বেশ দীর্ঘায়িত হতে লাগলো। কিন্তু আমি যে সেই ছেলে বোটানির ক্লাসে গিয়ে বসে থাকতাম সেটা সে আজ পর্যন্ত জানে না। আর জানা সম্ভাবও নয় এখন সে আমার থেকে অনেক দূরে সুদূর আমেরিকায়।
আমাদের ওই সময়ে যারা মোবাইল ব্যবহার করতেন তারা খুব ভালোভাবেই জানেন। গ্রামীণফোনের djuice সিমের কল্যানে আমাদের রাত জেগে কথা বলা খুব ভালোভাবেই জমতো। এমন এক সময় ছিল মাত্র ২.৫০ টাকা খরচ করে সারারাত কথা বলা যেত। সেই সুবিধা নিয়ে আমাদের মাঝে মাঝে কথা বলতে ফজরের আজান দিয়ে দিত। কিন্তু আমরা কখনো কেউ কাউকে ভালোবাসার কথা বলিনি। অনেক সময় যখন দেখতাম বটগাছ তলায় সে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে ঠিক ওই সময় আমার ক্লাস রুমের বারান্দা থেকে আমি সুরভীকে কল দিতাম। আমি ওকে বলতাম আমি পাশেই আছি তখন সে আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইত আর আমি চুপ থাকতাম।
আমি কখনোই সুরভীকে ভালোবাসার কথা বলিনি যদি সে আমাকে প্রত্যাখ্যান করে সেটা আমি মেনে নিতে পারব না। তাছাড়া আমি সবসময় প্রত্যাশা করেছিলাম যে আমাকে প্রথম ভালোবাসা কথা বলবে আমি তার সাথেই প্রেম করবো। কিন্তু সুরভীর সাথে আমার ওর বিয়ের আগের দিন পর্যন্ত কথা হয়েছিল। সেও আমাকে নানান আঙ্গিকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল। এমনকি যেদিন তাকে দেখতে আসবে সেদিনও আমাকে জানিয়েছিল। হয়তো সেও প্রত্যাশা করেছিল আমার মুখ থেকে প্রথম ভালোবাসার কথা শুনবে। আবার আমার জীবনের প্রথম ভালোলাগা হারিয়ে গেল। প্রথম প্রেমের স্বাদ আমি এখনো পেলাম না। ওই যে বলেছিলাম আমার মত ছেলেদের জীবনে প্রেম একটু দেরিতেই আসে। সুরভীর ঐদিনই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল ছেলে বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত। পরে শুনেছিলাম বিয়ের পর সুরভীকে নিয়ে আমেরিকায় চলে গিয়েছিল।
তারপর থেকে কখনোই আমি আর কোন মেয়ের দিকে তাকাতে পারিনি। সেরকমভাবে কারো প্রতি আমার প্রেম জাগেনি। লেখাপড়া শেষ করে একপর্যায়ে কর্মক্ষেত্রে জড়িয়ে পড়ি নানান উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে সামনে এগিয়ে যাই। বাড়ি থেকে একপর্যায়ে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। বাবা-মা পছন্দ করে একটি মেয়েকে আমাকে ডেকে পাঠায়। এক পর্যায়ে আমিও দেখতে যাই সেই মেয়েটিকে আবারো সেই চোখ কিন্তু মেয়েটি আলাদা। আমারও ইচ্ছা ছিল বাবা-মার পছন্দে বিয়ে করবো তো আর অপেক্ষা কিসের। ঠিক দুইদিন পরেই বিয়ের বাদ্য ভেজে গেল। আমিও আমার প্রথম প্রেম খুঁজে পেলাম।
বিয়ের প্রথম রাতে প্রত্যেকটা মেয়ে হয়তো তার স্বামীর কাছে এই ধরনের কথা প্রত্যাশা করে না। যেটা আমি প্রথম রাতেই তাকে বলেছিলাম। আমার বাবা মাকে নিজের বাবা-মার জায়গায় বসাতে হবে আসলেই এ কথাটা প্রত্যাশিত। কিন্তু আমাকে আশ্চর্য করে দিয়ে সে এখন পর্যন্ত এভাবেই আছে যেটা সচরাচর চোখে পড়ে না। আর আমি আমার জীবনে প্রথম ভালোবাসার কথা আমার স্ত্রীর মুখ থেকে শুনেছি। আমার জীবনের প্রথম প্রেমের অনুভূতি এখান থেকেই শুরু। অন্যদের প্রেম আর আমার প্রেমের মধ্যে বিস্তর ফারাক। সবাই প্রেম করে বিয়ের আগে আর আমি প্রেম করছি বিয়ের পর থেকে।
আমার শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার আগে অনেক সুন্দর একটি জায়গা আছে। অনেক বড় একটি পুকুর, বাঁধানো ঘাট এবং পুকুরের পাশে অনেক বড় মেহগনি গাছের বাগান। ছোটখাটো একটি শিশুপার্ক যেখানে খুব ভালো সময় কাটানো যায়। বিয়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত আমার স্ত্রী বাবার বাড়ি গেলে আমি প্রতিদিন সেই পার্কে ডেকে নিয়ে এসে প্রেম করি। আসলে বিয়ের পর প্রেম করার মজাই আলাদা। প্রথম প্রেমের অনুভূতি বলতে আমার কাছে এই টুকুই। আর আমি আমার এই অনুভূতি নিয়েই সারা জীবন কাটিয়ে দিতে চাই। আমি সবসময় বিশ্বাস করতাম যে আমাকে ভালোবাসবে আমি তার সাথেই প্রেম করবো। অবশেষে আমি আমার প্রথম প্রেম খুঁজে পেলাম। দিনশেষে বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে আমি অনেক সুখেই আছি। আমার প্রথম প্রেম নিয়ে আমি গর্ব করতে পারি।
এই ছিলো আমার প্রথম প্রেমের অনুভূতি।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
পঞ্চম শ্রেণীতে এসবের কোন বালায় নেই আমার জীবনে । বরং বন্ধুরা নিজে প্রেম করে তাদের প্রমিকার বান্ধবির সাথে আমার নাম জড়িয়ে স্কুলের দেওয়াল লিখনে মেতে উঠতো । কি লজ্জাটাই না পেতাম সেই সময় ।
জাস্ট ভালো লাগা ছিল।
সে ভালোলাগা তার বিয়ের আগ পর্যন্ত ধরে রেখেছিলাম।
এক এক জনার প্রেমের কাহিনী বড়ই রোমান্স কর। তবে এই কনটেস্টে প্রেমের কাহিনী গুলো পড়তে আমার বেশ ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে যেন অধিকাংশ মানুষই প্রেম বিরহী। তবে সমস্যা নেই ভাইজান একেক জোনাকের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আমি রয়েছি। আপনার কাহিনীটা বেশ ভালো লাগলো আমার।
ভাই সবাই ছ্যাকা খাওয়ার ভয়ে প্রেম বিরহী হয়ে গেছে।