আমাদের এলাকায় বেশ কিছুদিনের বৃষ্টি উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়েছিল। অবরত কয়েকদিন বৃষ্টির কারণে আমার মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যেতে পারিনি। সেই দিনটি ছিল ২৫ শে জুন। অনেকদিন বৃষ্টিপাতের পর সেদিন সকাল বেলায় রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া দেখে মেয়েকে নিয়ে স্কুলে চলে আসলাম। আমি সব সময় সকালবেলা মেয়েকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আমার কাজের জায়গায় চলে যাই। সেদিনও ব্যতিক্রম হয়নি স্কুলে ওকে নামিয়ে দিয়ে আমি প্রতিদিনকার মত কলেজ মোড়ে এসে দাঁড়াই। তখনো আমার মাথায় ছিলনা ২৫ শে জুনের কথা।
কলেজ মোড়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে লক্ষ্য করলাম বেশ নিরাপত্তাবেষ্টনী জোরদার করা হয়েছে। কেমন যেন একটা উৎসব মুখর পরিবেশ দূর থেকে ব্যান্ড পার্টির আওয়াজ কানে ভেসে আসছে। আসলে নানামুখী সমস্যার কারণে আজকের বিষয়টা মাথা থেকেই ছুটে গিয়েছিল। হ্যাঁ আমি ২৫ শে জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন উদ্বোধন কথাই বলছি। আমি দূর থেকে যে ব্যান্ড পার্টির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে আমার কাছে চলে আসলো। আসলে এটি ছিল পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে আনন্দ রেলি। এটি পুরো শহর প্রদক্ষিণ করে টাউন হলে এসে শেষ হবে।
প্রথমেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশের একটি ভ্যান ও ডিবির কিছু সদস্য হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল। তারপর শুরুতেই সরকারদলীয় জেলা নেতৃবৃন্দের একটি অংশ ব্যানার হাতে নিয়ে অতিক্রম করল। আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে সর্বস্তরের লোকজন এই আনন্দ উৎসবে অংশগ্রহণ দেখে। আসলে এটা শুধু একটি সেতুই নয় আমাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। আর তাই দেশব্যাপী সকলের মনে এত উচ্ছাস।
আমি বেশ কিছু সময় সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে ছিলাম এটা দেখার জন্য যে আনন্দ রেলিতে অংশগ্রহণ কি রকম হয়। এখন দেখতে পেলাম পুলিশের পক্ষ থেকে একটি ব্যানার হাতে নিয়ে কিছু সদস্য এগিয়ে যাচ্ছে। তারপর পরেই ছিল ডিগ্রি কলেজের ছাত্র-ছাত্রী এবং হাসপাতালে কিছু স্টাফ। সভার উদ্দেশ্য একটাই এই আনন্দ উৎসবে নিজেদের অংশিদার করে রাখা।
সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে লক্ষ্য করলাম সর্বস্তরের লোকজন আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণ করেছে। লক্ষ্য করলাম একে একে গার্লস স্কুল ও বয়েজ স্কুলের সকল ভাই ও বোনেরা এখানে অংশগ্রহণ করেছে। তারপরেই ছিল পৌর আওয়ামী লীগের ব্যানার হাতে নিয়ে একটি অংশ। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরও যখন লক্ষ্য করলাম শেষই হচ্ছে না আর এই রেলি পুরো শহর প্রদক্ষিণ করবে। তখন আমি এখান থেকে টাউন হলের দিকে চলে গেলাম যেখানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে।
ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকার পর আনন্দ রেলি পুরো শহর প্রদক্ষিণ করে কলেজ মোড়ে চলে আসলো। তারপর সেখান থেকে টাউন হলের দিকে চলে গেল। আমিও পরিস্থিতি একটু শান্ত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করলাম। তারপর এগারোটার দিকে যখন সেতু উদ্বোধনের আয়োজন শুরু হল তখন আমি টাউনহলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
শুরু হলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ কোটি প্রাণের স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন। সারাদেশে একটা উৎসব মুখর পরিবেশ। বিশেষ করে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে যেন আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। পুরো দেশ তাকিয়ে আছে সেতু উদ্বোধনের দিকে। একটা বিষয় আমার খুব ভালো লেগেছে। আমরা সবাই দল মত নির্বিশেষে এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কবে আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। আমি নিজেও সেখানে উপস্থিত থাকতে না পারলেও এখান থেকেই সেই আনন্দ উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কোন কোন সময় মনে হচ্ছিল আমি নিজেও যেন সেতু প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। তবে খুব শীঘ্রই চেষ্টা করব পদ্মা সেতু ও আশেপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
![Logo-1.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmbZYNxy7yACEKsx9y5jEoHEvabbVJuaPaTqiEciHLh398/Logo-1.png)
![3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmeNW8WGqB2SscxBbm243ErNeLe1aTY8yLYdZGXGZgGfeS/3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif)
এটা শুধু একটি সেতু নয় আমাদের গর্বের বিষয় । কারণ পৃথিবীর ১০ টি বৃহত্তর সেতুর মধ্যে পদ্মা সেতুর নাম রয়েছে। এটি আমাদের একপ্রকার স্বপ্ন ছিল , বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের মানুষরা এখন একটু স্বস্তিতে চলাফেরা করতে পারবে । আমাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসছে ।
এই সেতু আমাদের গর্বের সাথে সাথে অনেক কিছু প্রমাণ করারও ছিল।
বাস্তব ছবির সাথে মিলিয়ে বাস্তব কথায় প্রবন্ধ রচনা বিষয়টি আমার কাছে খুবই সুন্দর লাগলো। সত্যিই লেখাতে আপনার অনেক হাত বলে আমার মনে হয়।
ভাই সুন্দরবন মন্তব্য করে আমাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠান আমি টিভিতে অবলোকন করলাম। আসলে অনেক মানুষের আশা ভরসার জায়গা এই পদ্মা সেতু। আপনাদের পুরো এলাকা বেশ উৎসব মুখর পরিবেশ ছিল বোঝাই যাচ্ছে। সবাই মিলে বেশ দারুন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করলেন। ভালো পোস্ট উপস্থাপনা করেছেন।
শুভ কামনা রইল আপনার জন্য 💌
ঐদিন আমাদের এখানে বিভিন্ন অফিস থেকে আনন্দ মিছিল বের হয়েছিল। আসলেই পুরো শহর আনন্দে মেতে উঠেছিল।
দারুন লিখেছেন আপনার অনুভূতি গুলো। আপনি যে 25 শে জুন এর কথা ভুলে গিয়েছেন কিন্তু পরিবেশ তা আপনাকে মনে করিয়ে দিয়েছে। দারুন ছিল আপনার অনুভূতি গুলো সেইসাথে ফটোগ্রাফি গুলো। তবে ঠিকই বলেছেন বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু আনন্দ রেলি হওয়া এটা স্বাভাবিক। তবে এতে করে মানুষের ভোগান্তি অনেকটা কমে যাবে এবং ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুখময় স্বপ্নের একটা দিন চলে এলো। সর্বস্তরের মানুষের জন্য জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য শুভেচ্ছা রইল।
আগে থেকেই জানতাম ভাই।
কিন্তু সকালবেলা মেয়েকে তাড়াহুড়া করে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য চলে গিয়েছিলাম।
হঠাৎ ব্যান্ড পার্টির আওয়াজ শুনে মনে করে যায়।
পদ্মা সেতু আমাদের সপ্নের সেতু। নিজেদের অর্থায়নে করা এই সেতুটি দক্ষিণবঙ্গের মানুষের কষ্ট লাঘব করতে অনেক ভূমিকা পালন করবে। আনন্দ র্যালিটি দেখে অনেক ভাল লাগল।
একদম ঠিক বলেছেন দক্ষিণবঙ্গের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি সাধন হবে।