সমস্যা গুলোকে পাশ কাটিয়ে কিছুটা বিনোদনের আশায় ||পর্ব -১||
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন আমার কলিগ দ্রুতিগ্রস্ত ও প্রতারক এরশাদুলের কথা। গত বৃহস্পতিবার আল্লাহর অশেষ রহমতে সমস্ত টাকা উদ্ধার করার পর তাকে বরখাস্ত করেছিলাম। তার জায়গায় নতুন লোক নেয়ার জন্য শুক্রবার ছুটির দিন থাকা সত্ত্বেও চিলমারী যেতে হয়েছিল। নতুন কাউকে জয়েন করার আগে কিছু ফরমালিটি সম্পন্ন করতে হয়। তার মধ্যে অন্যতম একজন জামিনদারের স্ট্যাম্প পেপারে লেখা এগ্রিমেন্টে সিগনেচার নেয়া। সেটা ওই জামিনদারের বাসায় গিয়ে আমাকে নিতে হয়।
যাইহোক আমি ঠিক সেই উদ্দেশ্যেই শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়ে বাসা থেকে বের হয়েছিলাম। দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়, আবার যে কম সেটাও বলা যাবে না। যেতে হবে ৩৫ কিলোমিটার পথ। চিলমারী যাওয়ার জন্য কুড়িগ্রাম সদর থেকে বাস যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে অনেক আগেই। এখন শুধুমাত্র ঢাকাগামী কোচ গুলো চলাচল করে। আর সিএনজি, অটোরিকশা ও কিছু থ্রি হুইলার কুড়িগ্রাম সদর থেকে চিলমারী বন্দর পর্যন্ত চলাচল করে। তো বাসা থেকে বের হয়েই একটি রিক্সা নিয়ে স্ট্যান্ডে চলে গেলাম।
আজকেও অন্যান্য থ্রি হুইলার গুলো বন্ধ পেলাম তাদের ধর্মঘট এখনো শেষ হয়নি। উপায় না পেয়ে অটো রিক্সা নিয়ে রওনা দিলাম। রাস্তা যেন শেষ হতেই চাচ্ছে না। আসলে অনেকদিন থেকে এত লম্বা রাস্তা অটো রিক্সায় যাওয়া হয় না, তাই হয়তো বিরক্ত লেগে গেল। এক ঘন্টার বেশি সময় লেগে গেল চিলমারী পৌঁছাতে। আমার পৌঁছতে কিছুটা দেরি হওয়ায় নতুন কলিগের জামিনদার কিছুক্ষণের জন্য বাইরে চলে গিয়েছে। এই সুযোগে আমিও আমার বিধ্বস্ত মনকে কিছুটা বিনোদন দেয়ার আশায় ব্রহ্মপুত্র নদের দিকে চলে গেলাম।
এই দিকটায় অনেকটা সময় আসা হয়নি। কয়েক বছর হয়ে গেল এই ঘাট দিয়ে পারাপার হই না। বর্তমান সরকার চিলমারী নদী বন্দর ঘোষণা দেয়ার পর থেকে আসাই হয়নি। এমন এক সময় ছিল যখন আমরা খুব ছোট তখন চিলমারী নদী বন্দর জমজমাট ছিল। কালের বিবর্তনে নদী বন্দরে সেই জৌলুস হারিয়ে গিয়েছিল। নদীবন্দরের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় দেশ-বিদেশ থেকে কোন জাহাজ আর চিলমারী ঘাটে আসতো না। অবশ্য বিদেশী জাহাজের মধ্যে বেশিরভাগ ভারতীয় জাহাজ দেখা যায়।
এই ঘাটটি নতুন সংযোজন পানির উঠানামার সঙ্গে এটিও উঠানামা করে। আগে যখন আমরা চিলমারী ঘাট দিয়ে নদী পাড় হয়ে রৌমারী যেতাম নৌকায় উঠতে খুব কষ্ট হতো। এখন এই দিক দিয়ে খুব সহজেই নৌকায় ওঠা যায়। এখন অনেক সুন্দর করে ব্লক দিয়ে ঘাটটি বাঁধানো হয়েছে। অথচ এই কাজটি যদি আরও কয়েক বছর আগে হতো। তাহলে চিলমারী উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেত না।
বর্তমানে চিলমারী নদী বন্দরে বিভিন্ন রকমের ট্রলার, ছোট ছোট জাহাজ, ডিঙ্গি নৌকা সহ অনেক নৌযান লক্ষ্য করলাম। নতুন করে নদীবন্দর ঘোষণার আগে শুধুমাত্র মান্দাতার আমলের বাঁশের ছাউনি দেয়া কিছু নৌকা ছিল। পুরনো এই নৌকা গুলো দিয়ে যাতায়াত করার সময় অনেক ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেত। একবার তো আমি নৌকায় নদী পার হওয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়েছিলাম। সেবার ওই ঝড়ের মুখে প্রচন্ড ঢেউয়ে নৌকার তলা খুলে গিয়েছিল। কোনরকমে জানে বেঁচে গিয়েছিলাম সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে। থাক সেসব কথা বলে আবার মন খারাপ করতে চাচ্ছি না। দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে উঁকি দিতেই গোধূলি লগ্নে সূর্যের কিছু লাল আভা চোখে পড়ল। নদীর বিশাল জল রাশির উপরে এই দৃশ্য দেখে মনটা ভরে গেল।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
ডিভাইস | স্যামসাং গ্যালাক্সি A-10 |
---|---|
ফটো | @mayedul |
লোকেশন | w3w location |
সমস্যা ছাড়া জীবন হয় না।সমস্যা সমাধান করেই জীবনে এগিয়ে যেতে হয়।আর এটা সত্যি যে নদীর জৌলুস অনেকটাই কমে গিয়েছে।সবাই এখন সহজপন্থা অবলম্বন করে আর সময় সাশ্রয় এর চেষ্টা করে।
আপনার প্রতারক কলিগের কাছ থেকে পাওনা টাকা উদ্ধার করতে পেরেছেন জেনে খুবই ভালো লাগলো। আল্লাহর অশেষ রহমত। তাছাড়া নতুন লোক নিয়োগ করার জন্য আপনি এতদূর এসেছেন। এবার নিশ্চয়ই দেখে শুনে লোক নিয়োগ দিবেন। আপনার আসতে দেরি হওয়ার কারণে লোকটি চলে গিয়ে ভালোই হয়েছে। তা না হলে প্রকৃতির মাঝে এত সুন্দর সময় কাটাতে পারতেন না । নতুন করে এই নদী বন্দরটি আবার ঘুরে ঘুরে দেখতে পারতেন না। এত সুন্দর আবহাওয়া ঘুরে মন নিশ্চয়ই অনেক ভালো হয়ে গিয়েছিল।
ঠিক বলেছেন ভাই জীবনে সমস্যা আসবেই তাই বলে থেমে থাকলে চলবে না। সমস্যাগুলো পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আপনার গতপর্বের পোস্ট টা পড়েছিলাম। চোর যত চালাকই হোক প্রমাণ রেখে যাবেই। চিলমারী বন্দর টা দেখে বেশ ভালো লাগল। বেশ সুন্দর জায়গা।।
যেকোনো সমস্যা মানুষের জীবনের কিছুটা হলো দুর্ভোগ ডেকে আনে যেটা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর নিজের কাছে খুবই ভালো লাগে। আর মনকে ফ্রেশ ্ রাখতে হলে প্রকৃতির মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিতে হবে। যাইহোক, আপনার সমস্যাটি সমাধান হয়েছে সেটা জানতে পারলাম অনেক ভালো লাগলো।
আসলেই ভাই কয়েকদিনের মানসিক চাপে মন মানসিকতা একেবারেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেদিন চিলমারী নদী বন্দরে কিছুটা সময় কাটিয়ে মনের মাঝে শান্তি নিয়ে ফিরে এসেছিলাম।
আপনার দুর্নীতিগ্রস্ত কলিগের কাছে টাকা উদ্ধার করার বিষয়টি জানতে পেরে ভালো লেগেছে। আসলে মানুষ বিশ্বাসঘাতকতা করলে ভীষণ খারাপ লাগে।
চিলমারী নৌবন্দর বেশ ভালো লেগেছে আমার কাছে। আমাদের এখানে টংগী নদীবন্দর রয়েছে, দেখতে এরকম অনেকটাই।
নদী বন্দরে একবার দূর্ঘটনায় পরেছিলেন বলেছেন, যাক সে যাত্রায় উদ্ধার পেয়েছেন এটাই বড় বিষয়। আর এখন তো অবস্থা ভালোই দেখলাম। ধন্যবাদ ভাই ভ্রমনের বিস্তারিত তুলে ধরার জন্য।
এই দিক দিয়ে যাতায়াতের সময় মাঝে মাঝেই এরকম দুর্ঘটনা ঘটত। মান্ধাতার আমলের নৌকাগুলো বেশি ব্যবহৃত হতো। অনেক সময় প্রচন্ড ঢেউয়ে নৌকা ডুবে যেত। বিশেষ করে কয়েক বছর আগে নদী বন্দরের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় আমূল পরিবর্তন আসে।