স্বপ্নভঙ্গ || 10% beneficiary to @shy-fox.
হ্যালো আমার বাংলাব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
![]() |
---|
যাইহোক আমি অল্প পরিসরে পাথর আমদানি করা শুরু করলাম। বেশ ভালই চলছিল আমার আমদানি ব্যবসা। হঠাৎ করেই ছন্দপতন ঘটে করনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করার কারণে। পর্যাক্রমে দেশের সর্বত্র লকডাউনের আওতায় চলে আসে। আপনারা সবাই অবগত আছেন যে দেশের সর্বত্র লকডাউন এর কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অফিস-আদালত সবকিছু প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই দেশের সমস্ত স্থল বন্দর বন্ধ হয়ে যায়। আমার স্বপ্ন গুলো যখন কেবল ডানা মেলতে শুরু করেছিল। ঠিক তখনই করোনা নামক মহামারীর দমকা হাওয়ায় সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে যায়।
দীর্ঘ এক বছর স্থল বন্দর বন্ধ থাকার কারণে আমার সবকিছু সেখানে আটকা পড়ে থাকে। আমার সমস্ত পুজি সেখানে বিনিয়োগ করা ছিল তাই আর আমি অন্যকিছু শুরু করতে পারিনি। কিন্তু জীবন তো আর থেমে থাকে না। জীবন ও জীবিকার সন্ধানে আমাদের সামনের দিকে পা এগুতেই হয়। আর তাই দীর্ঘদিন কর্মহীন থাকার পর আমার দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার উপক্রম। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যেভাবেই হোক একটি চাকুরীর সন্ধান করতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ আমি দুই সপ্তাহের ব্যবধানেই একটি ব্যবস্থা করে ফেললাম। একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কম্পানিতে এরিয়া ম্যানেজার পদে যোগদান করলাম। যোগদানের পর নিয়ম অনুযায়ী আমাকে পুরো জেলায় ছয় জন লোক নিয়োগ করতে হবে। আমি খুব দ্রুততার সহিত লোকবল নিয়োগ করলাম। সবকিছু ভালো ভাবেই চলতে লাগলো নতুন করে আবার আমার স্বপ্নের শুরু হল। আমার যেমন স্বপ্নের শুরু হলো ঠিক তেমনি আমার এক কলিগের স্বপ্নভঙ্গের দৃশ্য চোখে দেখতে হলো।
আমার ছয়জন কলিং এর মধ্যে আজিজুল হক নামে একজন কলিগ ছিল। সে প্রতি মাসেই খুব ভালো পারফর্মেন্স করে আসছিল। অবশ্য আমিও তাকে অনেক ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলেছি। বেশ কয়েক মাস সে ভালোভাবেই কাজ করে আসছিল। প্রতিমাসেই তার সেলস ক্লোজিং সবথেকে ভালো ছিল। হঠাৎ করেই এক মাসে তার ক্লোজিং হলো না ফোন দিয়েও তাকে আর পাচ্ছিনা। অনেকদিন অপেক্ষা করার পর আমার যখন উপর থেকে অনেক চাপ আসতে থাকলো তখন তাকে ধরার জন্য তার বাসায় চলে গেলাম। তার বাসাটা থানা শহর থেকে অনেক দূরে একেবারে ইন্ডিয়ার বর্ডারের কাছে। সেখানে যাওয়ার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ বাইক নিয়েও যাওয়া যায় এমন অবস্থা তাই অনেক কষ্ট করে তার বাসায় গিয়ে উপস্থিত হলাম।
বাসায় গিয়ে দেখলাম সে অনেক অসুস্থ বিছানায় শুয়ে আছে। অসুস্থতার মাঝেও তার সাথে কথা বলতে হল কারণ ক্লোজিং করতে না পারলে মামলা হওয়ার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এই ধরনের কোম্পানীগুলোতে চাকরি শুরু করার সময় স্ট্যাম্পে এগ্রিমেন্ট সহ ব্ল্যাংক চেক প্রদান করতে হয়। এক থেকে দুই মাস অপেক্ষা করার পর যখন পণ্যের বিপরীতে টাকা তারা পায়না তখন সেই ব্ল্যাংক চেক ডিজঅনার করে মামলা করে দেয়। যাক সেসব কথা এই নিয়মগুলো চাকরি শুরুতেই সবাইকে অবগত করা হয়। তারপরেও এই বিষয়গুলো নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করলাম যেহেতু সে অসুস্থ তাই সেখানে বেশীক্ষন অপেক্ষা করলাম না। কোম্পানির টাকাগুলো দ্রুততার সহিত পরিশোধ করার কথা বলে সেখান থেকে চলে আসলাম।
কিছুদিন অপেক্ষা করার পরেও যখন টাকাগুলো কম্পানি ফেরত পাচ্ছে না তখন আমার উপর চাপ বৃদ্ধি করতে থাকলো। তারা আমাকে দুইটা অপশন দিয়ে দিল এক আপনি মামলা করার অনুমতি দিয়ে দেন আর না হয় টাকা গুলা পরিশোধ করেন। এরিয়া ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করা এই এক প্যারা উপর থেকেও চাপ নিচ থেকেও চাপ। যেহেতু কলিগ গুলো আমার দায়িত্ব নেয়া তাই আমার ছাড়পত্র না পেলে তারা মামলা করতে পারবে না। আর যদি আমি মামলা করতে না দেই টাকাগুলো আমাকে পরিশোধ করতে হবে। শেষপর্যন্ত উপায় না পেয়ে আমি মামলা করার কথা বলে দিলাম। এই কথা বলার কিছুদিন পরেই উকিল নোটিশ চলে আসলো। এখন এক মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে মামলা শুরু হয়ে যাবে।
এক মাসের মধ্যে যখন টাকা পরিশোধ হলো না তখন ওদিকে মামলা শুরু করে দিয়েছে আর পরের ডেটে হাজির না থাকলে ওয়ারেন্ট চলে যাবে। অবস্থা বেগতিক দেখে আমি তার বাড়িতে চলে গেলাম। আমি তার বাড়িতে যাওয়ার পর যে অবস্থা দেখলাম তাতে আমার চোখ কপালে উঠে গেছে। এই এক মাসের ব্যবধানে তার স্বাস্থ্যের এত পরিবর্তন দেখে রীতিমত অবাক হলাম। আমি কৌতুহলী হয়ে তার সাথে একান্তে কথা বলা শুরু করলাম পরে জানতে পারলাম এই এক মাসে সে বেশ কয়েকবার কেমোথেরাপি দিয়েছে। তার মলদ্বারে ক্যান্সার ধরা পড়ায় তাকে বাইপাস করতে বলেছে। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমি নিজেই যখন আবার নতুন করে স্বপ্নের জাল বুনেছি। তখন আমার এই কলিকের স্বপ্নভঙ্গের দৃশ্য গুলো দেখে খুব খারাপ লাগলো। আমি কোনভাবেই তার এই স্বপ্নভঙ্গের ভাগিদার হতে চাই না তাই মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত তখনই নিয়ে ফেলেছিলাম।
আমি যখন তার সাথে কথা বলছি তখনও সে প্রচন্ড ব্যাথায় কাতরাচ্ছিল। আর মাঝে মাঝে আমার সঙ্গে দাঁত কামড়ে কথা বলছে ব্যথার যন্ত্রণায়। আমি তার হাত ধরে বললাম আজিজুল ভাই আপনি টাকার জন্য চিন্তা করবেন না আপনি জমিজমা বিক্রি করে হলেও বাইপাস করে সুস্থ হয়ে ওঠেন এটাই কামনা করি আর আপনার কোম্পানীর মামলার বিষয়টা আমি দেখে নিচ্ছি। এই আশাবাদ ব্যক্ত করে সেখান থেকে চলে আসলাম। পরের দিন সকাল বেলা হেড অফিসের একাউন্ট সেকশনে কথা বলে তার মামলার বিষয়টা নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা করলাম। আমি কোম্পানিতে জানিয়ে দিলাম প্রতি মাসে আমার বেতন থেকে তার বকেয়া টাকা পরিশোধ করে দেবো।
এই কিছুদিন আগে তার স্টাম্পের এগ্রিমেন্ট এবং এবং ব্ল্যাংক চেক দুটো ফেরত নিয়ে এসেছিলাম। আমি সেই ডকুমেন্টস গুলো ফেরত দেওয়ার জন্য আবার তার বাড়িতে গেলাম। এইবার আমি তার বাড়িতে গিয়ে তার অবস্থা দেখে ও তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর আমার মনটা কিছুক্ষণের জন্য হলেও কেঁদে উঠেছিল। আইজুল ভাইয়ের ঘরে গিয়ে যখন ঢুকলাম তার স্বাস্থ্য এত খারাপ হয়ে গিয়েছে তাকে বিছানায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না এমন অবস্থা। কেমোথেরাপি দেওয়ার পরেও যখন কোন উন্নতি হলো না দিন দিন ব্যথা বেড়েই চলেছে তখন সে জীবনে আশা হারিয়ে ফেলেছে। আর আমাকে বলছিল বাইপাস করে এই কষ্ট নিয়ে সারা জীবন বেঁচে থাকার চেয়ে এখনই মরে যাওয়া ভালো। কথাগুলো শুনে আমরা এতো খারাপ লেগেছিল আর বেশীক্ষন থাকতে ইচ্ছা করেনি। মনের মধ্যে একটা কষ্ট নিয়ে অন্যের স্বপ্নভঙ্গের গল্পটা বুকের মধ্যে চেপে ধরে সেখান থেকে বেরিয়ে আসি।
আসলে এরকম আজিজুলের মত অনেকের স্বপ্ন শুরুর আগেই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। কিছু হয়তো আমরা দেখতে পাই আবার অনেক স্বপ্নভঙ্গের কারণ আমাদের অজানাই থেকে যায়। নতুন করে আমার স্বপ্নের যেখানে শুরু ঠিক আজিজুলের স্বপ্নভঙ্গের সেখান থেকেই শুরু। এই লেখাগুলো পড়ে আপনাদের কেমন লাগলো মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন আশা করছি।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
ভাই আপনার পেশা সম্পর্কে শুরুতেই আমার কিছুটা কৌতূহল ছিল। মাঝে মাঝে দেখতাম আপনি বিভিন্ন উপজেলার চরাঞ্চলগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আপনার পেশা সম্পর্কে মনে মন যে ধারণা করেছিলাম সেটাই মিলে গেল। যাই হোক স্বপ্নই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। মানুষ স্বপ্ন দেখে, সে স্বপ্ন ভেঙে যায়। তারপরেও মানুষ আবারো স্বপ্ন দেখে বেঁচে থাকার তাগিদে। সত্যি বলতে স্বপ্নই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। তবে আজিজুল হক ভাইয়ের মত মানুষের হঠাত এই স্বপ্নভঙ্গ সত্যিই কষ্টদায়ক। প্রার্থনা করি সৃষ্টিকর্তা যেন সকলের স্বপ্ন পূরণ করেন। আজিজুল হক ভাইয়ের মত কারো স্বপ্ন যেন ভঙ্গ না হয়। সবশেষে আপনি যে আপনার অধঃস্তন কর্মচারীর উপর যে ভালোবাসা আর দায়িত্ববোধ দেখিয়েছেন তার জন্য সত্যিই মনটা ভরে গেল। অন্তর থেকে শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
ভাই আপনার কমেন্টগুলো পড়ে আমি বারবার মুগ্ধ হয়ে যাই। এত স্বল্প সময়ের মধ্যে আপনি আমার পুরো লেখাটি পড়েছেন জেনে খুব ভালো লাগলো। আসলে আমাদের স্বপ্নগুলো নদীর মত একদিকে যেমন ভাঙ্গে তো আরেকদিকে গড়ে। আজিজুল কে দেখে আমারও খুব কষ্ট লেগেছে।
আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
আপনার উপর দিয়ে তাহলে অনেক চাপ বয়ে গেল। কোম্পানির চাকরিগুলা এরকমই টার্গেট ফিল আপ না করতে পারলে ঝামেলা করে বসে। এটা বড়ভাইদের কাছ থেকেও শুনেছিলাম। আপনি এরিয়া ম্যানেজার হওয়াতে চাপটা যেন আরও বেড়ে গেছে। আজিজুল ভাইয়ের বিষয়টা আসলেই খারাপ লাগলো শুনে। ক্যান্সার নামক পীড়ায় যখন সে ভুগছে ঠিক তখন মামলা করে দিলো, আর আপনি মামলার বিষয়টি বুঝে নিয়েছেন এটা জেনে ভালো লাগলো। তবে আজিজুল ভাই এখন কেমন আছে?
আসলে ভাই অনেক চাপ ভালো মনে করে যে লোকগুলোকে নেই পরবর্তীতে যখন মুখোশ খুলে বেরিয়ে আসে খারাপটা।
নিজের কাছেও খুব খারাপ লাগে।
আজিজুলের অবস্থা খুব একটা ভাল না চিকিৎসা বন্ধ করে এখন মৃত্যুর দিন গুনছে।
ঠিকই বলেছেন এরকম আজিজুল হকের মতো অনেকেরই স্বপ্ন ভেঙে যায়। কিন্তু আজিজুল হকের স্বাস্থ্যের সম্পূর্ণ অবস্থাটি জানতে পারলাম না সে কি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছে ভাই ?নাকি এখনো অসুস্থ তার মধ্যে আছে। শুরুতে আপনার স্বপ্ন ভঙ্গের কথা শুনে খুবই খারাপ লেগেছেগেছে পরবর্তীতে আজিজুল হক ভাইয়ের স্বপ্নভঙ্গের কথা শুনে মনটা ভেঙে গেছে।
শেষবার যখন তার বাসায় গিয়েছিলাম তখন দেখলাম চিকিৎসা সব বন্ধ করে দিয়ে শুধু হোমিও ঔষধ খাচ্ছে। শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ
আমাকে শুধু বলল আল্লাহ যদি বাঁচিয়ে রাখে এভাবেই থাকবো। তবু মলদ্বার বাইপাস করবো না।
এভাবে প্রতিনিয়ত অনেকেরই স্বপ্ন ভেঙে চুরে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভাগ্যের সামনে সবাই অসহায়। আজিজুল হক এর ক্যান্সার ধরা পড়া আর সেই মুহূর্তেই কোম্পানির মামলা ঠুকে দেয়ার ব্যাপারটি জানতে পেরে খুবই খারাপ লাগলো। তবে তুমি যে মামলা সামলিয়ে নিয়ে আজিজুল হককে সান্তনা দিতে পেরেছো এটা জেনে ভালো লাগছে। ধন্যবাদ তোমাকে।
শেষবার যখন তার বাসায় গিয়েছিলাম তখন সে মৃত্যুর দিন গুনছে।
এই অবস্থায় বকেয়া টাকাগুলো নিজের দায়িত্বে নেয়া ছাড়া আমার তেমন কিছুই করার ছিলনা।
ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো।মানুষের যখন স্বপ্ন ভেঙে যায় তখন মনে হয় তার থেকে হতভাগা আর কেউ নেই। আপনি এরিয়া ম্যানেজার হওয়াতে মনে হয় এত জামেলা পোহাতে হয়েছিল। আজিজুল ভাইয়ার জন্য অনেক খারাপ লাগছে।দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দেন। এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
বর্তমানে আজিজুলের অবস্থা খুব একটা ভালো নয় দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে সুস্থ দান করেন।