আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা-২৪ || ফেলে আসা জীবনের বন্ধুত্বের স্মৃতি
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
![]() |
---|
সবার মতো আমার জীবনেও চলার পথে অনেক বন্ধুর দেখা পেয়েছি। বন্ধুত্বের শুরু আসলে স্কুল জীবন থেকেই হয়ে যায়। প্রাইমারির গণ্ডি পেরিয়ে যখন আমরা মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হই তখন বন্ধুর পরিধি কিছুটা বেড়ে যায়। আমার জীবনে উল্লেখযোগ্য যে কজন বন্ধু হয়েছিল তারা প্রত্যেকেই আমার স্কুল জীবনের। ক্লাস সিক্স থেকে এইচএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত আমরা একসঙ্গেই ছিলাম। একসঙ্গে ক্লাস করেছি, কলেজ শেষে স্যারের বাসায় একসঙ্গে পড়তে গিয়েছি তারপর যে যার মত বাড়িতে।
এইচএসসি পরীক্ষার পর আমরা যে কজন বন্ধু ছিলাম সবাই বিভিন্ন জায়গায় ভর্তি হয়ে আলাদা আলাদা হয়ে গেলাম। আমার গ্রুপের বন্ধুদের মধ্যে দুজন মেডিকেলে ভর্তি হয়ে গেল। তারা অবশ্য এখন আমার শহরেই প্র্যাকটিস করে। বাকি একজন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল। সেও আমার শহরেই সরকারি কলেজের সহকারী প্রফেসর। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে আমরা আটজন একটা গ্রুপ ছিলাম। হাই স্কুল থেকে কলেজ অব্দি আমরা একসঙ্গেই ওঠাবসা করেছি।
বাকি বন্ধুরা আমরা এক কলেজেই অনার্সে ভর্তি হই। সাবজেক্ট ভিন্ন ভিন্ন হলেও আমরা সবসময় কলেজে একসঙ্গে আড্ডা দিতাম। কলেজ থেকে সিনেমা দেখা পার্কে আড্ডা দেয়া এমন কোন কাজ নেই যেটা আমরা একসঙ্গে করিনি। সেই স্মৃতিগুলো এখন খুব মনে পড়ে। আর ভাবি আমাদের সেই লাইফটাই মনে হয় অনেক ভালো ছিল। মাথার মধ্যে পরীক্ষা ছাড়া কোন চাপ ছিল না। এখনো জীবনে চলার পথে মাঝেমধ্যেই দেখা হয় কিন্তু সেভাবে আর সময় দেয়া হয় না। আসলে ব্যস্ততার ভিড়ে স্মৃতিগুলো এভাবেই চাপা পড়ে থাকে।
আমি এতক্ষণ যে বন্ধুদের কথা বলছি হয়তো আমরা একে অপরের প্রয়োজন ছিলাম। অথবা টাইম পাস করার সাথী তা না হলে অবশ্যই আমরা একে অপরকে অনেক মিস করতাম। আমাদের সম্পর্ক এখন হাই-হ্যালো এসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত না। কিন্তু স্কুল-কলেজের সেই সময়কার স্মৃতিগুলো আমি এখন খুব মিস করছি এটা বলতে পারি। আসলে প্রত্যেকের জীবনে ওই অংশটুকু অনেক স্মরণীয় হয়ে থাকে।
আমি প্রকৃত অর্থে বন্ধুর দেখা পেয়েছিলাম অনেক পরে। লেখাপড়া শেষ করেছি এখনো কর্মজীবনে পদার্পণ হয়নি। আমার মামাতো ভাই কামরুলের সঙ্গে আমার খুব ভালো ঘনিষ্ঠতা। কামরুলের বড় বোন মানে আমার মামাতো বোনের বিয়ের অনুষ্ঠান। দুদিনের ব্যবধানে হঠাৎ করে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। গ্রামের বাড়িতে যেতে হবে, আমি হয়তো অনেকবার বলেছি আমার গ্রামের বাড়িতে যেতে ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে যেতে হয়। যেহেতু হঠাৎ বিয়ের খবর পেয়েছি। তাই আজকে বিকালে নদী পার হতে না পারলে আর বিয়েতে অংশগ্রহণ করা হবে না। বিকাল পাঁচটার নৌকায় রওনা দিয়ে দিলাম বাসায় পৌঁছাতে বারোটা বেজে গিয়েছিল।
বিয়েতে কামরুলের মামাতো বোন এসেছিল। তারা সপরিবারে ঢাকায় থাকে খুব কম দেখা হয়। কামরুল এর আগেও তার মামাতো বোনকে অনেক দেখেছে কিন্তু এবার সে তার প্রেমে পড়ে গেলো। যাইহোক সেটা অন্য বিষয়। রাতের বেলা কামরুল আমাকে তার মামাতো বোনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। রাত্রে তেমন কথা হয়নি, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর সে আমার সঙ্গে দেখা করলো। আমরা তখন পর্যন্ত কেউ কারো নাম জানতাম না। প্রথম প্রস্তাবটি তার কাছ থেকে এসেছে। সে আমাদের সম্পর্কের নাম দিতে চায় "বন্ধু"।
পরবর্তীতে কামরুলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অসংখ্যবার তার সাথে দেখা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি কথা হয়েছিল ফোনে। আমার মনে হয় এতটা সময় সে কামরুলের সঙ্গেও কথা বলেনি। এ নিয়ে অবশ্য তার অনেক অভিযোগ ছিল। কারণ দুজনের সমস্ত অভিযোগ আমাকেই সমাধান করতে হতো। যাইহোক আমার সেই বন্ধুত্বের সম্পর্ক বহু বছর অটুট। পরবর্তীতে অবশ্য কামরুলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়নি। বিয়ের অনেক বছর পরেও আমাদের কথা হতো। আসলে বাস্তবতা অনেক কঠিন। আমরা সবসময় সবকিছুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারি না। আমি ইচ্ছা করেই সেই বন্ধুকে ভুলে থাকার চেষ্টা করি। অবশ্য আমার বন্ধুটি আমাকে বলেছিল আমাদের বন্ধুত্ব আজীবন অটুট থাকবে। ফেলে আসা বন্ধুত্বের স্মৃতি গুলো আসলেই অনেক মধুর হয়।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।