আমার প্রতিদিনকার ট্যুর প্রোগ্রাম অনুযায়ী সকালবেলা রেডি হয়েই যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলাম। আজকে প্রোগ্রাম খুব বেশি দূরে নয় জেলা শহরের পাশের থানাতেই। আবার খুব যে একটা কাছে তাও নয় সব মিলিয়ে আনুমানিক ৫০ কিলোমিটার ভ্রমণ করতে হবে। প্রতিদিনের মতোই আমি আমার নিয়ম মাফিক কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু হঠাৎ করেই আমার কাছে একটি ফোন কল আসে যেটা একদমই অপত্যাশিত। নতুন করে আবার এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে এটা আমরা একদমই কেউ আশা করিনি। ফোন কলটি পেয়ে আমার মন খুব খারাপ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে একটা অস্থিরতা কাজ করলো। না জানি আবার সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়।
একটু পেছন থেকে না বললে আপনারা কেউ ভালোভাবে বুঝতে পারবেন না। আমি যে মেয়েটার কথা বলছি তার বিয়ে হয়েছিল আনুমানিক ৯ থেকে ১০ বছর হবে। কিন্তু সে এখনো মা ডাক শুনতে পারেনি। সেজন্য তারা স্বামী-স্ত্রী যে যেখানে যেতে বলেছে যে ডাক্তারের ট্রিটমেন্ট করতে বলেছে কোন কিছুরই কমতি রাখেনি। একজন মেয়ের পক্ষে এটা যে কতখানি কষ্টকর সেটা শুধু সেই মেয়েই বলতে পারে। এর আগে সে এক এক করে তিনবার প্রেগনেন্ট হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারেই তৃতীয় মাসে এসে তার মিসক্যারেজ হয়ে যায়। তারপর বেশ কয়েক বছর চেষ্টা করার পরেও তারা আর কাঙ্ক্ষিত সুফল পায়নি। এ নিয়ে তাদের মনে অনেক কষ্ট সেই সাথে কিছুটা পারিবারিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। সেটা অবশ্য তার স্বামীর পক্ষ থেকে নয় তার পরিবারের লোকজন এ নিয়ে নানান ধরনের কথা প্রতিনিয়ত শুনিয়েই যাচ্ছে। লোকমুখে শুনতে পাওয়া গেছে তারা তার ছেলেকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল। মানুষ যে কত খারাপ হতে পারে বা নিচু মনমানসিকতার হতে পারে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
যাই হোক কয়েক মাস আগে আমি ওদের সঙ্গে নিয়ে আমার পরিচিত এক গাইনী ডক্টরের কাছে আসি। এর আগে তারা অনেক বড় ডিগ্রিধারী ডক্টর এর ট্রিটমেন্ট করেছে কিন্তু কিছুতেই কোন সুফল পাওয়া যায়নি। কিন্তু আমার ছোট জেলা শহরের ডাক্তার কত বড় ডিগ্রিধারী আর হবে। সে কারণে তারা একপ্রকার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই আমার সাথে এসেছিলো। শুধুমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা আর। আমি তাদের বুঝিয়েছি যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন। হ্যাঁ ঠিক এই কথাটাই আমি তাদের বারবার বলেছি। শেষমেষ এই ডাক্তারের কাছে এসে চিকিৎসা শুরু করে দিলাম। আল্লাহর রহমতে তৃতীয় মাস যাওয়ার পর চতুর্থ মাসের চেষ্টাতেই একটি খুশির সংবাদ পাওয়া গেল। যাইহোক ডক্টরের পরামর্শ মতে সবকিছু ভালই এগোচ্ছিল। যেহেতু এর আগে তিনবার মিসক্যারেজ হয়ে গিয়েছে এটা ছিল চতুর্থবার। তাই সবকিছু খুব সাবধানতার সাথেই ছিল আর ডক্টরের পরামর্শও ছিল বিশ্রামে থাকা।
আমার কাছে যে ফোন কলটি আসলো তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আমি আজ যে এলাকায় কাজে এসেছি সেখান থেকে আমার শ্যালিকার বাড়ি ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার হবে। ও হ্যা আপনাদের তো বলাই হয়নি ঘটনাটি আমার শ্যালিকার। এরা দুটিই বোন এদের কোন ভাই নেই তাই কোথাও কোন প্রবলেম হলে প্রথমে আমাকেই স্মরণ করে। স্বাভাবিকভাবেই আজকেও প্রথম কলটা আমার কাছে এসেছে তাই আমি প্রথমে কাউকে কিছু না জানিয়ে সরাসরি বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে যে খবরটি শুনলাম তাতে আমি মোটামুটি ভয় পেয়ে গেলাম। বারবার সেই পূর্বের ঘটনাগুলি মনে পড়ছে। এবারও সেই তৃতীয় মাস চলছে আর জানতে পারলাম গতকাল থেকে হালকা বিল্ডিং হচ্ছে। যদি সেটা অল্প তাই আমি কোন রিস্ক না নিয়ে পরামর্শ দিলাম দ্রুত গাড়ি অ্যারেঞ্জ করে ডক্টর কাছে যেতে হবে। বলামাত্রই এক ঘণ্টার মধ্যে গাড়ি এসে উপস্থিত হলো আমরা হালকা কিছু খেয়ে রওনা দিলাম।
![20220529_203305.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmb5kDT31Ax3XzUqNsXGthg5vdj2oufxHrZzWp6C5Xk3ez/20220529_203305.jpg) |
![20220529_203244.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmSRnR894QhwgrwTtsy5PYbxdR3rZd3aXPrqtHA9NGwk9T/20220529_203244.jpg) |
![20220529_203214.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQme9rYDAENv8371iRkVbwpHrYrvhywKo9ePu1cUTvXREbE/20220529_203214.jpg) |
গাড়ির মধ্যে উঠে আমি শুধু ড্রাইভারকে বললাম ভাঙ্গা রাস্তাগুলো দেখে খুব দ্রুত চলে যান। এভাবে কিছুক্ষণ গাড়ি দ্রুতবেগে ছুটতে লাগলো। আমরা এক ঘণ্টার মধ্যেই শহরের ব্যস্ত রাস্তা পেরিয়ে ক্লিনিকের সামনে এসে উপস্থিত হলাম সামনে এসে উইপস্থিত হলাম। আসলে সবসময় একটি বিষয় পরিলক্ষিত হয় মানুষ যখন বিপদে পড়ে তাড়াহুড়া করে কোথাও পৌঁছতে চায় তখনই কোন কোন না কোন বাধার সম্মুখীন হয়। আমরা ঠিক যেই মুহূর্তে ক্লিনিকের সামনে এসে উপস্থিত হলাম তার কিছুক্ষণ আগে সেখানে কয়েকটা গাড়ি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রাস্তায় জ্যাম লাগিয়ে দিয়েছে। আমরা কোনক্রমেই সেই জ্যাম কে পাশ কাটিয়ে গাড়ি পার্কিং করতে পারলাম না। তাই কোন উপায় না পেয়ে গাড়িতে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো। অবশেষে ২০ মিনিট পর আমরা ভেতরে ঢুকে গাড়ি পার্কিং করে চেম্বারের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলাম।
![20220529_203827.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmSAV2Knu1oYJDm5KsZrM26RQggnmARE4dUBgWYR8idrpj/20220529_203827.jpg) |
![20220529_203924.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmcBTrfzLcuDMAaChq1EgbcwKh8UAKnoR6yTzSiZ98mtic/20220529_203924.jpg) |
![20220529_203755.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmUq5d4QWMRvteRwQrUfcTaMQyZ8aafDJoM3R2erUnVkuZ/20220529_203755.jpg) |
ডাক্তারের চেম্বারের সামনে আসতেই আরেক বিভ্রান্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হল। চেম্বারের সামনে প্রচুর রোগীর ভিড় তারা সবাই সিরিয়াল দিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে। যেহেতু আমরা একেবারে পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই চলে এসেছি তাই আগে থেকে আর সিরিয়াল দেয়া হয়নি। আমি সেখানকার ডক্টর এর সহকারীকে ডেকে রোগীর অবস্থার কথা বললাম। তারপর সে সিরিয়াল ছাড়াই দেখাতে রাজি হলো কিন্তু তাও আবার সামনের যে পেশেন্ট গুলো আছে তারপর। পেশেন্ট গুলো দেখে আমি যেটা বুঝতে পারলাম কম করে হলেও ৪০ মিনিট এর আগে সম্ভব নয়। আমি এদিক ওদিক পায়চারি করছিলাম আর ভাবতে লাগলাম এমনিতেই কাল থেকে হালকা বিল্ডিং হচ্ছে দেরি করলে আরো সমস্যা গুরুতর হয় কিনা।
এরকমটা যখন ভাবছিলাম তখন হঠাৎ করেই রিসিপশনের দিকে আমার চোখ পড়ল। তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারলাম ম্যানেজারের চেয়ারে যে লোকটি বসে আছে সে আমার স্কুল জীবনের বন্ধু। আমি দ্রুত আমার বন্ধুর কাছে গিয়ে ঘটনার আকস্মিকতা তাকে জানালাম সে তড়িঘড়ি করে আমার সঙ্গে এসে ডক্টর দেখানোর ব্যবস্থা করে দিল। ডক্টর পেশেন্ট কে দেখার পর সঙ্গে সঙ্গেই আলট্রাসনোগ্রাম করার জন্য লিখে দিল। আর চেকআপ করে বলল এখন পর্যন্ত সব ঠিকঠাক আছে টেস্ট করে রিপোর্ট নিয়ে আসেন বাকি পরামর্শ পড়ে দেয়া হবে। ডক্টর মুখে ভালো আছে কথাটা শুনে আমার কপালে চিন্তার রেখা কিছুটা হ্রাস পেল। আমরা তাড়াতাড়ি রিসিপশনে গিয়ে টেস্ট করার জন্য বিল পেমেন্ট করে আল্ট্রাসনোগ্রামি রুমে চলে গেলাম। রিসিপশনের সামনে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর রিপোর্ট চলে আসলো। রিপোর্টটি নিয়ে আমরা তাড়াতাড়ি ডাক্তারের রুমে চলে গেলাম। রিপোর্টে যা পাওয়া গেল সেটার ভালো মন্দ ডক্টর বলতে পারবে। আমাদের শুধু দুই সপ্তাহের ফলোআপ দিল আর বলল বিশ্রামে থাকেন বাচ্চা ভালো আছে। ডক্টর এর মুখে এই কথা শুনে কিছুটা হলেও ভয় কেটে গেল। পরক্ষণেই আবার দুই সপ্তাহের ফলোআপ এর কথা মনে পড়ে দুশ্চিন্তা কিছুটা থেকেই গেল। যাইহোক ডক্টর দেখিয়ে অতঃপর কিছুটা স্বস্তি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছি এটাই বা কম কিসের।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
![Logo-1.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmbZYNxy7yACEKsx9y5jEoHEvabbVJuaPaTqiEciHLh398/Logo-1.png)
![3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmeNW8WGqB2SscxBbm243ErNeLe1aTY8yLYdZGXGZgGfeS/3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif)
আসলে এরকম ঘটনা খুবই হৃদয় বিদারক। তবে শেষমেষ যে সব ঠিকঠাক আছে এবং বাচ্চা সুস্থ আছে এটাই স্বস্তির বিষয়। শুভকামনা রইল।
কিছু কিছু বিষয় আছে বেশ স্পর্শকাতর। বারবার শুধু মনে হচ্ছিল একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় কিনা। তবে শঙ্কা এখনো কেটে যায় নি বাকিটা আল্লার হাতে।
ভাইয়া প্রথমে আপনার টাইটেল দেখে তেমন কিছু বুঝতে পারিনি। কিন্তু আপনার সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ে সব বুঝতে পারলাম। সবশেষে মা ও বাচ্চা দুজনে ভালো আছে এটাই শুকরিয়া। ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
দোয়া করবেন আল্লাহ তাআলা যেন এবার সবকিছু ঠিকঠাক রাখে।
ধন্যবাদ আপনাকে।