অবশেষে মম'র ক্ষমা প্রার্থনা
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
খাবার টেবিলে বসবে, ঠিক সেই মুহূর্তে মোবাইল ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। একটু বিরক্ত হয়ে খাবার টেবিল থেকে উঠে ফোনটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। একদম অচেনা একটি নম্বর মনে মনে একবার ভেবে নিল রিসিভ করব কিনা। পরে দ্বিধাদ্বন্দ রেখে ফোনটা কানে নিয়ে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল। কিন্তু কোন কথা বলছে না। নিলয় আবারো বলল হ্যালো কে বলছেন প্লিজ।
বেশ কিছুক্ষণ নীরব কাটার পর কয়েকটি শব্দ শুনতে পেল, আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। কন্ঠটি শুনে নিলয়ের আর চিনতে বাকি রইল না। কারণ এই কন্ঠ তার অনেক বেশি পরিচিত। সে অনেকগুলো বছর শুধুমাত্র ফোনেই কথা বলে আসছিল। কিন্তু এতগুলো বছর পর কান্নার আওয়াজ শুনে নিলয়ের মনটাও কেমন করে উঠলো। কি বলবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। শুধু একটাই প্রশ্ন করলো কাদঁছো কেন ?
আমাকে ক্ষমা করে দিবেন, আপনাকে কষ্ট দেওয়ার কারণে হয়তো আমার জীবনে এত বড় গজব নেমে এসেছে। আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ হারিয়ে ফেলেছি। আমার একমাত্র সন্তান আমার ছেলে এক বছর আগে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। আর এই শোকে আমি একটি বছর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলাম। সবকিছু ভুলে কোন রকমে বেঁচে ছিলাম। এখনো আমাকে কারো ফোন রিসিভ করতে দেয়া হয় না। আমি অনেক একা হয়ে গিয়েছি, মানসিক দুশ্চিন্তার কারনে হরমোনাল সমস্যা দেখা দিয়েছে।
মম'র মুখে এই ধরনের কথা শুনে নিলয়ের মোটেও ভালো লাগেনি। সে ভেবেছিল মম তার কাছে না এসে হয়তো অনেক সুখেই আছে। কিন্তু এখন তার দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ের আর্তনাদ শুনে শুধুমাত্র সান্ত্বনা দেয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই। এদিকে মম,র এই দুঃসংবাদ শুনে নিলয়ের মনও অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সেটা অবশ্য তাকে বুঝতে না দিয়ে শুধু কান্না মিশ্রিত কথাগুলো শুনে গেল। এভাবেই কথা বলতে বলতে ৪৫ মিনিট চলে গেল।
নিলয় আর বেশিক্ষণ নিজেকে আটকে রাখতে পারছে না। ধীরে ধীরে সেও আবেগপ্রবণ হয়ে গেল। এটা বুঝতে পেরে সে এই প্রসঙ্গটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল। অনেকদিন তো হয়ে গেল আবার বেবি নেওয়ার জন্য ট্রাই করতে পারো। খুব তাড়াতাড়ি একজন গাইনী ডাক্তারের সাথে কনসাল্ট করো। মম বললো হরমোনাল সমস্যার কারণে শরীর ফুলে গিয়েছে। এখন সেটা নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত বেবি নেয়া যাবে না। নিলয়ের এই কথাগুলো শুনতে আর ভালো লাগছেনা। মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে তাই সে ফোন রাখতে চাইলো। ওকে ভালো থেকো, আর খারাপ লাগলে ফোন দিও, আমিও পড়ে কথা বলব।
অথচ একটা সময় ঘন্টার পর ঘন্টা দুজন দুজনার সঙ্গে কথা বলে গিয়েছিল। কথা বলতে বলতে কত রাত ভোর হয়ে গেছে সেটা হয়তো আঙ্গুলে গুনে শেষ করা যাবে না। এইতো সেদিনের কথা, একটি রং নাম্বারে নিলয়ের সাথে মম'র কথা হয়েছিল। সেটা আনুমানিক ১৫ বছর আগের কথা। তারপর থেকে প্রায় সময়ই কথা হতো। আস্তে আস্তে সময়ের ব্যবধান কমে আসে। গভীর রাতে কথা বলা শুরু হয়, অনেক দিন ভোরের আলো দেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ভালো সময় কেটেছে রমজান মাসে। সেহরী খাওয়ার পর ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্যোদয় দেখতে দেখতে কথা চলতো।
তারপর বেলা ১১ টা পর্যন্ত টানা ঘুম। এভাবেই বছরের পর বছর কেটে গেলো। তাদের মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা অনেক দূর অব্দি পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু কখনো একে ওপরের সাথে দেখা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল কেউ কারো সাথে দেখা করতে চাইবে না। অনেকগুলো বছর এইভাবে দীর্ঘ সময় ধরে কথা হয়েছে ঠিকই কিন্তু ভালোবাসি কথাটাও বলা হয়নি কখনো। দুজন দুজনকে ভালোবাসে এটা তারা বুঝতে পেরেছিল। তানাহলে এত বছর কোনো সম্পর্ক এভাবে চলতে পারে না ।
নিলয় অবশ্য ভালোবাসি কতটা কয়েক বার বলেছিল মম সেই বিষয়টা অনেক কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছে। আসলে মেয়েরা কখনো ভালোবাসতে পারেনা। তারা শুধু ভালোবাসা নিয়ে খেলতে জানে। একদিন নিলয় যখন মম কে বিয়ে করার কথা বলে তখন যে উত্তর পেয়েছিল তা সত্যি অপ্রত্যাশিত। মম নিলয়কে বলে আমার বাবা নেই। মাকে ছেড়ে আমি বাইরে যেতে পারবো না। আপনি আমাদের জেলার কেউ হলে আমি অবশ্যই বিয়ে করতাম। তারা দীর্ঘ সাত থেকে আট বছর কথা বলেছে কিন্তু কেউ কাউকে দেখেনি।
সেই না দেখার যন্ত্রনাকে আরো বাড়িয়ে দিয়ে একদিন একটা এসএমএস আসলো, আমি বিয়ে করছি। আমার বাসা থেকে বিয়ে ঠিক করেছে। আমাদের মহল্লার এক ছেলে ব্যাংকের কর্মকর্তা। এসএমএস টি পড়ে নিলয় একদম ভেঙ্গে পড়েছিল। অদেখা ভালবাসা নিলয়ের হৃদয় কে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়ে গেল। সেই যে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল তারপর দীর্ঘ আট বছর পর সেদিন ফোন করে ক্ষমা প্রার্থনা।
মম বিয়ে করার বছর খানেক পর নিলয় বিয়ের পিঁড়িতে বসে। এখন স্ত্রী সন্তান নিয়ে নিলয়ের সুখের সংসার। ঠিক সেই মুহূর্তে মমর জীবনে নেমে আসা অন্ধকারের খবর শুনে পুরোনো ভালোবাসা কিছুক্ষনের জন্য হলেও জেগে উঠেছিল। সেই সবকিছু ভেবে আর কোন লাভ নেই। এখন নিলয় শুধু প্রার্থনা করতে পারে মম'র জীবন যেন আবার সুখে শান্তিতে ভরে ওঠে।
আমার আজকের লেখা গল্পটি কারো জীবনের সত্য গল্প। বলতে পারেন জীবন থেকে নেয়া। কিন্তু আমি এখানে ছদ্মনাম ব্যবহার করেছি। আসলে আমাদের জীবনে অপ্রত্যাশিত এরকম নানা ঘটনা ঘটে থাকে। সমস্যা ও দুঃখ কষ্টগুলোকে একপাশে রেখে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
মানুষের জীবনে এরকম ঘটনা অহরহই ঘটে থাকে। মেয়েটি ঘন্টার পর ঘন্টা সারাটা রাত জেগে ছেলেটির সাথে কথা বলতো সকালের সূর্যোদয় দেখতো। তারপরে যখন বিয়ের কথা বলা হলো তখন কেন যে মেয়েটি পিছিয়ে গেল তাহলে গল্প কেন করত অযথা সময় নষ্ট করার কোন মানে ছিল। কেউ একজনের সাথে অন্যায় করলে তার শাস্তি বিধাতা ঠিকই দেন। মেয়েটি তার সন্তানকে হারিয়েছে যদিও এটি কাম্য ছিল না তারপরও ঘটে গিয়েছে। আসলে আমাদের সবারই অতীত নিয়ে পড়ে না থেকে সামনের দিকে এগিয়ে চলায় বুদ্ধিমানের কাজ।
গল্পটি আমি যখনই পড়েছিলাম তখনই বুঝতে পারছিলাম যে এটা কোন কাল্পনিক গল্প নয়। লেখাগুলোর মধ্যেই বাস্তবতা ফুটে উঠেছে। নিলয়ের জন্য সত্যিই অনেক খারাপ লাগছে আমার। এই ধরনের একটা ঘটনা আমার এক চাচাতো ভাইয়ের সাথে ঘটেছিল। তাদের প্রেমের বয়স ছিল পাঁচ বছরের মতো কেউ কাউকে দেখেছিল না। আর শেষ পরিণতিটাও আপনার এই গল্পের মতই হয়েছে।
আপনার গল্পটি পড়ে আমিও একটু আন্দাজ করতে পারলাম বাস্তব কারো জীবনী এর কাহিনী। সত্যি নিলয়ের জন্য অনেক কষ্ট হলো। মেয়েটি এমন কেন করল। এখন নিলো বিয়ে করে অন্য জায়গায় খুব সুখে শান্তিতে আছে। এটাই আল্লাহর বড় নেয়ামত। তারপরও নিলয় মেয়েটি সুখ শান্তি কামনা করে। কারণ তার ভালোবাসা সত্যি ছিল তাই। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ খুব সুন্দর করে শেয়ার করার জন্য। এবং অনেক অনেক শুভকামনা রইল।