অপ্রত্যাশিতভাবে মধ্যরাতে যেতে হয়েছিল হোমিওপ্যাথি ঔষধের দোকানেsteemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

Picsart_22-09-26_01-23-11-706.jpg

সারাটাদিন বাইরে অক্লান্ত পরিশ্রমের পর বাসায় ফিরে আর ঠিক মত এনার্জি থাকে না। বাসায় ফিরে প্রথমেই সব ক্লান্তি ধুয়ে মুছে ফেলার জন্য গোসল করতে হয়। তারপর দিনের শেষ নামাজ আদায় করে নেই। নামাজ শেষে রাতের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার পর লেখালেখি করতে বসি। গতরাত্রে ভাত খেতে বসার পর আচমকা এই বিপদ ঘটে। তারপর সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। গতকাল ঠিক সে কারণেই আমি কোন পোস্ট করতে পারিনি।

আমি সাধারণত রাতে বাসায় ফিরে তারপর লেখালেখির কাজ শুরুর করি। কিন্তু গতকাল রাত্রে খেতে বসার সময় খাওয়া প্রায় শেষ হয়ে আসছিল। ঠিক সেই সময় আমার ছোট ছেলের গলায় টি মাছের কাটা আটকে যায়। ওর বয়স ১ বছর ১০ মাস হতে চলেছে। ভাত খাওয়ার অভ্যাস বেশ ভালই আছে। তাই কিছু সাদা ভাত মুখে দিয়ে পানি দিয়ে গিলতে বললাম। কিন্তু ওর কান্না কিছুতেই থামছিল না। একপর্যায়ে কাশতে কাশতে বমি করে ফেলল। সম্ভবত বমি করায় কিছুটা ভালো বোধ করেছিল তাই কান্না বন্ধ হয়ে গেল।

রাত যখন গভীর হয়ে গেল তখন হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে কান্না শুরু করে দিল। বারবার মুখে আঙুল ঢুকিয়ে কিছু যেন বলার চেষ্টা করছিল। ওর এই প্রচেষ্টা দেখে বুঝতে পারলাম সম্ভবত কাটা এখনো লেগে আছে অথবা ব্যথা করছে। এমনিতেই আমার ছোট বাচ্চাদের এরকম কষ্ট দেখলে মাথা ঠিক থাকে না। কিন্তু এত রাত্রে কি করব সেটা নিয়েও খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেও কোন লাভ হবে কিনা সেটা নিয়েও ভাবছি। ছোট বাচ্চা এমন কষ্ট দেখে আর ভালো লাগছে না।

গভীর রাত উভয় সংকটে পড়ে গেলাম। এত রাত্রে না পারছি বাচ্চার কষ্ট সহ্য করতে আবার বাইরে গিয়ে কোথায় সমাধান খুজবো সেটাও বড় দুশ্চিন্তা। সব মিলিয়ে কিছু একটা করতে হবে এটাই ভাবছি। কিন্তু কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এমন সময় হঠাৎ মনে পড়ে গেল আমার নিজেরও একবার গলায় কাঁটা বেঁধে গিয়েছিল। আসলেই এ ব্যাপারগুলো অনেক কষ্টদায়ক হয়। ঠিকমতো ঢোক গিলতে পারা যায় না। পানি খেতে গেলেও গলায় আঘাত লাগে। আর এতোটুকু বাচ্চা কিভাবে সহ্য করবে কান্না করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।

20220926_011750.jpg
20220926_011837.jpg

আমার এই অবস্থায় আমি তখন পার্শ্ববর্তী বাজারে হোমিওপ্যাথির দোকান থেকে শুধুমাত্র ২০ টাকা দিয়ে ঔষধ কিনে রক্ষা পেয়েছিলাম। তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের হয়ে যত দ্রুত সম্ভব সেই দোকানের সামনে চলে গেলাম। দোকানের সামনে থেকে ফোন নম্বর নিয়ে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম তিনি ঢাকায় আছেন। যদিও একটা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করলাম। কিন্তু তিনি ঢাকায় থাকার কারণে সব কিছু ভেস্তে গেল। জব্বার চাচা এই হোমিও ডাক্তারের নাম। জব্বার চাচা ওষুধ দিতে না পারলেও আমাকে খুব ভালো একটা বুদ্ধি দিয়েছিল। কাছেই অন্য একজন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার আছেন।

তৎক্ষণাৎ শুনে আমারও মনে পড়ে গেল। আমার শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার পথে উপজেলা পরিষদের সামনে একটি হোমিওপ্যাথির দোকান আছে। আর দেরি না করে সেদিকে চলে গেলাম। চেম্বারের সামনে গিয়ে দরজা বন্ধ পেলাম, এটাই স্বাভাবিক এত রাত্রে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে নিশ্চয়ই। সাইনবোর্ডে দেয়া মোবাইল নাম্বারে ফোন দিয়ে অনুরোধ করলাম চেম্বার খোলার জন্য। প্রথমদিকে তিনি আসতে চাইছিলেন না, পরে ছোট বাচ্চার গলায় কাঁটা বেঁধে যাওয়ার কথা শুনে তাড়াতাড়ি চলে আসলেন। আসার সাথে সাথেই আমি তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানালাম।

20220926_011649.jpg
20220926_011610.jpg
20220926_011533.jpg

অবশ্য এই ডাক্তার রাজু ভাই আমার পূর্ব পরিচিত কিন্তু টেনশনে মাথা থেকে ছুটে গিয়েছিল। তাই ঔষধ নিয়ে নিলাম আর দেরি করা ঠিক হবে না। এখন রাজু ভাইকে বললাম কত দিতে হবে যদিও আমি জানি এই ঔষধের দাম ২০ টাকা। রাজু ভাই আমাকে বললেন তোমার বাচ্চার জন্য ঔষধ টাকা দিতে হবে না। আমি বললাম তা কি করে হয় এত রাত্রে আপনাকে বিরক্ত করার জন্য এসেছি। আমি জোর করে তার হাতে একটা নোট ধরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে আসলাম। অত কিছু ভেবে লাভ নেই ঔষধ হাতের কাছে পেয়েছি এটাই বা কম কিসের। টাকা কত দিলাম এটা বড় কথা নয়।

ডাক্তার বলে দিয়েছিলেন এক ড্রাম মানে কাছের বোতলে ঔষধের চারভাগের এক ভাগ রাতে খাইয়ে দিতে। বাকি তিন ভাগ পরের দিন খাওয়াতে হবে। যাইহোক ঠিক সেভাবেই খাওয়ানো হয়েছিল। আল্লাহর রহমতে রাতেই অনেকটা সেরে গিয়েছিল। শুধু পরেরদিন সকালে একবার দিয়েছিলাম। সত্যিই ম্যাজিকের মত কাজ করেছে। আমার জীবনে শুধুমাত্র গলায় কাটা ফুটে হোমিওপ্যাথির ১০০% সাকসেস রেট পেয়েছি। বলতেই হয় অসাধারণ কাজ করেছিল এবারেও। সবাই দোয়া করবেন।

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

ডিভাইসস্যামসাং গ্যালাক্সি A-10
ফটো@mayedul
লোকেশনw3w location

Logo-1.png

3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif

Sort:  
 2 years ago 

এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে মাথায় আর কাজ করে না ভাইয়া। একবার খেয়েই সমাধান পেয়ে গিয়েছে আপনার বাচ্চা এটা জেনে খুবই ভালো লাগলো।

সত্য কথা বলতে ভাইয়া আমার অর্ধাঙ্গিনীর প্রায় সাত দিন আগে গলায় মাছের কাঁটা বেঁধে গিয়েছে অনেক ঔষধ খাওয়ালাম কিন্তু এখন পর্যন্ত রক্ষা পায়নি। যদি বিষয়টি সম্পর্কে আমাকে একটু পরামর্শ দিতে পারতেন তাহলে অনেক উপকৃত হতাম।

 2 years ago 

সত্যি ভাইয়া এমন ধরনের কাজ হলে তখন আর হুশ থাকে না যে কি করব,তার ওপর অনেক ছোট বাবু। যাইহোক ভাইয়া ওষুধ টা একবার খাওয়াই সমাধান পেয়ে গেছেন। তার জন্য অনেক ভালো লাগলো।যাইহোক রাজু ভাই আপনার কাছ থেকে টাকা নেইনি তবে আপনার দরকার ঔষধ। যখন ঔষধ পেয়েছেন তখন আর পিছে তাকানোর সময় কই।ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

গলাতে মাছের কাঁটা দিলে খুব কষ্ট হয়। আর আপনার ছোট বাচ্চার গলায় কাটা আটকিলো এটা তো অনেক কষ্ট লাগলো বাচ্চার এবং আপনাদেরও। প্রথমে আপনি ধন্যবাদ জানাতে হবে ওষুধের হোমিওপ্যাথি ঔষধের দোকানে ওয়ালাকে। সত্যি কথা ২০ টাকার ওষুধ এনে বাচ্চাকে খাওয়ালেন। আল্লাহ বাচ্চাকে সুস্থ রাখুক । খুব সুন্দর করে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

আসলে এই ধরনের অনোকাঙ্ক্ষিত ঘটনা শুনে আমার খুব খারাপ লাগলো। যাইহোক পরবর্তীতে সমস্যার সমাধান হলো। পোস্টটি শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 66331.68
ETH 2720.25
USDT 1.00
SBD 2.87