গতরাত্রে ভালো করে ঘুমাতে পারিনি। একে তো প্রচন্ড গরম তারউপর শরীরের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। সব মিলিয়ে রাতে হয়তো দেড় ঘন্টা ঘুমাতে পেরেছি। সে কারণেই সকাল থেকে মাথা প্রচন্ড ভার লাগছিল। দিনটা একদম বাজেভাবে কেটেছে। দুপুরের দিকে শরীর এতটাই খারাপ লাগলো আর কোথাও বসে থাকতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত একটা মসজিদের বারান্দায় উঠে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। তারপর আস্তে আস্তে যখন একটু ভালো মনে করলাম তখন খুব তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসলাম। বাসায় আসার পরেও মাথা ঘুরা আছেই। বাসায় ফিরতে ফিরতে চারটা বেজে গিয়েছিল কোন রকমে একটু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পরেই হ্যাংআউট শুরু হয়ে গেল ঠিক নয়টায়। স্বাভাবিকভাবেই এই দিনটার জন্য আলাদা হবে প্রিপারেশন নেয়া থাকে। আজকে চাঁদনী রাত দেখে হঠাৎ করেই চাঁদ দেখার খুব ইচ্ছা হল। চাঁদ দেখতে হলে তো লোকালয় ছেড়ে অনেক দূরে যেতে হবে। আজকের হ্যাংআউট শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই কারেন্ট চলে গেল। বাসায় নেট পরিস্থিতি খুব বাজে তাই ওয়াইফাই না থাকায় বাইরে যেতে হতো। সাথে চাঁদ দেখার ইচ্ছেটায় পূর্ণতা দিতে বাইক নিয়ে চলে গেলাম অনেক দূরে। কিছুক্ষণ আগে মন ভরে চাঁদের আলো উপভোগ করে বাসায় ফিরলাম।

Location

নীরব নিস্তব্ধ রাস্তাঘাট কোথাও তেমন লোকজন দেখছি না। একবার মনে মনে ভাবলাম লোকালয় ছেড়ে এত রাত্রে দূরে এসে ভুল করলাম না তো। আমি সাধারণত একা এত রাত্রে গ্রামের রাস্তায় আসি না কেমন যেন গা ছমছম করে। যদিও কখনো জীন ভূতের ভয় পাইনি কিন্তু কোথাও যেন একটু ভয় কাজ করে। বাইক নিয়ে ধীরগতিতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি হঠাৎ সামনে দুই একজন লোককে দেখতে পেলাম। তারপর মনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসলো। একবার তো ভেবেছিলাম গ্রামের রাস্তায় কাউকে খুঁজেই পাবো না।

Location

আজকের হাংআউটে অংশগ্রহণ করে আমি ভিন্ন রকম একটা অনুভূতি পেলাম। কানের মধ্যে হেডফোন লাগিয়ে আমি শুনছি আর চাঁদ দেখার উদ্দেশ্যে ছুটছি। সামনের রাস্তায় দুই দিকে গাছের সারি। হেডলাইটের আলো যতটুকু দেখা যায় তার বাইরে নিকষ কালো অন্ধকার। এখন পর্যন্ত চাঁদের দেখা পেলাম না এই অঞ্চলটায় গাছপালা অনেক বেশি। চাঁদ দেখতে হলে আমাকে আরো কিছুটা দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে। চাঁদ দেখার উদ্দেশ্য নিয়ে যেহেতু বের হয়েছি তাই সেটা না করে বাসায় ফিরছিনা। আজকে এত রাত্রেও রাস্তায় দুই একটা লোক দেখে আমার মনের মধ্যে ভয় কিছুটা কেটে গিয়েছে।

Location

বেশ কিছুদূর বাইক চালিয়ে আসার পর সামনে দূরে বড় একটা পুকুর দেখা যাচ্ছে। পুকুরের পাশে গাছের উপর দিয়ে চাঁদের আলো দেখতে পেলাম। গায়ের শিরশির বাতাস লাগছে প্রচন্ড গরমের মধ্যে আজকে কি যে ভালো লাগছে সেটা বলে বোঝাতে পারছি না। আজকে সারাদিন আমার খুব বাজে ভাবে কেটেছে। প্রচন্ড ক্লান্তি নিয়েও কিছুটা প্রশান্তির উদ্দেশ্যে আমি বাইরে বের হয়েছি। এখন যখন একটু একটু করে চাঁদের আলো আমার চোখে পড়ছে তখন ভালো লাগার মাত্রাও অনেক বেড়ে যাচ্ছে।

Location

অবশেষে গভীর রাত্রে চাঁদের দেখা পেলাম। আমাকে দেখে চাঁদ কেন জানি খুব দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এখনো চাঁদ অনেক ছোট। আজকে যদি পূর্ণিমা রাত হতো তাহলে কি যে ভালো লাগতো। এমনিতেই পূর্ণিমার রাতে চাঁদের সৌন্দর্য অনেক বৃদ্ধি পায়। সেটা যারা আমার মত মাঝেমধ্যে চাঁদ দেখতে বের হয় তারা ঠিকই উপলব্ধি করতে পারছেন। পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। এই কথাটির শতভাগ পূর্ণতা সেদিন খুজে পাই। আজকেও কিন্তু আমার কাছে যাদের সৌন্দর্য অনেক বেশি লাগছে। কারণ আমি যে প্রশান্তি খুঁজতে এসেছিলাম সেটা মনে হয় পেয়ে গিয়েছি। পুকুরের উপর চাঁদের আলোকছটা আমার মন কেড়ে নিয়েছিল। এখান থেকে আমার যেতেই ইচ্ছা করছিলনা। কিন্তু কি আর করা বাসায় তো ফিরতেই হবে। তাই চাঁদের আলো গায়ে মেখে হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরে এলাম।

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।