একজন ইসমাইলের আত্মকথা || 10% beneficiary to @shy-fox.
হ্যালো আমার বাংলাব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
রিক্সায় উঠার পর তার সাথে কথা বলা শুরু করলাম যেহেতু বেশ কিছুদূর পথ একসঙ্গে যাব কথা না বলে কি আর থাকা যায়। শুরুতেই তার নাম জানতে পারলাম উনার নাম ইসমাইল হোসেন সিরাজী নামটার মধ্যে বেশ একটা ভাব আছে। পেশায় তিনি সবজি ব্যবসায়ী এই এলাকার নদী তীরবর্তী অঞ্চলে সমস্ত এলাকায় বেশ ভালো সবজি চাষ হয়। সেইসব সবজি ক্রয় করে শহরের মার্কেটে বিক্রি করাই তার প্রধান কাজ। আর নদীতে জেগে ওঠা চরে আগাম ধান চাষ করা হয়। এরকম তার বেশ কয়েক একর জায়গা আছে সেগুলো চাষাবাদ করে। সেই সাথে সবজির ব্যবসা চালিয়ে বেশ অর্থ উপার্জন করে ফেলেছে।
নদী অঞ্চলের এই সব লোকজনের জীবন-জীবিকা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং আমরা এখন যে জায়গায় আছি এই জায়গাটা কিছুদিন পরেই পানিতে তলিয়ে যাবে। প্রায় তিন মাসের মত সময় রাস্তা পানিতে তলিয়ে থাকে। যেহেতু ব্রিজের কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি গত তিন বছর যাবত এই ব্রিজের কাজ অর্ধসমাপ্ত হয়ে আছে। কারণ হিসেবে জানতে পারলাম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক এর মৃত্যু। আর তাই স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসায়ীদের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাই আগাম বৃষ্টি শুরু হওয়ার কারণে তাদের কপালে চিন্তা রেখা দেখা দিচ্ছে। গত বছর বন্যা দীর্ঘস্থায়ী থাকার কারণে সে দীর্ঘ সময় তাদের ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়েছে। আগাম বন্যা হলে সবজি বাগান নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ডিভাইস | স্যামসাং গ্যালাক্সি A-10 |
---|---|
ফটো | @mayedul |
লোকেশন | w3w location |
নদীমাতৃক বাংলাদেশ আর নদীকে কেন্দ্র করে আমাদের সভ্যতার শুরু। আর নদীর তীরেই অনেক বড় বড় শহর গড়ে উঠেছে। আর তাই নদী তীরবর্তী অঞ্চলে লোকজন নদীকে কেন্দ্র করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। ঠিক তেমনি বন্যার সময় এই নদীর মধ্যেই তাদের সর্বস্ব খুইয়ে পেলে। আমি আজকে যে ইসমাইলের সাথে কথা বলছি গতবছর বন্যার সময় তার ২০ থেকে ২৫ একর আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এখন তিনি ওই নদীর চরের পলি মাটি পড়া জমিতে আগাম ধান চাষ করে। এবার তাই আগাম বৃষ্টিপাতের কারণে তার ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তাই সেটা নিয়ে বেশ চিন্তিত।
আগাম বন্যার কারণে তার জন্য ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ঠিক তেমনি বন্যার কারণে ভেঙ্গে যাওয়া রাস্তাটা পানি উঠে গেলে তার ব্যবসা বড় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে এখন তার চিন্তার শেষ নেই। সিজোনাল সবজিগুলো কেবল উঠতে শুরু করেছে। আজকে প্রচুর পরিমাণে পটল ঢেঁড়স ও করলা নিয়ে শহরে যাচ্ছে আশা করছে সেখান থেকে মোটা অঙ্কের ব্যবসা হবে।
এখন তো ব্যবসা করে বেশ ভালো অর্থ উপার্জন করছে। কিন্তু সামনের সময়টা ভালো যাবে তো। সেই চিন্তা থেকে এখনই সামনের দিনগুলো নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। একদিকে নদীতে ধান নষ্ট হয়ে যাওয়া সম্ভবনা অন্যদিকে রাস্তা পানিতে ডুবে গেলে ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা। সবমিলিয়ে সামনের দিনগুলো নিয়ে অনেক চিন্তিত। সে আমাকে বলল ভাই গত বৎসর বন্যায় ধানের জমি গুলো নদীভাঙ্গনে চলে যাওয়ার পরে অনেকদিন বউ বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে ঘুমিয়েছি। কোনরকমে চরের জমিতে ধান চাষ ও ব্যবসা করে তিনবেলা ভাতের জোগাড় করছি। এবার আগাম বন্যা হলে সবকিছু আবার আগের মত হয়ে যাবে নাতো
তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে আমার অটো রিকশা শহরের ভেতর ঢুকে গেল। আমি ওনার সাথে কুশল বিনিময় করে তার সামনের দিনগুলো যেন ভালভাবে কাটে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করে আমার গন্তব্য বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সুন্দরভাবে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। বাংলাদেশ নদী প্রধান দেশ। সেজন্য বাঙালি কে বলা হয় মাছে ভাতে বাঙালি। বাংলাদেশের মানুষ নদীর কিনারায় বসবাস করে। প্রতিবছর বন্যার কবলে পড়ে তাদের জমা-জমি ধন সম্পদ ইত্যাদি । নষ্ট হয়ে যায়। তাও তারা সেখান থেকে অন্য জায়গায় বাসস্থান করেন না। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। শুভকামনা রইল
আসলে এই নদীকে ঘিরেই তাদের জীবন ও জীবিকা। আপনার জন্যও অনেক অনেক শুভকামনা।
কি কঠিন অনিশ্চয়তায় ভরা এদের জীবন। অথচ আমি আপনি কত নিরাপদ একটা জীবন যাপন করছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রচুর ফসলহানি হয়। কিন্তু এ বিষয়ে আসলে আমাদের খুব বেশি কিছু করণীয় নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই সমস্যাগুলি দিন দিন বেড়েই চলেছে। এইজন্যই ইসমাইলের মত লোকজনের জীবন কঠিন হয়ে উঠেছে। চমৎকার করে পুরো বিষয়টা তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মহলের সঠিক নজরদারিও একটা বড় ফ্যাক্টর। গতবছর ওই জায়গায় দীর্ঘ ৩-৪ মাস আমি নিজেও খেয়া নৌকায় পারাপার করেছি। ধন্যবাদ ভাই আমার পোস্টটি ভিজিট করার জন্য।
অনিশ্চিত এক জীবন যাত্রা ইসমাইল ভাইয়ের। আজ ব্যবসা ভাল তো কাল আবার খারাপ বিভিন্ন প্রতিকুলতার কারনে। এটায় জীবন।
ঠিক বলেছেন জীবন বড়ই বিচিত্র। সেটা মেনে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
এটাই বাস্তবতা খুব চ্যালেঞ্জিং একটি ঘটনা ছিল, অপরিচিত একজনের সাথে কথা বলে তার সম্পর্কে অনেক তথ্য আপনি জানিয়েছেন, উনি যেভাবে জমি চাষ করেন এতে সত্যি অনেক রিস্ক থাকে, হঠাৎ করেই পানিতে তলিয়ে যেতে পারে তার এত কষ্টের ফসল গুলো, তাছাড়া সবজির ব্যবসা খারাপ যেতে পারে যদি যাতায়াতব্যবস্থা খারাপ হয়, খুব ভালো লাগলো আপনি খুব চমৎকার গুছিয়ে একজন ইসমাইলের ঘটনা উপস্থাপন করলেন।
আসলেই নদীর চরে এইভাবে চাষাবাদ অনেক রিস্কি। তারপরেও এতে মেনে নিয়েই তারা এগিয়ে যাওয়ার সপ্ন দেখে।
গল্পের সাথে দারুন করে ফটোগ্রাফি গুলো সাজিয়ে, যুক্তিযুক্ত কথায় পোস্টটি সাজিয়েছেন। এ যেন এক জীবন কাহিনী।
আমার পোস্টটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
নদী অঞ্চলের মানুষদের জীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকে সবসময়। আজ ভালো তো কাল খারাপ। আর এভাবেই তারা জীবন-যাপন করে যাচ্ছে। কেউ সমাধান এর উপায়টুকু খুজে বের করে না।
নদী অঞ্চলের লোকজনের জীবন আসলেই অনেক অনিশ্চয়তায় থাকে। নদীর সাথে সাথে তাদের জীবনটাও ভাঙ্গা গড়ার মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হতে থাকে।
নদী এলাকার মানুষদের জন্য চাষাবাদ কষ্টদায়ক। নদী এলাকার মানুষ গুলোর জীবন জীবিকায় আসলেই অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে। নদীতে অনেকের বাড়ীঘর জমাজমি প্রতি বছরেই বিলীন হয়ে যায়। "আপনি ইসমাইল ভাইয়ের আত্মকথা খুবই সুন্দর ভাবে ফুটে তুলেছেন।আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
নদী এলাকার মানুষের ভাঙ্গা-গড়া নিয়েই তাদের জীবন।ধন্যবাদ আপনাকে।