ভালবাসা, ভাললাগা এবং একটি বাস্তবতা
প্রাণ প্রিয় বন্ধুগণ, আশাকরি মহান আল্লাহতালার অশেষ রহমতে সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন । আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভাল আছি ।
ঘটনা ২০১২ সালের মার্চ মাসের । আমাদের মেসে একটা বড় ভাই আসলো নতুন বর্ডার হিসেবে । বর্ডার বলতে মেসের সদস্যকে বুঝায় । তিনি আমাদের মেসে আসলেন তিন মাসের জন্য, কারণ গতবারের এইচ এস সি পরীক্ষায় তিনি একটা বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিলেন । যেহেতু একটা সাব্জেক্ট এর পড়াশোনা তাই তার হাতে ছিল অফুরন্ত সময় । আমাদের মাঝে তখন ফেসবুক অতটাও জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি বিশেষ করে আমি এবং আমার বন্ধু ওয়াসীম ছাড়া আর কোন ফেসবুক ইউজার ছিল না । তবে সজীব ভাই এবং লাল্টু নামে একজন তারা রবি সার্কেল নামে একটি মেসেজ ভিত্তিক গ্রুপ চ্যাটে অনেকটা সময় ব্যয় করতো । ঘটনার শুরু এই "রবি সার্কেল" থেকেই । উর্মিলা নামের একটি মেয়ে রবি সার্কেল এর একজন সদস্য ছিল । আমি তার সাথে কখনো মেসেজ না করলেও এদের দুজন থেকে খুব প্রশংসা শুনেছি । শুনে শুনে এক রকম মুখস্ত হয়ে গেছিল তার সম্পর্কে অনেক কথায় । তবে সজীব ভাই তার সাথে কথা বার্তা একটু এগিয়ে নিতে চেয়ে নাম্বার আদান প্রদান করে ফেললো । এবং তাদের সম্পর্ক রবি সার্কেল এর বাইরে প্রাইভেট মেসেজ এবং ফোন কল পর্যন্ত এগিয়ে চলল ।
তবে তাদের মাঝের সম্পর্ক দুই মাস ধরে শুধু কথা এবং লিখাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে । কেউ কারো সাথে এখন পর্যন্ত দেখা সাক্ষাত হয়নি । এমন এক সন্ধ্যায় আমি রুমে বসে শুনছি পাশের রুমে কেউ যেন নিঃশব্দে কান্না করছে । শুধু বোঝা যাচ্ছে কেউ একজন কান্না করছে । আমি তখন আমার রুম থেকে বেরিয়ে দেখি এই শব্দটি সজীব ভাইয়ের রুম থেকে আসছে । আমি তার রুমে প্রবেশ করেই দেখি তিনি চৌকিতে কাথা মুড়ি দিয়ে কান্না করছেন । আমি একটু হালকা ধাক্কা দিয়ে তাকে আমার উপস্থিতি জানান দিলাম । তখন তার কান্নার শব্দ আরেকটু বেড়েই গেল । আমি প্রায় ১০ মিনিট তার পাশে বসে থাকার পর তার কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলাম ।
শুনে যা বুঝলাম উর্মিলা নামের মেয়েটির সাথে তার একটু ঝামেলা হয়েছে । আমার মনে তখন এসব প্রেম ভালবাসা নামক কোন পদার্থের উপস্থিতি ছিল না । তাই উপর উপর শান্তনা দিলেও মনে মনে খুব হাসাহাসি করলাম । একটা মেয়ের সাথে এই কয়দিন কথা বলেই তার প্রতি এত দুর্বলতা আসে কি ভাবে । যেহেতু আমি কখনো কারো প্রতি দুর্বলতা অনুভব করিনি এটা আমার কাছে হাস্যকর ছাড়া অন্য কোন অনুভুতি ছিলই না । তো যায় হোক তখন আমি আর সে ছাড়া মেসে আর অন্য কেউ ছিল না । যখন অন্য সবাই এলো আমি এই ঘটনা তাদের সাথে বর্ণনা তখন পুরো মেসে একটা হাসির রোল পড়ে গেল ।
তার ঠিক দুইদিন পরে ওই মেয়েটির সাথে শুনলাম সজীব ভাইয়ের দেখা করার কথা আছে । মনে হয় এই কান্নাকাটির কিছুটা ফোনেও ঐপারের মেয়েটি জানতে পেরেছে তাই দেখা করতে চেয়েছে । পুর্বের কথা মত সজীব ভাই লাল্টুকে সাথে নিয়ে দেখা করতে গেল । আমরাও অপেক্ষায় থাকলাম পরবর্তী ঘটনার জানার অপেক্ষায় ।
সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহুর্তে সজীব ভাই ফিরে এলো গাল ভর্তি হাসি নিয়ে । আমরা তো ভাবলাম সে প্রেমে সাক্সেস হয়ে গেছে । সেই সুখের হাসি । পরবর্তিতে জানা গেল ঘটনা অন্য কিছু । আসলে সেই মেয়েটি দেখতে নাকি অনেকটাই কুৎসিত আর তাই সজীব ভাই দূর থেকে দেখে আর তার দিকে এগিয়ে যায় নি । আর খুব সহজেই যে তাকে ফাকি দিয়ে চলে আসতে পেরেছে এটা ভেবেই তিনি সুখ বোধ করছেন ।
আমি এখনো এই ঘটনা মনে এলেই ভাবি আসলে এটা আবার কোন ধরনের ভালবাসা ছিল । নাকি ভাললাগা । যে তাকে দেখেই মনের সব অনুভুতি কর্পুরের মত উড়ে গেল ।
আমার লিখা আজকের মত এখানেই সমাপ্ত করছি । সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি ।
ধন্যবাদান্তে | @maruffhh |
---|
ঘটনাটি পড়ে আমার কাছে হাস্যকর মনে হলো। তবে আমি বলতে পারি আপনার সেই প্রিয় মানুষটার কাছে যেয়ে এখন বলেন এই ঘটনাটি দেখুন সেও হাসছে। কিছু কিছু ঘটনা এমন হয়ে থাকে মানুষের জীবনে যন্ত্রনার পাহাড় বয়ে নিয়ে আসে। তবে অনেক দিন পার হয়ে গেলে সে মুহূর্তটা হাসির মুহূর্ত হিসেবে রূপ নিয়ে থাকে। তবে কারোর হাসির পাই ঘটনার সময়, আবার কারো হাসি পায় অনেক পরে।
কিছুদিন সেই ভাই দেখলাম বিয়ে করেছে । এবং বউ সহ ফেসবুকে ছবি দিয়েছে । তাই আবার ঘটনাটি নতুন করে মনে পড়ে গেল । একটা কথা ঠিক ছিলো । দুঃখের ঘটনা সুখের সময় হাসি নিয়ে আসে । মনেই হয়না এই ঘটনাটি এতটা দুঃখ দিয়েছিল ।