আমার জীবনের প্রথম প্রেমের অনুভূতি By-@marufhh

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আজ বুধবার || ২০শে জুলাই ২০২২ ইং || ১৪২৯ বঙ্গাব্দ || ১৪ই জিলহজ্জ ১৪৪৩ হিজরি ।

আসসালামু আলাইকুম

প্রথম প্রেমের অনুভুতি, এখনো ভেবে অবাক হই আমার এই নিরামিষ জীবনটাও একসময় এক অন্য রকম অনুভুতি এসে সব কিছুর ব্যতিক্রম ঘটিয়ে দিয়ে যাবে । সবার মাঝেও হয়ে যাব আমি একা ।
জীবনের ১৮টি বসন্ত একাকি পার করে এবার জীবনে ফুলের শুভ্রতা নিয়ে আসবে ।

আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা - ১৮(5).jpg

আমি আমার হাইস্কুল জীবন থেকেই সব সময় চেষ্টা করেছি মেয়ে বন্ধু থেকে ১০০হাত দূরে থাকতে। কারণ এর পুর্বের দিন গুলোতে আমার কোন ছেলে বন্ধুই ছিল না । সময় কেটেছে, প্রায় সমবয়সী বড়আপুদের সাথে । তাদের সাথে স্কুলে যাওয়া আসা তাদের সাথেই খেলা ধুলা । পরবর্তীতে এমন যেন না হয় একারণেই এ মনোভাব । ঠিক এ কারণেই প্রেম তো দূরে থাক কোন মেয়ের দিকে তাকাইনি পর্যন্ত । হাইস্কুল লাইফে ৫টা বছর চলে গেছে বন্ধুরা প্রেমে পড়েছে আর আমার নামে কোন একটা মেয়ের নাম জড়িয়ে তাকে আমার প্রেমিকা হিসেবে প্রমাণ করতে চেয়েছে । এসব কথা শুনলেই রেগে যেতাম । এরপর শুরু কলেজ লাইফ, ডিপ্লোমাতে এমন একটা ট্রেড নির্বাচন করেছি যেখানে মেয়ে ক্লাসমেট, ছোট আপা, বড় আপার কোন অস্তিত্ব ছিলনা । আর ভুল করেও যেহেতু কোন মেয়ের দিকে তাকায়নি সেহেতু বাইরে কোন মেয়ের সাথে প্রেমে পড়ার সম্ভাবনা তো একেবারেই শূন্য।

তারপরেও আমি প্রেমে পড়ে গেলাম । পড়ে গেলাম বলতে পা পিছলে ধড়াম করে পড়ে যাওয়ার মতই অবস্থা । সামান্য কিছুক্ষণের আলাপন আমাকে তার সাথে যেন সারা জীবনের জন্য বেধে দিল । আমি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে ব্যার্থ হলাম । আমিও প্রেমে পড়ে গেলাম ।

IMG_২০২২০৭১৭_১৯০২১৪.jpg

সাল ২০১৪ এপ্রিল মাস পঞ্চম সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষে ছুটি কাটিয়ে মেসে ফিরছি সাথে দুইটা পতাকা । একটি বাংলাদেশ আরেকটি আর্জেন্টিনার বলা বাহুল্য আমি এই দলের খেলাটা খুব উপভোগ করি তাই বিশ্বকাপের পুর্বে পতাকা টানিয়ে উজ্জাপনটাও সেভাবে করতাম তখন । তো যথারীতি মেসে গিয়ে রুমে ব্যাগ রেখেই পতাকা নিয়ে এক দৌড়ে ছাদে । প্রথমেই টাস্কি খাওয়া অবস্থা আমাদের মেসের ছাদে এই মেয়ে গুলো এলো কিভাবে । তবে এর কোন প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে আমি আমার মত পতাকা টানিয়ে বাতাসে পতাকা ওড়ার ভিডিও করে নেমে চলে আসলাম । এরপরেও দুইদিন পার হয়ে গেছে মেয়েগুলো তাদের মত হেসে খেলে সময় পার করছে । পরে যেনেছি ওরা আমাদের বাড়ির মালিক যিনি পাশের ফ্লাটেই থাকে তিনার বোনের মেয়ে । তৃতীয় দিন শুনতে পেলাম তারা কাল বাড়িতে চলে যাবে মাগরিবের নামাজ পড়ে এসে দেখি তারা সিড়ি ঘরে বসে আড্ডা দিচ্ছে আমি ভাবলাম কাল যেহেতু চলে যাবে আর বাড়ি মালিকের সাথে আমার সখ্যতা ছিল সেইরকম তাই একটু কথা বলে বিদায় না জানালে ব্যপারটা ভাল দেখাবেনা । উঠে গেলাম সিঁড়ি বেয়ে একটু দুরুত্ব রেখে বসে পড়লাম সালাম দিয়ে কথা শুরু নাম, কোথায় পড়াশূনা করে কার বাড়ি কোথায় ইত্যাদি সাধারণ প্রশ্ন আলাপের মাঝে আমার কথা শেষ করে নেমে এলাম নিজ রুমে ।

পরের দিন সকালে মেসের এক ছোট ভায়ের থেকে জানতে পারলাম ছাদ বাগানে আমার ফুলগাছ গুলো কিছুটা হুমকির মুখে পড়েছে । তাদের রক্ষার্থে কিছুক্ষণ পরে গিয়ে ছাদ বাগানের অনুরুপ ফুলগাছ নার্সারী থেকে নিয়ে এসে তাদের গিফট করলাম আরেকবার তাদের সাথে হয়ে গেল দেখা

বিকেল বেলায় দেখি বাড়িওয়ালা খালা আমাকে খুঁজছে । যেয়ে দেখা করতেই আমকে অনুরোধ করলো আমি যেন তাদেরকে বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত এগিয়ে রেখে আসি । না বলার কিছুই ছিলনা তাই রেডি হয়ে তাদের সাথে নিয়ে রওনা দিলাম । একটু পথ ইজি বাইকে আরএকটু বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষা পরক্ষণেই বিদায় ।

আর জীবনের এলো মেলো সময় শুরু আমি যেন স্ট্যান্ডে আটকে গেছি । কিছুতেই মেসে ফিরে আসতে ইচ্ছে করছে না । জীবন মরুভূমি যেন অফুরন্ত বৃষ্টির সন্ধান পেয়েছে । কিছুতেই ফিরে যেতে দিতে চায়না তাদের । নিজের এমন পাগলামী চিন্তা ভাবনা দেখে আমি নিজেই অবাক । কিন্তু কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছিনা । আমি যেন জীবন থেকে খুব দামি কিছু হারিয়ে ফেলেছি এমন অনুভূতি হচ্ছিল । এর আগের পরিস্থিতি এমন ছিল আমি তার সাথে তিন বারের সাক্ষাতে সর্বমোট ১ঘন্টাধিক সময় অতিবাহিত করেছি কিন্তু কখনো সেভাবে দেখিইনি তার চেহারা চোখে ভাসানো আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না । তবে তাকে দেখার সুযোগ পেলাম রাত্রের বেলায় । আমি ফোনের গ্যালারিতে ঘুরছিলাম তিন দিন আগের টানানো সেই পতাকার দৃশ্যের একটি ভিডিও এবং কিছু ছবি যা এ পর্যন্ত দেখার সুযোগ হয়নি সেগুলো সামনে এলো । ভিডিওটির এক কর্ণারে ছিল তার অবস্থান কন্ঠস্বর ও রেকর্ডিং হয়েছিল কিছুটা । যেন তখন আমার চৈত্র হৃদয়ে বৈশাখের প্রথম ঝড়ো হাওয়া দিয়ে বৃষ্টির দেখা পেলাম ।

আমি এমনিতেও খুব একটা মন খুলে কারো সাথে কথা বলি না । এটাও চেপে গেলাম মনে মনেই । তবে আমার আদায় করা প্রতিটা মোনাজাত হয়ে উঠলো তাকে পাওয়ার জন্য । আমি যেন আমার জীবন সাথী হিসেবে তাকে পায় । আমি ব্যার্থ হয়নি আমার চাওয়া পুর্ণ হয়েছে । প্রেমের প্রস্তাব দেওয়া প্রয়োজন পড়েনি । আমি সরাসরি বিয়ের প্রপোজাল পেয়েছি । আচ্ছা বলুন তো এটা অলৈকিক ছাড়া কি ?

এটা ছিল আমার প্রেমের প্রথম নিদর্শন বিয়ের পর সে যত্ন করে আমার সার্টিফিকেটের ব্যাগে রেখে দিয়েছে । কয়েকদিন আগে আমি জানতে পেরেছে ।
IMG_২০২২০৭২০_২০০৭১২.jpg

প্রেমের ঘটনা গুলো বাস্তব হলেও বাস্তবতার চেয়ে কয়েকধাপ উপরে এর অবস্থান । যা আমি আমার নিজ জীবনে খুব ভাল ভাবে খুব গভীর ভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি । এরপরে এই ৮ বছরে অনেক স্বরনীয় দিন চলে গেছে রাগ অভিমান সাথে পেয়েছি অফুরন্ত ভালবাসা । সে সব না হয় আরেকদিন বলা যাবে । আজ আমার লেখার এখানেই ইতি টানছি । সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনা করি ।

আল্লাহ্‌ হাফেজ
ধন্যবাদান্তে @maruffhh

zr7XQBzuvvkjgjjPxunUtP5k84gxgWc4mR8PqdBj5rx8AtXSSugGPwSy7JKyM3rgX4k3arRVPC2wT66DqiAYg2UuYrHpE94NCJsYEnjKP7Erbg.png

Sort:  
 2 years ago 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই কনটেস্ট অংশগ্রহণ করার জন্য। আপনিও যে এমন সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে ক্রিয়েট করে দেখাবেন তা আমার ধারণা ছিল না। বেশ ভালো লেগেছে আপনার প্রথম প্রেমের অনুভূতিগুলো পড়তে পেরে।

 2 years ago 

আপনাকে ও অসংখ্য ধন্যবাদ । লিখি লিখি করে সময় অনেক পার করে ফেলেছি । শেষ বেলায় এসে লিখলাম । একটি স্বার্থক প্রেমের গল্প সবাই পড়ার সুযোগ পাবে এই আশা নিয়ে জীবনের প্রথম প্রেমের আরেকবার স্মৃতিচারণ করলাম ।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 63439.39
ETH 2545.40
USDT 1.00
SBD 2.66